#অবন্তর_আসক্তি,৩১,৩২
#Sharmin_Akter_Borsha
#পর্ব_৩১ (সত্যের সম্মুখীন)
এই মেয়ে এই চোখে দেখো না অন্ধ তুমি? এইভাবে কেউ রাস্তা পার হয়? একটু হলেই তো গাড়ির নিচে চাপা পরতে। (চেচিয়ে বলল)
অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে সরু কন্ঠে বলল, “ মার্জিত করবেন। ”
বলে লেহেঙ্গার লেস দুই হাত দিয়ে ধরে কিছুটা উপরে তুলে আবারও ছুটতে লাগল। ভারী ভারী গহনা ভারী বিয়ের লেহেঙ্গা বিয়ের সাজ নিয়ে বিয়ের কনে পালিয়েছে বাড়ি থেকে হ্যাঁ একেবারে পালিয়ে যায়নি। ফিরে আসবে কিছু সময়ের জন্য যাচ্ছে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে।
________
আজ রাতেও সেই একই স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠল বর্ষা। কিন্তু আজ স্বপ্নে ব্যতিক্রম একটা জিনিস ঘটেছে। সে আজ স্বপ্নে সবটা ক্লিয়ার দেখেছে। আজ দেখতে পেরেছে স্পষ্ট ছেলে মেয়ের চেহারা। এক যে বর্ষা নিজে দ্বিতীয় অভ্র সামনে বসা লোকটা গ্রামের মাতব্বর। ওইদিন রাতে নেশাগ্রস্ত ছিলো বলে তার কিছু মনে ছিলো না কিন্তু আজ রাতের স্বপ্নে সবটা তার কাছে ক্লিয়ার হয়ে গেছে। এতবড় একটা সত্যি অভ্র কি করে পারলো ওর থেকে লুকিয়ে রাখতে? কাউকে কিছুই বলেনি সব কিছু নিজের মধ্যে দমন করে রেখে দিয়েছে। বিছানা থেকে নেমে সোজা চলে গিয়েছিল অভ্রর রুমে কিন্তু কোথাও অভ্রকে পায়নি। পুরো বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজেও অভ্রর দেখা পায়নি বর্ষা। বিয়ের দিন সকলের ব্যস্ততা অধিক যদিও খাবার দাবারের দিকটা ডেকোরেশনের লোকেরা দেখবে তবুও বাড়ির লোকেদের ও তো কাজ থাকে তারা সে কাজেই ব্যস্ত। সকাল সকাল বিয়ের কনে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে দেখে অনেকে অনেক কথা বলছে। তাদের সময় তারা নাকি রুম থেকে বের হতো না লজ্জায় এই সেই বলছে। পেছন থেকে মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে মিষ্টি কন্ঠে বলল অভ্রর মা অর্থাৎ বর্ষা বড় চাচি আম্মু, “ আদিম যুগের কথা এই যুগে বলে কি লাভ খালা? আপনাদের যুগের সাথে এ যুগের কোনো মিল নেই। যুগ পাল্টেছে খালা। ”
মহিলা কথার পিঠে মুখ ভেংচি কাটলেন। তা দেখে তিনি মৃদু হাসলেন বর্ষার উদ্দেশ্য বলল,“ আয় মা কিছু খেয়ে নে পরে খাওয়ার সময় পাবি না। ”
বর্ষা ছুটে তার চাচি আম্মুর কাছে এসে প্রশ্ন ছুঁড়ল, “ বড় আম্মু অভ্র ভাইয়া কোই? ”
তিনি একবাক্যে বললেন, “ জানি না তো। দেখিনি আমি। সকাল থেকে এই কাজ সেই কাজে ব্যস্ত বৈকি না। তুই চটজলদি খেয়ে নে। ”
ইচ্ছে না থাকলেও খেতে হলো বর্ষা কে কারণ সে তার বড় আম্মুর কথার খেলাফ সে করে না।
খেয়ে দেয়ে রুমে যাবে তারও উপায় নেই তার রুম যে দখল করে আছে তারই কিছু সংখ্যক আত্মীয় স্বজন। হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলো বর্ষা ছাঁদে। একা একা পায়চারি করছে স্বপ্নের কথা কাউকে বলতেও পারছে না। অস্থির হয়ে উঠেছে সে সব কিছু তাকে জানতেই হবে। কিন্তু অভ্র সে কোথায়?
ছাঁদে কড়া রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কাব্য এসে বর্ষাকে তার সাথে নিয়ে যায়। ততক্ষণে বর্ষার রুম ও খালি হয়৷ কাব্য মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে যায়। কি দেখলো বর্ষা স্বপ্নে?
পার্লার থেকে গতকাল যে দু’জন মেক-আপ আর্টিস্ট এসেছিল তারা আজও আবার আসছেন। গাঢ় লাল রঙের ভারী ডিজাইনের লেহেঙ্গা পরেছে বর্ষা। বিয়ে বলে গরজিয়াছ মেক-আপ করা হয়েছে। চুলগুলোও তেমন ভাবেই বাঁধা হয়েছে। আয়না তে নিজেকে একবার পর্যবেক্ষণ করল বর্ষা। তার দু-চোখ ছলছল করছে পানিতে। বিয়ে নিয়ে একটা মেয়ের কত স্বপ্ন থাকে কত আহ্লাদ থাকে কিন্তু তার কিছুই নেই। হলুদ দিয়েছে ঠিকই কিন্তু মেহেদী পরেনি। মেহেদী পরাতে চাইলে বর্ষা বলেছিলো ওর মেহেদী তে এলার্জি আছে। তাই আর কেউ জোর করে পরায়নি। মেহেদী ছাড়া সাদা লগ্ন দুই হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রু কণা টুপ করে পরল। বর যাত্রী আসবে সন্ধ্যায় এখনো দুই ঘন্টা বাকি। এদিকে সারাদিন অপেক্ষা করেছে বর্ষা অভ্রর জন্য কিন্তু অভ্র আর ফিরে আসেনি। দরজা খটখট আওয়াজে খুলে দেয় বর্ষা হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকল রিয়া, রিমা ও বৃষ্টি। বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলল, “ কি হয়েছে? ”
বর্ষা কান্না ভেজা কন্ঠে বলল, “ আমার স্বপ্নে দেখা ওই দু’জনকে স্পষ্ট দেখেছি। কিন্তু স্বপ্ন টা আধোও ঘটেছে কি না আমি বুঝতে পারছি না। আমাকে সত্য টা জানতে হবে৷ যে করেই হোক আমাকে সত্য টা জানতে হবে। আমি সত্যটা না জানা অব্ধি বিয়ে করতে পারবো না। আর তার জন্য আমার তোদের তিনজনের হেল্প লাগবে। বল তোরা কি আমার হেল্প করবি? ”
তিনজনে মাথা নাড়িয়ে সাই দিয়ে বলল, “ হ্যাঁ করবো। ”
বর্ষা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “ আমি পালাচ্ছি সত্য জানার সন্ধানে। রুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ রাখবি কেউ জেনো ভেতরে আসতে না পারে। আর কেউ জেনো না জানে আমি বাড়িতে নেই। আমার জায়গায় তোরা বসে থাকবি। আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত সবটা তোরা দেখবি। আমি ফিরে আসবো সত্য সঙ্গে নিয়ে আসবো কি হয়েছিল সেদিন রাতে আমাকে জানতে হবে। ”
আকস্মিক প্রশ্ন ছুঁড়ল বৃষ্টি, “ কোনদিন রাতে? ”
“ এসে বলল। ” বলে চলে গেলো বর্ষা বারান্দায় পাইপ বেয়ে নিচে নামতে অনেকটা অসুবিধা হয়েছে। কিন্তু কষ্ট করে নামতে সক্ষম হয়েছে। বাড়ির সকলে ডেকোরেশনের ওইদিকটায় ব্যস্ত সে সুযোগে গেইট দিয়ে বের হয়ে গেলো বর্ষা৷
রাস্তা দিয়ে ছুটছিল এমন সময় হঠাৎ একটা গাড়ি সামনে চলে আসে। আর সে ব্যক্তি গাড়ি থেকে নেমে বর্ষাকে যাতা কথা শুনিয়ে দেয়। অন্য সময় হলে কে অন্ধ আর কে কানা সবটা বুঝিয়ে দিতো বর্ষা কিন্তু এখন তার হাতে সময় খুব কম। লোকটার কথার কোনো প্রতিকার না করে আগের ন্যায় ছুটতে লাগল। লোকটা ভ্রু কুঞ্চিত করে বলল, “ নিশ্চয়ই বিয়ে ছেড়ে পালাচ্ছে। ”
দীর্ঘ পথ ছুটার পর পৌঁছালো সে জায়গায় যে জাগয়াটা সে স্বপ্নে দেখেছিল। বর্ষাকে বিয়ের সাজে দেখে কিছু গ্রাম বাসী এগিয়ে আসল। বিয়ের সাজে আছে বলে অনেকে চিনতে পারছে না। কিন্তু গ্রামের মাতব্বরের চিনতে ভুল হয়। সে গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলল, “ তুমি সেই মেয়েটা না? যে গ্রামে এসে নেশাগ্রস্ত হয়েছিল। তোমার সাথে আরও একজন ছেলে ছিলো। তা সে কোথায়? আর বিয়ের পোশাকে কেনো? আবারও বিয়ে করছো নাকি তোমরা দু’জনে? ”
লোকটাকে দেখে চিনে ফেলল। এই সেই মুখ যা সে স্বপ্নে দেখেছিল কিন্তু তার মুখে আবারও বিয়ে করছো শুনে চমকে উঠলো বর্ষা। হতবাক হয়ে বোকার মতো লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। তার মুখাবয়বের অভিব্যক্তি দেখে যে কেউ বলতে পারবে, লোকটার বলা শব্দ ও বাক্যটি বর্ষার মস্তিষ্কের উপর দিয়ে গেছে। ওর যে কিছুই বোধগম্য হয়নি তা তার মুখশ্রীতে স্পষ্ট। বিমূঢ় কন্ঠে বর্ষা প্রশ্ন ছুঁড়ল, “ আবারও বিয়ে মানে? আমার আগে কখন বিয়ে হলো? ”
চলবে?
#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_৩২ (সত্যের সম্মুখীন)
#Sharmin_Akter_Borsha
________________________
লোকটা বর্ষার কথায় ভ্রুকুটি কুঞ্চিত করে বলল,“ ওইদিন রাতেই তো বিয়ে হয়েছিল তোমাদের। তুমি নেশাগ্রস্ত ছিলে তাই হয়তো ভুলে গেছো। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে। ”
ভ্রু কুঞ্চিত করে বর্ষা শাণিতকন্ঠে জানতে চেয়ে বলল, “ কি প্রমাণ আছে? ”
লোকটা তার ফোন থেকে একটা ভিডিও প্লে করে বর্ষার হাতে থামিয়ে দিলো। বর্ষা অভ্রর হাত শক্ত করে চেপে ধরে মাতলামি করছে। অভ্র ভিডিওতে লোকটার সাথে তর্কাতর্কি করছে। এক পর্যায়ে তিনি রেগে গিয়ে দু’জনকে আলাদা করে দিতে বলেন। তখন গিয়ে অভ্র লোকটার শর্তে রাজি হয়। মাতব্বরের শর্ত ছিল। দু’জন কে বিয়ে করতে হবে। বিয়ে করতে হবে শুনেই অভ্র রাজি হচ্ছিল অন্য দিকে বর্ষার ও সেন্স নেই। দ্বিতীয় বিয়েতে রাজি না হলে বর্ষাকে আলাদা করে তার থেকে দূরে নিয়ে যাবেন একথা শুনে আর কোনো অপশন না পেয়ে বিয়ের জন্য রাজি হয় অভ্র। কাজি ডেকে সেখানেই সেই রাতে বিয়ে পরানো হয়। বর্ষা মাতাল কন্ঠে কবুল বলছে। অভ্র সন্দিহান হয়ে তাকিয়ে রয় বর্ষার দিকে অপরাধ বোধ কাজ করছে তার মধ্যে বর্ষার কাছে তখন সবটা ক্লিয়ার হলো। অভ্র এই সত্যি টাই লুকায়িত রেখেছিল তার কাছে এজন্যই ওইদিন বাড়ি ফিরার সময় বাইক থামিয়ে ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছিল। বার কয়েক জিজ্ঞেস করার পর ও কি ভুল, কোন ভুলের জন্য ক্ষমা চাইছে বলেনি অভ্র। অশ্রু গড়িয়ে পরল গালে কান্না ভেজা গলায় বলল, “ ভিডিও টা আমার ফোনো দিবেন প্লিজ। ”
তিনিও রাজি হলেন শেয়ারিটে ভিডিও টা সেন্ড করে দেয়। বর্ষা তাদের থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হয়। রাস্তায় একা একা হেঁটে চলেছে। স্মৃতির পাতা তার সামনে জেনো তার পাখা মেলে ধরেছে। বর্ষা ও অভ্র সেদিন রাতে ঘরবন্দী ছিল। তখন অভ্র কিছু কথা বলেছিল। সেসব কথা এক এক করে বর্ষার মনে পরছে। স্তব্ধ দাঁড়িয়ে পরে মাঝ রাস্তায়। অভ্র বলেছিলো, ” আমার রাগরাগিণী শুভ্র পরী খুব ভালোবাসি। ”
বুক চিড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসল বর্ষার। সব কিছু তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আবারও অভ্র একমাত্র অভ্রই পারবে তার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে যেভাবেই হোক বাড়ি পৌঁছাতে হবে। লেহেঙ্গা আবারও উঁচুতে তুলে ছুটতে লাগল বর্ষা। গরমে ঘাম বেয়ে বেয়ে পরছে। সকলের সামনে দিয়েই বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করল সে, সকলে প্রশ্ন করেছিল বিয়ের সাজে কোথায় গিয়েছিল কিন্তু কারো প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে বর্ষা সিঁড়ি দিয়ে উঠে চলে যায়।
পেছন পেছন আসে তিন্নি অভ্রর রুমে ঢুকে তাকে খুঁজতে লাগে বর্ষা কিন্তু রুমে অভ্র নেই। পেছন থেকে কর্কশকন্ঠে তিন্নি বলল, “ যাকে খুঁজছিস সে বাড়িতে নেই। ভোর হতেই বের হয়ে গেছে কখন ফিরবে জানা নেই তুই তোর রুমে যা কিছুক্ষণের মধ্যে বর পক্ষ চলে আসবে। ”
বলে চলে গেলো তিন্নি অতিরিক্ত রাগে রুমের আলমারির দরজায় লাথি মারল বর্ষা। পায়ে তার আঘাত লেগেছে বেশ “মা গো” বলে চিৎকার দিয়ে উঠল। তখনই আলমারির উপর থেকে একটা ছোট বক্স এসে পরল বর্ষার মাথার উপরে। ‘আপদ’ বলে নিচে ফ্লোরে পরে থাকা বক্সটা হাতে তুলে নিলো বর্ষা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। দরজার বাহির থেকে কে জেনো চেচিয়ে বলল, “ অভ্রর রুমের দরজাটা লক করে দিস তো। ”
শুনতে পেয়ে বক্স হাতে নিয়ে ছুটে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। বর্ষা তার রুমের সামনে এসে বারবার দরজায় কড়া নাড়ছে। ভেতর থেকে প্রশ্ন ছুঁড়ল রিয়া, “ কে? ”
“ আমি দরজা খোল ” বলল বর্ষা।
ওড়নার আড়ালে বক্সটা লুকিয়ে রুমে ঢুকল। সকলে বর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে অপ্রস্তুত হয়ে বলে উঠে, “ তোদের সকলকে আব্বু পেন্ডেলে ডাকছে যা শুনে আয়৷ ”
অন্য কোনো কিছু বললে ওরা কেউ যাবে না বর্ষা ভালো করে জানে সে জন্যই ওর আব্বুর কথা বলেছে। তিনজনে শাণিতকন্ঠে বলে গেলো, “ একটু পরই ফিরে আসছি। কি সত্য উদ্ঘাটন করতে গিয়েছিলি বলার জন্য তৈরি থাকিস। ”
বর্ষা বক্সটা খাটের উপর রেখে দরজা ভেতর থেকে আঁটকে দিলো। বিছানার উপর পা ঝুলিয়ে বসে বক্সটা দেখতে লাগল। বক্সটার মধ্যে কি আছে সে কিছুই বুঝতে পারছে না। তবে বক্সটা খুলে তাকে অবাক হতে হয়েছে। শুধু অবাক নয়, বিরাট অবাক যাকে বলে চরম লেভেলের অবাক। একদম পাহাড় সমান। বক্সটার মধ্যে শুধু রঙ বেরঙের কাগজের চিরকুট। বক্সটার ভেতর থেকে সবগুলো বিছানার উপর ঢেলে ফেলল। হাতের লেখাগুলো মিলে যাচ্ছে সেই আগের চিরকুট গুলোর সাথে। বর্ষা থতমত খেয়ে একটা চিরকুট হাতে তুলে নিলো তাতে লেখা, “ আমি হারিয়ে যেতে চাই সে সীমান্তে;
যে সীমান্তের শেষাংশে পাবো তোমাকে আমার প্রিয় রাগরাগিণী ”
চিঠিটা হাতের ফাঁক দিয়ে ফসকে পরে যায় বর্ষার, বিছানার উপর থেকে অন্য একটা কাগজ তুলে নেয় তাতে লেখা।~
“ হারিয়ে ফেলেছি আমি তাকে ভালোবেসেছি যাকে,
খুঁজে চলেছি তাকে হাজারও দিগ দিগন্তে দেখা মিলেনি আজও জানি না আছে সে পৃথিবীর কোন প্রান্তে? ”
বিছানার উপরে শতশত ছোট চিঠি সেগুলো সরিয়ে তাদের ভেতর থেকে একটা বড় কাগজ উঠিয়ে নিলো বর্ষা তা খুলে পড়তে লাগল,
“ আজ অবিশ্বাস্য কান্ড ঘটেছে রাগরাগিণী তুমি কি জানো? তোমাকে পারিয়ে ফেলেছিলাম ভেবেছিলাম আর হয়তো কখনো পাবো না। আবার এটাও ভেবেছিলাম তুমি শুধু আমার কল্পনা কিন্তু আজ তুমি নিজে থেকে আমার সামনে চলে আসলে বুঝিয়ে দিলে তুমি আমার কল্পনা নও তুমিই আমার বাস্তবতা। তোমাকে খুঁজতে তোমার গ্রামে এসেছিলাম। তবে খুঁজতে হয়নি তোমাকে পেয়ে গিয়েছিলাম তোমাকে তোমারই অগোচরে। বাড়ি ফিরতে অধিক রাত হয়ে যায়। এত রাতে জ্বীন পেত্নীর মতো তুমি রাস্তায় ঘুরাঘুরি করবে না ভেবে আর বের হই না। চিন্তা করি ভোরের আলো ফুটলে তোমাকে খুঁজতে বের হবো। তোমাকে খোঁজার আগ্রহে পুরো রাত ঘুমাতে পারিনি। ছটফট করেছি কখন রাত পোহাবে কখন সকাল হবে? রুমের মধ্যে পায়চারি করেই সময় পার করে ফেলি। ভোর তখন পনে ছয়টা। মাথাটা ঝিমিয়ে আসছিল এক মগ কফির তখন খুব প্রয়োজন। রুম থেকে বের হয়ে সোজা কিচেনে চলে আসি। কফি নিজেকে বানাতে হবে এত ভোরে আমার জন্য কে বসে থাকবে? কিচেনে এসে দেখি তিন্নি ওর জন্য কফি বানাচ্ছে আমিও মৃদু হেসে ওকে বলি আমার জন্য ও এক মগ বানিয়ে দেওয়ার কথা। গভীর রাতে এসেছি বাড়িতে তিন্নিই সদর দরজা খুলে দিয়েছিল যার জন্য ভেতরে আসতে পারি৷ বাড়ির কেউ জানে না আমি বাড়িতে জানার মধ্যে জানে শুধু তিন্নি। ওকে কফি নিয়ে সোজা ছাঁদে চলে আসতে বলে আমি রওনা দিলাম ছাঁদের উদ্দেশ্য সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় সিঁড়ির পাশে রুমটায় নজর পরল। দেখলাম, দরজা খোলা আর একটা মেয়ে ঘুমিয়ে আছে। খাটের একদম কিনারে এসে। আর একটু ঘুরলেই সে পরে যাবে। আমি ভাবতে ভাবতে মেয়েটা গোড় দিলো। আমিও হতবিহ্বল হয়ে ছুটে গেলাম তাকে বাঁচাতে। হুম, সে পরার আগেই তাকে আমি কভার করে নেই আমার দুই হাত দিয়ে। তাকে আবারও বিছানায় উঠিয়ে শোয়া তে যাবো তখন পেছন থেকে মেয়েলি কন্ঠে বলল, “ তুই বর্ষার রুমে কি করছি? ”
পেছনে ঘুরে তাকালাম দেখি তিন্নি দুই হাতে দুই মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আকস্মিক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওর দিকে তাকিয়েই সরু কন্ঠে বলে উঠি, “ ও বর্ষা? মানে আমাদের ছোট্ট বেলার পেত্নী মেয়েটা? ”
তিন্নি হেসে বলল, “ ও এখন আর পেত্নী নেই তুই তো ওকে ছোটো থাকতে দেখেছিস এখন সে বড় হয়ে গেছে। তা এভাবে ধরে রেখেছিস কেন? নিশ্চয়ই পরে যাচ্ছিল এই মেয়েকে নিয়ে এই এক জ্বালা। পুরো বিছানা খালি ফেলে সাইডে এসে শুয়ে থাকে আর ধুপধাপ পরে যায়। আমি মগ গুলো রেখে ওকে ওঠানোর জন্য তোকে সাহায্য করছি ওয়েট। ”
তিন্নির কথায় ঠোঁট উল্টিয়ে হাসলাম কতক্ষণ ভাবলেই হাসি চলে আসছে। এত বড় মেয়ে নাকি ঘুমের মধ্যে খাট থেকে পরে যায়। আমি তিন্নিকে থামিয়ে বলি, “ প্রয়োজন নেই তোর সাহায্যের আমি একা পারবো এ ওতটাও মোটা নয়। তুই যা আমি আসছি। ”
বলে তাকে সোজা করে বিছানায় শুয়ে দিয়ে চলে যাবো তখন নজরে পরল তার মুখটির উপরে পুরো মুখ তার খোলা চুলে ঢেকে আছে। ভাবলাম হয়তো চুলের জন্য ঘুমের ডিস্টার্ব হচ্ছে। তাই ইচ্ছে করল চুলগুলো সরিয়ে দেই। বিছানায় তার পাশে বসে আঙুলের তর্জনী দ্বারা তার কপাল থেকে চুলগুলো সরিয়ে পেছনে ঠেলে দিলাম। চুলগুলো সরালে তার মুখের দিকে তাকাতে আমার চারপাশ স্তব্ধ হয়ে যায়। বিস্মিত আমি তাকিয়ে থাকি চিরচেনা মুখটার দিকে পলকহীন চোখে। মনে হচ্ছে মাথা যন্ত্রণায় উল্টো পাল্টা দেখছি। দুই গালে ধীরে ধীরে কয়েকটা চড় মারতে লাগলাম। তিন্নি চলে গিয়েছিল ছাঁদে আমাকে আসতে না দেখে মগ দু’টো রেখে চলে আসল আমি কেনো যাচ্ছি না দেখতে, রুমে এসে দেখলো আমি এক উদ্ভুদ কান্ড করছি। সে আমার সামনে এসে শাণিতকন্ঠে বলল, “ কি হয়েছে এমন করছিস কেন? পেত্নীর রুমে এসে তোকে পেত্নী ধরলো নাকি? ”
তিন্নির দিকে তাকিয়ে আবারও বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা ঘুমন্ত মেয়েটার দিকে তাকালাম। বিচলিত হয়ে উঠি আমি বুকের মধ্যে হার্টবিট ধকধক করছে। তিন্নি কে প্রশ্ন ছুড়লাম, “ এই মেয়েটা কি সত্যি এখানে আছে নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি? ”
তিন্নি ভ্রু কুঞ্চিত করে প্রশ্ন ছুঁড়ল, “ অভ্র তোর কি হয়েছে বল তো? ”
আমি জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট জোড়া হাল্কা ভিজিয়ে আমার রাগরাগিণীর পাশে বসে পরলাম। শুনেছিলাম, মানুষের অধিক খুশির সময়ে নাকি তাদের চোখ দিয়ে জল চলে আসে। সে জল খুশির হয়। হুম আমার বেলায়ও তাই হলো এতই খুশি হয়েছিলাম লিখে বোঝানো যাবে। ঠোঁট জোড়ায় ল্যাপ্টে ছিল অমায়িক হাসি। সে হাসি তৃপ্তিময় হাসিতে পরিনত হলো যখন চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রু কণা গড়িয়ে পরল আমার গালে। ইচ্ছে করছিল তখন ঘুম থেকে তুলে জড়িয়ে ধরে চিৎকার দিয়ে বলি, আমার রাগরাগিণী বর্ষা।
আর কিছুক্ষণ রুমে থাকলে তুমি জেগে যেতে তাই তিন্নির সাথে রুম থেকে বের হয়ে যাই। বের হওয়ার পূর্বে তোমার দুইপাশে দু’টো কোলবালিশ রেখে যাই যাতে করে তুমি আর পরে না যাও। ছাঁদে চলে আসলাম তিন্নির সাথে গুরুগম্ভীর কন্ঠে তিন্নি প্রশ্ন ছুঁড়ল, “ বর্ষাকে দেখে তুই এমন রিয়েক্ট কেন করলি? ”
ইমোশনাল হয়ে পরি তিন্নিকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠি৷ দুজনেই কিছু সময় নিরবতা পালন করি৷ তৎপর ভ্রু কুঞ্চিত করে ক্ষীণকন্ঠে তিন্নি বলে, “ বর্ষা’ই কি তোর হারিয়ে ফেলা প্রথম ভালোবাসা রাগরাগিণী? ”
আমি প্রত্যত্তরে উপর নিচ মাথা দুলাই। আমার খুশির সীমা নেই আমার রাগরাগিণী কে আমি না খুঁজতেই পেয়ে গেলাম। যাকে মিরপুরে আমি তন্নতন্ন করে খুঁজেছি সে আমার নিজের বাড়িতে ছিল। যার জন্য তিলেতিলে মরেছি। সে আমার নিজের চাচতো বোন। কোথায় কোথায় না খুঁজেছি? খুঁজতে খুঁজতে অসুস্থ হয়ে পরেছি। আজ ও গ্রামে এই মেয়েকে খুঁজতে এসেছি। আমার বাড়ির কারো সাথে তেমন কনট্যাক্ট ছিল না শুধু তিন্নি ব্যতিত। তিন্নি কে আগেই আমি তোমার কথা বলেছিলাম। একটা মেয়েকে খুঁজছি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি। শুধু কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। ভরসা দিয়ে ছিল তিন্নি “ ধৈর্য্য রাখ খুঁজে পাবি. ” বলেছিল। অধৈর্য্য হয়ে খুঁজেছি। রাস্তায় যে মেয়েকে দেখে কিছুটা তোমার মতো মনে হয়েছে তার পেছনেই ছুটে গেছি। শুধু তুমি কি না যাচাই করতে কিন্তু প্রতিবার ভুল মেয়ের কাছে পৌঁছে গেছি। ক্ষমা চেয়েছি তাদের কাছে তবুও হাল ছাড়িনি খুঁজেছি তোমাকে। অবশেষে পেয়ে যাই তোমাকে আমার কুটিরে রাজকন্যার মতো ঘুমন্ত অবস্থায়।
তিন্নির সাথে শেষ কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই। বলেছিলাম, আমি যে এসেছি বাড়ির কেউ জেনো না জানে। কেউ জানতো না আমি এসেছি আর কেউ জানতেও পারলো না আমি চলে গেছি। দুইবছর শুধু তোমাক লুকিয়ে দেখেছি। তিন্নি সব সময় তোমার ছবি, ভিডিও আমাকে সেন্ট করতে থাকতো। কিন্তু আমার মন ভরতো না দেখতে ইচ্ছে করতো সামনে দাঁড়িয়ে তোমাকে। আমি আমার বন্ধুদের জানিয়ে ছিলাম তোমাকে পেয়েছি তুমি আছো কল্পনা বা স্বপ্নে নও বাস্তবে। ধীরে ধীরে ফিরে পেলাম আমি আগের আমিটাকে। দুই বছর পর মনে হলো আমার এখন তোমার সামনে আসা উচিত বলা উচিত। আমার মনের কথা তোমাকে জানানো উচিত। আমি বন্ধুদের সাথে নিয়ে ছুটে এসেছিলাম তোমার কাছে। মাঝরাস্তায় বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছে দেখলাম একটা মেয়েকে। প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে গাড়ি থেকে বের হই। ইচ্ছে তো ছিল কষে এক থাপ্পড় মারবো। তবে যখন গাড়ির সামনে তোমাকে দেখলাম। ভয় পেয়ে যাই ড্রাইভার যদি ঠিক সময় গাড়ি ব্রেক না করতো তাহলে আমি যে হারিয়ে ফেলতাম তোমাকে। মনের মধ্যে ভয় ঢুকে গেলো তোমাকে হারানোর। মুখে প্রকাশ না করে রাগ দেখালাম তোমার সাথে উল্টো তোমরা কি করেছিল। কাঁদা ছুঁড়ে মারলে ইচ্ছে করছিলো তোমার হাতটা ধরে টান মেরে নিজের অতি কাছে নিয়ে আসি। গালের সাথে গাল মিশিয়ে তোমাকে কাঁদাস্নাত করাই। কিন্তু ততক্ষণে তোমরা অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছিলে। তোমাকে চমকে দেওয়ার জন্য সেদিন আর বাড়ি আসিনি পরেরদিন এসেছিলাম। তোমাকে জ্বালাতে আমার ভালো লাগতো তাই সারাক্ষণ জ্বালাতে শুরু করলাম।
কিন্তু আমার আর তোমার মাঝে চলে আসল আদ্রিক নামের ছেলেটা। তার সাথে তোমাকে দেখলে আমার হিংসে হতো সহ্য হতো না বুকের বা পাশটায় বড্ড জ্বলতো। তার তোমাকে ঘুরে ঘুরে তাকানো দেখে আমি বুঝে গিয়েছিলাম। সে তোমাকে চায়, তাই তোমাকে বলেছিলাম ওর থেকে দূরে থাকতে কিন্তু তুমি শোনোনি। আমি ডান হাত বাম হাত দু’টো দ্বারা লিখতে পারি। আমার দেওয়া চিরকুট গুলো তোমরা ভেবে নিলে আদ্রিক দিচ্ছে। আমি জানতে পেরে মলিন হেসেছি শুধু। তবে সেদিন সন্ধ্যা বেলা তোমার দরজার সামনে গিয়েছিলাম। চিঠি হাতে বসে ছিলে তোমরা চারজন৷ রিয়া বলেছিল তুমি আদ্রিককে ভালো বেসে ফেলেছো। তুমিও মাথা দুলিয়ে হা উত্তর দিয়েছিলে। সেদিন মনে হয়েছিল আমার জীবনের সব কিছু আমি হারিয়ে ফেলেছি এই আদ্রিকের জন্য তারপরও সাহস করে বলতে চেয়েছিলাম আমি চিঠিবাজ অভ্র। কিন্তু সাহস হয়নি মনে পরে যেতো তুমি আদ্রিক কে পছন্দ করো আমাকে নয়। উপরে উপরে তোমাকে ইগনোর করা শুরু করলাম। কিন্তু ভেতর থেকে হৃদয় টা আমার ভেঙে ঘুরিয়ে যাচ্ছিল। অজস্র যন্ত্রণা বুকে নিয়ে বিছানায় ছটফট করেছি। মাঝ রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে যেতো তখন তোমার দেখাদেখি পাইপ বেয়ে তোমার বেলকনিতে যেতাম। বাহির থেকে তোমাকে একনজর দেখে চলে আসতাম। ভেতরে যাওয়ার উপায় তো নেই দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকতো৷ চিন্তা ভাবনা করলাম তোমাকে সত্য টা জানাবো কিন্তু তখন বেশ দেরি হয়ে গেলো। আদ্রিকের পরিবার তোমাকে দেখতে চলে আসল। চেয়ে ছিলাম আটকাবো কিন্তু কি বলবো সবাইকে? তুমি তো আমাকে চাও না। তাই বাধ্য হয়ে নিরবে মেনে নিলাম। উপর থেকে স্বাভাবিক থাকলেও আমার রাগরাগিণী তোমাকে বুঝাতে পারবো না আমার কলিজাটা ছিঁড়ে কেউ টেনে ছিঁড়ে ফেলছে এমন কষ্ট হয়েছে। ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা খুব মর্মান্তিক। চোখ জোড়া লালচে দানার মতো লাল হয়ে যেতো কিন্তু চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি পড়তো না। ভালোবাসি শুভ্র পরী খুব ভালোবাসি। দেখতে পারবো না তোমাকে অন্য কারো হয়ে যেতে। বাঁচতে পারবো কি না তোমাকে ছাড়া আমি জানি না। শূন্য শূন্য লাগে তোমাকে ছাড়া। ধম বন্ধ হয়ে আসে মনে হয় অদৃশ্য কিছু গলা চেপে ধরেছে। আমি কেনো ভালোবাসলাম তোমাকে? আমার এত প্রিয় হয়ে উঠার কি খুব প্রয়োজন ছিল বর্ষ্যু? একটি বারের জন্য কি জড়িয়ে ধরবে আমাকে? বুকের অসহ্যকর যন্ত্রণা শুধু তোমার স্পর্শে দমবে। আমার যন্ত্রণা কমানোর জন্য তোমাকে চাই। আমার ভালোবাসায় তোমাকে চাই। কেনো বুঝলে না? কেনো চোখে চোখ রেখে ভালোবাসি শব্দটা পরে নিলে না? তাহলে কি চোখের ভাষা শুধু নাটক বা সিনেমা তেই নায়িকারা পড়তে পারে? বাস্তবে কেনো নয়? তুমি আমার শুভ্র পরী একান্তই আমার। তোমাকে অন্য কারো হয়ে যেতে দেখবো কি করে বলো? ”
কাগজ হাতে বর্ষা বিছানা থেকে গড়িয়ে মাটিতে পরে গেলো। চিঠিটা বুকের সাথে জড়িয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠল বর্ষা। অভ্রর শাসন, রাগ, ঝগড়া, অভিমান টাই শুধু দেখল সে কিন্তু তার মধ্যে লুকায়িত ভালোবাসা টা দেখতে পেলো না। কেনো পেলো না? ভাবতেই অঝরে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে বর্ষা। যাকে এত ভালোবাসলো তাকে কি সাহস করে মুখ ফুটে একটি বারের জন্য বলতে পারল না। চিঠিবাজের চিঠি পরে বর্ষা প্রেমে পরেছিল অভ্রর। আর সেই চিঠিবাজই হচ্ছে অভ্র। চিঠি দুই হাত দিয়ে ধরে কেঁদে চলেছে সে। হুট করে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরল চিঠিগুলো বাক্সটায় আগের ন্যায় রেখে খাটের নিচে লুকিয়ে রাখল। দুই হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে গালে ল্যাপ্টে থাকা অশ্রু কণা মুছে দরজা খুলে লেহেঙ্গা কিছুটা উপরে তুলে ছুটলে লাগল বর্ষা।
বাহিরে তার জন্য বিশাল চমক অপেক্ষা করছে।
সিঁড়ি দিয়ে দৌঁড়ে নামল। বাড়ির বাহিরে গিয়ে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরল। মেয়ের কান্নার আওয়াজ কান অব্ধি আসছে মিস্টার সাগরের। তিনি মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, “ যা হয়েছে মা ভুলে যা। ”
কি হয়েছে? কি ভুলে যাওয়ার কথা বলছে বর্ষার বাবা। বর্ষা তার বাবার থেকে কিছু টা দূরে সরে গেলো। আকস্মিক চাহনি ফেলে তাকালো। সামনেই তার স্যার দাঁড়িয়ে আছেন মাথা নত করে। সব কিছু বর্ষার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। ভাবান্তর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বর্ষা বুকের মধ্যে ধুকপুক শুরু হয়ে গেছে। তার শূন্য মস্তিষ্ক তাকে জানান দিচ্ছে, “ বর যাত্রী এসে গেছে। তার বিয়ে হয়ে যাবে। কিন্তু সে বিয়ে করতে চায় না৷ ”
বর্ষা তার বাবার দিকে তাকিয়ে তরুণকন্ঠে বলল, ‘ আব্বু আমার বিয়ে আমম আমি বিয়েটা ”
আমতা আমতা করে বলতে গিয়েও বলতে পারছে না বর্ষা। এতগুলো মানুষের সামনে কিভাবে বলবে সে বিয়েতে রাজি নয়। বাড়ির সকলের মানসম্মান নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু বলতে না পারলে যে বর্ষা অভ্রকে হারিয়ে ফেলবে। কোনো কিছুর মূল্যে বর্ষা অভ্রকে হারাতে পারবে না। নাহহ।
বর্ষার গালের অশ্রুকণা একহাত দিয়ে মুছে দিলেন মিস্টার সাগর। তৎপর জড়ানো কন্ঠে বললেন, “ সবই তো উপরওয়ালার ইচ্ছা মা। এতে মানুষের কোনো হাত নেই। আদ্রিক বিয়ে করতে আসেনি সে পালিয়ে গেছে। আমাদের কারো কথা চিন্তা না করে সে পালিয়েছে। তুই ভেঙে পরিস না আমরা তোর জন্য অনেক ভালো ছেলে দেখবো। ”
বলে বর্ষাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে উঠলেন ওর বাবা। ভেঙে পরবে মানে কি? এইজন্যই ওর বাবা তখন বলেছিল সব ভুলে যা। আরে সে তো এখন মহা খুশি এতো হয়ে গেলো লাইক মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। সকলের সামনে খুশিতে লুঙ্গি ডান্স দিতে ইচ্ছে করছে। তার খুশি যে সীমাহীন। খুশিতে আত্মহারা হয়ে মুখ ফসকে বলে উঠল, “ সত্যিই? আমি তো মহা খুশি। ”
বর্ষার এমন কথা শুনে সকলে কপাল কুঁচকে তার দিকে তাকালো। ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে বুঝতে পেরে ন্যাকা কান্না জুড়ে দেয় বর্ষা। তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগে, “ আব্বা গো আমার কি বিয়া হইবো না? আমার বিয়া ভাইঙ্গা গেলো। আমি সমাজে মুখ দেখাবো কেমনে? আল্লাহ গো ”
জোরে জোরে কান্না ভেজা কন্ঠে বলছে। সকলে বর্ষার পাশে এসে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগে। দূরে দাঁড়িয়ে মুখে হাত দিয়ে মুখ টিপে হাসছে ওরা। সকলকে উপেক্ষা করে ছুটে আসল বর্ষা ওর রুমে পেছন পেছন ওরাও আসল। রুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে বিছানার উপর উঠে লাফিয়ে নাচতে শুরু করল। পুরো রুমে জেনো হাসির ঢল নেমেছে। হাসির শব্দ পুরো রুম জেনো কেঁপে উঠছে।
সকলের চিন্তা “ আদ্রিক বিয়ে ছেড়ে কোথায় গেলো? ”
বর্ষার চিন্তা “ অভ্র বাড়ি ছেড়ে কোথায় গেলো? ”
চলবে?