#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_৩৩,৩৪,৩৫
#Sharmin_Akter_Borsha
৩৩
“ছেঁড়ে দাও ওকে ” ফোনের অপরপাশ থেকে শাণিতকন্ঠে বলে উঠল।
“ কি বলছেন স্যার? উনাকে এ অবস্থায় ছেড়ে দিলে উনি আমাদের সকলকে চিনে ফেলবে। ” ফোনের এপাশ থেকে ভয়াত কন্ঠে বলল।
অপরপাশের লোক বেশ কিছুক্ষণ মর্ণ থেকে বলে উঠলেন, “ একটা কাজ করো, ছেলেটাকে একটা ঘুমের ইনজেকশন দাও তারপর সে সেন্সলেস হয়ে গেলে তোমরা তার হাত পা মুখ ও চোখের বাঁধন খোলে দিবে। বাঁধন খোলার পূর্বে চেক করে নিও সে সেন্সলেস হয়েছে কি হয় নাই। তারপর তাকে সে অবস্থায় ফেলে চলে আসবে। চিন্তা করবে না তোমাদের সাথে আমার যত ডিল হয়েছিল তার থেকে দ্বিগুণ তোমরা পেয়ে যাবে। টাকা হাতে পাওয়ার পর সিমটা ফোন থেকে খুলে ভেঙে ফেলে দিবে৷ কি বলেছি মনে থাকবে? ”
“ জি স্যার মনে থাকবে। ”
বলে ফোন কেটে দিলো অপরপাশের লোকটি যা যা বলল ওরাও ঠিক তেমন টাই করে পালিয়ে গেলো।
_______________________
চুপি সারে অভ্রর রুমে প্রবেশ করল বর্ষা। চিরকুটের বক্সটা সেম আলমারির উপর তুলে রেখে বের হয়ে গেলো। ওইদিকে জাহাঙ্গীর স্যারের কাছে কল দিয়েছিল বর্ষা জানার জন্য আদ্রিকের কোনো খবর পেয়েছে কি না? তারা হতাশাজনক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘ এখনো না। ’
বর্ষার কল দেওয়া দেখে তিন জোড়া চোখ ভ্রু কুঞ্চিত করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। বর্ষা কিছু বলতে যাবে তখন কলিংবেল বেজে উঠল, বেল বাজার পরপর সে উঠে গিয়ে সদরদরজা খুলে দিলো। আকস্মিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। সামনে থেকে অদ্ভুত আচরণ করে বলে উঠল অভ্র,
“ এই মাইয়া এই বাড়িতে কি করতাছে এর না দুইদিন আগে বিয়া হইয়া গেছে। নাকি শশুর বাড়ি থেক্কা বাপের বাড়ি পাঠাই দিছে? ” ঠোঁট বাঁকা করে প্রশ্ন ছু্ড়ল অভ্র দরজার সামনে থেকে বর্ষার আম্মুকে দেখা যাচ্ছিল তাকে উদ্দেশ্য করেই বলেছে। আজ দুইদিন পর সে বাড়িতে ফিরেছে কোই একটু মিষ্টি কথা বলবে কিন্তু না উল্টে কিসব কথা বলছে। রাগী গলায় বলে উঠল বর্ষা,“ এই তুমি কি আমাকে অপমান করছো? ”
“ অপমান আর তোকে? হাহহ, তোকে অপমান করলে অপমানকে অপমান করা হবে। যা সর সামনে থেকে। ”
বলে সে চলে গেলো ইচ্ছে তো করছে মাথার চুলগুলো টেনে ছিঁড়ে দিতে কিন্তু সেটা সে পারবে না। “ তালগাছ একটা ফাজিল অসভ্য ছেলে। ” বলে দরজা চাপিয়ে দিলো। মনে মনে আরও কিছু বকা দিয়ে সে চলে গেলো নিজের রুমে কিন্তু নিজেকে কোনো ভাবেই শান্ত রাখতে পারছে। ভালোবাসার মানুষটা কাছে ভালোবাসি শব্দ টা শোনার জন্য বেকুল হয়ে উঠেছে বর্ষা। দুইদিন ধরে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার শোকে এক্টিং করতে করতে নিজেকে এখন ফিল্মের নায়িকা মনে হচ্ছে তার রুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গায়ে এক মেরুন রঙের ওড়না জড়িয়ে স্টাইল করে দাঁড়িয়ে বলল, “ আমাকে টেলিভিশনের পর্দায় কেমন লাগবে? ”
দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে বলে উঠল, “ খুবই বাজে লাগবে। ”
বর্ষা ওড়নাটা নিজের পেছনে আড়াল করে দাঁড়িয়ে আকস্মিক দৃষ্টিতে তাকায় অভ্রর দিকে। এমন অবস্থায় তাকে পরতে হবে জানা ছিল না তার। লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। অভ্র সশব্দে হেসে উঠে হাসির শব্দে বর্ষার ইচ্ছে করছে মাটির মধ্যে ঢুকে যেতে।
সব ভাই বোনেরা ছাঁদে বসে আড্ডা দিচ্ছে তখন অভ্র এসে সেখানে উপস্থিত হলো। আপেলের টুকরো তে এক কামড় বসিয়ে বলে উঠল, “ এখানে একজনের বিয়ে ভাঙছে অথচ তার কোনো শোকতাপ নেই। এর তো আর বিয়ে হবে না। ”
বর্ষা সাথে সাথে চোখ জোড়া খিঁচে ছোটো-ছোটো করে নেয়। অভ্রর দিকে তাকিয়ে তৃপ্তিময় হাসি দিয়ে বলে, “ যার বিয়ে করার সে করলেই হবে। ”
বলে ঠোঁট বাঁকা করে হাসতে লাগল। ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে উঠে চলে গেলো অভ্র। রুমের মধ্যে পায়চারি করছে দরজা চাপানো। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে সে পিছন ফিরে তাকায়। বর্ষাকে দেখে প্রথমত ভ্রু কুঞ্চিত করে প্রশ্ন ছুঁড়ে, “ তুই আমার রুমে কি করছিস আর দরজা কেন বন্ধ করেছিস? ”
বর্ষা হেঁয়ালি করে বলল, “ তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে আজ দুদিন পর দেখছি তো তাই বন্ধ করেছি। ”
“ মানে? ”
“ মানে হচ্ছে। আমার যে বিয়ে ভেঙে গেলো তুমি খুশি হওনি? ”
“ হয়েছি! না মানে আমি কেন খুশি হতে যাবো? আমার ফ্যামিলির মান সম্মানের কথা চিন্তা করে দুঃখ হচ্ছে। ” অভ্র আমতা আমতা করে বলল।
বর্ষা ঠোঁট বাঁকা করে হাসি দিয়ে একপা একপা করে অভ্রর দিকে যেতে লাগল। শুকনো এক ঢোক গিলে অভ্র সেখানেই দাঁড়িয়ে পরল। বর্ষা অভ্রর ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠল, “ তবে যে যাই বলুক আমি খুব খুশি হয়েছি। ”
“ তুই আর খুশি? তুই না ওকে ভালোবাসিস? ” ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছুঁড়ল অভ্র।
“ হাহহ, আমি ভালো বাসবো ওই মোরব্বাকে? ” ডোন্ট কেয়ার এটিটিউট নিয়ে বলে উঠল বর্ষা।
দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, “ তাহলে বিয়ে তে রাজি হয়েছিলি কেন? ”
এক বাক্যে উত্তর দিলো বর্ষা, “ তুমি প্রপোজ করছিলে না তাই। ”
আকস্মিক চোখ দু’টো বড়বড় হয়ে যায় অভ্রর মুখ দিয়ে বের হয়ে আসে, “ হোয়াট? ”
বর্ষা সশব্দে হেসে উঠল তা দেখে অভ্র খানিক কপাল কুঁচকালো পরক্ষণেই বর্ষার হাত ধরে বলে উঠল, “ তুই বের হো আমার রুম থেকে। ”
“ আমি কেন বের হবো? আমি কি বের হওয়ার জন্য আসছি নাকি? ” হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলল।
“ কি জন্য আসছিস তুই? ” অভ্র বলল।
“ আমার বকুল ফুলের মালা নিতে। ” বর্ষা বলল।
স্তব্ধ দাঁড়িয়ে রয় অভ্র বর্ষার আচরণের আগা মাথা সব কিছু তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে হঠাৎ কি হলো বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে তার। বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো অভ্রর সামনে দাঁড়িয়ে বাঁকা হেসে বলল,“ এতই যদি ভালোবাসো তোমার রাগরাগিণী কে তাহলে বলে দিলেই তো পারো ভালোবাসি। সত্যি বলছি ভালোবাসি আমিও বলে দিবো। ”
বলেই একগাল হেসে বর্ষা অভ্রর সামনে থেকে চলে যায়। কানের মধ্যে বারংবার বর্ষার বলা কথা টা তীরের মতো সুচছে।
এর পর থেকে অভ্র বর্ষার দিকে যতবার তাকিয়েছে সে লক্ষ্য করেছে বর্ষা ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে চোখে তার লাজুকলতার শেষ নেই। ইতস্তত বোধ করছে অভ্র বর্ষার আচরণে সে বারবার বিপর্যায় পরে যাচ্ছে। রুমে এসে দরজা ভেতর থেকে আটকিয়ে কিছুক্ষণ পায়চারি করে বিছানার উপর বসল। তখনই চোখ পরলো আলমারির উপরের বক্সটায়। ভারী দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বক্সটা নিয়ে আবার বিছানায় বসল। উপরের কাগজ খোলার সঙ্গে সঙ্গে ভূত দেখার মতো চমকে উঠল অভ্র। তার লেখা শত চিঠির মাঝে এক অন্য চিঠি। কাগজটা হাতে নিয়ে দেখলো তাতে কিছু বাক্য লিখা, লিখাটা এমন~
“ ভালোবাসি ভালোবাসি শুধু তোমাকে। জানি না কবে থেকে শুধু জানি ভালোবাসি তোমাকে। আমার প্রথম অনূভুতি তুমি। আমার প্রথম ভালো লাগা তুমি। আমার প্রথম ভালোবাসা তুমি আমি চাই আমার শেষ ভালোবাসা হও তুমি৷ তোমার প্রতি প্রথম অনূভুতি সঞ্চরণ হয় সে এক অন্য রকম অনূভুতি বুঝতে পারি। তখনই ইচ্ছে করেছিলো তোমার কাছে ছুট্টে এসে সত্যি টা বলি কিন্তু ভয় হতো তুমি যদি রেগে গিয়ে আব্বুকে বলে দাও। তাই বলিনি চিঠিবাজের চিঠির প্রতিটা শব্দের আড়ালে আমি তোমাকে খুঁজে পেয়েছি। তোমার চিঠি পড়ে আমি তোমার প্রতি দূর্বল হয়েছি। তখনও জানা ছিল না আসল চিঠিবাজ তুমি। ছুটে এসেছিলাম তোমার কাছে শুধু তোমার মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দ টা শোনার জন্য কিন্তু তুমি প্রতিবার মুখ ফিরিয়ে নিতে। আমাকে দেখলে সরে যেতে খুব কষ্ট তখন সেজন্য বিয়েতে কোনো বাধা দেইনি। ভেবেছিলাম তোমার মনে আমার প্রতি কোনো অনূভুতি থাকলে তুমি নিজে আমাকে বিয়ে করতে বাঁধা দিবে কিন্তু তুমি দাওনি। বিয়ের দিন ভোরে স্বপ্ন দেখেছি গ্রামের সেই দৃশ্যটা যেটা তুমি আমার থেকে লুকিয়ে ছিলে। সত্য জানার জন্য গ্রামে গিয়ে ছিলাম। সেখানে জানতে পারি সেদিন রাতে আমাদের বিয়ে হয়েছিল। বাড়িতে ছুটে এসেছিলাম তোমার থেকে সত্য জানবো বলে। কিন্তু বাড়িতে তুমি ছিলে না তোমার আলমারির উপর থেকে চিঠির বক্সটা মাটিতে পরল। যেথায় তুমি লিখে ছিলে আমাকে নিয়ে হাজারও কাব্য। সত্যি বলতে আমিও ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়। খুব ভালো বেসে ফেলেছি। চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে, তোমার রাগরাগিণী শুভ্র পরী তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে অভ্র ভাইয়া। ”
চিঠিটা হাতে নিয়ে কান্নামিশ্রিত হাসি ফুটে উঠে অভ্রর মুখে। খুশিতে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিয়েছে ঠোঁটে তার হাসি জ্বলজ্বল করছে। চোখের কার্নিশ বেয়ে দু ফোঁটা অশ্রু কণা গড়িয়ে পরছে। নাক টেনে বিছানায় শুয়ে পরল অভ্র তার জেনো খুশির সীমা নেই। ঠোঁটের কোণে মৃদু হেসে বলল, “ পেত্নী ”
____________________
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে তৈরি হয়ে বেরিয়ে গেছে কলেজের উদ্দেশ্যে বর্ষা ও রিয়া। রাস্তা দিয়ে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিল তখন সামনে এসে পরল একজন আনএক্সপেক্টেড ছেলে। তাকে দেখে বিরক্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে কপালের চামড়া ভাজ করল বর্ষা। ভ্রু কুঞ্চিত করে মাথা থেকে পা পর্যন্ত লক্ষ্য করল। পাশ থেকে রিয়া বলল, “ দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট না করে চল। ”
চলে যেতে নিলে ছেলেটা বর্ষার সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাত ধরে নেয়। মাঝরাস্তায় এমন আচরণ করায় ঘাবড়ে যায় বর্ষা। বারবার অস্ফুটস্বরে বলতে লাগে, “ হাত ছাড়ুন বলছি। ”
সে শাণিতকন্ঠে বলল,“ ছেড়ে দিবো কিন্তু আপাতত একটু শান্ত হয়ে দাড়িয়ে আমার কথা শোনে প্লিজ ”
বর্ষা ইতস্ততভাবে বলল, “ কি বলতে চান আপনি? ”
সে বলল,“ বিশ্বাস করো আমি বিয়ে থেকে পালিয়ে যাইনি। আমাকে কিডনেপ করা হয়েছিলো। ”
অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় বর্ষা মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বের হয়ে আসে, “ কিহহহ? ”
আদ্রিক আবারও বলতে শুরু করল, “ আমি সত্যি বলছি। বিয়ের দিন আমার রুমে তিন থেকে চারজন ছেলে ঢুকে পরে। তাদের মুখে মাস্ক ছিলো তাই আমি চিনতে পারিনি৷ একটা রুমাল আমার মুখে চেপে ধরলে আমি সেন্সলেস হয়ে পরে যাই। জ্ঞান ফিরলে নিজেকে একটা অন্ধকার ও বন্ধ করে আবিষ্কার পাই। একটা চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছিল আমাকে। আমার কথা কেউ বিশ্বাস করছে না অন্তত তুমি বিশ্বাস করো। ”
বর্ষা আদ্রিকের কথাগুলো মন দিয়ে শুনে বলল, “ অনেক আফসোস হলো আপনার কথাগুলো শুনে। যা হওয়ার হয়ে গেছে অতীত ভুলে যাওয়া ভালো। আর যা হয় ভালোর জন্যই হয়। আপনাকে কিডনেপ না করলে হয়তো আমিই বলতাম আপনাকে আমি বিয়ে করতে পারবো না। আদ্রিক সব কিছু এত তারাতাড়ি হয়ে গেছে আমি কোনো ডিসিশন নেওয়ার সময় পাইনি। আমি আপনাকে ভালোবাসি না আর কখনো বাসিওনি। আপনার অনূভুতির সম্মান করে বলছি। প্লিজ পরবর্তীতে আমাকে বিরক্ত করবেন না। ”
বলে বর্ষা পাশ কেটে চলে গেলো। পেছন থেকে দুই হাত মুঠ করে দাঁতে দাঁত চেপে বর্ষার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল আদ্রিক।
________
ঘুম থেকে উঠতেই ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটে উঠে অভ্রর বিছানার পাশে টি টেবিলের উপর একটা কফির মগ রাখা। মগের সাথে একটা চিরকুট তাতে লিখা, “ সকাল টা হোক শুভ প্রিয় মানুষটার মুখের হাসির প্রচ্ছাসে। ”
চলবে?
#অবন্তর_আসক্তি [৩৪]
#sharmin_Akter_borsha
________________________
“আদ্রিককে তুমি কিডনেপ করিয়ে ছিলে?” প্রশ্ন বাচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ল বর্ষা।
সোফার উপর বসে ল্যাপটপ স্ক্রল করছিলো অভ্র। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল বর্ষা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কপালের চামড়া ভাজ করে অভ্র বলে উঠল, “ মানে? ”
অভ্রর এমন প্রশ্ন শুনে বর্ষার মনে হচ্ছে সে কোনো কিছুই জানে না। বর্ষা গম্ভীর কন্ঠে বলল, “ হ্যাঁ কি না? ”
অভ্র সোফা ছেড়ে উঠে বর্ষার সামনে এগিয়ে আসলো। দু’দিকে মাথা দুলিয়ে বলল ‘না’। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে উঠল বর্ষা, “ মিথ্যে বলবে না। ”
অভ্র কিছু বলতে যাবে তার আগে বর্ষার পেছন থেকে কেউ ওকে ধাক্কা দিয়ে রুমের ভেতরে ঢুকিয়ে দিলো। বর্ষার থেকে দুইহাত সামনে দাঁড়িয়ে ছিল অভ্র। ধাক্কার ফলে বর্ষা গিয়ে অভ্রর উপরে পরলো। দু’জনে দু’জনকে সামলে পেছনে ঘুরে তাকালে দেখতে পেলো। বৃষ্টি, রিয়া, রিমা তিনজনে অলরেডি রুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। বর্ষা আর অভ্র ওদের তিনজনের দিকে তাকিয়ে রয় দেখে বৃষ্টি প্রথমে বলে, “ এইসব কথা কেউ দরজা খোলা রেখে বলে? কেউ শুনে ফেললে কি হতো? ”
বর্ষা ইস্টুপিটের মতো বলে উঠল, “ কি হতো? ”
রিমা বর্ষার কপালে একটা টোকা দিয়ে বলল,“ কেলেঙ্কারি হয়ে যেতো। ”
বর্ষা ধমকের স্বরে বলল, “ আমি এখানে প্রশ্ন করতে আসছি তোরা কোণ্থেকে আসছিস? ”
রিয়া বলে উঠে, “ তোর পিছু পিছু। ”
বর্ষা বিরক্ত হয়ে অভ্রর দিকে ঘুরে আগের প্রশ্ন গুলো ছুঁড়লো। অভ্র নির্বাক ও নিস্তব্ধ দাঁড়িয়ে রইল। পেছন থেকে বৃষ্টি বলল,“ অভ্র ভাইয়া কে প্রশ্ন করে লাভ নেই সে কিছু করেনি। ”
বর্ষা পেছনে ঘুরে কর্কশকন্ঠে বলল, “ হোয়াট? মজা করছিস তোরা আমার সাথে ‘ও’ না করলে আর কে করবে? ”
পেছন থেকে সরু গলায় অভ্র বলল, “ সত্য বলছি আমি কিছু জানি না। আর আমি কিডনেপ করিনি। বিয়ের দুইদিন তো আমি গাজীপুর ছিলাম না। ধানমন্ডি গিয়ে ছিলাম পার্সোনাল কাজে। ”
অভ্রর কথা শুনে মনে হলো না অভ্র মিথ্যা বলছে। আগের ন্যায় প্রশ্ন ছুঁড়ে বর্ষা কিন্তু এবার একটু ভিন্ন রকম ভাবে রাগী গলায় বলল, “ তাহলে কে করেছে? ”
মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে বৃষ্টি, রিয়া ও রিমা। তিনজনে একসাথে বলে উঠল, “ আমরা করেছি। ”
রসগোল্লার মতো মুখ হা করে পেছনে ঘুরে দাঁড়ালো বর্ষা, রিয়া আমতা আমতা করল বলা শুরু করল, “ আদ্রিককে প্লান করে আমরা বাড়ি থেকে উঠিয়ে ছিলাম। ”
রিয়া স্টপ হলো পাশ থেকে বৃষ্টি বলা শুরু করল, “ প্লানে আমাদের সাহায্য করেছে আদ্রিক আর নিভ ওরাই টাকা দিয়ে ভাড়াটে গুন্ডার সাহে আদ্রিককে উঠিয়ে নিয়ে যায়। ”
সাইড থেকে রিয়া বলল, “ আমাদের প্লানে আদ্রিকের কোনো ক্ষতি আমরা করিনি শুধু বিয়ে না ভাঙ্গা পর্যন্ত আঁটকে রেখেছিলাম।
ওদের কথা শুনে কি রকম ভাবে রিয়েক্ট করবে বর্ষা সে বুঝতে পারছে না। পেছন থেকে সশব্দে হেসে উঠল অভ্র। বর্ষার কান অব্ধি সে হাসির আওয়াজ ভেসে আসছে। বর্ষা দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “ বিয়ের কনের বোন হয়ে বর কে তুলে নিয়ে গেছিস। কেনো করেছিস এমন তোরা মানুষ জানতে পারলে কি হবে? ”
পেছনে অভ্র বর্ষার সামনে এসে আঙুল নাচিয়ে বলল, “কি বললি তুই। মানে কি ওরা বিয়ে না ভাঙ্গলে কি হতে পারত বুঝতে পারিস? ”
“ বর্ষা বলল, কিছুই হতো না। আমি নিজেই বিয়ে ভাঙতাম। ”
অভ্র মেকি রাগ দেখিয়ে বলল,“ কবে ভাঙতি বিয়ে হওয়ার পর? ”
একহাত চুলের মধ্যে রেখে চুলকানো শুরু করে দেয়। আনমনে প্রত্যত্তরে বলে উঠে, “ হয় তো। ”
অভ্র বর্ষার একহাত চেপে ধরে বলল, “ কি বললি তুই? ”
বর্ষা আচমকা অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল, “ মানে? ”
বৃষ্টি বলল, “ বর্ষা আমরা তোর শুধু বোন না যে তোকে কষ্ট পেতে দেখে আমরা সব সহ্য করবো। দেখেছি আমরা তোকে অভ্র ভাইয়ার জন্য কান্না করতে। কোনো ভাবেই মানতে পারিনি আমাদের বোন ভালোবাসবে একজনকে আর বিয়ে করবে আরেকজনকে। কিছুতেই না এটা আমরা মেনে নিতে পারছিলাম। অভ্র ভাইয়ার সাথে কথা বলবো তারও উপায় ছিলো না। আমাদের আপসেট দেখে নিভ ও মুরাদ আমাদের এই আইডিয়া দেয়। গায়ে হলুদের রাতে আমরা সকলে হলুদ দিতে যাই তার কারণ ছিল আমরা রাস্তা খুজতে গিয়েছিলাম৷ ছোট রাস্তা পেলে বিয়ের দিন ওইরাস্তা দিয়ে নিয়ে আসবো। ”
বর্ষা তবুও রাগী গলায় বলল, “ তোদের কেন করতে হবে এসব? ”
সকলে বর্ষার গাল ছুঁয়ে বলল, “ কেননা তোকে আর অভ্র ভাইয়াকে একসাথে দেখতে চাই। দুরের কথাবার্তা না বাড়িয়ে ভালোবাসি বলে দে দুজনে দুজনকে”
বলে বাকিরা হাসতে হাসতে রুম থেকে চলে যায়। অভ্রর দিকে তাকালো বর্ষা গালে হাত দিয়ে ফিকফিক করে হাসছে সে। বর্ষা চোখ রাঙিয়ে তাকাতে অভ্র সোজা দাঁড়িয়ে পরল। কিছুক্ষণ সময়দের জন্য আবারও দুজন একা হয়ে গেলো রুমের মধ্যে বর্ষা অভ্রর দিকে মাথা তুলে তাকিয়ে বলল, “ ভুল বোঝার জন্য সরি। ”
অভ্র বর্ষার একহাত ধরে টান মারল। বর্ষাকে অভ্র ওর আষ্টেপৃষ্টের সাথে জড়িয়ে ধরে বলল, “ এই আইডিয়া টা আমার মাথায় কেন আসলো না? ’
অভ্রর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে চেচিয়ে বর্ষা বলে উঠল, “ কারণ তুমি একটা আহাম্মক তাই। ”
“ কি বললে তুমিনআমি আহাম্মক? দেখাচ্ছি এই আহাম্মক টা কি করতে পারে। ” অভ্র বলল।
কথাটা বলে এক পা বর্ষার দিকে বাড়ালে বর্ষা মুখে ভেংচি কেটে ছুটে রুম থেকে চলে যায়। কপালে এসে পরে থাকা চুলগুলো পেছনে ঢেলে দিয়ে বিছানায় বসে পরল অভ্র গালে তার হাসি ল্যাপ্টে রয়েছে।
____________________
দুপুরের পর লাঞ্চ করে সবাই তাদের রুমের মধ্যে রেস্ট করে। দুপুরে ঠিক মতো খাওয়া হয়নি তাই বর্ষার পেটের মধ্যে ছোট্ট একটা ইঁদুর ছোটাছুটি করছে। দুইহাত দিয়ে পেট চেপে ধরে রান্না ঘরে এসেছে কি রান্না করবে বলে। ঠান্ডা পানি বসিয়েছে চুলায় পানি গরম হয়ে গেছে। ছুড়ি দিয়ে পেঁয়াজ কাটতে যাবে তখন পেছন থেকে আলতো হাতে বর্ষার দুই হাতের উপর তার হাত রাখল। এমতাবস্থায় কেউ দেখলে ভাবলে নির্ঘাত দু’জনে দু’জনকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ফর্সা দু’টো হাতের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেলল বর্ষা। বর্ষার কাঁধের উপর তার থুতনি রেখে নেশালো কন্ঠে বলে উঠল, “ হাসছো কেনো আমার রাগরাগিণী? ”
বর্ষা হঠাৎ পেছনে ঘুরে ফলে বর্ষার গালের সাথে অভ্রর অষ্টদ্বয় জোড়া স্পর্শ হয়। ছুড়ি শক্ত করে ধরে স্তব্ধ দাঁড়িয়ে পরে বর্ষা। দু’জনের চিন্তার উর্ধ্বে এমন ঘটনা ঘটেছে। “ এমন কিছুরই উদ্দেশ্য ছিলো না আমার ” বলে অভ্র রান্না ঘর থেকে ছুটে চলে যায়।
অভ্রর ঠোঁট স্পর্শ করা গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে হেসে উঠে বর্ষা। চোখ দু’টো ছোটো-ছোটো হয়ে এসেছে ঠোঁটে ফুটে উঠেছে অমায়িক হাসি।
চলবে?
#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_৩৫
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
_____________
আমার সম্মন্ধে তোমরা দু’জন জানো কারণ, আমার গ্যাংয়ে তোমরা দুজন জয়েন্ট হয়েছো। সে সূত্রে তোমাদের দু’জনের আমার সম্পর্কে জানা উচিত৷ আমাদের গ্যাংয়ের মূলত কাজ তোমাদের বলা হয়েছে আশা করি তোমরা সেভাবে কাজ করবে। প্রথম বার ভুল করলে বুঝানো হবে দ্বিতীয় বার ভুল করলে ক্ষমা করা হবে। কিন্তু তৃতীয় বার ভুলের পর্যাপ্ত পরিমাণ শাস্তির জন্য তৈরি থাকতে হবে। আশা করি রুলস সম্পর্কে সবকিছু জেনেছো। আর আমি দ্য ব্রুনেল গ্রুপের হেড সে কথা কেউ জেনো জানতে না পারে। সবকিছু সবার থেকে লুকিয়ে রাখতে হবে মূলত বর্ষা, বৃষ্টি, রিয়া ও রিমার থেকে ভ্রুনাক্ষে জেনো ওরা টের না পায়। ওরা জেনো আমার সম্পর্কে কোনো কিছু না জানতে পারে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে তোমাদের। বর্ষার বিয়ে ভাঙ্গার জন্য আদ্রিককে আমি কিডনেপ করিয়ে ছিলাম সেটা জেনো কেউ জানতে না পারে। বুদ্ধি আমার ছিল শুধু ওদের কানে তোমরা তুলেছো কিডনেপ করার কথা। ওরা ভাবছে তোমাদের দুজনের বুদ্ধি শুনে আদ্রিককে ওরা প্লান করে কিডনেপ করেছিল। কিন্তু সবটাই হচ্ছে উল্টো প্লান ছিল আমার কিডনেপ করিয়েছি আমি শুধু নামটা ওদের হয়েছে। সময় হলে আমার পরিচয় আমি নিজে বর্ষাকে জানাবো তার আগে বর্ষা জেনো কোণ্থা থেকেও কোনো কিছু জানতে না পারে। দ্বিতীয়, নজর রাখবে আদ্রিকের উপর আমার সন্দেহ হচ্ছে ও থেমে থাকবে না। বর্ষার আগপাছ ঘুরবে। তোমরা ওর বেস্ট ফ্রেন্ড সেজন্য চাহিলে আদ্রিককে ওর থেকে দূরে রাখতে পারবে।
আমাদের গ্যাংয়ের যে কোনো কাজের জন্য বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে যেতে হতে পারে। তোমাদের নাম উঠলে তোমাদেরও যেতেই হবে। বাকি আমার ডান হাত সাহিল তোমাদের বুঝিয়ে দিবে।
দৃষ্টি নত রেখে উপর নিচ মাথা দুলিয়ে সাই দিলো মুরাদ ও নিভ। ওদের সম্মতি পেয়ে ভ্রু উঁচু করে উঠে দাঁড়ালো অভ্র। তার পেছনে তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ছয়জন পুরুষ। অভ্র উঠে দাঁড়ালে তারাও নড়েচড়ে দাঁড়ায়। ছয়জন লোকের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে চলে যায় অভ্র। তারাও ইশারা বুঝে মাথা দুলায়।
মুরাদ গালে হাত দিয়ে বলে উঠল, “ অভ্র ভাইয়া কি দারুন প্লান বের করেছিলো তাই না। সাপ ও মরলো অথচ লাঠি ভাঙলো না। ”
ভ্রুখানিক কুঞ্চন করে প্রশ্ন ছুঁড়ল নিভ, “ মানে? ”
“ মানে হচ্ছে, বিয়েটা ভেঙে গেলো মানে সাপ মরলো। অন্য দিকে কেউ জানতে পারলো না কিডনেপের পেছনে মাস্টারমাইন্ড অভ্র ভাইয়া যাকে বলে লাঠি ভাঙলো না। ”
ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল, “ হুহহহ ”
.
.
একহাত দিয়ে কলম আঁকড়ে ধরে ঠোঁট জোড়ার মধ্যে রেখে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে আছে। অপর হাত টেবিলের উপর কনুই ভোড় দিয়ে হাতের তালুতে মাথা রেখে স্টাডি টেবিলে বসে আছে।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বর্ষার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। ধীর সুস্থে হেঁটে এসে পেছন থেকে বর্ষার হাত ধরল। যে হাত দিয়ে সে কলম কামড়াচ্ছিল। হঠাৎ পুরুষালি শক্তপোক্ত হাতের স্পর্শ পেয়ে মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকালো। অভ্রকে দেখে হতভম্ব হয়ে পরে বর্ষা। ঠোঁট বাঁকা করে দুষ্ট হেসে অভ্র বলল, “ কি আমাকে খুব বেশি মনে করছিলে নাকি? ”
বর্ষা ভ্রু কুঁচকে বলল, “ নাহহ, তেমন কিছু নয়। ”
অভ্র উপর দিকে তাকিয়ে দেখল কলমের মোখটা কামড়ে নষ্ট করে ফেলেছে পরক্ষণে আবারও বলল, “ রাতে খাওনি নাকি বাড়ি থেকে খাবার দেয়নি? যার জন্য কলম কামড়ে খাচ্ছো? ”
ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল বর্ষা। অভ্র বর্ষার হাত ধরে টেনে ওর সাথে করে নিয়ে গেলো।
ছাঁদে এসে দু’জনে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশে আজ পুরো চাঁদ উঠেছে৷ দেখতে অমায়িক সুন্দর লাগছে। জ্যোৎস্নার আলো চারদিক আলোকিত করে রেখেছে। বর্ষার কাঁধের উপর হাত রেখে নিজের সামনে দাঁড় করালো অভ্র। বর্ষা কিছু বোঝার আগে অভ্র তার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে পরল। ভারী দীর্ঘ শ্বাস ফেলে একহাত সামনে বাড়িয়ে দিলো। ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে বলল, “ বর্ষা আজ আমি তোকে একটা কথা বলতে চাই। ”
আর কিছু বলার আগেই কোনো কিছুর শব্দ শুনে ছাঁদের দরজার দিকে তাকালো। ফোনে কথা বলতে বলতে আসছে কাব্য। ওকে আসতে দেখে ছিটকে দূরে সরে যায় বর্ষা। কাব্য কানে ফোন লাগিয়ে অন্য দিকে চলে যায়। ওদের দু’জনকে সে খেয়াল করেনি। বর্ষা সে সুযোগে সেখান থেকে পলায়ন করে। ভ্রু কুঁচকে অভ্র অভিমানী স্বরে বলল, “ এই কাব্য টাকে এখনই আসতে হলো ধ্যাত ভাল্লাগে। ”
.
.
রোজ সকালের মতো আজও সকলে একসাথে ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে। অভ্র চাচ্ছে বর্ষার সাথে আলাদা সময় পার করতে কিন্তু কিভাবে? খালি প্লেট নিয়ে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে গেলো রিয়া মা। অভ্রর প্লেটে পরোটা ও সব্জি দিয়ে বলল,‘ খাচ্ছিস না কেনো বাবা? মুখটার কি অবস্থা করেছিস দেখছিস? ”
অভ্র প্রত্যত্তরে বলল, ‘ খাচ্ছি তো ছোট মা ”
কিছুক্ষণের মধ্যে ব্রেকফাস্ট শেষ করে অনেকে উঠে চলে গেলো। অভ্রর বাবা ও চাচারা সবাই অফিসের উদ্দেশ্য বের হয়েছে তাদের সাথে কাব্য অপূর্ব ও নাহিদ গেছে। বাকিরা যার যার রুমে চলে গেছে। এখন টেবিলে বসে আছে হাতে গোণা কয়েকজন। অভ্র সংকোচ ঝেড়ে বলে উঠল, “ আমি বাড়িতে থেকে বোর হচ্ছি। আমার বাহিরে ঘুরতে যাওয়া প্রয়োজন। আমার সাথে যারা যারা যেতে ইচ্ছুক বিকেল চারটার মধ্যে রেডি হয়ে থাকবে। ”
বলে সে উঠে গেলো বাড়ির বড়রা কিছুক্ষণ অভ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিঃশ্বাস ফেলল। তারা তো বাড়ি ছেড়ে যেতে পারবে না তাই বলে লাভ নেই। সকলের মধ্য থেকে লাফিয়ে উঠে বলে উঠল, “ আমি তো যাবোই। ”
তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বর্ষার হাত শক্ত করে ধরে আবারও চেয়ারে বসিয়ে দেয় তিন্নি। আরেকপাশ থেকে বৃষ্টি বিরবির করে বলল, “ বোইন একটু সবুর কর। এভাবে লাফালে যে কেউ সন্দেহ করবে। ”
বর্ষা ওদের দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করল। সামনে থেকে অভ্রর মা বলল, “ তোরা তো যাবিই। তোদেরই তো এখন ঘোরাফেরার বয়স। অভ্র যা বলে গেলো চারটার আগে রেডি হয়ে থাকিস। আর সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বে বাড়ি ফিরে আসিস। ”
সাদা রঙের কামিজ, নীল রঙের ওড়না ও সালোয়ার পরে রেডি হয়ে গেছে বর্ষা। চুলগুলো সে ছেড়ে দিয়েছে। বলা যায় সময়ের এক ঘন্টা পূর্বে রেডি হয়ে বসে আছে। বাকিরা এখন রেডি হচ্ছে। বর্ষা বসে বসে ঘড়ির কাটা গুনছে কখন একঘন্টা শেষ হবে।
চলবে?