অবন্তর_আসক্তি #পর্ব_৫৭

0
767

#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_৫৭
#Sharmin_akter_borsha [লেখিকা]
হলুদের আসরে হঠাৎ করে আহিতা উঠে গিয়ে স্টেজের পাশে দাঁড়ালো মাইক হাতে নিয়ে সকলের উদ্দেশ্য বলতে লাগলো,

‘ লেডিস এন্ড জেন্টালমেন! লিসেন! লিসেন! কিছুক্ষনের মধ্যেই হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে। সো তার আগে নাঁচ গান হয়ে যাক? কি বলুন সবাই?’

সকলে বললো, ‘ ঠিক বলছো হোক। ‘

বিশেষ করে বর্ষা দুইহাত উপরে তুলে উল্লাসিত কন্ঠে বলতে লাগল, ‘ হ্যাঁ হ্যাঁ হক হক আমি তৈরি! ’

পাশ থেকে অভ্র বর্ষার দিকে কিছুটা ঝুঁকে ফিসফিসে আওয়াজে বলল, ‘ তৈরি মানে কি? তুমি কি এতগুলো মানুষের সামনে নাচবে ভাবছো নাকি? ’

বর্ষা অভ্রর দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে বলল, ‘ হু তো! আমি প্রাকটিস করছি চারদিন ধরে। ’

অভ্র কিছুটা রাগী গলায় বলল, ‘ মেরে গাল লাল করে ফেলবো। ভুলেও যদি এতগুলো মানুষের সামনে নাচার কথা চিন্তাও করো। তোমার নাচার কোনো প্রয়োজন নেই। চুপ করে আমার পাশে বসে থাকো। ’

বর্ষা ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে মাথা নিচু করে চুপটি করে বসে রইল। এদিকে ফোন সাইলেন্ট থাকায় কল আসায় রিংটোন বাজছে না যার জন্য শব্দ ও হচ্ছে না। পাঞ্জাবির পকেটে ফোন অনবরত বেজে উঠছে বারংবার। বিরক্ত হয়ে পকেটের উপর দিয়েই ফোন চেপে ধরল অভ্র। আঁড়চোখে একনজর বর্ষার দিকে লক্ষ্য করলো বর্ষা দুইহাত মুঠি বন্ধ করে বসে আছে তার দৃষ্টি ফ্লোরের উপর স্থির। অভ্র অগোচরে পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখলো ‘হিয়া’র নাম্বার থেকে কল আসছে। অভ্র কল লিস্ট চেক করলো এতক্ষণ যতগুলো কল এসেছে সবগুলোই হিয়া করেছে। অভ্র কপালের চামড়া ভাজ ফেলে বোঝাই যাচ্ছে হিয়ার কলে সে মারাত্মক বিরক্ত। কারো জন্য নিজের জীবনের বিশেষ মূহুর্ত সে অক্ষায়িত করতে চায় না। কোনো কিছু চিন্তা না করে ফোন সুইচ অফ করে ফেললো। আবারও বর্ষার দিকে তাকিয়ে অভ্র মুহূর্তেই হেসে ফেললো। রাগে গাল দু’টো লাল হয়ে গেছে তার রাগরাগিণী’র। অভ্র ভারী নিঃশ্বাস ফেলে বর্ষার একহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো। বর্ষা মাথা তুলে অভ্রর দিকে তাকালো, অভ্র অন্য হাত বর্ষার গালে রেখে সরু কন্ঠে বলল, ‘ তুমি শুধু আমার একান্তই প্রিয়জন! তোমাকে দেখার অধিকার শুধু আমার তোমার ভালো ও মন্দ সব কিছু শুধু আমার। তুমি যা ইচ্ছে তাই করবে শুধু আমার সামনে। নাচতে হলে নাচবে প্রয়োজন হলে আমি নিজে গিটার বাজিয়ে গান গাইবো কিন্তু সেটা শুধু একান্ত আমার সামনে। তোমাকে শুধু এক ভাবে নয় শত ভাবে দেখার অধিকার শুধু আমার। আমি চাই না আমি ব্যতিত তোমাকে কেউ দেখুক। এখানে এতগুলো মানুষের সামনে তুমি নাচলে আমার খুবই কষ্ট হবে। এখন তুমিই বলো আমার রাগরাগিণী কি আমাকে কষ্ট দিতে পারবে? তুমি কি চাও আমি কষ্ট পাই? ’

বর্ষা ডানে বামে দুইপাশে মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘নাহ!’
অভ্র বর্ষার হাত আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরে বলল, ‘ আগামীকাল আমাদের বাসর রাত নাচবে নাকি সেদিন আমার সামনে? আমি দেখবো তোমায় মন ভোরে। ’

বর্ষা লজ্জা পেয়ে এক টানে হাত সরিয়ে নেয় আর বলে উঠে, ‘ ইশশ সরো! ’
চোখ জোড়া বন্ধ করে মাথা নিচু করে হেসে ফেলে আর তারপর ফিসফিসে আওয়াজে বর্ষা আবারও বলে, ‘ভুলে যাবেন না মসাই এটা আমাদের প্রথম বিয়ে নয় দ্বিতীয় বার হচ্ছে। আগেও কিন্তু হয়েছিল।’

‘সেটা তো জবরদস্তি হয়েছিল এবার তো সকলের ইচ্ছে তে হচ্ছে দু’টো তে আকাশ পাতাল তফাত বুঝছো?’

বর্ষা ছোট করে বলল, ‘ হুম! ’

এদিকে গান বাজছে কাপল ডান্স করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে আহিতা ও মুরাদ ওদের সাথে আরও কাপল আছে তারা হচ্ছে শুভ্র-রিয়া, রিমা-সাহিল, নিভ-বৃষ্টি ওরা ওদের মতো স্টেজের সামনে।

ওই দিকে স্টেজে বর্ষার মা বাবা ও অভ্রর মা বাবা উঠেন। তারা সর্বপ্রথম ওদের দু’জনের গায়ে হলুদ ছুঁইয়ে নেমে গেলেন। তারপর বাদ বাকি সকলে এক-এক করে হলুদ দিতে লাগলো। ক্যামেরা ম্যান ঘুরে ঘুরে সবটা ক্যামেরা বন্দি করছে। পার্লার থেকে দু’জন মেয়ে এসেছে সকলের হাতে মেহেদী দিয়ে দেওয়ার জন্য সর্বপ্রথম তারা বর্ষা ও অভ্রর হাতে মেহেদী দিচ্ছে। বর্ষা দুইহাত ভোরে মেহেদী দিয়েছে একটু জায়গাও ফাঁকা নেই। অভ্র সে শুধু বাম হাতে ছোট একটা ফুলের ডিজাইন দিয়ে মেহেদী দিতে বলেছে। তার মেহেদী তে তেমন ইন্টারেস্ট নেই। বর্ষা মেহেদী দেওয়ার ফাঁকে মেয়েটার কানে কানে কি জেনো বলে তা শুনে মেয়েটা মুচকি হাসে৷ তারপর মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘ ঠিক আছে। ’

দুজনের মেহেদী দেওয়া শেষ হতেই অনেকগুলো সাদা হাত পার্লারের দু’টো মেয়ের সামনে পাতা আছে বুঝাই যাচ্ছে তারা মেহেদী দিতে ইচ্ছুক। উনারাও খুশি মনে এক এক করে সকলকে মেহেদী দিয়ে দেয়৷ সব শেষে টাকা নিয়ে তারা চলে যায়। তারা চলে যেতেই একেক জনের চগলবন্দি শুরু হয়। কারোর’ই নিজের হাতের ডিজাইন পছন্দ হচ্ছে না। সবারই অন্যের টা পছন্দ হয়েছে। কেউ কেউ তো বলছে, ‘ তোর টা বেশি সুন্দর হয়েছে। আমারটা দেখ কেমন পঁচা হইছে। ’

তো আরেকজন বিরক্তির সাথে বলছে, ‘ তোদের টা তো তাও সুন্দর হইছে। দেখ আমার টা কেমন ছেদরা বেদরা হইছে ধুত ভাল্লাগে না। হাতটাই নষ্ট কেন যে দিতে গেলাম উফফ! ’

হলুদ সন্ধ্যার অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ হতে হতে প্রায় দশটার মতো বেজে যায়। রাতের অন্ধকারে সকলে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
____________________
বাড়িতে এসে রুমে চলে যায় অভ্র। পরনের পাঞ্জাবি খুলে বিছানার রেখে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। পরনে সাদা হাফ হাতা ওয়ালা গেঞ্জি রয়েছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের গালে লেগে থাকা হলুদ গুলো তে চোখ বুলাতে লাগলো। ঠিক তখনই সশব্দে ফোন বেজে উঠলো। কিছুক্ষণের জন্য কোনে এক গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গিলছিল অভ্র ধ্যান ভাঙলো রিংটোনের শব্দে। আয়নার সামনে থেকে সরে আসলো। পাঞ্জাবির পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখে এবারও হিয়া কল দিয়েছে। হয়তো বা কোনো ইমারজেন্সি দরকার তাই এতবার কল দিচ্ছে ভেবে অভ্র কল কেটে দেয়। অভ্রর রুলস একবার কল কেটে দেওয়ার পর দ্বিতীয় বার যাতে কল না দেয়৷ সে যেই হোক সবার জন্যই এক রুলস তবে বর্ষা হলে সেটা ভিন্ন।

যেভাবে আছে সেভাবেই চলে আসে ছাঁদে চারদিকে অন্ধকার ও নিস্তব্ধতা। দূর দিগন্ত দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোস্টের নিচে শুয়ে-বসে আছে কয়েকটা কুকুর। ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে আলোয় কুকুর গুলোকে দেখা যাচ্ছে স্বচ্ছ। অভ্র কপালে ভাজ ফেলে সেদিকে তাকিয়ে আছে। অভ্রর মনে হচ্ছে ল্যাম্পপোস্টের আশে পাশে অন্ধকারে হয়তো কেউ দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে বৈকি বললে ভুল হবে। অভ্র একশ পার্সেন্ট সিইওর দিয়ে বলতে পারবে সেখানে কেউ আছে। কেননা সবগুলো কুকুর অন্ধকারে একটা জায়গায় স্থির তাকিয়ে আছে। একটা কুকুর তাকিয়ে থাকলে অন্য কথা কিন্তু সবগুলো একসাথে কেন তাকিয়ে থাকবে। নিশ্চয়ই সেখানে কেউ দাঁড়িয়ে আছে তাইতো ওরা ওমন ভাবে তাকিয়ে রয়েছে৷ দৃষ্টি সেদিকেই স্থির রেখে ফোনের লক আনলক করে কোনো এক নাম্বারে ডায়াল করল। অপর প্রান্ত থেকে কল রিসিভ করার পরপরই সে হন্ত দন্ত হয়ে অভ্রকে কিছু ইনফরমেশন দিতে লাগে। অভ্র সব শুনে গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘ নজর রাখো! ’

বলে কল কেটে দেয়। তারপর হিয়ার নাম্বারে ডায়াল করে একবার রিং হতেই কল রিসিভ করে হিয়া হয়তো ফোন হাতে নিয়ে কলের জন্য অপেক্ষা করছিল। কল রিসিভ করে অভ্র কিছু বলার আগেই হিয়া কান্না করতে করতে বলতে লাগলো, ‘ তুমি কাউকে বিয়ে করতে পারো না অভ্র। আমি ভালোবাসি তোমাকে আমি তোমার হয়ে তোমার পাশে থাকতে চাই প্লিজ তুমি অন্য কাউকে বিয়ে কোরো না আমি সইতে পারবো না। চলো না আমরা দুজনে পালিয়ে যাই অন্য কোথাও গিয়ে সংসার করি। ’

রাগী গলায় হুংকার দিয়ে অভ্র বলল, ‘ সেট-আপ হিয়া! তোমাকে টলারেট করা এখন দিনদিন অসম্ভব হয়ে উঠছে৷ কিসের ভিত্তিতে তুমি এমন কথা বলছো? তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো আমি কে? তোমার সাহস হয় কি করে আমার ফ্লাট থেকে বেরিয়ে আমার পিছু পিছু মার্কেটে চলে যাওয়ার এ্যন্ড এসব কথা ডিরেক্ট আমাকে বলার? আমি এখনও তোমাকে সহ্য করছি তার কারণ হচ্ছে তোমার বাবাকে আমি কথা দিয়েছি। ভুলে যেও না আমি যদি এক মিনিটের জন্য সে কথা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেই তাহলে তুমি দুনিয়া থেকে উঠে যাবে। ’

হিয়া এবার একটি ধাতস্থ কন্ঠে বলল, ‘ তুমি আমাকে মে’রে ফেলো তবুও তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কারো হয়ো না। অভ্র প্লিজ একটু বুঝো আমি ভালোবাসি তোমাকে। আর তুমি যদি আমাকে বিয়ে করতে রাজি না হও তাহলে আমি এখনই তোমার ফ্লাট ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে যাবো। রাস্তাতে আমার সাথে উল্টা পাল্টা কিছু হয়ে গেলে তারজন্য তুমি দ্বায়ী থাকবে অভ্র! ’

অভ্র ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলল, ‘ তুমি আমাকে ব্লাকমেইল করছো? তুমি নিজেও জানো আমার ওই ফ্লাট তোমার জন্য সুবিধাজনক। আর তুমি যদি ওখান থেকে নিজের মনমানি করার জন্য বের হও এবং নিজের বিপদ নিজে সেঁচে ডেকে আনো তাতে আমার কিছু করার। যেখানেই যাও সখ’সে যাও, আই ডোন্ট কেয়ার! গট ইট? ’

বলেই ফোনটা কেটে দিলো, ওদিকে কান্না জুড়ে দিয়েছে হিয়া সত্যিই তো সে বের হলে যে কোনো বিপদ হবে না তার তো কোনো গ্যারান্টি নেই। হিয়া সে তো ভেবেছিল বের হওয়ার কথা শুনে অভ্র এই বুঝি বলবে, ‘ তুমি কোথাও যাবে না। আমি যেতে দিবো না তোমার জন্য সব কিছু ছেড়ে দিয়ে চলে আসবো। ‘

কিন্তু সে যখন মুখ খুললো তখন তো অন্য কিছু বলল যা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না হিয়া। মোবাইল টা বুকের সাথে চেপে ধরে হাউ হুতাশ করছে হিয়া।

অভ্র ল্যাম্পপোস্টের দিকে আবারও তাকালো এবার কুকুরগুলো স্বাভাবিক ভাবেই শুয়ে আছে। মনে হচ্ছে যে ছিলো সে চলে গেছে। এক অস্বস্তিকর নিঃশ্বাস ফেললো অভ্র।

মুখ ভাড় করে রেখেছে চোখ জোড়া বন্ধ করে কোনো কিছু ভাবছে এমতাবস্থায় অভ্রকে বিস্মিত করে দিলো কারো ঠোঁট জোড়া। কেউ একজন তার অষ্টদ্বয়ের সাথে অভ্র’র অষ্টদ্বয়ের মিলন ঘটিয়েছে তবুও সেটা এক বা দুই সেকেন্ডের জন্যে আচমকা এমন ঘটনা ঘটেছে যা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিল অভ্র। চোখ জোড়া ফট করে খুলে সামনে তাকাতে দেখলো বর্ষা সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনের মধ্যে শুধু কয়েক ইঞ্চির গ্যাপ। অভ্রকে খুঁজতে রুমে যায় বর্ষা। হাতের মেহেদী দেখাবে বলে। রুমে গিয়ে অভ্রকে দেখতে না পেয়ে আশেপাশে তালাশ করে কোথাও না দেখে নাম্বারে কল দেয় তখন ফোন বিজি দেখে রুমে চলে যায় হঠাৎ বর্ষার মনে হয় অভ্র হয়তো বা ছাঁদে আছে। মনে যখন হয়েছে একবার গিয়ে চেক করতে কি? রুম থেকে বেরিয়ে সোজা ছাঁদের দিকে রওনা দেয়। ততক্ষণে অভ্র হিয়ার সাথে কথা শেষ করে ফোন নিচে নামিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়। বর্ষা ধীর পায়ে নিঃশব্দে আসতে আসতে অভ্রর সামনে এসে দাঁড়ায়৷ বর্ষা অভ্রর দিকে তাকিয়ে দেখলো মুখে তার গাম্ভীর্যের হাল্কা ভাব, তবুও তার সৌন্দর্য জেনো অশেষ। তা দেখেই দুষ্টুমি একটা বুদ্ধি আসে বর্ষার মাথায় এবং সাথে সাথে পা কিছুটা উঁচু করে অভ্রর ঠোঁট জোড়ার সাথে বর্ষা তার ঠোঁট জোড়া কিয়ৎক্ষণের জন্য স্পর্শ করায়। কিছু একটা মনে করে মূহুর্তে আতংকিত হয়ে সামনে থেকে কয়েক কদম পেছনে সরে যায়। অভ্র বর্ষার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল, ‘ তড় সইছে না বুঝি? আর মাত্রই তো একদিন। ’

কিছুক্ষণ আগের কথা মনে করতেই লজ্জায় ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলছে আর এখনকার অভ্রর কথাশুনে তো একটা জায়গা খুঁজছে যেখানে মুখ লুকাতে পারবে। এমন দুর্দশায় দাঁড়িয়ে আছে যেখানে মাথা টাও কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। বর্ষা অভ্রর দিকে সরু চোখে তাকালো। অভ্র ভ্রুযুগল কুঁচকে বর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে। বর্ষা শুকনো ঢোক গিলে ভয় মিশ্রিত কন্ঠে বলল, ‘ আআআ. আমি আসছি! ’

বলেই বর্ষা চলে যাচ্ছে দ্রুত পায়ে অভ্র বর্ষার দিকে এগিয়ে গেলো এবং পেছন থেকে দুইহাতে জড়িয়ে ধরলো তাকে। একরাশ বিস্ময় নিয়ে দাঁড়িয়ে যায় বর্ষা। অভ্র বর্ষার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, ‘কেনো এসেছো সেটা না বলেই চলে যাচ্ছো?’

অভ্রর ফিসফিসে আওয়াজে কিছুটা কেঁপে উঠলো বর্ষা। অভ্র বর্ষাকে আরও শক্ত করে ধরে বলল, ‘ কাঁপছো কেন তুমি হুহহ? আমি কি কিছু করছি তোমাকে? ’

“মেহেদী দিয়েছি রং খুব গাঢ় ও সুন্দর হয়েছে। হাতের তালুতে তোমার নামটা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে দেখে মনে হচ্ছে কোনো এক বাগিচার হাজারও ফুলের মধ্যে একটা ফুল ফুটে আছে। আমি চেয়েছিলাম যে কাল সকালে সকলে দেখার পূর্বে তুমি সবার আগে এখন দেখো। তোমাকে দেখাতেই এসেছি। ”

অভ্র বর্ষাকে ধরে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে বলল, ‘ আচ্ছা এই ব্যাপার কোই দেখি। ’

বর্ষা অভ্রর সামনে দুইহাত মেলে ধরলো। অভ্র ফোনের টর্চ লাইট অন করে কিছুক্ষণ হাতের দিকে তাকিয়ে রইল পরক্ষণে বলল, ‘ তোমার হাতে আমার নাম সত্যিই খুব মানান সই। আচ্ছা ওয়েট আমি বরং এটার একটা ছবি তুলে রাখি। পরে ইচ্ছে হলেই দেখতে পারবো। ’

প্রত্যত্তরে ফিক করে হেসে ফেললো বর্ষা আর বলল, ‘ আচ্ছা! ‘

ছবি তোলা হয়ে গেলে বর্ষা জিজ্ঞেস করে, ‘ আমি তোমাকে কল দিয়ে ছিলাম তখন তোমার ফোন ব্যস্ত ছিলো। এত রাতে কার সাথে কথা বলতে ছিলে? ’

অভ্র বর্ষার থেকে আর কোনো কিছু লুকাতে চায় না তাই একবাক্যে বলে উঠল, ‘ হিয়া কল দিয়েছিল। ’

বর্ষা হিয়ার কথা শুনে অভ্রর হাত ছেড়ে দেয়। আর তার থেকে কিছুটা দূরে সরে যায়। অভ্রর দিকে তাকিয়ে কর্কশকন্ঠে বর্ষা প্রশ্ন ছুঁড়ল, ‘ ওইদিন মার্কেটে একটা মেয়ের সাথে কথা বলছিলে, সে কে ছিলো? এখন বলো না সেটা হিয়া ছিল।’

অভ্র বর্ষার দিকে তাকালো অস্ফুটস্বরে বলে উঠল, ‘ তুমি সেদিন আমাদের দেখেছিলে? ’

বর্ষা গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে দুইবার উপর নিচ মাথা নাড়লো। অভ্র বর্ষার কাছে এগিয়ে গেলো আর বলল, ‘ ওইদিন ওই মেয়েটা যাকে তুমি দেখেছিলে সে হিয়া’ই ছিল। ’

ক্ষীণ কন্ঠে বর্ষা বলল, “ ও, আচ্ছা! ”

বলে বর্ষা অভ্রর সামনে থেকে চলে যেতে নেয়। অভ্র বর্ষার হাত ধরে হিচকা টান দিয়ে নিজের মুখের মধ্যে বর্ষার মুখটি লুকিয়ে ফেলে। তার লজ্জা মাখা মুখটি লুকানোর জন্য এখন সে পারফেক্ট জায়গা পেয়েছে। চোখের কার্নিশ বেয়ে একফোঁটা অশ্রু কণা গড়িয়ে পরল বর্ষার অভ্রর অগোচরে। অভ্র বর্ষাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘ তুমি যেমনটা ভাবছো তেমন কিছুই নয়। তুমি শুধু আমাকে একটু সময় দাও আমি তোমাকে সব বুঝিয়ে বলবো। ’

বর্ষা জড়ানো কন্ঠে বলল, ‘ আমি কিছু ভাবিনি। আমি এখন রুমে যাবো। ‘

বলে অভ্রর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। অভ্র বর্ষার হাতের পাঁচটি আঙুলের ভাজে ভাজে নিজের আঙুল গুলো রেখে নেশালো কন্ঠে বলল, “ তুমি এখন কোথায় যাবে না। তুমি এখন আমার বুকের মধ্যখানটায় থাকবে। আমার পাশে বসে দূর আকাশের চাঁদকে দেখবে আর আমার ভালোবাসার গভীরতার উষ্ণতা অনুভব করবে। ”

বলেই বর্ষার অষ্টদ্বয়ের সাথে নিজের অষ্টদ্বয় মিশিয়ে দিলো অভ্র এক গভীর অনুভূতি বয়ে যায় দু’জনের শিরায় শিরায়।

চলবে?

কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ]

#শারমিন_আক্তার_বর্ষা (লেখিকা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here