অরুণিকা #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ ||পর্ব-০৭||

0
1707

#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-০৭||

১৩.
মহল্লার বাচ্চাদের সাথে সারাদিন দৌঁড়ঝাঁপ করেই সময় পার করে অরুণিকা। ইদানীং সে একটু বেশিই দুষ্টু হয়ে গেছে। কারো কথা শুনবে না। নিজের ইচ্ছেমতো ছুটোছুটি করবে। আজও এর ব্যতিক্রম হয় নি।
তাদের মহল্লার এক চাচা নতুন বাইক কিনে এনেছেন। সেই বাইকটা নিয়েই বাচ্চাদের এতো গবেষণা। তারা এক নতুন খেলা আবিষ্কার করেছে। মহল্লার শুরুর সীমানা থেকে দৌঁড়ে এসে, যে আগে বাইকে উঠে, আবার সেখান থেকে নেমে একদম শেষ মাথায় পৌঁছাবে, সেই হবে বিজয়ী। তবে এই খেলায় অরুণিকায় সবচেয়ে ছোট। বাকীদের বয়স সাত-আট বছর হবে।

এদিকে অরুণিকাকে সুরাইয়ার কাছে রেখে আরাফ, আহনাফ, তাহমিদ ও তূর্য স্কুলে চলে গেছে। ইভান আর ইমন তূর্যের জন্য গিটার কিনতে গেছে।
সুরাইয়া সংসারের কাজে ব্যস্ত। তিনি অরুণিকাকে একটু পর পর এসে দেখছেন। অরুণিকা তো তার বয়সী বড় বন্ধুদের সাথে হৈ হৈ করতেই ব্যস্ত। এরপর শুরু হলো তাদের খেলা। বাইকের উপর একসাথে তিনজন উঠে নেমে পড়লো। এরপরই বাইকটি নিজের ভারসাম্য হারিয়ে ফেললো। ঠিক যেই সময় অরুণিকা বাইকে উঠে নামতে যাবে, তখনই বাইকটাসহ সে নিচে পড়ে গেলো। বাইকের ভারে তার পা আর পিঠের চামড়া একটুখানি ছিঁড়ে গেলো। মুখটা সোজা ইটের রাস্তায় এসে পড়তেই একটা দাঁত তো ভাঙলই সাথে থুতনিও ফেঁটে গেলো। তারপর তার কান্না দেখে পুরো মহল্লায় আতংক ছড়িয়ে পড়লো। সুরাইয়া আর আলেয়া আপা দৌঁড়ে বেরিয়ে এলেন। এরপর নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। ডাক্তার জানিয়েছে থুতনিতে সেলাই করতে হবে।

এদিকে ইভান আর ইমন গিটার পছন্দ করে স্কুলের বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে। তখনই আরাফদের ছুটি হয়েছিল। তারা স্কুল থেকে সোজা গিটার কিনতে যাবে। কিন্তু তারা বের হওয়ার আগ মুহূর্তেই সালেহ আলী স্কুলে এসে তাদের অরুণিকার ব্যাপারে বললেন। তারাও দেরী না করে হাসপাতালে ছুটে গেলো। গিয়ে দেখলো অরুণিকা নিস্তেজ হয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। চোখ দুটি আধো খোলা, আধো বন্ধ। অরুণিকার এমন অবস্থা দেখে আহনাফের রাগ উঠে গেলো। সে একটু কর্কশ কন্ঠে সুরাইয়াকে বলল,
“আপনি তো বলেছিলেন ওকে দেখবেন, তাহলে ওর এই অবস্থা কিভাবে হয়েছে?”

সালেহ আলী আহনাফকে সান্ত্বনা দেওয়ার সুরে বললেন,
“দেখো, ও তো ভেতরে কাজ করছিলো। আর অরুণিকা বাইরে খেলছিলো। সে তো বুঝতে পারে নি, এমন কিছু হয়ে যাবে।”

সুরাইয়া কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললেন,
“বাবুনকে কি আমি একটুখানি ভালোবাসি নাকি? অনেক ভালোবাসি। আমি তো জানতাম না যে ওমন ঘটনা ঘটে যাবে। এই তো একটু আগেই তাকে দেখে গেলাম। কি সুন্দর খেলছিলো তখন! ব্যস চোখের পলক পড়তেই এই দুর্ঘটনা ঘটে গেলো। আমাকে ক্ষমা করো বাবা। আমি অনেক খারাপ কাজ করেছি। আমার তো ওকে বাইরে বের হতে দেওয়া উচিত ছিলো না।”

এবার আলেয়া আপা বললেন,
“ওকে কি করে চোখে চোখে রাখবো বলো দেখি। কি দুষ্টু হয়েছে! এক মিনিট তো শান্ত হয়ে বসেই থাকে না। সারাদিন ছুটোছুটি করবে। সকালেও খাওয়ার সময় কতো তাল-বাহানা করেছিলো, এরপর একটুখানি রুটি খেয়ে আবার হুমড়ি খেয়ে বেরিয়ে পড়েছে।”

সালেহ আলী বললেন,
“হ্যাঁ, অরুণিকা তোমাদের ভীষণ ভয় পায়। ওদের কথা তো শুনেই না।”

আরাফ অরুণিকার হাত ধরে বসে আছে। তার চোখ দু’টো ছলছল করছে। ইমনও অরুণিকার পাশে বসে আছে। কিছুক্ষণ আগেই ডাক্তার ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে গেছেন। এরপর থুতনিতে তুলা দিয়ে গজ ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু ওষুধপত্র কেনা হয়েছিলো। আর অপারেশনের জন্য হাসপাতালে অর্ধেক টাকা আগেই দিয়ে দিতে হবে। তাদের হাতে তূর্যের গিটার কেনার টাকাটাই আছে। তাহমিদ টাকাগুলো ব্যাগ থেকে বের করে বলল,
“তূর্যের জন্য গিটার…”

তূর্য একটু দূরেই ছিলো। সে জানে আজকে তার বন্ধুরা তাকে সারপ্রাইজ দেবে। আর এটাও বুঝেছে সেটি তার প্রিয় গিটারই হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে অরুণিকার চেয়ে বেশি তার জন্য কোনো কিছুই গুরুত্বপূর্ণ নয়। সে ইভান আর তাহমিদের সামনে এসে বলল,
“টাকাটা দিয়ে দে। আগে টুইংকেলের চিকিৎসা হবে, তারপর আমার স্বপ্ন।”

ইভান বলল, “তুই জানিস?”

“তোদের আমি ভালো করেই চিনি। আমি জানতাম তোরা আমাকে গিটার কিনে দেওয়ার পরিকল্পনা করছিস। কিন্তু টুইংকেল সুস্থ না হলে আমার কিছুই ভালো লাগবে না। টাকাটা দিয়ে দে। আমাকে না হয় পরে কিনে দিবি।”

ইভান টাকাটা সালেহ আলীকে দিয়ে দিলো। তিনি টাকাগুলো হাসপাতালে জমা করে দিলেন। এরপর অরুণিকাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হলো। আর আধা ঘন্টা পর থুতনিতে চারটা সেলাই করিয়ে তাকে বের করে আনা হলো। অরুণিকা এখনো ঘুমের মধ্যেই আছে। হাসপাতাল থেকে তাকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। তবে অ্যানাসথেসিয়া দেওয়ায় সে এখনো অচেতন অবস্থায় আছে। আরো কয়েক ঘন্টা হাসপাতালে রাখলে আরো বিল আসবে। আর এতোগুলো টাকা একসাথে দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব না। তাই তারা অরুণিকাকে বাসায় নিয়ে এসেছে।

রাত তিনটায় অরুণিকার ঘুমটা পুরোপুরি কাটলো। আর এরপর থেকেই সে ব্যথায় ‘উঁ উঁ’ করে কাঁদছে। তার কান্নার শব্দ শুনে আহনাফ তার পাশে এসে বসলো। নরম কন্ঠে বলল,
“অরু, তোমার খুব ব্যথা করছে?”

অরুণিকা ঠোঁট ফুলিয়ে মাথা নাড়লো। তারপর হাতে যেই জায়গায় ব্যথা লেগেছে তা দেখিয়ে দিতে লাগলো। আহনাফ হাতে ফুঁ দিয়ে বলল,
“এখন ঠিক হয়ে যাবে। আমি ম্যাজিক দিয়েছি।”

ইভান অরুণিকার সামনে একটা বক্স রেখে বলল,
“এখানে কি আছে বলো তো!”

অরুণিকা বালিশ থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে বসলো। ইভান বলল,
“তোমার জন্য এনেছি।”

অরুণিকার চোখে মুখে আনন্দ। সে বক্সটা নিজের কাছে টেনে আনলো। ইমন তাকে বক্স খুলে দিতে সাহায্য করলো। ভেতরে একটা পুতুল বিড়াল ছিলো। অরুণিকা সেটা দেখে খুশি হয়ে বলল,
“এটা আমার ছানা?”

ইমন বলল,
“হ্যাঁ, এখন এটা দিয়েই খেলবে। বাইরে যাবে না।”

অরুণিকা বিড়ালটাকে তার পাশে বসিয়ে রাখলো। কিছুক্ষণ নড়াচড়া করার পর সে মলিন মুখে বললো,
“ছানা তো হাঁটছে না। ও কি হাঁটতে পারে না?”

তাহমিদ বলল,
“ও একটু পায়ে ব্যথা পেয়েছে তো তাই।”

“কোথায় ব্যথা পেয়েছে?”

তূর্য তাহমিদকে বলল,
“একটা বিড়াল বাচ্চা নিয়ে এলেই তো হতো। এসব পুতুল দিয়ে ও কি করবে?”

তাহমিদ চোখ বড় বড় করে বলল,
“বিড়াল নিয়ে এলে আমার ঘর নষ্ট করবে। এখন পুতুল দিয়েই খেলুক।”

এবার আরাফ বলল,
“তূর্য যদি অরুর জন্য ওর প্রিয় জিনিস ত্যাগ করতে পারে, তুই এতোটুকু করতে পারবি না?”

তাহমিদ কিছুটা দমে গেলো। কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
“আচ্ছা, ওর খেলার সাথী এনে দেবো। কিন্তু বিড়ালের বাচ্চা না। আমি পাখি কিনে এনে দেবো। খাঁচায় থাকলে পরিষ্কার করা সহজ হবে। কিন্তু বিড়ালটা পুরো মহল্লা দৌঁড়ে এরপর আমার বাড়িতে ঢুকবে, এ আমি হতে দেবো না। অপরিচ্ছন্ন কোনো কিছুই আমার পছন্দ না। আরেকটা কথা, পাখি আমিই কিনে এনে দেবো। কিন্তু তার খাঁচা পরিষ্কার করার দায়িত্ব তোদের। আমি এর মধ্যে নেই।”

ইমন বলল,
“তাহমিদের অতিরিক্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কিন্তু এক প্রকার মানসিক রোগ৷ কয়েকদিন আগে পত্রিকায় দেখেছিলাম, এই ব্যাধিকে শুচিবায়ু বলে। বিছানায় কেউ বসলে সমস্যা, খালি পায়ে হাঁটলে সমস্যা, কেউ বাসায় এলেই আবার ঘর পরিষ্কার করা, থালা-বাসন আলাদা করা, এসব রোগ।”

“এগুলো রোগ না৷ এগুলো করা উচিত। আমাদের স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া দরকার। আর আমরা বাসায় কিন্তু এভাবেই চলেছি। এখানে এসে ব্যতিক্রম কেন হবে? আমাদের কি কখনো আলাদা প্লেট ছিলো না। আলাদা গ্লাস ছিলো না?”

আরাফ বলল,
“ভাই ওই পরিবেশ আর এই পরিবেশ আলাদা। ওখানে কাজের লোক আমাদের জামা-কাপড় ধুয়ে দিতো। এখন আমরা সেই কাজ নিজেরা করছি। তোর অতি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কিন্তু আমরা সহ্য করছি৷ বাকীরা করবে না। প্রতিবেশীরা মাঝে মাঝে আসে, তুই ওদের সামনে এমন করলে ওরা কি মনে করবে? এখানে সবাই তোকে ছোটবেলা থেকে দেখে আসে নি। তাই বাইরের মানুষদের সামনে নিজের এসব দুর্বলতাগুলো দেখানো উচিত না।”

তাহমিদ মুখ খিঁচিয়ে বলল,
“ওরা পাশের ঘর থেকে খালি পায়ে বাসায় আসবে, আর আমি বাসায় ঢুকতে দেবো? রাস্তা কি কেউ স্যাভলন দিয়ে পরিষ্কার করেছে?”

ইভান হেসে বলল,
“ভাই তোরা কাকে বোঝাচ্ছিস? ওর মাথায় এসব জীবনেও ঢুকবে না। ও থাকুক না, ওর ডেটল স্যাভলন নিয়ে, আমাদের কি!”

তূর্য এবার অরুণিকার পাশে বসে বলল,
“টুইংকেল, তোমার দাঁতটা দেখি।”

অরুণিকা মুখ উঠিয়ে তার ভাঙা দাঁতটি দেখালো। তূর্য তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“টুইংকেলের নতুন দাঁত উঠলে আমি সবাইকে মিষ্টি খাওয়াবো।”

অরুণিকা তূর্যের কাছে এসে বলল,
“আমি লাড্ডু খাবো। শতু আপু দিয়েছিলো। অনেক মজা।”

ইভান ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“কবে দিয়েছিলো তোমাকে?”

“অনেকবার। ওদের বাড়িতে অনেক মিষ্টি থাকে। সন্দেশ, ক্ষীর, রসো গোল্লা। এতো মজা! আমাকে এনে দেবে?”

আরাফ বলল, “কালই নিয়ে আসবো।”

এবার তাহমিদ বলল,
“আনতে হবে না। বাইরের খাবার খেলে ও অসুস্থ হয়ে যাবে। এমনিতেই মুখ ফেটে বসে আছে। জানিস, ওসব মিষ্টির দোকানে কতো মাছি ভনভন করে!”

তূর্য বলল,
“আমি যা ভেবেছি তাই। তুই যে এই কথা বলবি, তা আমি আগেই জানতাম।”

“আগে আমি কথা শেষ করি।”

“আচ্ছা, আচ্ছা, বল।”

“আমি এগুলো বাসায় বানাবো। তারপর না হয় খাবি। আর আমার মাথায় আরেকটা বুদ্ধি এসেছে।”

“কি বুদ্ধি!”

“মিষ্টিগুলো বিক্রি করলে অনেক লাভ হবে। দোকানে এসবের অনেক দাম। এরা তো পূজা-অর্চনায় এসব মিষ্টি নিয়ে যায়। এতে ওদেরও লাভ হলো, কম দামে মিষ্টি কিনতে পারলো, আর আমাদেরও লাভ হবে। এই মহল্লায় কিন্তু অনেক হিন্দু পরিবার আছে। শতাব্দীরাও কিন্তু আমাদের থেকে নিয়ে যেতে পারে। এখন এই মুহূর্তে ছোট একটা ব্যবসা করলে, আমরা ভালোভাবে চলতে পারবো। আগামী বছর অরুণিকাকে স্কুলে ভর্তি করাতে হবে। ও তো এখন অনেক কিছুই বুঝে। শুধু শুধু বাসায় বসে থেকে কি হবে?”

“বুদ্ধিটা ভালো। কিন্তু অনেক সময় দিতে হবে।”

“হ্যাঁ, দেবো। অর্ডার আসলে বানাবো। প্রতিদিন তো আর বানাবো না।”

“এর জন্য একটা ফ্রিজ কেনা দরকার। নয়তো নষ্ট হয়ে যাবে। ফ্রিজ কেনার টাকা কোথায় পাবি? এখন তো শুকনো খাবারগুলো দিয়েই চলে যায়। মাছ-মাংস চাচাদের বাসায় রেখে আসি। কিন্তু মিষ্টি বানিয়ে ওখানে রাখলে থাকবে? ওনার বাচ্চাগুলো যা দুষ্টু! একদিনেই সব শেষ করে দেবে।”

তাহমিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আসলেই সংসার চালানো বড় ঝামেলার ব্যাপার। বাবা-মা এতোকিছু কিভাবে সামলিয়েছে?”

পরের দিন তাহমিদ তার কথা রেখেছে। সে একজোড়া টিয়া পাখি নিয়ে এসেছে। অরুণিকা সেই পাখি পেয়ে ভীষণ খুশি। সারাদিন খাঁচার এইপাশ ওইপাশ ছুটোছুটি করে সময় পার করেছে। এদিকে তূর্য আর আহনাফ মিষ্টি বানানোর জন্য দোকান থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে আনলো। ঘরে ঢুকতেই শতাব্দী এসে বলল,
“বাহ! ভালো বাজার-সদাই হয়েছে দেখছি। তা আজ কি জিলাপি হবে নাকি নাড়ু।”

আহনাফ কোনো উত্তর না দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো। তূর্য হেসে বলল,
“তুমি যা বলো তাই হবে।”

শতাব্দী হেসে বলল,
“বাসায় কি ঢুকতে পারি? অরুণিকাকে দেখতে এসেছি।”

“অবশ্যই।”

“না, আপনাদের বন্ধুমশাই যদি আবার আমাকে তাড়িয়ে দেয়?”

তূর্য শতাব্দীর পায়ের দিকে তাকালো। শতাব্দী বলল,
“আমি পা ভালোভাবেই ধুয়ে এসেছি। একটুও ময়লা নেই। দেখাবো?”

তূর্য হেসে বলল,
“আমাকে দেখাতে হবে না। ভেতরে চলো।”

শতাব্দীকে দেখে অরুণিকা ছুটে এলো। শতাব্দী অরুণিকাকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগলো। তাহমিদের চোখাচোখি হতে শতাব্দী বলল,
“জিলাপি আজ ক’টা প্যাঁচ লাগিয়েছে?”

কথাটি বলেই শতাব্দী তার চুলগুলো পেছন থেকে সামনে নিয়ে এলো। তা দেখে তাহমিদ মুচকি হাসলো। আজ শতাব্দী চুল আঁচড়ে এসেছে। দেখতে বেশ পরিপাটিই লাগছে। এভাবে দেখলেই তো মায়া লাগে। এ কথা তাহমিদ মুখে চেপে রাখলো না। বলল,
“আজ এতো প্যাঁচ লাগায় নি। প্যাঁচবিহীন পরিপাটি জিলাপিই তো দেখছি।”

শতাব্দী হাঁ করে রইলো। তূর্য আর আহনাফ তাহমিদের দিকে তাকিয়ে রইলো। তাহমিদ নিজের ভারসাম্যহীন কথায় নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলো। সে আমতা-আমতা করে বলল,
“মানে আজ সন্দেশ বানাবো। জিলাপি না। অরুণিকা খেতে চাইছে।”

শতাব্দী খুশি হয়ে বলল,
“আমার সন্দেশ খুব প্রিয়। আমাকেও দেবে?”

“বেশি বানাতে পারলে সবাইকে দেবো।”

“কম হলে আমাকে দেবে না?”

তাহমিদ ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“এভাবে কেউ খুঁজে খুঁজে নিমন্ত্রণ নেয়?”

“আমি তো অরুণিকার বান্ধবী। আমাকে তো সবার আগেই নিমন্ত্রণ করা উচিত।”

তখনই ইভান, আরাফ আর ইমন বাসায় এলো। শতাব্দীকে দেখে ইভান কিছুটা বিরক্ত হলো। কোনো কারণ ছাড়াই সে শতাব্দীর উপস্থিতি পছন্দ করে না। শতাব্দী ইভানের মুখের দিকে তাকিয়ে অরুণিকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। তারপর যেতে যেতেই ইমনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এ বাড়িতে এলে ষষ্ঠ রকমের মানুষ দেখা যায়। কেউ হাসিখুশি থাকে তো কারো মুখে বিরক্তির ছাপ। কেউ সুন্দর করে কথা বলে, আর কারো মুখ যেন আগুনের গোলা। কেউ অতিথিদের সাথে মিষ্টি ভাষী, আর কেউ কখনো তেঁতো হলে, কখনো হয় বাসি।”

শতাব্দী বের হতেই তূর্য গেইট লাগানোর জন্য বাইরে এসে বলল,
“এর মধ্যে আমি কোনটা?”

“ভেবে দেখো। কারণ এই বাসায় তিনজন সোজা, তিনজন বাঁকা। বাঁকাদের খুঁজে নাও, পেয়ে যাবে সোজা।”

শতাব্দী কথাটি বলেই হাসতে হাসতে চলে গেলো। ইভান ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“আমার মুখে বিরক্তির ছাপ, নাকি আগুনের গোলা। ও আমাকেই ইঙ্গিত করে বলেছে, তাই না?”

আহনাফ বলল,
“কি বা যায় আসে! মানুষের বলার বলবেই। আমরা যেমন ওভাবেই ভালো আছি। অন্যদের জন্য তো আর নিজেদের পরিবর্তন করতে পারবো না।”

এবার ইমন বলল,
“না, এটা ভুল। আহনাফের কিন্তু একটু পরিবর্তন হয়েছে।”

আহনাফ এবার অরুণিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তবে অরুর জন্য পরিবর্তন হতে সমস্যা নেই।”

চলবে-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here