আড়ালে_অন্তরালে #মাহমুদা_লিজা পর্বঃ১১

0
404

#আড়ালে_অন্তরালে

#মাহমুদা_লিজা

পর্বঃ১১

মধ্যরাতে ফোনের কর্কশ আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল জামশেদ রহমানের। ফোনটা হাতে নিয়ে বিশ্রী একটা শব্দ উচ্চারণ করে দেখলো আননোন নাম্বার।
কিছু একটা ভেবে কলটা রিসিভ করে কানে লাগাতেই ওপাশ থেকে বলল – কেমন আছেন?
জামশেদ আবারও বিশ্রী ভাষাটা উচ্চারণ করে বলল – কে, এত রাতে ফোন দিয়ে জিগায় কেমন আছেন?
অশালীন শব্দটা শুনেও ওপাশের মানুষটা বিন্দুমাত্র রাগলো না। বরং শীতল কন্ঠে বলল – তামান্না রহমান কেমন আছেন? আমি তার ছেলে মুরাদ বলছি। তিনি ভালো আছেন কিনা তা জানতে চাই।

জামশেদ রহমান ঘামতে শুরু করলেন। চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন – তামান্নার একটাই ছেলে, মুরাদ নামে তার কোন সন্তান নেই।
ফোনের ওপাশ থেকে হো হো শব্দে কানফাটানো হাসি শুনে জামশেদ বলল – তামাশা!
ফিরতি জবাব এলো – আপনার জন্য একটা গুড নিউজ আছে। সাদমানকে কব্জা করে ফেলেছি।
জামশেদ আর শুয়ে থাকতে পারলেন না। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গেছে তার। হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন – তোরে পাইলে কিন্তু…..
কথা শেষ হওয়ার আগেই ওপাশ থেকে বলল – জানেন মিস্টার জামশেদ রহমান, ঐ বেচারাকে টোটালি সুন্নাতে খৎনা করানো হয়েছে। মানে সমূলে উৎপাটন।

জামশেদ চিৎকার করে বলে উঠলো – তোকে জ মে ডাকছে।
ফিরতি জবাবে ভিরমি খেল জামশেদ। হাঁপানী রোগীদের মত কাশতে কাশতে বলল – তুই মাহতাব খানের ছেলে?
কোন জবাব এলোনা। হ্যালো হ্যালো বলার পরও জবাব না আসায় কান থেকে ফোনটা নামিয়ে দেখলো কল ডিসকানেকটেড।

_____

ভোরের কাছাকাছি সময়টায় বুকের উপর ভারী কিছু অনুভব হতেই ঘুম উবে গেল ফাহিমের। অন্ধকার হাতড়ে ফোনটা হাতে নিয়ে টর্চ জ্বা লা তে ই দেখলো মায়ার একটা হাত তার বুকের উপর রাখা। ফাহিম হাতটা সরিয়ে দিলোনা। মায়া তার অনেকটাই কাছে সরে এসেছিল। তার ইচ্ছে করল মায়াকে বুকে জড়িয়ে নিতে। কিছু একটা ভেবে তার ইচ্ছেটা বুকেই চেপে রাখলো। ফোনের টর্চটা মায়ার মুখের উপর পড়তেই ফাহিম হেসে দিল। খুব কষ্টে হাসিটা চেপে রেখে সে নিজে নিজেই বলল উপন্যাসের পুরুষগুলো নাকি বউয়ের ঘুমন্ত চেহারা দেখে প্রেমে পড়ে, আর আমি আমার বউয়ের ঘুমন্ত চেহারা দেখে ভয় পাইছি। চুলগুলো এলোমেলো করে কি করছে! কেউ দেখলে বলবে শ্যাওড়া গাছ থেকে নেমে এসেছে।
আনমনে এসব বলে মায়ার চুলগুলো মুখ থেকে সরিয়ে দিল ফাহিম। হঠাৎ তার চোখ পড়ল মায়ার বা হাতটার আঙ্গুলে। কোন কিছুর আঘাত স্পষ্ট। হাতের কব্জিটায় মোটা আঘাতের চিহ্ন। মায়ার প্রতি করা রাশেদা বেগমের বি ভৎ স আঘাতগুলো দেখে নিজেকে আর আঁটকে রাখতে পারলো না সে। ঘুমন্ত ঐ এক রত্তি মেয়েটাকে এক ঝটকায় টেনে বুকে জড়িয়ে নিল।

আচমকা হেঁচকা টানে ঘুম ভেঙে গেল মায়ার। ঘুম ঘুম চোখে সে শুধালো – এভাবে ঘুমের মধ্যে টানাটানি করছেন কেন? শরীরটা কাঁপছে আমার।
মায়াকে ব্যাপারটা বুঝতে না দিয়ে ফাহিম বলল – প্রেম উতলে উঠেছে বউ। তোমার ঐ বাউলা চুলের দোলায় আমার প্রেম ডগমগ হয়ে উঠেছে।

ফাহিমের হেয়ালিপনায় মায়া লজ্জা পেয়ে বলল – আস্তাগফিরুল্লাহ। কি অভদ্র আপনি!
ফাহিমের হাসিটা এবার দ্বিগুণ হলো। মুখটা মায়ার কানের কাছে নিয়ে বলল – অভদ্র হয়ে কি লাভ হলো? এত সুন্দর পুতুলের বা চ্চা আমার পাশে শুয়ে আছে অথচ একটা চুমুও খেতে পারলাম না। আহা! কষ্ট কই রাখি।
মায়ার ইচ্ছে হচ্ছে উঠে পালাতে, লজ্জায় তার কান গরম হয়ে গেছে। লোকটার মুখে কিছুই আটকায় না।
ফাহিমকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে একেবারে খাটের কিনারায় গিয়ে উল্টোপাশে মুখ করে শুয়ে পড়লো সে। ফাহিম বাঁধা দিলোনা। মুখ উঁচু করে বলল – আজ গ্রামে যাব বাবার কাছে। তৈরী হয়ে নাও। ওখানে গেলে না হয় বউ সাজিয়ে বাকি চুমুটুমু দেয়া হবে। লাল বেনারসী কিনেছে বাবা।
আর থেমে থাকতে পারলো না মায়া। চেঁচিয়ে বলে উঠলো – আপনি খুব নির্লজ্জ। মুখে কোন লাগামই নেই।
ফাহিমও থামলো না। পাল্টা উত্তর দিল – মুখে লাগাম না থাকলে চুমু কার্য সিদ্ধি করে নিতাম।
ফাহিমের সাথে কথায় না পেরে মায়া উঠে গিয়ে বারান্দায় বসলো। ফাহিমের হাসি যেন থামছেই না। তার মায়াবতীকে এতটুকু জ্বা লা তে তার ভালোই লাগছে।

চলবে…

(শারীরিক অসুস্হতার জন্য গল্প দিতে দেরী করেছি। আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এখনো অসুস্থতা কমেনি, তাই ছোট্ট এই পর্বটুকু পড়ে নিন☺️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here