“আমি তোমাকে বিয়ে করেছি শুধুমাত্র নিজের ফিজিক্যাল নীড পূরন করার জন্য। তুমি রাঁধবে বাড়বে,বাড়ির কাজ করবে আর রাত হলে স্বামী সেবা করবে ব্যস এতটুকুই তোমার কাজ।’
” এই জন্যই গরীব ঘরের মেয়ে বিয়ে করে এনেছেন।যাতে তাকে দাসের মতো ব্যবহার করতে পারেন।”
তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে নিরুপমা।
“কথা খুব তাড়াতাড়ি ধরে ফেলতে পারো দেখছি। বাহ্ , I am impressed .”
“আর আপনার মনে হয় আপনার অপমান সহ্য করে আমি স্ত্রীর কর্তব্য পালন করে যাবো। তার থেকে বাহিরে কাজ করলেও আমার জীবনের মূল্য থাকবে।”( নিরুপমা)
“হ্যাঁ যেতে চাইলে যেতো পারো । কিন্তু একটা কথা মনে রেখো এই ঢাকা শহরে চাকরি পাওয়া এতো সোজা না । আর যদি ভাগ্যক্রমে পেয়েও যাও সেখানেও কিছু কিছু পুরুষদের লোলুপ দৃষ্টির স্বীকার তো তোমাকে হতেই হবে। ফ্যামিলি ছাড়া একা একা কাজ করলে তোমাকে অনেক হ্যারেসমেন্ট ফেস করতে হবে নিরুপমা। আর নিজের পরিবারে ফিরতে চাইলে যেতে পারো কিন্তু তোমার বাবা মা কিন্তু আমার টাকা পয়সা দেখেই বিয়ে দিয়েছেন। আর তোমার কি মনে হয় আর্মির বড় পদে চাকরি করা একজন অফিসার তোমার মত গরীব ঘরের মেয়েকে মাথায় তুলে রাখবে নাকি। দশজন পুরুষের লোলুপ দৃষ্টির স্বীকার হওয়া থেকে একজন নিষ্ঠুর স্বামী নামক পুরুষের সাথে সংসার করাই তোমার মত সুন্দরী রমণীর জন্য শ্রেয়”
নিরুপমা বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। তার যে এক অমানুষের সাথে বিয়ে হয়েছে সেটা সে হারে হারে টের পাচ্ছে।
কিন্তু সে তো এখনো নির্ভরশীল যাবেই বা কোথায়? হুট করে চাকরি বা থাকার জায়গাও সে ঠিক করবে কিভাবে? না সে তার বাবা মার কাছেই চলে যাবে তারা যত গরীবই হোক তাঁর সমস্যাগুলো একটু হলেও তো বুঝতে পারবে।
নিরুপমা দেরি না করে নিজের মাকে ফোন করে সব কথা খুলে বলে। কিন্তু একরাশ হতাশা ছাড়া তার কপালে কিছুই জুটে না তার স্বামী নামক অমানুষটা বিয়ের আগেই এসব কথা বলেই বিয়ে করেছে।
নিরুপমার মা বাবার কথায় তার গা ঘিনঘিন করে উঠে,” তোকে ছুঁলেই বা কি অসুবিধা স্বামী সে তোর আর বিয়ের পর মেয়েদেরই নিজের স্বামীর সমস্ত কাজকর্ম করে দিতে হয়। সহ্য করে সংসার কর খবরদার ফিরে আসার চেষ্টা করবি না”
নিরুপমা অঝোর ধারায় কান্না করছে। মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়াই কি অভিশাপ?
“মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়া অভিশাপ নয় গরীব হয়ে জন্মানো টাই তোমার এই অবস্থার জন্য দায়ী। তোমার বাপ মায়ের অভাব না থাকলে তারা নিশ্চয়ই এরকম বেয়াদপ ছেলের সাথে তোমার বিয়ে দিতো না। ”
এই বলে সামনে দাঁড়ানো নিরুপমার নিষ্ঠুর স্বামী শয়তানি হাসি হাসতে থাকে।
নিরুপমা ঘৃণা নিয়ে তাকিয়ে থাকে তার পানে। লোকটা সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট নিয়ে টানতে থাকে।
“আমি তোমাকে জোর করবো না নিরু। Choice is your’s. আমার সাথে থাকবে কিনা । আমি তোমাকে সম্মান আর ভালোবাসা বাদে সব কিছুই দিবো। দুনিয়ার সব মানুষ জানবে অরহান আহ্সান একজন অসহায় মেয়েকে বিয়ে করে তাকে কতো সুন্দর জীবন উপহার দিয়েছে!”
সিগারেটের ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে অরহান নিরুপমার দিকে শীতল দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে ,”এবার বলো কি করবে থাকবে নাকি চলে যাবে?”
চলবে….
আমার নিষ্ঠুর মনোহর
পর্ব – ১
লেখনীতে – মাহানুর