আমার নিষ্ঠুর মনোহর #লেখনীতে – #মাহানুর #পর্ব – ৫

0
117

#আমার নিষ্ঠুর মনোহর
#লেখনীতে – #মাহানুর
#পর্ব – ৫

অন্ধকার রুমের এক কোণে বসে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছেন অবন্তিকা আহ্সান। আজও তার স্বামী আবসার আহ্সান তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছেন। নিজের ছেলে অরহানের অবাধ্যতার সমস্ত দায়ভার নিজের স্ত্রীর উপর চাপিয়ে সমস্ত রাগ উজাড় করে দিয়েছেন আবসার আহ্সান। অবশ্য তাদের এতো বছরের দাম্পত্য জীবনে এ আর নতুন কোনো ঘটনা নয়।

অরহানটাও হয়েছে তার বাবার মতোই। হবেই না কেনো ছোটবেলা থেকেই তিনি ছেলেকে অমানুষ হওয়ার ট্রেনিং যে দিয়েছেন। তবে নিজের ছেলের সামনে আদর্শ পুরুষ হিসেবে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন তিনি।

এই প্রথম ছেলের এই অবাধ্যতায় ভীষণ চটে রয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবসার আহ্সান। তবে সমাজের সামনে তো তার একটা প্রেস্টিজ রয়েছে। তাই ছেলেকে বাসায় কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায় সেই ভাবনায় আপাতত মগ্ন রয়েছেন তিনি। মনে মনে অবশ্য আগে থেকেই নববিবাহিতা পুত্রবধূকে শায়েস্তা করার সমস্ত ফন্দি এঁটে রেখেছেন তিনি।
____________

অন্যদিকে

বাসায় পৌঁছে ডাইনিং টেবিলে সমস্ত খাবার সাঁজানো থাকতে দেখে মনে মনে খুশী হয় অরহান।

“তেজ তাহলে কমেছে এই সুন্দরী রমণীর,” অরহান নিরুপমার দিকে তাকিয়ে মনে মনে আওড়াতে থাকে।

নিরুপমা ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আড়চোখে অরহানের হাবভাব বুঝার চেষ্টা করছে। অরহান নিরুপমার দিকে একবার তাকিয়ে ফ্রেশ হওয়ার জন্য চলে যায়।

তবে ফ্রেশ হয়ে আসার পর খাবার মুখে দেওয়ার সাথে সাথে অরহানের মুখের হাবভাব চেঞ্জ হয়ে যায়। নিরুপমা চোর ধরার মতো মুখ করে তাকিয়ে আছে। মনে মনে আল্লাহ্কে ডেকে চলেছে সে।

খাবার কে বানিয়েছে?( অরহান)

কেনো আম..আমি ( নিরুপমা)

ভালোই মিথ্যা বলতে পারো দেখছি। তুমি কি আমাকে এতটাই বোকা ভাবো নাকি? মিনুকে দিয়ে রাঁধিয়ে নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছো। You bloody fool girl ( অরহান)

নিরুপমা ভয়ে উঠে দৌড় দিতে নিলে ধপাস করে ফ্লোরে পড়ে যায়।

ওমাগো ! ( নিরুপমা)

অরহান দৌঁড়ে নিরুপমার কাছে যায়। নিরুপমাকে ব্যথায় কাতরাতে দেখে অরহানের হৃৎস্পন্দন আবারো কম্পিত হতে থাকে। অদ্ভূত এক অস্থিরতায় তার সমস্ত শরীর হাসফাঁস করতে থাকে।

“পাগল নাকি তুমি ? দৌঁড় দিতে কে বলেছিলো?” ( অরহান)

অরহান নিরুপমাকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দেয়। ব্যাথার মেডিসিন নিরুপমার হাতে ধরিয়ে কর্কশ কন্ঠে শুধায়, “ধরো ,মেডিসিন লাগিয়ে আমাকে উদ্ধার করো।”

তারপর সেখান থেকে সরে বারান্দায় চলে যায়।

“এমনটা তো হওয়ার কথা নয়! যতই ভাবি অশান্তি করবো। এই মেয়েকে শায়েস্তা করবো ততবারই কোনো না কোনো কারণে আমাকে পিছিয়ে যেতে হয়। এমনটা আর হতে দেওয়া যাবে না। নাহলে আমার মাথায় চড়ে নাঁচবে। মেয়ে মানুষকে এতো লাই দিতে নেই”( অরহান)

অরহান নিরুপমার সামনে এগিয়ে যায়। নিরুপমার হাতের মাঝে হাত রেখে তার গলায় মুখ গুঁজে চুমু খেতে থাকে। নিরুপমা অরহানকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করতে থাকে।

“এখন না প্লিজ। আমার ভালো লাগছে না। আমাকে ছেড়ে দিন।”( নিরুপমা)

“আমি বাসর রাতে তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার চয়েস দিয়েছিলাম নিরু। তুমি যাওনি। এখন তুমি যেতে চাইলেও আমি যেতে দিবো না। এখন আমার প্রতি রাতে তোমাকে চাই নিরু। নেশা হয়ে গেছে আমার”( আরহান)

নিরুপমা এইবার কান্না করে দেয়।

“আমি অসুস্থ প্লিজ ছেড়ে দিন।” ( নিরুপমা)

” নড়াচড়া না করে চুপচাপ শুয়ে থাকো তাহলে পায়ে ব্যাথা পাবে না।” ( অরহান)

নিরুপমা রাগে ক্ষোভে চোঁখ মুখ বন্ধ করে ফেলে।

জানালা থেকে আসা চাঁদের মৃদু আলোয় নিরুপমাকে অপরুপা লাগছে। নিরুপমার কেঁপে কেঁপে উঠা চোঁখের পাঁপড়িগুলোর দিকে অরহান এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।

“একটা মানুষ এতটা সুন্দর কি করে হতে পারে!” ( অরহান মনে মনে ভাবতে থাকে)

অরহান নিরুপমাকে আর কথা বলার সুযোগ দেয় না। নিরুপমার ঠোঁট নিজের আয়ত্তে করে নেয় আর নিজের অধিকার আদায়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here