আমি_মায়াবতী #পর্ব_৭ #লেখনীতে_তাহমিনা_মিনা

0
359

#আমি_মায়াবতী
#পর্ব_৭
#লেখনীতে_তাহমিনা_মিনা

এতোটা আতঙ্কিত আমি কখনোই হইনি। আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। যদি সাবিহা উল্টাপাল্টা কিছু একটা করে? তবে কি হবে? বাবা কে আমি কি জবাব দিবো? ওর মা কে কি বলবো? আর নিজেকেই বা কীভাবে ক্ষমা করবো। এইখানে যা হচ্ছে, সবকিছুই তো আমার জন্য হচ্ছে। আমি বারবার দরজা ধাক্কা দিতে থাকলাম। প্রায় বিশ মিনিট পর ও দরজা খুলে দিল। আমি অবাক হয়ে দেখলাম কেঁদে ও চোখমুখ লাল করে ফেলেছে।
” কি হয়েছে তোমার? কাঁদছো কেন?”
” আমি তো মারা যাচ্ছি। কাঁদবো না কেন? বাবা তো এখন তোমার একারই হয়ে যাবে। তোমার তো খুশি হওয়ার কথা। তুমি আমার দরজা ধাক্কাচ্ছো কেন?”
“আরেহ বাবা! হয়েছে কি সেটাতো বলো?”
“তোমাকে কেন বলবো? আমি মা কে বলবো। মা কে কল দিয়েছিলাম। মা কল ধরেনি। বাবাকেও দিয়েছিলাম। বাবাও ধরেনি। তোমার কাছে বাবার নাম্বার আছে? বাবাকে কল দিবে?তুমি দিলে হয়তো বাবা ধরবে।”
” আচ্ছা, ঠিক আছে। দিব। দাড়াও এখানে আমি আমার ফোন নিয়ে আসছি।”
আমি ফোন নিয়ে যখন আবার সাবিহার রুমে ফিরে আসলাম, দেখলাম ও রুমে নেই। আমি আবারও ভয় পেলাম। ওর রুমের সাথে বারান্দা ছিল। সেখানে উঁকি দিয়ে দেখলাম ও নেই। আমি ভয়ে ওর রুম থেকে বের হয়ে অন্য রুমে যাবো, তখনই দেখি ও ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে। আমাকে দেখেই বললো,” বাবাকে কল দিয়েছিলে?”
” নাহ, দাড়াও দিচ্ছি।”
আমি মোবাইল হাতে নিয়ে পায়চারি করছিলাম। ও তখন ওর টেবিলের এক কোণে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
” কি হলো ফোন ধরছে না?”
” ধরছে না সাবিহা। দাড়াও আমি আরো কয়েকবার ট্রাই করি।”
“ধরবে না আমি জানি। এখন বিজি আছে। এইসময় ওরা ফোন ধরে না।”
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,” তুমি জানো ওরা কোথায় গেছে?”
ও মুখ গোমড়া করে বললো,” হুমম।”
” কোথায় গেছে?”
ও ভ্রু কুঁচকে বললো,” আমি তোমাকে কেন বলবো? তোমার বাবা তোমাকে বলে যায়নি? বলেনি প্রতি মাসে এই সময় কোথায় যায় ওরা?”
“নাহ। আমাকে তো কিছুই বলেনি। আচ্ছা, ঠিক আছে। তুমি আমাকে বলো যে তোমার হয়েছে টা কি? খারাপ লাগছে তোমার? ব্যথা লাগছে কোথাও?”
সাবিহা কিছু বলতেই যাচ্ছিল। কিন্তু আবার ওয়াশরুমের দিকে ছুটে গেল। কিছুসময় পর আবার বের হলে আমি এবার ওকে শক্ত করে ধরে বললাম,” সাবিহা, কি হয়েছে আমাকে বলো। না বললে কিন্তু আমি স্কুলে গিয়ে আবার বাইরে বের হবো। তখন ভালো লাগবে তোমার?”
সাবিহা আমার দিকে বিস্ফারিত চোখে তাকালো।আমার থেকে এতো কঠিন কথা হয়তো সে আশা করেনি। ভয়ার্ত গলায় বললো,” তুমি বের হলেই কি আর না হলেই কি? আমি তো মরেই যাচ্ছি। আর তো কেউ আমাকে বাজে কথা বলবে না।”
আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। আমি চোখেমুখে বিরক্তি এনে বললাম,” তুমি কই মারা যাচ্ছো? আমি তো দেখছি তুমি ভালোই আছো। ভালোমতো হাঁটছো। দৌঁড়ে ওয়াশরুমে গেলে। তোমার শরীরে কোনো আঘাত নেই। ব্যথা নেই। রক্ত নেই। তাহলে তুমি মারা যাচ্ছো কিভাবে?”
সাবিহা এবার হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, ” রক্ত আছে। আল্লাহ আমাকে নিয়ে যাচ্ছেন। একটু একটু করে সব রক্ত বের হয়ে যাচ্ছে শরীর থেকে।” এইটুকু বলেই ফ্রক টা সরিয়ে সালোয়ার টা দেখালো আমাকে।
আমি ভাবতেও পারিনি ও আমাকে এইভাবে কখনো জড়িয়ে ধরবে। যে সারাদিন আমার মুখ না দেখলে ভালো থাকে, সে কি না আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বেশ মায়া লাগলো। ও এখনো কেঁদেই চলেছে বাচ্চাদের মতো। আমি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,” তুমি এইজন্য কাঁদছো? আরেহ, এইটা তো তেমন কিছুই না। এইটা সব মেয়েদেরই হয়। এইটা হলে তুমি মরে যাচ্ছো না আমার মিষ্টি বোন।”
ও দুহাতে চোখ মুছে বললো,” আমি মারা যাচ্ছি না? সবারই হয় এইটা?”
” হুমম। তুমি বইয়ে পড়োনি, মেয়েরা একটা নির্দিষ্ট সময়ে এর সম্মুখীন হয়। একে পিরিয়ড বলে। তোমার মা তোমাকে কিছু বলেনি এই ব্যাপার এ?”
সাবিহার এইবার একে একে সব মনে পড়ে। ওর মা ওকে এই ব্যাপারে বলেছে। স্কুলের মিস রাও বলেছে। সে বইয়েও পড়েছে। তাও কিভাবে ভুল করলো সে। মায়ার সামনে এইবার বেশ লজ্জায় পড়ে গেল সে। মায়া সেটা বুঝতে পেরে বললো,” লজ্জা পেতে হবে না আমার বোন। যেহেতু তোমার মা এইখানে নেই, আমিই তোমার দেখাশুনা করবো। তুমি একটু বসো। আমি কয়েকটা জিনিস নিয়ে আসছি।”
“আচ্ছা, তাড়াতাড়ি এসো।”
আমি আমার রুমে এসে প্রয়োজনীয় জিনিস বের করতে করতে ভাবলাম, আসলেই সবাই সময়ের কাছে অসহায় । ওর মা এই সময়ে এইখানে থাকলে কি আর আমাকে এই বিষয়টা শেয়ার করতো? নাকি এইভাবে জড়িয়ে ধরতো?যাক, তবুও একদিক দিয়ে ভালো হলো। একটা দিন তো ভালোমতো থাকছে মেয়েটা।
★★★
” আমাকে বলো তো, বাবা মা কোথায় গেছে?”
সিদ্ধ ডিমে কামড় দিয়ে আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে সাবিহা বললো,” বলবো। কিন্তু কথা দিতে হবে তোমায়। কাউকে কিছু বলবে না এই ব্যাপার এ। পারবে ব্যাপারটা গোপন রাখতে?”
আমার মনে খানিক সন্দেহ উঁকি দিল। তবুও আমি মাথা নেড়ে বললাম,” আচ্ছা, ঠিক আছে। বলবো না কাউকে।”
“প্রমিস?”
“পাক্কা প্রমিস।”
সাবিহা তবুও কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো,” সাব্বির আসলে আমাদের মতো স্বাভাবিক না। ওর মাথায় কিছু সমস্যা আছে।”
” মানে? বুঝলাম না।”
” মানে ও হচ্ছে কিছুটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী।”
” আল্লাহ, আল্লাহ। কি বলো এইসব?”
” সত্যিই। তুমি খেয়াল করোনি? ওর কথাবার্তা? “আমার তো ওকে স্বাভাবিকই লেগেছে।”
” হুমম। কেউ ঐভাবে বুঝতে পারে না। কিন্তু ওর কোনো বিষয় বুঝতে সময় লাগে। তবে, ওর থেরাপি চলছে। ওকে বাচ্চাদের সাথে মিশতে দেওয়া হয় স্বাভাবিক বাচ্চাদের সাথে থেকে ও ওদের মতো স্বাভাবিক আচরণই করে। কিন্তু পিছিয়েও পড়ে সবার থেকে।”
” যেমন?”
সাবিহা আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,” ও আসলে তেমন কিছুই ভাবতে পারে না। ও যেটুকু অন্যের থেকে শুনে সেটুকু নিয়েই ভাবে। ওর বয়স দশ বছর। খুব বড় না হলেও খুব ছোটও নয় ও। যেমন ধরো তুমি কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসলে আমাদের বাসায়। আমি, মা সবাই বাবা কেন আর কবে এমন করেছে সেইটা ভাবছি। স্বাভাবিকভাবেই তোমাকে মেনে নিতে পারছি না। ও শুধু ভেবেছে বাবা ওকে ভালোবাসবে না। ওর কোনো এক বন্ধুর বাবাও আরেকটা বিয়ে করে ওদের আর দেখে না। এইটুকুই জানে সে। তার চিন্তা এতটুকুই। কিন্তু বাবা যে কি করেছে সেটা নিয়ে ওর মাথা ব্যথা নেই। বুঝলে? বোঝাতে পারলাম?”
“হুমম। কিন্তু ওকে নিয়ে এখন কোথায় গেছে?”
“ডক্টর এর কাছে। আজকে ডক্টর এর সাথে ও অনেক কথা বলবে। কোনো নতুন জিনিস শিখবে। ওর মতো আরও অনেকেই যায় সেখানে। আজকে বাসায় ফিরলেই বুঝবে নতুন কোনো একটা জিনিস নিয়ে ও বেশ আগ্রহী। কিন্তু এই বয়সের বাচ্চারা আসলে সেটা অনেক আগেই পার করে এসেছে। তবে হ্যাঁ, ও কিন্তু অনেক ক্রিয়েটিভ। হাতের কাছে কাগজ জাতীয় কিছু একটা পেলেই হলো। এটা, ওটা কিছু একটা বানিয়ে ফেলবে। ওর ঘরে দেখোনি? অনেক জিনিস কাগজের। সবই ও বানিয়েছে।”
আমার খারাপ লাগলো ওর ব্যাপারে এইসব কথা শুনে। আমি শুধু বললাম,” কিন্তু এই টা কি কখনোই ভালো হবে না?”
” জানিনা। ধীরে ধীরে হয়তো হবে। মা ওর জন্য চাকরিটাও ছেড়ে দিল। সারাক্ষণ বাসায় ওকেই সময় দিতে হতো। এখন তো তবু নিজের কাজ গুলোর ব্যাপারে আমাদের বলতে পারে। আগে তাও পারতো না।”
আমার আর এই ব্যাপারে কথা বলতে ভালো লাগলো না। তাই সাবিহাকে বললাম,” কিছুক্ষণ ঘুমাও। রেস্ট নাও।”
আমি সাবিহার রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। আবারও নিজেকে একা লাগতে শুরু করলো। আচ্ছা, সাব্বির যদি স্বাভাবিক মানুষ হতো, তবে কি আমাকে এইভাবে এতো সহজে মেনে নিতে পারতো? হয়তো পারতো না।

★★★

কলিংবেলের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। কে যেন পাগলের মতো কলিং বেল বাজাচ্ছে। আমি ধড়ফড়িয়ে উঠে দরজার দিকে ছুটলাম। লুকিং গ্লাস দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলাম বাবা আর আম্মা এসেছে। আমি তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিতেই ওরা হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকে পড়লো। আমাকে দরজার সামনে দেখতে পেয়ে বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে এসে বললো,” সব ঠিক আছে মা? তুমি ঠিক আছো? সাবিহা ঠিক আছে?”
এতোগুলো প্রশ্নে আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। এখনও ঘুমের রেশ কাটেনি। আমি চোখ চুলকাতে চুলকাতে বললাম,” সবই তো ঠিক আছে। সাবিহাও ঠিক আছে। তোমরা এইরকম করছো কেন? সাব্বির কই? ওকে আনোনি?”
সাবিহার মা ছুটে গেল ওর রুমে। গিয়ে দেখলো সাবিহা ঘুমুচ্ছে। আবার বের হয়ে এসে বললো,” তোমাদের এতোগুলো কল পেয়ে যে ভয় পেয়েছিলাম। তারপর কত কল করলাম। ধরলেনা কেন কেউ?”
” আমরা ঘুমাচ্ছিলাম, আম্মা। তাই হয়তো শব্দ শুনতে পাইনি। স্যরি। আমার জেগে থাকা উচিত ছিল।”
সাবিহার মা কিছু না বলে আবার সাবিহার রুমে গেল। সাবিহাকে ডাকলে ও কিছুক্ষন পরেই উঠে গেল। ঘুম ভেঙেই সামনে মা কে পেয়ে হাউমাউ করে কান্না করতে লাগলো আর বললো,” আজকে আমাকে রেখে গেলে কেন? আমি তো মরেই যাচ্ছিলাম ভয়ে। আজকেই কেন রেখে গেলে মা?”
আমি সাবিহার আওয়াজ পেয়ে ওর রুমে গিয়ে সাবিহার মায়ের কাছে গিয়ে খুব আস্তে আস্তে বললাম, ” ওর পিরিয়ড হয়েছে আম্মা। বেচারি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিল। ভেবেছে সব রক্ত শেষ হয়ে ও মারা যাবে।”
বাবাও নিজের রুম থেকে হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে এসে বললো,” কি হয়েছে মা? কাঁদছো কেন? ভয় পেয়েছো? স্বপ্নে বাজে কিছু দেখেছো?”
সাবিহা হয়তো কিছু বলতেই যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই আম্মা ওকে থামিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে বললো, ” তুমি যাও তো। সাব্বিরকে নিয়ে এসো। না হলে নিজের ঘরে যাও। আমি একটু পর আসছি।”
বাবা আমাদের তিনজনের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেলো। আমার কেমন যেন লজ্জা লাগলো বাবার সামনে। এই ব্যাপারটা আসলেই যেন লজ্জার।
আম্মা সাবিহাকে জড়িয়ে ধরে বললো,” এইটা কোনো রোগ না মা। তোমাকে তো আগেই বলেছিলাম। সবকিছুই বুঝিয়েছিলাম। তোমার মনে ছিল না?”
” না, মা। কিছুই মনে ছিল না। তুমি, বাবা কেউ ছিলেনা। খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। ভাগ্যিস মাহা আপু ছিল। না হলে তো আমি ভয় পেয়ে মারাই যেতাম।”
চমকে উঠলাম আমি। কি বললো সাবিহা? মায়া আপু? ভাবা যায়? আজ সকালেও আমার মুখ দেখে যে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল, সে এখন আমাকে আপু ডাকছে। আম্মা ওকে এখনও অনেক কিছু বলছে এই ব্যাপারে। আমি ধীরে ধীরে নিজের রুমে চলে এলাম। মায়ের কথা মনে পড়ছে। আমার প্রথম পিরিয়ডেও মা আমাকে এইভাবেই সাহস দিয়েছিল।আমাকে দুহাতে বুকে আঁকড়ে ধরেছিল। আমাকে বারবার বলেছিল এইটা নাকি আশীর্বাদ। সব মেয়েদের জন্যই।
★★★
দ্বিতীয়বারের মতো কলিংবেল বাজলে আমি আবারও গিয়ে দরজা খুললাম। দেখলাম বাবার হাতে একটা কেক এর প্যাকেট আর কিছু শপিংব্যাগ। আর সাব্বির এর হাতে একটা গাছ। অপরাজিতা ফুলগাছ সেটা। আমাকে দেখেই আমার দিকে গাছ টা বাড়িয়ে দিয়ে বললো,” তুমি কি জানো, গাছ আমাদের কত উপকার করে? পৃথিবীতে গাছ না থাকলে কি হতো? আমরা কেউ বাঁচতাম না জানো? আমাদের উচিত তাই বেশি বেশি গাছপালা লাগানো। তাই তো আমি এই গাছ টা এনেছি। সুন্দর না?
সাবিহার কথার সত্যতা মিললো। রাতে ঘুমানোর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত সাব্বির গাছ নিয়েই কথা বলতে লাগলো অনর্গল। আমার কিছুটা খারাপই লাগলো।
রাতে খাওয়ার আগে বাবা সবাইকে ড্রয়িংরুমে ডাকলো। দুটো শপিং ব্যাগ আর কেক নিয়ে দেখলাম বাবা বসে আছে। সাবিহা এলে ওকে বললো,” তুমি আজ আরেকটা জীবনে পা দিয়েছো আমার মা। নতুন কিছু অপেক্ষা করছে তোমার জন্য সামনে। নতুন আবেগ, অনুভূতির জন্ম নিবে মনে। যেগুলোর অনেক কিছুই তোমার জন্য ভালো আবার অনেক কিছুই ক্ষতিকর। এই বয়সে আবেগটা বেশি হয়। অনেকে আবেগের বশে ভুলভাল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে। আর ফলে তার ফল সারাজীবন ধরে ভুগতে হয়। বুঝলে? এর জন্য তোমার কাজ কি হবে বলোতো? কোনো কিছুই আমাদের থেকে লুকোবে না। কোনো ব্যাপার সেটা হোক বড় কিংবা ছোট, আমাদের জানাবে। আবেগের বশে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিবে না কখনোই। আমরা তোমার সিদ্ধান্তকে সম্মান করবো। তবে মনে রেখো, আমরা যা করবো, তোমার ভালোর জন্যই করবো।”
সাবিহা মুখ উচু করে হেসে বললো, ” বুঝতে পেরেছি বাবা।”
” এইতো আমার সোনা মা। নাও এখন এসো কেক টা কেটে ফেলো তো। ”
সাবিহা কেক এর প্যাকেট থেকে কেক টা বের করলো। উপরে লেখা, Have a safe journey Sabiha.
সাবিহা আনন্দের সাথে কেক কাটলো। আম্মা, বাবা, সাব্বিরকে খাওয়ালো। সবশেষে আমাকেও হাসিমুখে মুখে তুলে দিলো। আদম সন্তান যে সত্যিই শয়তানের কারণে হিংসার বশবর্তী হয়, নিজেকে না দেখলে হয়তো বুঝতাম না। বাবার দিকে আড়চোখে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবলাম আমার আর আমার মায়ের জন্য কি করেছে সে। মানলাম, আমার মা ভুল করেছে৷ কিন্তু আমার কি দোষ? আমি তো কোনো দোষ করিনি। আমাকে কেন তাহলে সবকিছু থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে?

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here