#আসক্তি Mr_Arrogant_4
#পর্ব_৩৮
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
গাছে নব গজানো পাতা গুলো জানান দিচ্ছে বসন্তের আগমনের। কিন্তু এর সাথেই হিম শীতল ঠান্ডাও প্রকাশ করছে শীতের উপস্থিতির। যেন শীত আর বসন্তের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে প্রকৃতি।
গাড়ির জানালা খুলে চোখ বন্ধ বাইরের এমন পরিবেশটা অনুভব করতে ভালোই লাগছে সুবহার। কিন্তু হঠাৎ যেন সুবহার মুখে ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটা আসা বন্ধ হয়ে গেল। সুবহা কিছুটা অবাক হয়ে চোখ খুলেই দেখে গাড়ির গ্লাস লাগানো। সুবহা যেন বুঝতে পারে না হঠাৎ কিভাবে জানালা বন্ধ হলো।
বিষয়টা বোঝার জন্য পাশে তাকাতেই ও খেয়াল করে রওশন সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে, নীল সুবহার দিকে তাকিয়ে ইশারায় রওশনের দিকে আঙুল তাক করে বোঝায় যে রওশন বন্ধ করেছে জানালা। সুবহার মুখটা সাথে সাথে ছোট হয়ে যায়। সামান্য জানালা খোলা নিয়েও লোকটার এত সমস্যা! প্রতিটা জিনিসে নিজের সমস্যা প্রকাশ না করলে যেন তার রাতের ঘুম পুরো হয় না। সুবহা বিরক্তির শ্বাস ফেলল।
কোথাও ঘুরতে গেলেও যেন নিজের অ্যারোগেন্ট নেচার নিজের সাথেই নিয়ে আসে রওশন। একদিনের জন্য তার অ্যারোগেন্সিকে ছুটি দিলে কী এমন হয়ে যাবে বুঝে পায় না ও।
রওশন চোখ বুজে আছে, এই সুযোগে সুবহা আলতো হাতে আবারো জানালার কাঁচ নামাতে নিলেই ভারি গলায় রওশন বলে উঠে, ‘ডোন্ট ইউ ডেয়ার!’
সাথে সাথে সুবহা নিজের হাত নামিয়ে নেয়। আড়ি চোখে তাকায় রওশনের দিকে তারপর নাক কুঁচকে বিরবিরিয়ে কিছু বলে মুখ ঘুরিয়ে নিল অন্য পাশে। অন্যদিকে নীল রওশন আর সুবহার মাঝে বসে ওদের কান্ড দেখছে। রওশন কিছু বললে তার দিকে তাকাচ্ছে আবার সুবহা কিছু করলে সুবহার দিকে। কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছে না বেচারা। কারণ এত কষ্ট করে রওশনকে ওদের সাথে আনতে পেরেছে ওরা, যদি রওশনের মত ঘুরে যায় তাহলে ট্রিপ ক্যান্সেল করতে দুই সেকেন্ডও ভাববে না ও। সোজা গাড়ি ঘুরিয়ে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে ওদের। তাই না চাইতেও মনের কথা মনেই দাবিয়ে রাখছে ও, আর এদের দুজনের টেনট্রম সহ্য করছে।
এইদিকে,
অর্নব সবে ওহিকে নিয়ে তার কেবিন থেকে বের হলো। এতক্ষণ এই সুযোগটার অপেক্ষাতেই যেন ছিল আভি। তারা দুজন বের হতেই সুযোগ বুঝে অর্নবের কেবিনে ঢুকে পরল ও।
কেবিনের দরজার পাশেই সিসিটিভি ক্যামেরা, সেটার দিকে তাকিয়ে দু হাত কোমরে রেখে পোজ নিয়ে দাঁড়ায় ও। তারপর ক্যামেরাকে ভেংচি কেটে ভাব নিয়ে অর্নবের ডেস্কের সামনে চলে যায়।
ক্যামেরাটাকে ভয় না পাওয়ার প্রধান কারন হচ্ছে আভি কেবিনে ঢোকার আগেই অর্নবের রুমের সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে ফেলেছে। তাই যত টুকু সময় আভি না চাইছে কিছুই ক্যামেরাতে রেকর্ড হবে না।
এজন্যই এতটা কনফিডেন্ট নিয়ে এমন রিস্কি কাজটা বিনা ঘাবড়ে করতে পারছে না।
আভি সবার আগে অর্নবের ল্যাপটপ ওপেন করে। ওর পাসওয়ার্ড আভি অনেক আগেই হ্যাক করে ফেলেছে তাই সার্ভরে লগইন করতে সময় লাগল না ওর।
তবুও সতর্কতা অবলম্বন করে দ্রুত কাজটা শেষ করার চেষ্টা চালাচ্ছে আভি। হোডকোয়ার্টারের সার্ভার থেকে কিছু সিক্রেট তথ্য খুঁজতে ব্যস্ত ও। প্রায় বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে পেনড্রাইভে সব কিছু কপি করে ল্যাপটপটা দ্রুত বন্ধ করে নেয় আভি।
তারপর ল্যাপটপটা জায়গা মত রেখে কেবিনটার চারপাশে চোখ বুলোয় আভি, আরেকটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু খুঁজছে ও। কিন্তু সেটা যে অর্নব অফিসে রাখে নি সেটা সিউর হয়ে নেয় আভি। অনেক সময় পার হয়ে গেছে, নিশ্চয়ই অর্নব ফিরে আসছে, তাই আর সময় নষ্ট করল না আভি।
কাজ শেষ করে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে আভি কিন্তু বেরোতেই হঠাৎ ওহির সামনে পরে যায় ও। আচমকা ওহির মুখোমুখি হতেই চেহারায় কিছুটা উৎকন্ঠার ছাপ ছেয়ে যায় আভির।
ওহি সন্দেহের দৃষ্টিতে আভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি আমার বাবার কেবিনে কী করছিলেন?’
ওহির এমন প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে আভি, কিন্তু তার সামনে নিজের নার্ভাসনেস প্রকাশ করল না ও। নিজেকে সামলে দ্বিধাহীন ভাবে উত্তর দিল ও, ‘সরারের কেবিন? কই নাতো! আমি তার কেবিনে যাই নি। আমি তো স্যারের কেবিন ক্রস করে জনির সাথে দেখা করতে যাচ্ছিলাম।’
ওহি আভির উত্তরে সন্তুষ্ট হলো না। যতই হোক একজন পুলিশের মেয়ে ও, এত সহজে থোরি না সন্দেহ যাবে। ‘আপনি সত্যি বলছেন তো?’ – চোখ জোড়া ছোট ছোট করে আবার জিজ্ঞেস করল ও।
ওহির এমন নাক গলানো স্বভাব, আর প্রশ্নে বিরক্ত হয় আভি। তাই কথা ঘুরানোর জন্য ভারি গলায় বলতে শুরু করে ও, ‘ তোমার সাহস দেখে তো আমি অবাক হচ্ছি ওহি, তুমি একজন অন-ডিউটি অফিসারকে জেরা করছ? সিরিয়াসলি! ডোন্ট ফরগেট তোমার বাবা পুলিশ অফিসার তুমি না। তাই নিজের ইনটেরোগেশন স্কিল আমার উপর ট্রাই করো না। তুমি কিন্তু এর আগেও একটা ক্রাইম করে বসে আছো, ভুলে গেছ কী?’
আভির এমন হুমকি ভরা কথা শুনে চুপ করে যায় ওহি। মুহুর্তেই মুখটা ভেজা বেড়ালের মতো একদম চুপসে গেল ওর।
আভির ঠোঁটে সরু হাসি ফুটে উঠে, ওহিকে ও ভালোই জব্দ করতে পেরেছে তা ওর হাসি দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি,
হলে বসে আছে পুরো ডিপার্টেমেন্টের স্টুডেন্ট, তাদের সাথে যারা যারা পুরো অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্বে ছিল তারা আর ডিপার্টমেন্টের প্রফেসরস’রা।
গেস্টদের অভ্যর্থনা জানিয়ে আসনে বসানো হয়েছে, আর একে একে সবাই এসে বক্তৃতা নামক ভাষণ দিচ্ছেন।
কেউ কেউ ভিডিও করতে ব্যস্ত তো কেউ ছবি তোলতে। এক কথায় সবাই নিজেদের কাজে ব্যস্ত কিন্তু প্রকৃতি অপূর্বকে দেখতে ব্যস্ত।
তখন পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে এসেও অপূর্বর দেখা পায় নি ও। আর ভাগ্যের অদ্ভুত খেলার মতোই, প্রকৃতি যেতেই অপূর্ব চলে এসেছিল। অপূর্বকে অভ্যর্থনা জানানোর সুযোগটা খুব কষ্টদায়ক ভাবেই প্রকৃতির হাত থেকে ফসকে পরল। যেই মুহুর্তটার জন্য প্রকৃতি এতটা পরিশ্রম করেছে, এতটা ধৈর্য্য ধরেছে সেটা শেষ মুহূর্তে তুলির ভাগ্যে হলো। প্রকৃতির সবচেয়ে বড় স্বপ্নই অপূর্ব কিন্তু আজ ওর এই স্বপ্নটা তুলি উপভোগ করল ভাবতেই দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে।
বিষয়টা সত্যিই কষ্টদায়ক প্রকৃতির জন্য। নিরাশ আর হতাশা ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ও অপূর্বর দিকে। এর মধ্যেই তুলি এসে হাজির হয় প্রকৃতির পাশে, ঠোঁটে দুষ্টু হাসি টেনে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে উঠে ও – ‘হিংশে হচ্ছে আমাদের প্রকৃতির?’
প্রকৃতি রুষ্ট দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে জবাব দেয়, ‘অনেক বেশি!’
তুলি হাসলো, তারপর প্রকৃতির কানের সামনে মুখ নিয়ে ধীর গলায় বলল – ‘তোর রাগ মেটানোর জন্য মাইন্ড-ব্লোয়িং একটা আইডিয়া আছে আমার কাছে। শুনতে চাস?’
‘হুম হুম!’ – মাথা নাড়ালো প্রকৃতি। তুলি মুচকি হাসলো, তারপর প্রকৃতির কানে কানে কিছু বলতে শুরু করল।
এইদিকে,
একুরিয়ামের মাছ গুলো ঘুরে ঘুরে দেখছে সুবহা আর নীল অন্যদিকে রওশন ওদের পাশাপাশি হাঁটছে শুধু।
নীলের জেদ ওর মাছ লাগবে, ওর একুরিয়ামের জন্য নতুন মাছ। তাই রওশন ওকে এখানে এনেছে পছন্দ মতো মাছ নেওয়ার জন্য।
রং বেরঙের, ভিন্ন সাইজ, ডিজাইন আর বিভিন্ন ধাঁচের মাছ এখানে। সব গুলোই অদ্ভুত সুন্দর। সুবহা আর নীল মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে সব গুলোকে। সব গুলোই এত সুন্দর যে চুজ করা মুশকিল।
নীল সব গুলো মাছ দেখতে দেখতে বলে, ‘এখানে কি অক্টোপাস নেই? আমি ভেবেছিলাম অক্টোপাস নিব।’
নীলের কথা শুনে রওশন বলে উঠে, ‘অক্টোপাস আজকাল একুরিয়ামে কম রেস্টুরেন্টে বেশি পাওয়া যায়। ডু ইউ ওয়ানা ট্রাই?’
রওশনের কথা শুনে নীল নাক ছিটকানো ভাব করে তাকায় ওর দিকে তারপর বলে উঠে, ‘ইয়াক, নেভার!’
এর মধ্যেই লাল আর সাদার মধ্যে এক ধরনের মাছ থেকে চেঁচিয়ে উঠে সুবহা, ‘নিমো! ওয়াও এগুলো তো একদম কার্টুনের মতোই দেখতে। কত্ত কিউট।’
সুবহার কথা শুনে নীল দ্রুত ওর সামনে আসে। মাছ গুলোর দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার সুবহার দিকে তাকায় নীল, তারপর বলে – ‘ওফফো সুবা, এগুলো নিমো না এগুলোর নাম অক অকে ল….’ শব্দটা যেন কিছুতেই নীলের মুখ থেকে বের হচ্ছে না। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নীল, শব্দটা উচ্চারণ হতে হতেও যেন হচ্ছে না। তখনই রওশন বলে উঠে, ‘অসেল্যারিস! O-C-E-L-L-A-R-I-S অসেল্যারিস ক্লওনফিশ হবে।’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ এটাই তো বলছিলাম।’ – ক্রুদ্ধ মুখ করে বলল নীল। ‘আমি নিব এই অসেলিস ফিশ।’ মাছ গুলো দেখিয়ে বলল নীল।
‘অসেল্যারিস ফিশ!’ – আবারো নীলের উচ্চারণ সঠিক করিয়ে বলল রওশন। কিন্তু বিষয়টা যেন নীলের পছন্দ হচ্ছে না। ও রাগি লুক নিয়ে তাকায় রওশনের দিকে, তারপর নাক ফুলিয়ে মুখ ঘুরিয়ে অন্য পাশে চলে যায়।
To be continued….
Baki part gulp Kobe deoa hbe???
Baki part gulo Kobe deoa hbe?? Ektu taratari din plz…