#এক_শহর_প্রেম?,১৮,১৯,২০
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৮
আদিরার গনিতের শিক্ষক খুব হতাশ হয়ে আদিরার মাকে ফোন করে জানান, দেলোয়ার নাকি বাস কাউন্টারে তার লোক লাগিয়েছে। প্রতিটা বাস সাতক্ষীরা ছাড়ার আগে দেলোয়ার চিরুনি তল্লাশির মতো খুঁজে। আদিরাকে কোনোমতেই ঢাকা যেতে দিবে না।
আদিরা ও তার মায়ের মনোবল শূণ্যের কোঠায়। আদিরার মা আদিরার বাবার কাছে গেলেন। আদিরার বাবা চোখ বুজে শুয়ে আছেন। আদিরার মা ভাবলেন হয়তো ঘুমিয়ে আছেন। ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে নিলে আদিরার বাবা ডাক দিলেন,
–রেবেকা! এইহানে বসো।
আদিরার মা ডাক শুনে থামলেন তারপর বিছানার কাছে এগিয়ে গিয়ে বসলেন। আদিরার বাবা লম্বাশ্বাস ফেলে বলেন,
–চেয়ারম্যানের বাড়ি থিকা আসার সময় শুনছিলাম বাস কাউন্টারে চেয়ারম্যানের পোলা তার লোক লাগাইবো। আগেরবার তো আদিরারে বিয়া করার কথা দেলোয়ার নিজে আমারে কইছিল। তার তিন-চারদিনের মধ্যে আদিরারে ঢাকায় পাঠায় দিলা। আমার সত্যি নিজের মাইয়ার লাইগ্যা গর্ব হইছিল। কিন্তু মাইয়া আমার এহানে আইয়া বড়ো বিপদে পইরা গেছে। ঘরে যুবতি মাইয়া আর বাইরে যদি শ*কুন উৎ পাইত্তা থাকে তো কেমনে চিন্তা মুক্ত থাকি কও? দেলোয়ার যদি সারা গ্রাম জানায়ে আদিরারে বিয়া করে তয় আদিরার সম্মান বাঁচবো। আল্লাহ্ না করুক আমার মাইয়ার কোনো ক্ষতি কইরা লাইলে? এর লাইগ্যা আমি আদিরারে বিয়া দিতে চাইছিলাম অন্যখানে। যাতে মাইয়া আমার দেলোয়ারের কুনজর থেকে বাঁচতে পারে। এহন আর কিছু করার নাই। আল্লাহর কাছে কও যেন দেলোয়ার শোধরায় যায়। দেলোয়ার তো বিয়া করবই যেনতেন উপায়ে।
আদিরার মা স্বামীর কস্ট উপলব্ধি করতে পারলেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই অশ্রুজল বিসর্জন দিচ্ছে। এদিকে আদিরা রিন্তিকে ফোন করে অঝোর ধারায় কেঁদে চলেছে। রিন্তিকে সব বলার পর রিন্তি সিদ্ধান্ত নিলো মাহিকে জানবে। করলোও তাই। মাহি সবটা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। তার দাভাইয়ের জীবনে সুখ আসতে চলেছে তা এভাবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যেতে পারে না। মাহি মারসাদকে ফোন করে। মারসাদরা সকালের আগেই হোস্টেলে এসেছে। তারপর পাঁচজনেই ঘুমোচ্ছে সারাদিন ধরে। ফোনের চিৎকারের শব্দে মারসাদ হাতরে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করে কানে ধরে।
–হ্যালো।
–দাভাই তুই কোথায়?
–হোস্টেলে। ঘুমাচ্ছি। ফোন রাখ।
মারসাদ ফোন কান থেকে নামিয়ে নিতে নিলে মাহি হড়বড়িয়ে বলল,
–না। না। রাখিস না। ইম্পরট্যান্ট কথা আছে দাভাই।
মারসাদ ঘুম ঘুম ক্লান্ত স্বরে বলল,
–বল। জলদি বলে ফোন রাখবি। টানা দুইদিন জার্নি করে শরীর খুবই ক্লান্ত। ঘুম দরকার আমার।
মাহি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
–তোর ঘুমানোর সময় নেই এখন। ঘুমালে যে তোর হৃদয়হরণী সারাজীবনের জন্য অতল অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।
মারসাদের এই সময় এরকম উদ্ভট হেয়ালি কথার মানে বের করার মতো চিন্তাশক্তি নেই। ঘুমের ঘোরে মানুষ হ্যাঁ কেও না বলে। মারসাদ বিরক্ত হয়ে বলে,
–যা বলার ক্লিয়ারলি বল। হেয়ালি বাদ দে।
মাহি এবার কাটকাট কন্ঠে বলে,
–আদিরার বিয়ে। একটা খারাপ লোকের সাথে। সেই খারাপ লোকটা সাতক্ষীরার বাস কাউন্টারে নিজের লোক লাগিয়ে রেখেছে তাই আদিরা ঢাকাও আসতে পারছে না। এখন তুই কী করবি?
মারসাদ হুড়মুড় করে শোয়া থেকে উঠে বসলো। হতভম্ব হয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
–মানে কী এসবের? বিয়ে কবে ঠিক হলো? আমাকে আদিরা সেদিন কিছু জানায় নি!
মাহি বলল,
–কী জানাবে? ও নিজে কী জানতো? ওর গ্রামের চেয়ারম্যানের ছেলের কু*নজর ওর উপর আগের থেকে ছিল। বিয়ের প্রস্তাব ছেলে নিজে আদিরার বাবার কাছেও দিয়েছিল। এখন ছেলের বাবাও ছেলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। ছেলে এবার সব পথ রুদ্ধ করে রেখেছে। আগেরবার তো চুপিসারে ঢাকা চলে এসেছিল। এবার সেই পথটাও খোলা নেই।
মারসাদ খট করে ফোন কে*টে দিলো। মাহি অবাক হয়ে গেলো মারসাদের কান্ডে। মারসাদ রাগে চোয়াল শক্ত করে আদিরার নাম্বারে ডায়াল করলো। তার এখন আদিরার উপরেও রাগ উঠছে। নিজের গ্রামে বিপদ জেনেও এতো যাওয়ার জন্য পা*গল হওয়ার কি ছিলো? মারসাদের ভাষ্যমতে। আদিরা নিজের ঘরে হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ফোনের শব্দে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে মারসাদের নাম্বার থেকে কল এসেছে। আদিরা ফোনটা রেখে দিলো। তার খুব খুব কান্না পাচ্ছে। কান্নার সময় তার কথা বলতে কস্ট হয়। কিন্তু অধৈর্য মারসাদ কী ক্ষান্ত হবে? মোটেও না। সে ফোন রিসিভ না হওয়াতে আবারও ফোন দিলো। এবারও রিসিভ না হওয়াতে রেগে ফোনটা ফ্লোরে আ*ছাড় দিলো। যার বৌদলতে ফোনের স্ক্রিনে ফা*টল রেখা ফুটে উঠলো। বিছানায় কয়েকবার ঘু*ষি দিয়ে দুইপাশে ঘুমিয়ে থাকা আহনাফ ও রাহিন দুজনকেও ঘু*ষি দিলো। আহনাফ ও রাহিন দুজনেই হকচকিয়ে লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠলো। রাহিন বুকে থু থু দিয়ে আশেপাশে নজর বুলিয়ে বলল,
–কী হইছে? কী হইছে? মা*র*লো কে?
আহনাফও বলল,
–আমাকেও তো? কিন্তু আমি কী করছি?
মারসাদ তার দুই বন্ধুর বোকা বোকা কথায় বেজায় বিরক্ত হলো। সে নিজের দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
–আমি মা*রছি তোদের। কেনো? কম হইছে?
রাহিন ও আহনাফ অবাক হয়ে সমস্বরে বলল,
–কিন্তু কেনো?
মারসাদ রেগে বলল,
–আদিরাকে বল আমার ফোন রিসিভ করতে। এই মেয়ে এতো ঘারত্যা*রা কেন!
আহনাফ মুখ লটকে বলে,
–কেন কী করছে?
মারসাদ আহনাফ ও রাহিনকে মাহির বলা কথাগুলো বলল। সব শুনে ওরা দুজনেই চুপ। তাদের মা*থায় কোনো কিছু আসছে না। মারসাদ আবারও আদিরার নাম্বারে ডায়াল করলো। এবারও রিসিভ হলো না। এবার মারসাদ মেসেজ করলো,
“এই মেয়ে তোমার সমস্যা কোথায়? ফোন রিসিভ করছো না কেনো? আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা করলে খুব পস্তাবে বলে দিলাম। যদি এবারও ফোন রিসিভ না করো তবে তাহলে…”
আদিরা মেসেজ টোনের শব্দ ঝাপসা নজরে মেসেজটা দেখলো। মেসেজটা পড়ে তাচ্ছিল্য হাসলো। কারণ এখন সে লোকটার ধরাছোঁয়ার বাহিরে। মারসাদ এখন তাকে যতই হু*মকি ধ*মকি দেক না কেনো, আদিরার কাছেও তো আসতে পারবে না। আদিরার এবার আরও কস্ট হচ্ছে। সে তো মায়ায় পরে গিয়েছিল। মারসাদের হুটহাট কাজে তাকে চরম অবাক ও লজ্জাতে গ্রাস করলেও মনের মধ্যে এক অদ্ভুত শিহরণ হতো। মারসাদের বিপদের সময় পাশে দাঁড়ানো, কথার দ্বারা বাকরুদ্ধ করা, উদ্ভট কারণে ডাকা। সবটাই মিস করবে সে।
মারসাদ কালক্ষেপন না করে আহনাফ ও রাহিনকে বলল,
–ওই দুই কুম্ভকর্ণকে ঘুম থেকে তোল। আমরা এক্ষুণি সাতক্ষীরার জন্য রওনা করবো।
রাহিন চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো। কিছু বলতে নিবে তার আগেই আহনাফ তাকে চি*মটি কা*টে। রাহিন আহনাফের দিকে তাকালে আহনাফ ইশারা করে চুপ থাকতে। মারসাদ শার্ট পড়ে অফিসার শফিকের নাম্বারে কল করে। রাত ৮টার বেশি বাজে। অফিসার শফিক ফোন রিসিভ করে সালাম দিয়ে বলে,
–হ্যাঁ মারসাদ বলো।
মারসাদ বলে,
–ভাই আপনার অফিশিয়াল গাড়িটা আবারও দেওয়া যাবে? সাতক্ষীরা যাওয়া লাগতো। খুব আর্জেন্ট। জীবন-ম*রন প্রশ্ন।
অফিসার শফিক বিনাবাক্যে রাজি হয়। গাড়িটা তাকে ডিপার্টমেন্ট থেকে দেওয়া হয়েছে। মারসাদ প্রয়োজনীয় জিনিসপাতি নিয়ে তার বন্ধুদের নিয়ে রওনা করে। আহনাফ গাড়িতে উঠে বলে,
–মাইক্রোতে ছয় ঘন্টা লাগার কথা। তাহলে আমরা রাত ৩.৩০ বা ৪টার দিকে পৌঁছে যাবো। তুই আদিরাকে আবার ফোন করে বল যেনো ওই সময় কোথাও একটা লুকিয়ে আসে।
মারসাদ আদিরাকে মেসেজ করে দিলো। রাত ৯টার বেশি বাজে। গ্রামাঞ্চলে সচরাচর এতসময় সবাই ঘুমিয়ে যায় কিন্তু আদিরার চোখে ঘুম নেই। শুনশান নিস্তব্ধতার মধ্যে ফোনের শব্দে আদিরার ধ্যান ভাঙে। আদিরা মেসেজটায় দেখে,
“আমরা সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরেছি। তুমি কোথায় থাকবে জানাও। ভোর চারটার মধ্যে পৌঁছে যাবো আশাকরি। ”
আদিরা মেসেজের লেখাগুলো পড়ে হতবাক হয়ে গেলো। তার বিশ্বাস হচ্ছে না কিছু। এই উদ্ভট লোকটা তাকে এখান থেকে মুক্ত করতে আসবে! আদিরা থম মেরে কিছুক্ষণ বসে রইল। তারপর হুঁশ ফিরলে জলদি করে তার মায়ের ঘরের দিকে দৌড় দিয়ে নিচু শব্দে মাকে ডাকলো।
চলবে ইন শা আল্লাহ্,
#এক_শহর_প্রেম?
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৯
রাত সাড়ে তিনটার দিকে আদিরা ওর মা-বাবার সাথে বড়ো রাস্তার পাশে একটা ঝোঁপের আড়ালে লুকিয়ে আছে। দেলোয়ারের কাঠের ব্যাবসার ট্রাক ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করেছে। কিছু চোরাই কারবার আছে যা এখন ঠিকঠাকের কাজ চলছে। রাস্তায় মানুষজন নেই। দুই একজন তাও দেলোয়ারের লোক। ওদের ট্রাক চলে যাবার পর ওরাও এখন নিজেদের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে। রাস্তায় একটাও গাড়ি নেই। আদিরার বাবা বলেন,
–শোন মা, তুই কোনো চিন্তা করবি না। কাইল যদি দেলোয়ার আমারে জিগাইবো তহন আমি কমু যে তুই ওগো কোনো এক ট্রাকের ভিতর লুকায়ে ঢাকা গেছোছ। তারপর আমরা আর জানি না তোর ব্যাপারে।
আদিরা অবাক হয়ে বলে,
–আব্বা তুমি মিথ্যা বলবা?
আদিরার বাবা গামছা দিয়ে চোখ মুছে আদিরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
–আর কোনো উপায় নাইরে মা। একটা মিথ্যা যদি তোরে বাঁচাতে পারে তাহলে আমি মিথ্যাই কমু। গুনাহ্ হইবো জানি কিন্তু আমার মাইয়া তো ভালা থাকবো। আর এই মিথ্যা না কইলে চেয়ারম্যান আমাগোরেও গ্রামে টিকতে দিবো না। তুই ঢাকা গিয়া খুব ভালা কইরা পড়ালেখা করবি। এই গ্রামে তুই মাথা উুঁচু করে ফিরবি। কোনো দেলোয়ার তহন তোর চুলও বাঁকা করতে পারবো না।
আদিরা কাঁদতে কাঁদতে ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে। সে তার বাবা-মা, ভাইকে অনেকগুলো বছর দেখতে পারবে না ভেবেই তার বুক কস্টে ফেঁটে যাচ্ছে। আদিরার মা আদিরার কপালে স্নেহের স্পর্শ এঁকে বলেন,
–গাড়ি কখন আসবো? একটু খবর নিয়া দেখ। তোর ভাইটা বাড়িতে একা তো।
আদিরা মারসাদের নাম্বারে ফোন করে। মারসাদ ফোন ধরে না। আদিরার তখন ভয় হতে থাকে যে মারসাদ কী সত্যি সত্যি আসবে? সে তার বাবা-মাকে আশ্বাস দিয়েছে যে। তার বাবা যে কীনা তাকে ইন্টারের পর পড়াতে চায় নি সেও এখন চায় আদিরা পড়ুক। ভোর চারটা বাজতে চলল এমন সময় কিছুটা দূরত্বে একটা গাড়ির হেডলাইটের আলো দেখা গেলো। আদিরারা আড়ালে লুকিয়ে গেলো। লুকিয়ে নজর রাখতে লাগলো কে এসেছে।
মারসাদরা গাড়ি এক জায়গায় থামায়। আহনাফ ড্রাইভারকে বলেছে হেডলাইট যেনো বন্ধ রাখে। মারসাদ তখন আদিরার কল কে*টে দিয়েছিল। এখন সে আদিরার নাম্বারে কল করে। আদিরা তার হাতের ফোনটার সশব্দে চিৎকারে হকচকিয়ে উঠে তারপর স্ক্রিনে মারসাদের নাম্বার দেখে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে। ফোন রিসিভ করে সালাম দিলে মারসাদ গম্ভীর স্বরে বলে,
–কই তুমি? আমরা চলে এসেছি।
আদিরা মারসাদের গম্ভীর কন্ঠস্বরে সামান্য চকিত হলেও এবার বুঝতে পারে ওই গাড়িটাতে মারসাদরা আছে। আদিরা মারসাদকে বলে,
–কাছেই আছি। একটু অপেক্ষা করুন আসছি।
আদিরা ওর বাবা-মাকে নিয়ে আস্তে আস্তে সতর্কতার সাথে গাড়ির কাছে যায়। মারসাদ আদিরার বাবা-মায়ের সাথে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করার পর আদিরার বাবা বলেন,
–তুমি কে বাবা? আদিরার বন্ধু?
মারসাদ আদিরার বাবার প্রশ্নের ধরণ বুঝে বিনম্র স্বরে জবাব দেয়,
–না আঙ্কেল। আদিরার বান্ধুবী মাহির বড়ো ভাই আমি। আদিরা যে ভার্সিটিতে পড়ে আমিও সেখানে পড়ি। আমার বোন আমাকে জানানোর পর আমি আদিরাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে এসেছি। আপনি চাইলে আমার বোনের সাথেও কথা বলতে পারেন।
আদিরার বাবা লজ্জিত হলেন মারসাদ তার কথার ধরণ বুঝে ফেলাতে। তিনি ইতস্তত কন্ঠে বলেন,
–তুমি আমারে ভুল বুইঝো না বাবা। মাইয়া আমার ঢাকা যাইবো তোমাগো লগে আর আমি তো তোমাগো চিনি না তাই আরকি!
আহনাফ মারসাদের পাশে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বলে,
–সমস্যা নেই আঙ্কেল। আদিরা আমার ছোটোবোনের মতো। ওর কোনো ক্ষতি হতে দিবো না। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।
আদিরার বাবা-মা দুজনেই ভরসা পেলেন। আহনাফ আদিরাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–আদিরা তুমি সিমকার্ডটা এখানে রেখে যাও। ঢাকা গিয়ে নতুন সিমকার্ড কিনে নিও। দেলোয়ার লোক লাগিয়ে তোমার খোঁজ পেলেও পেতে পারে। আঙ্কেল-আন্টিকে জিজ্ঞাসা করলে বা ফোন সার্চ করে যেনো বিশেষ লাভ না হয়।
আদিরা তাই করে। সময় স্বল্পতার কারণে আদিরা অতিদ্রুত তার বাবা-মায়ের কাছে থেকে অশ্রুসিক্ত বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। মারসাদ আদিরার বাবার কাছে এসে দাঁড়ায় তারপর পকেট থেকে দুই লাখ টাকার চারটা বান্ডেল বের করে আদিরার বাবার হাত ধরে বলে,
–কিছু মনে করবেন না আঙ্কেল। এই টাকাগুলো দিয়ে নিজেকে ঋণ মুক্ত করবেন। আদিরাকে জানাবেন না এর ব্যাপারে।
আদিরার বাবা মারসাদের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দুই পা পিছিয়ে যান। সে নিতে অস্বিকৃতি জানিয়ে বলেন,
–না বাবা। মাফ করো আমারে। আমি এই টাকা নিতে পারমু না। এক ঋণ মিটাইতে গিয়ে আরেক ঋণ হইবো। তাছাড়া তুমি আমার মাইয়ারে উদ্ধার কইরা এমনেও আমারে ঋণি করছো।
মারসাদ মুচকি হেসে বলে,
–আমি এক বাবাকে দিচ্ছি। যিনি তার মেয়েকে বাঁচাতে অসহায় ছিল। তার মেয়েকেও বাঁচিয়ে নিয়েছি। আপনি এটাকে ধার হিসেবে নেন তাহলে। কোনোদিন যদি এর থেকেও বহু মূল্যবান কিছু চেয়ে বসি তাহলে সেটা আমাকে দিয়েন। আর টাকাটা আমার মৃত মায়ের ও আপিলির। আমার নিজের না। আমার মায়ের এক সন্তান ন*রপ*শুদের হাত থেকে টাকা থাকা স্বত্বেও বাঁচতে পারে নি। দয়া করে রাখবেন এটা।
আদিরার বাবা ইতস্তত করছেন। মারসাদ তা দেখে বলে,
–বেশি ভাববেন না। আমি আপনার মেয়ের দেনমোহর দিলাম।
আদিরার বাবা-মা চমকে তাকালেন। দেনমোহর তো বিয়ের সময় দেয়। তারা তো তার মেয়ের বিয়ে দেয় নি। মারসাদ হেয়ালি করে বলে,
–বিশ্বাস রাখতে পারেন। আমি আপনার বিশ্বাস ভাঙবো না। সামনে যদি কোনো খারাপ পরিস্থিতি আসে তাহলে আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করে নিবো। আপনাদের অনুমতি চাই। মেয়ের দেনমোহর হিসেবে রাখুন। এরপর আপনার মেয়েরটা আপনার মেয়ের সাথে বুঝে নিবেন। এখন আমার সময় কম। ফজরের আজান হবে কিছুক্ষণের মধ্যে। তার আগেই চলে যেতে হবে।
মারসাদ টাকা গুলো জোর করে আদিরার বাবার হাতে দিয়ে চলে যায়। আদিরার বাবা অবাক হয়ে মারসাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।
……………
আঁধার কেটে নতুন প্ররাম্ভ। আসরের পর প্রকৃতিতে এক পশলা ভারী বর্ষণ হলো। কৃষ্ণ মেঘের ঘনঘটা বিশাল অন্তরিক্ষে। কৃষ্ণচূড়া ও রাধাচূড়ার ডাল ভেঙে পরে আছে রাস্তাঘাটে। কেউ হয়তো কৃষ্ণচূড়া তার প্রেয়সীর হাতে মুঠোভরতি করতে চেয়েছিল। আদিরারা এখন ঢাকা এসে পৌঁছালো। আসার পথে যাত্রা বিরতির জন্য দেরি হলো। পুরো পথে মারসাদ আদিরার সাথে একটা শব্দ বিনিময়ও করে নি। আদিরা মারসাদকে কিছু বলতে উসখুস করছিল কিন্তু গম্ভীর্যতাপূর্ণ মুখাবয়ব দেখে সাহস হয় নি। আদিরার হোস্টেলের সামনে আদিরাকে নামিয়ে দিয়ে একটুও অপেক্ষা না করে চলে গেল মারসাদরা। আদিরা মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে নির্নিমিখ পথের দিকে চেয়ে রইলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেসে গিয়ে সটান হয়ে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে নিজের জীবনের ঘটে যাওয়া সব ভাবতে লাগলো। এতো কিছু হয়ে গেলো চারটা মাসে যে চোখের পলকেই সব হয়ে গেলো। আদিরা স্বগোতক্তি করে,
“আমার সকল বিপদে না চাইতেও আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত হয়। কিন্তু কেনো? এজন্যই কী বলেছিলেন? আপনার মন চুরি করেছি? আমার তো মনে হয় আপনি স্বেচ্ছায় মন হারিয়েছেন! তবে আপনি আমার প্রয়োজনের বাহিরে প্রিয়জন হয়ে উঠুন! আজ কিয়ৎ অনুমতি দিলাম মনকে!”
……..
হোস্টেলের ছাদের চাবি নিয়ে মারসাদ ছাদে উঠলো। আরক্তিম আভা ছড়িয়ে ভানু পশ্চিম আকাশে হেলে পরেছে। আকাশে এখনও কিয়ৎপরিমাণ মেঘের উপস্থিতি রয়েছে। হয়তো রাতের আঁধার বিশালাকায় অম্বরে ছেয়ে গেলে আবারও নিজেদের ঝমঝম ছন্দে আবির্ভাব ঘটবে বৃষ্টিকন্যাদের। মারসাদের মন হুট করে খুব ভালো হয়ে আছে। সন্ধ্যায় পাখিদের ঘরে ফেরার কিচিরমিচির গানে মারসাদ ছন্দ কাটে,
“রাঙুক এই আরক্তিম অম্বর,
তোমার আমার প্রণয়ের রঙে।
কৃষ্ণচূড়ার চাদরে আচ্ছাদিত বর্ষণমুখর শহরে,
প্রেম আসুক নিজের সকল রঙ নিয়ে।
আমৃত্যু আমি বারবারে তোমার প্রেমে পরতে চাই,
মায়াবিনী মনোহারিণী!”
_______তিথী
________
মারসাদের ভাবনাশক্তিকে সত্য করে সন্ধ্যায় প্রকৃতি বর্ষণে সিক্ত হলো। আদিরার রুমমেট একজন আছে শুধু। সে আগে আগে বাড়িতে গিয়ে ফিরেও এসেছে। আদিরা জানালার ধারে অলস বসে বৃষ্টি উপভোগ করছে। আজ গ্রামে থাকলে এবং কোনো পারিপার্শ্বিক বাধা-বিপত্তি না থাকলে আদিরা উঠোনজুড়ে বৃষ্টিতে ভিজতো। বৃষ্টির শিতল ছাঁটে মুগ্ধ হতো। আদিরার রুমমেটও আদিরার সাথে এসে বসেছে। দুজনে একসাথে বৃষ্টি দেখছে। আদিরার রুমমেট তার মোবাইলে রবীন্দ্রসংগীত “মন মোর মেঘের সঙ্গী” ছেড়ে দিলো। আদিরার রুমমেট রবীন্দ্রসংগীতের ভক্ত। দুজনে মিলে বৃষ্টিতে হাত ভিজিয়ে উপভোগ করছে।
চলবে ইনশাআল্লাহ্,
#এক_শহর_প্রেম?
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২০
স্নিগ্ধ প্রহরে ধরিত্রীর বুকে প্রভাকর তার মিষ্টি রোদের ছটা ছড়িয়ে নতুন দিনের সুস্বাগতম করছে। ভোর ছয়টা ছুঁই ছুঁই। আদিরা ভাবলো একটু হাঁটতে বের হবে। গ্রাম থেকে আসার পর বাবা-মায়ের সাথে আর কথা হয় নি তাই মনটা ভার হয়ে আছে। ভার্সিটিও বন্ধ। বিকেলের আগে অলস বসে থাকতে হবে। বৃষ্টির কারণে পিচ ঢালা রাস্তা সিক্ত হয়ে আছে। গাছের পাতায় ভেজা রাস্তাঘাট আচ্ছাদিত। একাকি হাঁটতে ভালোই লাগছে আদিরার। কিছুটা দূরে একটা কদম গাছ আছে। বর্ষা ঋতুর আভিধানিক বিদায় খুবই নিকটে হলেও আদৌতেও কী বাংলার প্রকৃতিতে বর্ষার বিদায় শ্রাবণেই হয়? কদম গাছটার কাছে মাহিদের সাথে এক দুইবার যাওয়া হয়েছিল। মাহি ছবি এঁকেছিল সেখানে গিয়ে। আদিরা সেই পথ ধরতে গিয়ে দেখতে পেলো কিছুটা দূরে কেউ একজন দাঁড়িয়ে কিছু একটা করছে। আদিরা এগিয়ে যেতে চেয়েও গেলো না। যদি খারাপ কেউ হয়। আদিরা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ব্যাপারটা না বুঝে চলে যাচ্ছিলো তখন দেখলো একটা ছেলে ট্রাউজার ও গেঞ্জি পড়া সে হাতে ছোটো ফ্লাস্ক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার কাছে দৌঁড়ে আসছে। দৌঁড়ে আসা ছেলেটাকে পাশ থেকে আদিরার কাছে পরিচিত মনে হলো। আদিরা অন্যপাশ দিয়ে একটু সামনে এগোলো। দুইটা ছেলের মধ্যে সদ্য আসা ছেলেটার মুখাবয়ব আদিরার কাছে দৃশ্যমান হলো। ছেলেটা আহনাফ। আহনাফ হাতে থাকা ফ্লাস্কটা থেকে চা ঢেলে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কিছু করছিল ছেলেটাকে চা দিল। আদিরা অনুমান করে নিলো দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা মারসাদ হবে। আদিরা দ্বিমনায় ভুগলো, যাবে কি যাবে না? অতঃপর ভাবলো, যাবে না। আদিরা কদম গাছটার দিকে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হলো।
আহনাফ চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে এদিকওদিক নজর সরিয়ে একটা মেয়েকে দেখে মনে হলো ওটা আদিরা হতে পারে। তাও সত্যতা যাচাই করতে মারসাদকে মেয়েটার দিকে ইশারা করে বলল,
–দেখ তো ওটা আদিরা না?
মারসাদ ক্যানভাসে রঙ-তুলির সংমিশ্রণ থামিয়ে ইশারাকৃত দিকে তাকিয়ে মৌন সম্মতি দেয়। আহনাফ সহাস্যে আদিরাকে জোরে ডাক দেয়। আদিরা ডাক শুনে থেমে পেছোনে তাকায়। আহনাফ দৌঁড়ে আদিরার কাছে গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
–এই সকালবেলা কই যাচ্ছ?
আদিরা মিষ্টি হেসে বলে,
–সামনে কদম গাছটা আছে না? সেখানে যাচ্ছিলাম ভাইয়া। আপনারা এখানে কী করেন ভাইয়া?
আহনাফ জবাব দেয়,
–মারসাদের ছবি আঁকার ঝোঁক উঠলো তাই ফজরের পর আমাকে টেনে নিয়ে আসলো। আসো দেখবে।
আদিরা আহনাফের সাথে যায়। মারসাদ আদিরাকে আসতে দেখেও কিছু বলে না। আজ তার মন খারাপ। আদিরা আহনাফের সাথে সেখানে গিয়ে দেখে মারসাদ চিত্র আঁকছে। যেখানে একটা মেয়ে বিশাল খোলা নীল অন্তরিক্ষের নিচে কোনো পাহাড় বা টিলার উপরে খোলা চুলে নীল শাড়িতে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে আছে। শাড়ির আঁচল ও চুলগুলো বাতাসে ঢেউ খেলে যাচ্ছে। অদূরে বড়ো বড়ো সবুজ পাহাড়ের মতো আবছা দেখা যাচ্ছে। নীল আকাশে সাদা মেঘের ছড়াছড়ি।
আদিরা মুগ্ধ হলো চিত্রটা দেখে। এতো সুন্দর জীবন্ত চিত্র যা ভাষায় ব্যাক্ত করা যায় না। মুগ্ধচিত্তে চিত্রটার দিকে একমনে নজরবন্ধী করেছে আদিরা। মারসাদ ঈষৎ ঘার ঘুরিয়ে আদিরার সম্মোহিত দৃষ্টি দেখে হালকা হাসলো তারপর আবার রঙ-তুলিতে চিত্রটার আরও রূপ দিতে লাগলো। আহনাফও চিত্রটার দিকে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে আছে। আদিরা চোখে-মুখে মুগ্ধতা প্রকাশ করে বলল,
–এতো সুন্দর জীবন্ত চিত্র। মনে হচ্ছে মেয়েটাকে আমি এই ভয়ংকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করছি।
মারসাদ তুলি হাতে নিয়ে চিত্রটার দিকে নজর রেখে আলতো হাসলো। আদিরা কৌতুহল হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
–কাউকে উদ্দেশ্য করে আঁকা হয়েছে কী? নাকি এমনেই এঁকেছেন?
মারসাদের বিষন্নতা ভারাক্রান্ত মন হেয়ালি করতে চাইলো। হেয়ালি করে বলল,
–এমন কেউ! যাকে আমি অনেক ভালোবাসি। যাকে এই রূপে দেখে আমার মন তার খুশিতে উচ্ছাসিত হয়েছিল। যাকে ছাড়া হয়তো নিষ্ঠুর পৃথিবী আমায় গ্রাস করে নিতো। যার জন্য নিজের ভেতরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে। সেই পরম সুন্দরী রমণী আমার দেখা দ্বিতীয় সুন্দরী নারী। প্রথমজন আমার মা। যাকে আমি জ্ঞান হওয়ার পর দেখি নি।
আদিরা মারসাদের মুখ নিঃসৃত প্রতিটা শব্দ গভীরভাবে অনুধাবন করলো। হুট করে তার মনের কুঠুরিতে প্রশ্নের উদ্রেক হলো। মারসাদ কী কাউকে ভালোবাসে? আদিরা সন্দিহান হয়ে প্রশ্ন করলো,
–তাকে খুব ভালোবাসেন?
মারসাদ তাচ্ছিল্য হাসলো। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল,
–খুব! তার জন্য জান দিতেও পারি নিতেও পারি! তাকে ভালো না বেসে থাকা যায় না যে।
আদিরার মনে হলো তার মন কাঁচের মতো ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে। তাহলে এতোদিন মারসাদের চোখের ভাষা সে কী ভুল পড়েছে? আদিরা আপন মনে প্রমোদ গুনলো, মারসাদ তো তাকে মুখে কিছু বলে নি। আর না কোনো ওয়াদা দিয়েছে। হয়তো তার ভাবনাটাই ভুল ছিল!
আহনাফ আদিরার দিকে তাকালো। আদিরার চেহারার ভাব-ভঙ্গী তার সুবিধার ঠেকলো না। মারসাদ কী হিসেবে কথা গুলো বলেছে তা সবার বোধগম্য হওয়ার কথা না। যারা এই বিষয়ে অবগত তারাই বুঝতে পারবে। আহনাফ আদিরার পাণ্ডুর মুখশ্রী দেখে নিয়ে মারসাদের দিকে তাকালো। মারসাদ একদৃষ্টিতে চিত্রটার দিকে তাকিয়ে আছে। আহনাফ বুঝলো মারসাদ যা বলেছে সব তার অবচেতন মনের সরল ভাষা। আহনাফ মাথায় হাত দিয়ে এক ঢোক গিলে আদিরাকে বলল,
–জানতে চাও না চিত্রটা কার?
আদিরা মলিন হাসলো। তার জানার ইচ্ছে নেই। সে যে শুরুতেই জেনে গেছে তাতে সে নিজেকে সামলে নিতে পারবে। আদিরা ঠোঁট ভিজিয়ে আস্তে করে বলল,
–না ভাইয়া সমস্যা নেই। আমি একটু কদম গাছটার কাছে যাবো।
আহনাফের মনে হলো আদিরা জানতে চাক বা না চাক কিন্তু তাকে বলতেই হবে। আহনাফ হড়বড়িয়ে বলল,
–সে আপিলি! মানে মারসাদের বড়ো বোন। আজ আপিলির তৃতীয় মৃ*ত্যুবার্ষিকী। এই শ্রাবণ মাসেই আপিলির সাথে মারসাদ শেষবারের মতো বান্দরবান গিয়েছিল। তারপর তো আপিলির সাথে আর যাওয়া হয় নি। আপিলি পাহাড়ের চূড়ায় এমনভাবেই প্রকৃতি উপভোগ করেছিল। সেটাই মারসাদ চিত্রতে ফুটিয়ে তুলেছে।
আদিরা সব শুনে বোকা বনে গেলো। সে তো চিত্রর মেয়েটাকে মারসাদের প্রেমিকা ভেবে মস্ত বড়ো ভুল ভেবে বসেছিল। আদিরা ভুল ভেবে চোখ মুখ খিঁচে জিভে কাঁ*মড় দেয়। আর মারসাদ সামনে দিকে তাকিয়েই আলতো হাসে।
________
বিগত তিন দিনে রাদিবের অবস্থা খুবই শোচনীয়। সে ঘুমে জাগরণে সর্বক্ষেত্রে মিলিকেই দেখে। রাদিবকে রাতের বেলা কেউ খাবারের সাথে “লাই*সার্জিক অ্যা*সিড ডা*ইই*থাইলা*মাইড” ড্রা*গ মিশিয়ে দেয়। যা একটি সিন*থেটিক ড্রা*গ। শস্যদানার ওপর জন্মানো বিশেষ ধরনের ছত্রাক থেকে উৎপাদিত লা*ইসা*র্জিক অ্যা*সিড থেকে রা*সায়নিক সংশ্লেষের মাধ্যমে ডি-লাই*সা*র্জিক অ্যা*সিড ডা*ইইথি*লামাইড বা এল*এস*ডি তৈরি করা হয়। সাধারণভাবে এল*এস*ডি হয় বর্ণ ও গন্ধহীন। এটা এক ধরনের বিভ্রম তৈরি করে। ফলে এটা সেবনের পর নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তখন একজন মানুষ যা খুশি তাই করতে পারেন। এটা হ্যা*লুসি*নেশন করায়। যা নিয়ে খুব চিন্তা করবে তা তার অক্ষিপটে ভেসে উঠবে। যদি সুন্দর চিন্তা করে তো সুন্দর সব ভেসে উঠবে আর খারাপ চিন্তা করে এটা সেবন করলে খারাপটাই ভেসে উঠবে। এটা চিকিৎসকদের অনুমতি ছাড়া সেবন করা ক্ষ*তিকর ও প্রাণহা*রক।
রাদিবের নিজেকে শে*ষ করে দিতে ইচ্ছে করে। এই অভিপ্রায় সে গতকাল রাত ৩টার পর দুই পাতা স্লি*পিং পি*ল খে*য়ে ঘুমিয়েছে।
মারসাদ আজ বিকেলে মিলাদ পড়িয়ে ও এতিমখানার বাচ্চাদের মিলির জন্য খাবার খাইয়ে মিলির শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছে মিলাদের খাবার নিয়ে। মারসাদ সেখানে গিয়ে বাড়ির চৌকাঠে দাঁড়িয়ে কলিংবেল চাপে। দরজা খুলে সেই বাড়ির কাজের লোক। মারসাদ বাড়ির মানুষদের উদ্দেশ্যে হাঁক ছাড়ে,
–কোথায় শিকদার বাড়ির মানুষজন। বাহিরে আসুন। আপনাদের বাড়ির বউয়ের ও ছেলের ঘরের সন্তানের আজ তৃতীয় মৃ*ত্যুবার্ষিকী।
বাড়ির লোকজন চৌকাঠের কাছে এসে মারসাদকে দেখে অবাক হলো। ওদের প্রথম মৃ*ত্যুবার্ষিকীর পর মারসাদ দ্বিতীয় মৃ*ত্যুবার্ষিকীতে আসে নি। আজ এসেছে দেখে অবাক হলো। মারসাদ বাঁকা হাসে। তারপর বলে,
–আপনাদের ছেলে কোথায়? সে তার বউ-বাচ্চার মৃ*ত্যুবার্ষিকীর মিলাদের অংশ হবে না? ডাকুন তাকে।
রাদিবের বাবা-মা, ভাই-ভাবি অবাক হয়ে গেল। মারসাদ ওদের আর ঘাটাতে চাইলো না। মারসাদ তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
–থাক। সে হয়তো আমার সামনে আসতে চায় না। মিলাদের খাবারগুলো রাখুন। আমি আজ আসলাম। আল্লাহ্ হাফেজ। ভালো থাকবেন।
মারসাদ রাদিবদের বাড়ির কাজের লোকের হাতে খাবারের প্যাকেটগুলো ধরিয়ে দিয়ে সেখান থেকে চলে আসলো। মারসাদের ঠোঁটের কোনে তৃপ্তির বাঁকা হাসি।
চলবে ইনশাআল্লাহ্
ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।