খড়কুটোর_বাসা_২ #পর্বঃ২৪

0
381

#খড়কুটোর_বাসা_২
#পর্বঃ২৪
#Jhorna_Islam

ইশান বাড়ি থেকে বের হয়ে দিনাদের বাড়ির দিকে যায়।এক ন’জর মেয়ে টা কে দেখার আশায়। নিজের জন্য থাকার একটা ঠাঁই খুঁজতে হবে। তার আগে চোখ দুটোর একটু শীতলতা দরকার। কোথায় জানি থাকতে হয় তাকে।আবার কবে না কবে দেখতে পাবে মেয়ে টা কে।

দিনা টিউবওয়েল থেকে পানি নিতে এসেছে। হাতে তার পানির জগ। কলপাড়ের পাশের একটা গাছের আড়ালে কাউকে দেখতে পায়। একটু ভালো করে দেখে বুঝতে পারে এটা আর কেউ নয় ইশান।

মুহূর্তের মধ্যে দিনার চোখ গুলো ছলছল করে উঠে। ইশান ও মাথা বের করে দিনার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে। কতোদিন পর দেখতে পাচ্ছে। তাও কারো সামনে থেকে ছুঁয়ে বা ভালো করে কাছাকাছি গিয়ে দেখার সুযোগ নেই।

দিনা আশেপাশে চোখ বুলিয়ে ইশানের দিকে এগিয়ে যাবে,এমন সময় তার মা বারান্দা থেকে বলে উঠে,, কিরে দিনা? এতো সময় লাগে পানি আনতে? আমি তো কল চাপার শব্দ ও পাচ্ছি না। কি করিস তুই?

দিনা শুকনো ঢুক গিলে বলে,, এ-এই তো মা এখনই নিয়ে আসছি।

দিনা তার মা কে উদ্দেশ্য করে কথা গুলো বলে অসহায় ভঙ্গিতে ইশানের দিকে তাকায়। চোখ দুুটো দিয়ে নোনা জলের ধারা বয়ে চলেছে তার। নিজের ভালোবাসার মানুষ টার কাছে না যেতে পারা।মন খুলে কথা না বলতে পারার যে কি কষ্ট সেটা এখন দিনা প্রতিনিয়ত বুঝতে পারছে। এই যে এখন মন বলছে এক ছুটে গিয়ে ইশানের বুকে ঝাঁপিয়ে পরতে।৷ বলতে তোমার বুকে আমাকে শক্ত করে আগলে রাখো প্লিজ। কেউ যেনো সেখান থেকে আলাদা করতে না পারে।কিন্তু সে এটা পারছে না।

ইশান দিনার মনের অবস্থা টা ও বুঝতে পারে। মাথা নেড়ে চোখের ইশারায় নিজের কাজ করতে বলে।

দিনা এক ন’জর ইশানের দিকে তাকিয়ে কলপাড় চলে যায়। জগে পানি ভরে বেরিয়ে আসে। চোখ বোলায় আবার ঐ জায়গায় কিন্তু কোথাও ইশান কে দেখতে পায় না।

এদিক ওদিক তাকিয়ে খোঁজার চেষ্টা করে। কিন্তু না কোথাও নেই চলে গেছে। এর মধ্যে মায়ের রাগী গলায় ডাক আবার কানে এসে বারি খায়। ভিতর থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে। ইশান চলে গেছে। হয়তো এক ন’জর দেখার জন্য এসেছিল। দিনা ও নিজের কষ্ট টা নিজের ভিতর লুকিয়ে রেখে ঘরে চলে যায়।

————
ইশান দিনা কে দেখে তার খুব কাছের বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে উঠে। দুইজন খুব কাছের।ইশান আগে জেনে নিয়েছে ফোন করে থাকার কোনো ব্যবস্থা করতে পারবে কি না। তখন রিদ বলল চুপচাপ আমার বাড়ি এসে পর।যতোদিন ইচ্ছে ততোদিন থাক।

ইশান ঠিক আছে বলে ফোন রাখে।আপাতত নিজের একটা ব্যবস্থা করার আগে রিদের বাসা ই ভরসা। পরে একটা বাড়ি ভাড়া নিবে।

রিদ ও ওর বাবার সাথে ব্যবসা করে। এখব বেশির ভাগ দায়িত্ব রিদের উপর ই।রিদের থেকে সে ধারণা ও নিতে পারবে। তাছাড়া রিদ ই তাকে ব্যবসা করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে।বলেছে ইশান কে সাহায্য করবে।

ইশান রিদের বাসায় দুই দিন থেকে তারপর ইরহান কে কল দেয়। কল দিয়ে ও যেনো কেমন দ্বিধায় পরে যায়।কিভাবে টাকার কথা বলবে বুঝতে পারে না। ইরহান হয়তো বুঝতে পারে ইশানের ব্যাপার টা। ভাই যে তার টাকা খুঁজতে লজ্জা পাচ্ছে সে টা ও বুঝতে পারে।

ইরহান তাই নিজে থেকেই বলে টাকা পাঠিয়ে দিবে।আগেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। তারপর ইশানের থেকে কাজের সব পরিকল্পনা জানতে চায়। ইশান সব কিছু বুঝিয়ে ভাই কে বলে।

যদিও ইরহানের ব্যবসা বিষয়ে তেমন একটা ধারণা নেই। তবুও সব পরিকল্পনা শুনে মনে হচ্ছে ভালো কিছু করতে পারবে। ভালো করে মন দিয়ে নিষ্ঠার সাথে যেনো কাজ করে বলে ইরহান।

তুমি শুধু আমার উপর বিশ্বাস রাখো ভাইয়া।আমি ইনশাআল্লাহ পারবো।আমার জন্য দোয়া করো।তোমার এই ছোট ভাই তোমার ভরসার জায়গা টা রাখবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা।

তোর জন্য আমি সব সময় দোয়া করি। আমার বিশ্বাস আছে তোর উপর এগিয়ে যা তুই।

ইশানের বুক টা ভরে যায় এমন একটা ভাই পাওয়ার জন্য।

রিদের থেকে পরামর্শ নিয়ে। ইরহান যেই টাকা দিয়েছে তা দিয়ে ছোট খাটো একটা কাপড়ের ব্যবসা শুরু করে ইশান। প্রথম কয়েকদিন খুব ঝামেলায় পরে। লস ও খায় অনেক। কিন্তু ইশান আশা ছাড়েনি। যে করেই হোক তাকে পারতে হবে। যখনই মনোবল ভেঙে যায় ইরহানের সাথে কথা বলে।দিনার মুখ টা চোখ বন্ধ করে ভাবে তখন আবার নতুন করে ভিতরে মনোবল সৃষ্টি হয়। কাজের ফাকে সুযোগ বুঝে দিনা কে এক ন’জর দেখে আসতে ভুলে না।

—————————–
অন্যদিকে তাছলিমা বানু ইশানের উপর রা’গ করে একবার খবর নেওয়ার ও চেষ্টা করে নি কেমন আছে কোথায় আছে।

নিজের স্বামী তো এখন বাড়িতেই আসে না। নে’শা করে বাইরেই পরে থাকে। সংসারের প্রতি তার যেনো কোনো দায়িত্ব নেই।সে নিজের মতো আছে। কে কি করছে,কার কি হলো তাতে তার কিছুই যায় আসে না। সে নে’শা করতে পারলেই হলো।

ইমনের বউটার ইদানীং খুব ভাব বেড়েছে। নিজেকে রানী মনে করে। একটা কাজ ও এখন করে না। কিছু বললে মুখে মুখে ত’র্ক করে। আগে তাছলিমা বানুর চোখ রাঙানিতেই ভয় পেতো।এখন দিন দিন সাহস বেড়েছে। ভ’য় পাবে দূরে থাক কথা বললে পাত্তা ই দেয় না। ইমন টা হয়েছে বউয়ের ভে/ড়া বউয়ের কথায় উঠে আর বসে। অন্যায় করলেও একটা টু শব্দ বের করবে না। এই যে নিজের সামনেই মা কে কথা শোনায় তাও চুপচাপ থাকে।

তাছলিমা বানু প্রতিবাদ করলে লিমা তখন বলে,,এতোদিন আমার উপর অনেক ছরি ঘুরিয়েছেন। আর না। এটা এখন আমার স্বামীর বাড়ি। আমার রাজত্ব আমি যা বলবো তাই হবে।

তোমার স্বামী আমার ছেলে হয় ভুলে যেও না।

আপনার ছেলের উপর অধিকার বিয়ের আগে ছিলো। এখন আমার সব।

প্রতিদিন দুইজনের ত’র্কা’ত’র্কি লেগেই আছে এই নিয়ে।

——————-

ইরহান কাজ থেকে এসে দেখে যুথি বারান্দার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে মন ম’রা হয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে।

ইরহান পা বাড়িয়ে ও নিজের দিকে একবার তাকায়। ফ্রেশ হওয়া দরকার। তাই চুপচাপ ফ্রেশ হতে চলে যায়। কিছু সময়ের মাঝেই ফ্রেশ হয়ে চলে আসে। যুথি তখনও একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।

যুথি বুঝতে ও পারে নি ইরহান এসেছে। ইরহান ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে পিছন থেকে যুথিকে জড়িয়ে ধরে, যুথির কাঁধে থুতনি রাখে।

যুথি ঘাবড়ে যায়। পরোক্ষনে বুঝতে পারে মানুষ টা কে।

কি হয়েছে আমার বউয়ের? আমাকে রেখে সে আকাশ দেখছে কেন?

“কখন এলেন? মনে তো হচ্ছে হাত মুখ ধুয়ে ও ফেলেছেন। আমিতো টে’র ও পেলাম না। আমাকে ডাক দেন নি কেন?”

আমার বউ ভাবনায় ছিলো তাই ডাকিনি। এখন বলোতো মন খারাপ কেন?

মন খারাপ না।

বাড়ির কথা মনে পরছে?

তা একটু পরছে।তবে একটা জিনিস ভাবছিলাম।

ইরহান যুথিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিজের কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে জানতে চায়।

যুথি চোখ বন্ধ করে বলে,,আ-আসলে আমার একা একা ভালো লাগে না। একটা মানুষ দরকার। একটা নতুন অতিথি হলে ভালো হয়।

ঠিক আছে আমি দেখছি কাউকে পাই কি না। কিন্তু এখন একজন লোক খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল।

যুথি চোখ খুলে ব্রু কোচকে ফেলে। কিসের লোকের কথা বলছেন আপনি?

তোমার হাতে হাতে কাজ করে দেওয়ার আর গল্প করার।

আপনি আসলেই একটা বোকা পুরুষ। টাকা খুব বেশি হয়েছে না? দুইজনের জন্য উনি আবার লোক রাখবে।
আমি অন্য কাউকে চাই।

কাকে?

বোকা পুরুষ আমি আমার পেটে আপনার অস্তিত্ব বহন করতে চাই।

ইরহান যুথির কথায় থমকে যায়। তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে। যুথির নাকের সাথে নিজের নাক ঘষে বলে,,আমিও কয়েকদিন ধরে ভাবছিলাম এই কথা টা।

যুথি বেশ খুশি হয় ইরহানের কথায়। কিছু বলতে নিবে তার আগেই ইরহানের ফোন বেজে উঠে।

ইরহান কল রিসিভ করে। ঐপাশ থেকে সব কথা চুপচাপ শুনে মুখ টা ফ্যা’কাশে হয়ে যায়। কল কাটার পর যুথি জানতে চায় কি হয়েছে?

ইরহান একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে জানায়, তার বাবা আর নেই মা’রা গেছে। অতিরিক্ত ম’দ্য’পা’নের ফলে। আরো একদিন আগেই মা’রা গেছে কিন্তু কোন খোঁজ ছিলো না।

#চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here