নীল_আকাশের_পরী #এম_আর_এ_আকিব #পর্ব_২

0
486

#নীল_আকাশের_পরী
#এম_আর_এ_আকিব
#পর্ব_২
শব্দসংখ্যা: ১৩৬২

আকিব কল ধরতেই ওপাশ থেকে একটি মেয়ে মিষ্টি কণ্ঠে বলল, “হ্যালো কেমন আছ?” হঠাৎ মেয়ে কণ্ঠ শুনে আকিব যেন কিছুটা অবাক হলো। কারণ সে কখনো কোনো মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলেনি। সে বলল, “হুম ভালো, তুমি কেমন আছ?”
ওপাশ থেকে বলল, “জি, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। চিনতে পেরেছ?”
“হুম, তুমি ঐশী না?”
“বাব্বাহ! চিনলে কীভাবে?”
“আসলে, আমার নাম্বার কোনো মেয়ের কাছে নেই তো তাই। আজ তোমাকে নাম্বার দিলাম তাই ভাবলাম তুমিই হবে।”
ঐশী অবাক হয়ে বলল, “কী বলো! কলেজে পড়ো, এখনো কোনো মেয়ের কাছেই তোমার নাম্বার নেই? কারো সাথেই কখনো কথা বলোনি?”
আকিব লাজুক হাসি হেসে বলল, “না, আসলেই বলিনি।”

কথাটি শুনে ঐশী অনেকক্ষণ হাসলো। ঐশীর হাসি সুন্দর, খুবই সুন্দর। আকিবের উচিত ঐশীর হাসির প্রশংসা করা। সুন্দর জিনিসের প্রশংসা করতে হয়৷ যে সুন্দর জিনিসের প্রশংসা করে না, তাকে কৃপণ বলা হয়। আকিব কৃপণ নয়। কিন্তু তার লাজুকতার জন্য সে প্রশংসা করতে পারছে না।

অনেকক্ষণ হাসার পর ঐশী হাসি থামিয়ে বলল, “যাক বাবা, তুমি এতো ইনোসেন্ট জানা ছিল না।”
ঐশী কথাটি উপহাস করে বলল না কি মন থেকেই বলল তা আকিব বুঝতে পারল না। কে তাকে কী ভাবলো তা সে জানতে চায় না। সে সত্যি কথা বলেছে, আর বলবেও। আকিবকে চুপ থাকতে দেখে ঐশী বলল, “কী করছ?”
আকিব বলল, “এই তো লেখাপড়া করছি।”
“পড়তে ভালো লাগে তোমার?”
“না, কিন্তু না পড়লে স্যার যখন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবেন তখন তো পারব না। সবাই হাসাহাসি করবে।”
“আমি তোমাকে প্রশ্নের উত্তর বলে দেবো।”
“তুমি কি পারো?”
“হ্যাঁ, তোমাকে যে সহজ প্রশ্ন জিজ্ঞাস করা হত, তা কে না পারে?”
“আচ্ছা, কিন্তু তারপরেও আমাকে পড়তে হবে। এখন রাখি তাহলে?”
“আচ্ছা, রাখো।”
আকিব ফোন কেটে দিলো।

এতক্ষণ পড়া বন্ধ করে মনোযোগ দিয়ে আকিবের কথা শুনছিল সায়রা। কল রাখতেই সায়রা বলল, “কে কল দিলো ভাইয়া?”
আকিব গম্ভীর কণ্ঠে বলল, “ফ্রেন্ড একটা।”
সায়রা বলল, “ছেলে না মেয়ে?”
“মেয়ে।”
“তোমারও মেয়ে ফ্রেন্ড আছে?”
কথাটি বলে ফিক করে হেসে দিলো সায়রা। সায়রার এই স্বভাবটা আকিবের ভালো লাগে না। হুট করেই হেসে দেবে। যেখানে হাসার কথা নয় সেখানেও হেসে ফেলে। আর বড় ভাই হিসেবে তাকে সায়রার সম্মান করা উচিত। কিন্তু সে তা করে না। সে এমনভাবে কথা বলে যেন মনে হয় আকিব তার বন্ধু।
আর বন্ধু হলেই বা হাসতে হবে কেন? এই তো কিছুক্ষণ আগে সে ঐশীযে বলল যে সে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলে না। আর এতেই মেয়েটি খিলখিল করে হাসতে লাগল। যদিও তার হাসি সুন্দর কিন্তু তাই বলে এভাবে হাসতে হবে? সে তো হাসির কোনো কথা বলেনি।

পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটা লোককেই আকিবের ভালো লাগে। কিন্তু ওই ভালো লাগা লোকগুলোর কয়েকটি কাজ আকিবের একদম ভালো লাগে না। সে ভাবে এই কাজগুলো যদি তারা করত না, তাহলে তারা হতো পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ।
এই যেমন- জব্বার স্যারের বেশি বেশি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করাটা তার একদম ভালো লাগে না। ঐশী ভালো কথায়ও হেসে ফেলে এটা ভালো লাগে না, সায়রা তাকে ওতোটা সম্মান দেয় না, কোনো কাজে ফিক করে হেসে দেয় এটা একদম ভালো লাগে না৷ তার আম্মুর অল্পতেই অভিমান করাটা ভালো লাগে না। আর তার আব্বু হুটহাট তাকে কোনো একটা কাজ করার আদেশ দিয়ে দেন। এটা একদম ভালো লাগে না।

আকিব গম্ভীর মুখে বলল, “এভাবে ফিক করে হেসে দিলি কেন? আমি হাসির কিছু বলেছি? তোর না সামনে পরীক্ষা? পড়া কতটুকু হলো?”
ভাইয়ের কথা শুনে সায়রা লক্ষ্মী মেয়ের মতো চুপচাপ পড়তে লাগলো। আকিব বলল, হ্যাঁ, এভাবেই লক্ষ্মী মেয়ের মতো পড়বি। তাহলে তোর চেহারা দেখতে মায়া মায়া লাগে। কিন্তু তুই মাঝেমধ্যে কোনো কারণ ছাড়া হাসিস, এতে তোকে খুব-ই বিশ্রি দেখায়।”
কথাটি শুনে সায়রা আবারও ফিক করে হেসে দিলো

রাত এগারোটা। আকিবের বাবা মুদি দোকান বন্ধ করে বাড়িতে এসেছেন৷ তাদের পরিবারের একটা নিয়ম হলো রাতে সবাই একসাথে খেতে বসবে। তাই যতক্ষণ আকিবের বাবা বাড়িতে না আসবেন, ততক্ষণ কেউ খাওয়ার নিয়ম নেই।

সবাই খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে। আজকে রান্না করা হয়েছে মসুর ডাল, আলু ভর্তা এবং আলু দিয়ে মৃগেল মাছ। মসুর ডাল আকিবের খুবই প্রিয়। তাই সে খুব মজা করেই খাবার খাচ্ছে৷ আকিবের বাবা হঠাৎ বললেন, “কীরে আকিব? তোর লেখাপড়ার কী খবর? লেখাপড়া ঠিক মতো করছিস না কি আগের মতোই সহজ প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারিস না? ছোটবেলায় তোর জন্য কতবার যে আমাকে স্কুলে যেতে হয়েছে তার হিসাব নেই। আমি তো কখনোই ভাবিনি তুই এসএসসি পাশ করতে পারবি। তা এখন কী অবস্থা পড়ার?”

বাবার কথা শুনে সায়রা ফিক করে হেসে দিলো। ওর হাসি দেখে আকিব খুব-ই রাগ হলো৷ কিন্তু বাবা-মায়ের সামনে সায়রাকে ধমক দেওয়া যাবে না। তারা সায়রাকে খুব-ই ভালোবাসে। সায়রাকে যতটুকু ভালোবাসে তার একটুও আকিবকে বাসে না। আকিবের তো মাঝেমাঝে সব্দেহ হয় যে সে তাদের আপন ছেলে কি-না।

আকিব শান্ত কণ্ঠে বলল, “জি আব্বু, আগের থেকে ভালো৷ আজ স্যার আমাকে দুটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি দুটোই পেরেছি।”

আকিবের আব্বু বললেন, “তাহলে তো ভালোই।”
তারপর সায়রাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “কী মামণি, তোমার লেখাপড়ার কী খবর? সামনে তো মনে হয় পরীক্ষা।”

সায়রা বলল, “জি আব্বু, লেখাপড়ার খবর তো খুবই ভালো। নিয়মিত স্কুলে যাই, ক্লাস করি। স্যার যা যা প্রশ্ন করেন আমি সবই পারি।”
আকিবের আব্বু হেসে বললেন, “তাহলে তো ভালোই।”

আকিবের হঠাৎ চোখ গেল তার আম্মুর দিকে। তিনি না খেয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। আকিব বলল, “কী আম্মু? না খেয়ে বসে আছ কেন? মাথা ব্যথা করছে না-কি?”

আকিবের আম্মু অভিমানী কণ্ঠে বললেন, “আমাকে নিয়ে কারো ভাবতে হবে না। আমি ম*রে গেলেও কারো কি কোনো যায় আসে? সবাই তো কী হাসিমুখে খাচ্ছে।” শেষের কথাটি আকিবের আব্বুর দিকে তাকিয়ে বললেন।
আকিবের আম্মুর প্রায়-ই মাথা ব্যথা করে। আর মাথাব্যথা করলে ফার্মেসি থেকে ঔষধ এনে খেলেই তা কমে যায়।

আকিব কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার আব্বু বললেন, “এই আছেন একজন, সামান্য ব্যাপার নিয়ে অভিমান করেন। তা তোমার যে মাথাব্যথা করছে তা কাউকে না বললে কীভাবে বুঝবে?”
আকিবের আম্মু বললেন, “বুঝতে হবে না কাউকে।”
আকিবের আব্বু হেসে বললেন, “আচ্ছা আচ্ছা, বুঝেছি। আচ্ছা, খাওয়া শেষ করে আমি টাকা রেখে যাবো, আকিব গিয়ে তোমার জন্য ঔষধ নিয়ে আসবে।”

আকিব বলল, “কিন্তু বাবা, এত রাতে?”
আকিবের আব্বু বললেন, “কই আর কতো রাত হলো? আর তুই ভয় পাচ্ছিস না-কি? তুই ছেলে মানুষ, তুই ভয় পাবি কেন? প্রতিদিন রাত বারোটা পর্যন্ত তোর বাইরে ঘুরেবেড়ানো উচিত।”
আকিব বলল, “না, ভয় পাবো কেন?”

আকিব মুখে না বললেও মনে মনে ভূত অনেক বেশি ভয় পায়। ছোটবেলায় যখনই সে কান্না করতো তখনই তাকে ভূতের ভয় দেখানো হতো আর তাতেই সে চুপ হয়ে যেত। আবার প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগেও তাকে ভূতের গল্প শুনানো হতো। তাই সেই ছোটবেলা থেকেই ভূতের প্রতি তার কিছুটা ভয় কাজ করে।

সায়রা বলল, “আব্বু, ভাইয়া মুখে না বললেও মনে মনে কিছু অনেক ভয় পাচ্ছে।”
আকিব বলল, “আরে দূর ভয় পাবো কেন?”
আকিবের আব্বুর ইতোমধ্যে খাওয়া শেষ হয়েছে। তিনি পকেট থেকে ১০০টাকার একটি কচকচে নোট টেবিলে রেখে বললেন, “এই টাকা রাখলাম। খাওয়া শেষে ঔষধ নিয়ে আসিস।” তারপর আকিবের মায়ের দিকে চেয়ে বললেন, “এভাবে বসে না থেকে ভাত খাওয়ার চেষ্টা করো। খাওয়ার পর ঔষধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে।”

এত রাতে বাজারে যেতে আকিবের ইচ্ছে করছে না। তার এখন ঘুমাতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কী আর করার! বাবা যেহেতু বলেছেন তাহলে তো যেতেই হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা তার মায়ের মাথাব্যথা। মা-কে সে অসম্ভব রকমের ভালোবাসে৷ তাই বাধ্য হয়েই বাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো।

বাজারে যেতে একটি গোরস্থান এবং একটি বড়ো বটগাছ ফেলে যেতে হয়। এই বটগাছ নিয়ে লোকমুখে অনেক কথা প্রচলিত আছে। এই বটগাছে নাকি জ্বিন-পরীদের বাসা রয়েছে। তবে এগুলো শুধুই লোকমুখে প্রচলিত। এর গ্রহণযোগ্য কোনো প্রমাণ নেই। কিন্তু তারপরেও আকিবের মনের মধ্যে খটখট করছে।

হাঁটতে হাঁটতে সে গোরস্থান পেরিয়ে যখন বটগাছের সামনে এলো তখনই তার শরীরে এক ঠান্ডা বাতাস লাগল। কিন্তু সবই তার মনের ভুল বলে সে আল্লাহ আল্লাহ বলে পথ চলতে লাগল। কিছুক্ষণ পরেই সে বটগাছ পেরিয়ে বাজারের মধ্যে প্রবেশ করলো। না, বাজারে অনেক লোকেরই সমাগম আছে। আকিব ফার্মেসি থেকে মায়ের জন্য ঔষধ কিনে বাড়ির দিকে যাত্রা করলো।

বটগাছের কাছে আসতেই আবারও তার শরীরে ঠান্ডা এক বাতাস লাগল। এটাও কি তার মনের ভুল? না, এখন এতকিছু ভাবার সময় নেই। সে দ্রুত পা ফেলে এগিয়ে যেতে লাগলো৷ কিন্তু হঠাৎ করেই কোনো রমণীর অট্টহাসি তার কানে এসে পৌঁছালো। সে যেন ধমকে দাঁড়ালো৷ মনে হচ্ছে তার পিছনে কোনো মেয়ে হাসছে। কিন্তু সে ভয়ে পিছনে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না। সে আবারও পথ চলতে শুরু করলো। একটু পরে তার নাকে হাসনাহেনা ফুলের ঘ্রাণ এসে লাগলো। কিন্তু এখানে তো কোনো ফুলগাছ নেই৷ বটগাছ থেকে হাসনাহেনা ফুলের ঘ্রাণ আসবে কেন? হঠাৎ মনে হলো পুরো জায়গাটি যেন দিনের মতো উজ্জ্বল হয়ে গেছে। কিন্তু এত আলো কোথা থেকে আসছে? না, তার এতকিছু ভাবলে চলবে না। সে চোখ বন্ধ করে সামনে পথ চলতে লাগল। কিন্তু হঠাৎ কারো মুখে তার নিজের নাম শুনে সে যেন স্তব্ধ হয়ে গেল। সে চেয়েছিল পিছনে না তাকাতে, কিন্তু ওই ডাক শুনার পর সে যেন না তাকিয়ে পারলো না।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here