#নীল_আকাশের_পরী
#এম_আর_এ_আকিব
#পর্ব_৯
শব্দসংখ্যা: ১০১৭
আকিব আজ ঘুম থেকে উঠে সবার সাথে হাসি মুখেই কথা বলল। আজ তার সবকিছু ভালো লাগছে। আজ আর তার তেমন মন খা’রাপ হলো না। আব্বু, আম্মু এবং সায়রা সবাইকেই আজ তার আপন মনে হচ্ছে। সে নাশতা করে কলেজে চলে গেল।
কলেজে যাওয়ার পর প্রথম দেখাটা হলো ঐশীর সাথে। তবে বেশি কথা বলতে পারলো না কারণ ক্লাসের সময় হয়ে গিয়েছিল।
ক্লাস শেষে আকিব আর ঐশী ক্যান্টিনে বসে আছে। আকিবের মন ভালো থাকলেও ঐশীকে দেখে কিছুটা মন খা’রাপ হলো। সে ঐশীকে ভালোবাসে৷ অথচ নিশির জন্য এখন ঐশীকে শুধু বন্ধুই ভাবতে হবে।
ঐশী বলল, “কী ব্যাপার? কেমন আছ?”
আকিব বলল, “হুম, ভালো আছি৷ তুমি কেমন আছ?”
“আমিও ভালো আছি। তোমার কি মন খা’রাপ?”
“না, আজ মন ভালো আছে।”
“কোনো বিশেষ কারণ?”
“না, এমনিই। কাল অনেকক্ষণ নিশির সাথে কথা হলো।”
“তা ভালো তো। কী কথা বললে?”
“সে বলল যে আমার আব্বু-আম্মু যদিও আমার জন্মদাতা ও জন্মদাত্রী না কিন্তু তারপরেও তাদের অবদান তো কম নয়। আমাকে ছোট থেকে তারা-ই বড় করেছেন। শুধু জন্ম দিলেই কিন্তু বাবা-মা হয় না, যারা ছোট থেকে লালন-পালন করে বড় করেছে তারাও তো আমার বাবা-মা।”
“হুম, কথা তো সত্য।”
“হুম।”
“আর কী কী বলল?”
“আরেকটা অদ্ভুত কথা বলেছে।”
ঐশী ভ্রু কুচকে বলল ল, “কী?”
“সে বলে ওর সাথে না-কি ছোট বেলা থেকে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।”
ঐশী অবাক হয়ে বলল, “কী?”
আকিব বলল, “হুম, সে তো এটাই বলল। আমি না-কি সাধারণ কোনো মানুষ না। আমার বিয়ে না-কি পরী অর্থাৎ ওর সাথেই হবে।”
আকিব কথাটি বলে ঐশীর মুখের দিকে তাকালো। সে ঐশীর মুখের দিকে চেয়ে মনের কথা বুঝার চেষ্টা করছে। সে এখনো জানে না ঐশী থাকে ভালোবাসে কি-ন। যদি ভালোবাসে তাহলে অবশ্যই তার মন খারাপ হবে। কিন্তু ঐশীর মুখের দিকে তাকিয়ে সে কিছুই বুঝলো না। একবার মনে হলো কিছুটা মন খা’রাপ করেছে৷ পরক্ষণের দেখলো ঐশী হাসছে। আকিব বোকার মতো শুধু চেয়ে-ই রইলো।
ঐশী বলল, “ভালো তো। তুমি তাহলে পরীকে বিয়ে করবে? তাহলে সে তো আমার ভাবি হবে তাই না?” কথাটি বলে খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
আকিব বলল, “আরে কী বলছ!”
ঐশী বলল, “সত্যিই তো বলছি। তা তুমি বিয়ের পর কি তাদের রাজ্যে চলে যাবে না কি এখানেই থাকবে?”
ঐশীর কথা আকিব লজ্জা পেলো। সে বলল, “এখনো তো অনেক সময় বাকি। আমি স্বপ্নে আমার আসল বাবা-মা’কে না দেখা পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারছি না যে ও যা বলছে সত্যি বলছে।”
ঐশী বলল, “আরে সত্যিই হবে। না হয় পরী হয়ে শুধু শুধু মিথ্যা বলবে কেন? আচ্ছা, বাদ দাও। তা তোমার পরী দেখতে কেমন? খুব-ই সুন্দর তাই না?”
আকিব কী বলবে ভাবতে লাগলো। ঐশীর সামনে নিশির প্রশংসা করা আদৌও ঠিক হবে কি-না সে জানে না। তাই অতি প্রশংসা না করে বলল, “কেমন সুন্দর বলো না? আমার থেকে বেশি সুন্দর তাই না?”
আকিব এবার চুপ করে রইলো। দুজন থেকে কে বেশি সুন্দর তা সে মাঝেমধ্যে অনুমান করতে পারে না। গতকাল নিশির যে রূপ দেখেছে তাতে মনে হবে নিশির মতো সুন্দরী কেউ এই পৃথিবীরেই নেই। কিন্তু তার সামনে বসে থাকা হাস্যোজ্জ্বল চেহারার মেয়েটি-ই বা কম সুন্দর না-কি? কলেজের প্রায় প্রত্যেক ছাত্রই ঐশীর জন্য পা’গল। সে কীভাবে সেই ঐশীর সামনে বলে যে নিশি সুন্দর। তাছাড়া রূপের দিক দিয়ে হয়তো নিশি বেশি সুন্দর হতে পারে, কিন্তু কথাবার্তা, চালচলন, ব্যক্তিত্ব ওসব কিছু এক করলে অবশ্যই ঐশীই বেশি সুন্দর।
আকিবকে চুপ করে থাকতে দেখে নিশি হেসে বলল, “আচ্ছা বুঝেছি৷ তোমার পরীই বেশি সুন্দর। আমার কাছে এটা বলতে সংকোচ করছ তাই না? আরে সংকোচ করতে হবে না। আমি বুঝতে পারছি৷ সে তো পরী, তাই দেখতে সুন্দর হবে স্বাভাবিক। এটা বলতে এত সংকোচ করার কিছু নেই৷ পরীই বেশি সুন্দর এই কথাটি বললে আমার মন খারাপ হবে না।” বলে আবারও খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
আকিব বুঝলো না ঐশী এত হাসছে কেন আজ? আচ্ছা, এ হাসির কি অন্য কোনো অর্থ আছে? এমন নয় কি, যে ঐশী কষ্ট ঢেকে রাখতেই বেশি করে হাসছে। না, ঐশীর মন বুঝা এত সহজ না। আকিব বলল, “আরে না, তুমিও সুন্দর। দুজন দুইরকম সুন্দর। একজনের সাথে অন্য জনের তুলনা করা যায় না।”
ঐশী হেসে বলল, “আচ্ছা, হয়েছে হয়েছে। আর আমি মন খা’রাপ এমনিতেও করতাম না। তা তুমি পরীস্থানে গেলে আমাকেও সাথে নিয়ো একবার।”
আকিব বলল, “আমি নিজেই যাইনি। যদি কখনো যাই তাহলে অবশ্যই তোমাকে নেবো।”
ঐশী বলল, “শুনে খুশি হলাম। যাক, তোমার সাথে বন্ধুত্ব করায় ভালোই হলো। পরীস্থানও দেখতে পারবো।” কথাটি বলে আবারও হাসলো।
এবার আকিব বলল, “কী ব্যাপার? আজ এত হাসছো কেন? এত খুশি খুশি লাগছে কেন?”
ঐশী হেসে জবাব দিলো, “এই যে পরীস্থানে যেতে পারবো তাই।”
“কিন্তু এর আগে থেকেই তো তুমি হাসছ।”
“হুম, কারণ তুমি যে আমার সামনে পরীর প্রশংসা করতে ভয় পাচ্ছ তাই। আমি জানি সে আমার থেকে সুন্দর কিন্তু তুমি বলছো দু’জনই সুন্দর, তাই হাসছি। বিষয়টা মজার না বলো?”
আকিব বলল, “আরে না সত্যি তুমিও সুন্দর। আর তোমার কি মন খা’রাপ? তুমি যা বলছো সব কি মন থেকে বলছ?”
ঐশী হেসে বলল, “আরে না, মন থেকে বলব কেন? আমি কথাগুলো মুখ দিয়ে বলছি। আরে না, মুখ দিয়ে না ঠোঁট দিয়ে। শুধু ঠোঁট না, জিহ্বা দিয়েও বলছি। হিহিহি।”
ঐশীর হাসি যেন থামছেই না। আকিব অনেক চেষ্টা করছে এই হাসির অর্থ বুঝার জন্য কিন্তু পারছে না৷ আকিব জানে যে হাসি সব সময় সুখের কথা বুঝায় না, বরং মাঝেমধ্যে হাসি দিয়ে কতটুকু কষ্ট ভুলে থাকা যায় তা বুঝায়। কিন্তু ঐশীর হাসির অর্থ কী? নিশির কথা বলায় সে কি খুব কষ্ট পেয়েছে? না কি সত্যিই খুশি হয়েছে।
হাসি থামিয়ে ঐশী বলল, “আচ্ছা, তাহলে এবার যাই। কী বলো?”
আকিব বলল, “এখনই যাবে?”
ঐশী বলল, কতক্ষণ হয়েছে হিসাব আছে? অনেকক্ষণ থেকে আমরা গল্প করছি।”
আকিব তার হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো। সত্যিই অনেক সময় চলে গেছে। আকিব বলল, “সত্যি তো।”
ঐশী বলল, “তাহলে আমি যাই?”
“আচ্ছা যাও। সাবধাবে যেয়ো।”
“হুম, আল্লাহ হাফেজ।”
“আল্লাহ হাফেজ।”
ঐশী চলে গেল। কিন্তু আকিব ঠিক একই জায়গায় বসে রইলো। নিশির সব কথা ঐশীকে বলা কি আদৌও ঠিক হচ্ছে? এ কথাটি ঐশীকে না বললে ঐশী হয়তো ক’ষ্ট পেতো না। এদিকে আকিব নিজেই নিজের মনকে বলছে, “আরে ঐশী কষ্ট পায়নি। কষ্ট পেয়েছে কে বলল।”
আকিবের মন জবাব দিলো, “অবশ্যই কষ্ট পেয়েছে। না হয় এভাবে এতবেশি হাসতো না।
আকিব বলল, “এমনি কি মানুষ হাসে না?”
“হাসে, কিন্তু ঐশী হাসি স্বাভাবিক হাসি ছিল না। তুই এটা বুঝতে পারছিস না কেন?”
“আমি কিছুই বুঝতে চাই না৷ আমি তোমার সাথে কোনো কথা বলতে চাই না। তুমি যাও এখান থেকে।”
আকিব ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে এলো। তাকে বাড়ি যেতে হবে। সে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো।
চলবে…
[গল্পটি ভালো লাগলে পরিচিতদেরকে গল্পটি পড়ার জন্য সাজেস্ট করতে পারেন। পাঠক সংখ্যা বেশি হলে লিখায় তৃপ্তি পাই।]