প্রার্থনায় রবে তুমি #পর্ব ১২ #Saji Afroz

0
78

#প্রার্থনায় রবে তুমি
#পর্ব ১২
#Saji Afroz

ক’টা দিন কেটে যায়। ইধা এখন পুরোপুরি সুস্থ। আবারও নিয়মিত পড়ানো শুরু করেছে ও।
আতিয়াতকে পড়াচ্ছে ইধা। আশামনি এসে বললেন, তুমি কিছু জানতে নাকি?

ইধা অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, কী বিষয়ে?
-মাইশা ও সাদ্দামের বিষয়ে।

ইধা কী বলবে বুঝে উঠতে না পেরে তার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো।
পাশের রুমেই ছিল রুজাইন। ফুফুর মুখে একথা শুনে ছুটে এল ও। রুজাইন বলল, ও কিছুই জানে না। ও কীভাবে জানবে? মাইশা যেখানে জানে না!
-তুই জানতিস সব?
-শুরু থেকেই।

ইধা ভ্রু কুচকে বলল, হয়েছে কী?

রুজাইন বলল, সাদ্দাম ভাই বাসায় মাইশাকে পছন্দ করার কথা জানিয়েছে। আসলে তোমার ফ্রেন্ড মাইশাকে তার বেশ পছন্দ। বিয়ে করতে চায়।

ইধাও কিছু না জানার অভিনয় করে বলল, ও তাই! ভালো খবর। সাদ্দাম মানে আপনার পুলিশ কাজিন?
-হু। ডাকাতের ঘটনাচক্রে উনার কথা বলেছিলাম।

ইধা জেনে খুশি হয় যে, সাদ্দাম সবাইকে মাইশার কথা জানিয়েছে। কিন্তু মাইশা ওকে জানালো না সে বিয়ের জন্য রাজি হয়েছে। তাই একটু অভিমান নিয়েই বাসায় আসলো ও। ওর গোমড়া মুখ দেখে মাইশা বলল, কী হয়েছে? মুখটা এমন করে রেখেছিস কেন?
-কেন আবার? আজকাল আমার আগে অন্যরা তোর মনের খবর পেয়ে যায়।
-মানে কী?
-তুই বিয়ের জন্য রাজি হয়েছিস আমায় বলেছিস?
-বিয়ে! কিসের বিয়ে?
-তোর আর সাদ্দাম ভাই এর।
-কিসব বলছিস! আমি তার প্রস্তাবে এখনো রাজিই হলাম না আর তুই বলছিস বিয়ে!
-রাজি না? তবে ও বাড়ির সবাই বিয়ের কথা বলছে কেন?

কলিংবেলের শব্দ হলে দু’জনে থেমে যায়। মরিয়ম জান্নাত
দরজা খুলে শারমিন আক্তারকে দেখে চমকান। তিনি বললেন, আপা এত রাতে আপনি?
-ভেতরে আসতে বলবেন না?
-কেন নয়!

তিনি ভেতরে এসে ড্রয়িংরুমে বসেন। মরিয়ম জান্নাত বললেন, বসুন আপা। আমি আসছি।
-এই রাতে কিছু আনতে যাবেন না প্লিজ। এখন কিছু খেলে রাতে ভাত খেতে পারব না। আমি আবার ভাত প্রিয় মানুষ। পেট ভরে ভাত না খেলে ঘুম আসে না।

একগাল হেসে মরিয়ম জান্নাত বললেন, তবে ভাতের আয়োজন করি।
-সে অন্য আরেকদিন হবে। এখন যে কাজে এসেছিলাম তা বলি।
-বলুন আপা।
-আত্নীয়তা করতে এসেছি।
-আমি ঠিক বুঝলাম না।
-আমার বোনের ছেলে সাদ্দাম, পুলিশের চাকরিতে জয়েন হয়েছে শুনেছেন মনেহয়।
-জি।
-ওর মাইশাকে বেশ পছন্দ৷ বিয়ে করতে চায়।

একথা শুনে কী বলবেন ভেবে পান না মরিয়ম জান্নাত। হুট করে এমনকিছু তিনি ভাবেননি।

শারমিন আক্তার বললেন-
মেয়ের বিয়ের কথা ভাবেননি বুঝি?
-জি। আসলে একা হাতে সব সামলাই। আপনার কাছে কী লুকোবো? এখনো ওর বিয়ের জন্য কোনো প্রস্তুতি নিইনি।
-ওসব নিয়ে ভাববেন না। আমার আপা মেয়ের বাড়ির কিছুই চান না। চট্রগ্রামের ওসব নিয়মের ধার তিনি ধারেন না। ঘরোয়াভাবে বিয়ে হবে আর বিয়ের পর অনুষ্ঠান তারাই করবেন। কিচ্ছুটি তারা নেবেন না।

একথা শুনে হাসি ফোটে মরিয়ম জান্নাতের মুখে। শারমিন আক্তারের ফোনে সাদ্দামের ছবি দেখেও তার বেশ ভালো লেগে যায়।
তিনি বললেন, তারা কিছু না চাইলেও আমারও কিছু আশা আছে। যতটুক পারি আমি মেয়ের বিয়েতে করব।
কিন্তু এখুনি মেয়ে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে আমার নেই। ওকে ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে বলছিলাম সেদিনই আর আজ বিয়ের কথা কীভাবে বলি বলুন?
-এখুনি না দিন। অন্তত কাবিন করে রাখুন? সাদ্দামের বড়ো তাড়া। মাইশাকে ওর খুব পছন্দ। বুঝেছেন তো!
-তা বুঝেছি। আমার মতামতের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো মাইশার মত। সেটা জানার প্রয়োজন।
-কেন নয়! জেনে নিন।

তিনি চলে যান। মাইশা সব শুনে মা কে বলল, আমি এখনো বিয়ের জন্য ভাবিনি মা।
-আমিও না। কিন্তু সাদ্দামের পরিবার খারাপ হত না।

ইধা বলল, আমি কিছু বলতে পারব আন্টি?
-কেন না? তুমি মাইশার বান্ধবী কম, বোন বেশি। আমারও মেয়ের মতো। বলতেই পারো।
-বিয়ের জন্য ভাবেননি তাতে কী? ভাবতে তো পারেন। ছেলেটা নিজে পছন্দ করে ফ্যামিলি মানিয়ে নিয়েছে। সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। আবার কোনো চাহিদাও নেই। এমন সোনার টুকরো পরিবারকে দূরে সরিয়ে দেওয়া ঠিক হবে? ক্যারিয়ার কিন্তু বিয়ের পরেও গড়া যায়। আর ওরা যথেষ্ট হেল্প ওকে করবে, সেটা কথাবার্তাতে বোঝা যাচ্ছে।

মাইশা বলল, আমাকে ঘর ছাড়া করতে উঠে পড়ে লেগেছিস কেন?
-তোকে পাঠিয়ে আমি আর মিলি রুমটা দখল করব।
-দেখেছ আম্মু? এই ছিল ওর পেটে পেটে।
-খারাপ বলেনি। তুই ভেবে দেখ। আমার তোদের নিয়ে বড্ড চিন্তা হয়। তোকে ভালো কারো হাতে তুলে দিতে পারলে আমিও শান্তি পেতাম। তোদের বাবা নেই। আমার কত চিন্তা জানিস?

মাইশাকে নীরব দেখে তিনি বললেন, তোর ইচ্ছেকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে।

তিনি রুমে ফিরে যান। মাইশা রাগে গিজগিজ করে ফোনকল দেয় সাদ্দামকে। সাদ্দাম রিসিভ করলে ও কর্কশ কণ্ঠে বলল, আমি কী বলেছিলাম বিয়েতে রাজি? আমার বাসায় কেন প্রস্তাব পাঠালেন?
-এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম।
-কী?
-রুজাইনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মা সব শুনে ফেলেন। তবে তোমাকে সব জানিয়েছে তা জানে না। কেবল জানে আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর মা শুনেই খুব খুশি হোন। রুজাইনের মা কে সব জানান। বিশ্বাস করো, তোমার অমতে আমি এসব করিনি। আমার হাতে কিছুই ছিল না।

সব শুনে মাইশা শান্ত হয়।
সাদ্দাম বলল, কিছু তো বলো? তুমি কী খুব রাগ করলে?
-এসব শুনে রাগ কমলো।
-তবে কী তোমার উত্তরও পাব?
-পারিবারিক ভাবে প্রস্তাব দিয়েছেন না? উত্তর পারিবারিকভাবেই পাবেন।

এই বলে ফোনের লাইন কেটে হাসতে থাকে মাইশা। ওর হাসি দেখে ইধা বলল, তার মানে তুই রাজি?

হ্যাঁ সূচকভাবে মাথা নাড়ে মাইশা। ওকে জড়িয়ে ধরে ইধা বলল, আমি অনেক বেশি খুশি তোর জন্যে।
-নাকি রুমের জন্য? তবে শোনেন জনাবা, আমি কেবল কাবিনটা সেরে নেব। এখনি শশুরবাড়ি যাব না। শুনেছি হবু বরের সঙ্গে এভাবে প্রেমের মজাই আলাদা। তাছাড়া কেবল ভার্সিটি লাইফ শুরু আমার। এখুনি সংসারের প্যারা নিতে চাই না।
-তুই যা ভালো মনে করিস।
-আমি এতদিন সিদ্ধান্ত হীনতায় ছিলাম। আজ আম্মুর জন্য সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হলো আমার। এই বিয়েটাই আম্মুর চিন্তা অনেকটা কমে যাবে। আমার জন্য সাদ্দাম থাকবে ঢাল হয়ে। মিলির জন্য থাকবে আম্মু।

ইধা মৃদু হাসে। মাইশা ওর হাত ধরে বলল, আর তোর জন্যে থাকব আমি।

দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। এই যেন সুখের কান্না!

অনেকক্ষণ যাবত দাঁড়িয়ে আছে আলিম। বেশ কয়েকদিন এই সময়ে এখানে দাঁড়িয়ে থাকে ও। ইধা এই সময়ে বাসায় যায়। ওকে একনজর দেখতেই আলিম এখানে দাঁড়িয়ে থাকে। ইধা ওকে খেয়াল করে প্রতিবারই। ভ্রুক্ষেপহীনভাবে হনহন করে হেঁটে ও চলে যায়।
এভাবে আর ক’দিন! আলিম ঠিক করেছে আজ ওকে মনের কথা জানাবে।
ইধা রাস্তা পার হয়ে এদিকে আসতে থাকে। ওকে দেখে এগিয়ে আসে আলিম। ইধার সামনে এসে দাঁড়ালে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ও৷ ইধা বলল, আপনি?
-তুমি কী বুঝো না, কেন আমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকি?

আশেপাশে তাকিয়ে ইধা মিনমিনে স্বরে বলল, কেন?
-আমি তোমাকে ভালোবাসি ইধা। তোমাকে এক নজর দেখার জন্য অপেক্ষা করি প্রতিটা দিন।
-এসব বলবেন না প্লিজ। আমি আপনাকে ভালোবাসি না।

এই বলে ইধা চলে যেতে চাইলে ওকে থামায় আলিম। ও বলল, দরকার নেই আমার ভালোবাসার। সে আমি অনেক বাসতে পারি। তুমি শুধু হ্যাঁ বলে দাও।
-এটা সম্ভব নয়! আপনার ভালোবাসাতেই সম্পর্কে আগানো সম্ভব নয়।
-সম্ভব। আমি সম্ভব করে দেখাব। তুমি মানবে না তো? মেনো না। কিন্তু আমিও পিছপা হব না।

ইধা বুঝতে পারে, আলিম থেমে যাওয়ার পাত্র নয়। জেদের বশে হলেও ওকে বিরক্ত করবে। তাই ও বলল, আমার সম্পর্কে কী জানেন আপনি? চেহারা দেখে আর নাম শুনেই ভালোবেসে ফেললেন?
-মাইশার বান্ধবী তুমি। এর চেয়ে বেশিকিছু জানার নেই।
-অবশ্যই আছে।
-কী?

ইধা যা বলল, তা শোনার জন্য প্রস্তুত আলিম ছিল না। ও বলল, আমি সরে যাওয়ার জন্যই এই মিথ্যে তুমি বলছ তাই না?
-মোটেও না।
-প্রমাণ কী?

ইধা ওর ব্যাগে থাকা নিজের পরিচয়পত্রটা বের করে দেখালো আলিমকে। যা দেখে ও কয়েক কদম পেছনে চলে যায়। ইধা হেসে বলল, ভালোবাসা চলে গেল মুহুর্তেই?
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here