প্রার্থনায় রবে তুমি #পর্ব ১৩ #Saji Afroz

0
67

#প্রার্থনায় রবে তুমি
#পর্ব ১৩
#Saji Afroz

আজ মাইশা ও সাদ্দামের বিয়ে। তবে সেটা ঘরোয়াভাবে। মাইশার ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে কেবল কাবিন সেরে রাখা হচ্ছে। কয়েকবছর পর সাদ্দামই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নিজের বাড়ি নিয়ে যাবে মাইশাকে।

ইধা ও রুজাইন ড্রয়িংরুমটা ফুল ও বেলুন দিয়ে সাজিয়েছে৷ মাইশা পার্লার থেকে এসে সাজানো রুম দেখে বেশ খুশি হয়। ও বলল, দারুণ হয়েছে।

রুজাইন বলল, সবটা ইধার আইডিয়া। আমি কেবল সাহায্য করলাম।
-শুধু রুম সাজালে হবে? নিজেদেরও সাজতে হবে না!

রুজাইন বলল, আমি তো ইধাকে দেখার অপেক্ষায়।

একথা শুনে সবাই চমকায়। রুজাইন মুখ ফসকে এ কী বলে ফেললো! ও কথা ঘুরানো জন্য চটজলদি বলল, না মানে এত কম সময়ে মেয়ে হয়ে তৈরী কীভাবে হয় দেখার অপেক্ষায়।
-এত করে বললাম আমার সঙ্গে পার্লারে যেতে। গেল না। রুম সাজাতে থেকে গেল। ওসব ডেকোরেশন এর লোক করতে পারতো না?

ইধা বলল, আমার চেয়ে বেস্ট পারতো না।
-তা ঠিক। এইবার চটজলদি রেডি হয়ে আয়। রুজাইন ভাই? আপনিও।

মরিয়ম জান্নাত আজ আকাশি রঙের জামদানী শাড়ি পরেছেন। মাথায় ঘোমটা টেনে আয়নায় নিজেকে দেখলেন।
এরপর আলমারি খুলে স্বামীর একটি ছবি তিনি বের করলেন। তাতে চুমু খেয়ে তিনি বললেন-
আজ আমাদের মেয়ের বিয়ে। মেয়ে সন্তানের শখ তোমার বরাবরই ছিল। তাই হয়তো মহান আল্লাহ আমাদের দু’টো জান্নাত দিয়েছেন। আমাদের পৃথিবীটাও ছিল এক টুকরো জান্নাত। কত সুখী ছিলাম আমরা! মাঝপথে চলে গেলে তুমি। আমার থেকে অনেকদূরে! ওপারে! জানি না তুমি দেখছ কিনা এসব। আমার মাইশা আজ বউ সেজে আসবে। তোমার মেয়ের বিয়ে নিয়ে কত ইচ্ছেই না ছিল তোমার! সেই ইচ্ছে মতো কিছু হচ্ছে না। কিন্তু তোমার সবথেকে বড়ো ইচ্ছেটাই পূরণ হচ্ছে। ভালো একটা ছেলের সঙ্গেই বিয়ে হচ্ছে ওর। এইবার তুমিও চিন্তামুক্ত হও।

এই বলে ছবিটা জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন তিনি। আড়ালে এসব দেখে মাইশার চোখেও পানি চলে আসে।
ওর বাবা যখন মারা যায়, মিলি কোলের বাচ্চা। দাদা বাড়িতে চাচাদের আশ্রয়ে ক’দিন থাকবে? তাই মরিয়ম জান্নাত বাবার বাড়ি চলে আসেন। নানা বাড়ির সবাই বেশ আন্তরিক ছিলেন। কিন্তু ভাই এর উপরে ভর করে ক’দিন চলা যায়! এরপরেই তিনি শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন। মিলি একটু বড়ো হলে আলাদা বাসা নেন।
মা এর কষ্ট নিজ চোখে দেখেছে মাইশা। তবুও কেন যে ফখরুলের মতো ছেলের সঙ্গে নিজের জীবনটা জড়িয়ে ফেলেছিল! ভাগ্যিস সে চলে গেছে জীবন থেকে। সাদ্দামের জন্য সবাই খুশি। এই খুশিটাই তো দেখতে চেয়েছিল মাইশা।

মাইশা নিজেকে সামলে নিয়ে ভেতরে এসে বলল, বাবাকে দেখানো হচ্ছে বুঝি? কেমন লাগছে তোমাকে?

মাইশার কণ্ঠ শুনে ছবিটা আলমারির ভেতরে তিনি রেখে দিলেন। আড়ালে চোখের পানি মুছে মাইশার দিকে তাকালেন। সোনালি রঙের লেহেঙ্গায় দেখতে কী মিষ্টি লাগছে মাইশাকে! তিনি বললেন, মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ! আমার মেয়েকে দেখতে কী সুন্দরটাই না লাগছে!
-আমার মা কেও সেরা লাগছে।
-আমাকে কে দেখবে! তোকে দেখবে সবাই।
-তোমাকে দেখব আমি। মন ভরে দেখব আম্মু। তুমি আমার জন্য কী তা তুমিও জানো না। একটা কথা বলব?
-হু?
-অনেক ভালোবসি আমি তোমাকে।

মেয়েকে জড়িয়ে ধরে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, আমিও।

সাদ্দামের দেওয়া লাল কাতান শাড়িটা পরলো ইধা।
চুলগুলো খোলা রেখেছে ও। কানে দিয়েছে বড়ো ঝুমকো আর হাত ভর্তি চুড়ি৷ মাইশা এনেছে ওর জন্যে এসব। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দেওয়ার সময় থেমে যায় ও। মাইশা আসে। ওর কপালে চিন্তার ভাজ দেখে বলল, কী ভাবছিস?

মাইশার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ইধা বলল, রুজাইন ভাইয়ার সামনে তখন কিছু বলিনি। তোকে যা মারাত্মক লাগছে না! আজ তো সাদ্দাম ভাই পাগল হয়ে যাবে।
-বলছিস?
-হু। উনি জানতেন তোকে লেহেঙ্গাতে কেমন লাগবে। তাইতো আগে থেকে হোটেল রুম বুকিং করে রেখেছেন। কবুল বলার পর পরই বাসর করে নিতে চান। চান্স মিস দিতে চান না।
-সেই যতই হোটেল রুমে নিয়ে যাক। ধরা আমি ওত সহজে দেব না। প্রেম যেমন করিনি, রোমান্সও করব না। এটার জন্যেও অপেক্ষা তাকে করতে হবে।
-বেচারাকে ঘুরাবি?
-হু।
-আহা!
-উফ! এসব কথা ছাড়। তুই এখনো মেকআপ করিসনি কেন?
-এমনি ঠিক আছে।
-মোটেও না। সাজলে একেবারে বউ বউ লাগবে।
-তোরও এমন মনে হচ্ছে তাই না?দেখ তো কাণ্ড! রুজাইন ভাই আমার জন্য লাল টুকটুকে শাড়ি দিলো। আমাকেই তো মানুষ বউ ভাববে।

ও লিপস্টিকটা রেখে বলল, আমি সাজবই না আর। এতটুকুই ঠিক আছি।

মাইশা লিপস্টিক হাতে নিয়ে বলল, আমি সাজিয়ে দিচ্ছি। বউ লাগুক। বর পেলে তোকেও দিয়ে দেব বিয়ে।

সাদা পাঞ্জাবি পরিধান করেছে রুজাইন। হাত ঘড়িটা পরতে পরতে ভাবছে ও, লাল শাড়িতে কেমন মানাবে ইধাকে।
শাড়িটা রুজাইনের পছন্দের কেনা। দামটাও ওরই দেওয়া। এটা জানলে হয়তো ইধা গ্রহণ করতো না বা অন্যকিছু ভাবতো। তাই সাদ্দামের মাধ্যমে ইধার কাছে পাঠানো হয়েছে এটা।
নিজের প্রিয়তমাকে নিজের পছন্দের শাড়িতে দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছে মনটা। এখনি যাবে ও বাড়ি? নাকি অপেক্ষা করবে সাদ্দামের জন্য?

মাইশার ফোন বেজে উঠে। অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন দেখে প্রথমে রিসিভ করলো না ও। বেশ কয়েকবার রিং পড়ার কারণে রিসিভ করে নেয় ও। ওপাশ থেকে ফখরুলের কান্নাজড়িত কণ্ঠ শুনে মাইশা ঘাবডায়। ও বলল, ফখরুল?
-পরিচয় না দিয়েও চিনে ফেললে?

দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাইশা বলল, কেন ফোন করেছ?
-বিয়েটা করো না প্লিজ!

মাইশা অবাক হয়ে বলল, আমার বিয়ে তুমি কীভাবে জানো?
-যোগাযোগ না করলেও প্রতিনিয়ত তোমার খবর আমি নিয়েছি। লুকিয়ে কত দেখেছি তোমায়! তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা মিথ্যে ছিল না। হারানোর ভয়ে ওমন আচরণ করতাম। আমার ভুল আমি বুঝতে পেরেছি। আমায় ক্ষমা করে দাও। নিজেকে পালটে দেখাব তোমাকে। তুমি যা বলবে তা হবে।
-এখন এসব কথার কোনো মানে হয় না।
-তুমি উঠতে বললে উঠব, বসতে বললে বসব। আমার লাইফের প্রতিটা পদক্ষেপ তোমার কথাতে হবে। প্লিজ তুমি বিয়েটা করো না।
-সম্ভব নয়!

একটু থেমে ফখরুল বলল, তবে আমার লাশ দেখেই করো বিয়ে।
-কীসব বলছ!
-ঠিক বলছি। তোমার বাসার নিচেই আমি৷ দারোয়ানকে বলেছি বিয়ে বাড়ির আত্নীয়। আর এখানেই আমি এখন আত্মহত্যা করব।
-তুমি কেন অযথা তামাশা করছ?
-আমার ভালোবাসা তোমার কাছে তামাশা মনেহচ্ছে? কতশত স্মৃতি তুমি মুহুর্তেই ভুলে যাচ্ছ মাইশা! আমি কী কম ভালোবেসে ছিলাম তোমাকে! ভালো সবকিছু মনে করে আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ। আর না পারলে আমার লাশ দেখেই করো বিয়ে।

নিশ্চুপ হয়ে যায় মাইশা। ফখরুল বলল, আমার উপর অভিমান করে বিয়েটা করছ আমি জানি। প্লিজ করো না। চলে আসো। আমি নিচে আছি। নিজের ভালোবাসার কথা ভাবো। প্লিজ!

কলিংবেলের শব্দ হতেই দরজা খুলে দেয় রুজাইন। ইধাকে দেখে থমকে যায় ও। কী সুন্দরটাই না লাগছে ওকে! ইচ্ছে করছে এভাবে পলকহীন চোখে অনেকক্ষণ যাবত তাকিয়ে থাকতে।
-রুজাইন ভাইয়া?

ইধার ডাকে ঘোর কাটে ওর। রুজাইন বলল, হ্যাঁ বলো?
-আন্টিকে মাইশার আম্মু ডাকছে।
-কেন?
-রান্নার আয়োজন দেখানোর জন্য। সব ঠিক আছে কিনা।

পাশেই ছিলেন শারমিন আক্তার। তিনি কাছে এসে বললেন, দেখার কিছু নেই। সব ভালোই হবে আশাকরি।
-তবুও চলুন। একবার দেখবেন প্লিজ!
-আচ্ছা চলো। ছাদেই তো খাওয়ার আয়োজন তাই না?
-জি। উনি ওখানেই আছেন। আপনি যান। আমি মাইশার সঙ্গে গিয়ে বসি।

শারমিন আক্তার ছাদের দিকে এগুলে ইধা বাড়ি ফিরে আসে। হঠাৎ পেছনে ফিরে রুজাইনকে দেখে চমকায় ও। রুজাইন বলল, তোমাদের সঙ্গে গল্প করতে আসলাম।
-আসুন।

ইধা মাইশাকে ডাকতে ওর রুমে আসে। কিন্তু ওকে পায় না। সারা বাড়ি খুঁজেও ওকে না পেয়ে অস্থির হয়ে রুজাইনের কাছে আসে। রুজাইন বলল, এমন দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?
-মাইশাকে দেখছি না। ফোনও রিসিভ করছে না।
-ছাদে নয় তো?
-আমি এতক্ষণ ওখানেই ছিলাম। কয়েকজন মেহমান, আন্টি আর মিলি আছে কেবল।
-তাহলে হঠাৎ গেল কোথায় মাইশা?
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here