প্রার্থনায় রবে তুমি #পর্ব ১৪ #Saji Afroz

0
72

#প্রার্থনায় রবে তুমি
#পর্ব ১৪
#Saji Afroz

-আমি জানতাম মাইশা, তুমি আসবে! আমার কথা তুমি ফেলতেই পারো না। আমাকে এখনো তুমি ভালোবাসো। জানি আমি।

ফখরুলের কথা শুনে মাইশা ভ্রু কুচকে বলল, দেখতে এলাম।
-কী?
-কীভাবে মরতে চাচ্ছ।

ফখরুল অবাক হয়ে বলল, মানে?
-এমনভাবে অবাক হচ্ছ যেন আমিই বলছি এই কথা! এটা তোমারই কথা। মরতে না চেয়েছ? কীভাবে মরছ?

ফখরুল আমতাআমতা করে বলল, সেটা তুমি না আসলে মরব বলেছিলাম।
-আমি এসেছি। তোমাকে হেল্প করতে এসেছি।

মাইশা ওর হাতে থাকা প্যাকেট থেকে একটি দড়ি, ছুরি ও তেলাপোকার বিষ বের করে বলল, এখান থেকে কী নিয়ে মরবে বলো। আমার মনেহয় তেলাপোকার বিষটাই খেয়ে নাও তুমি।
-মাইশা!
-কী মাইশা? আমাকে আগের মতো ভেবেছ? একটুতেই দূর্বল হয়ে যাব! মোটেও না। তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছ, আমার হবু স্বামী পুলিশ। তোমার কী হাল ও করতে পারে ধারণা আছে?
-দু’দিনের সাদ্দামের জন্য তুমি আমাকে এসব বলছ?
-দুই বছরের তুমি আমায় যতটা কষ্ট দিয়েছ, দুই দিনের সাদ্দাম তার চেয়ে ঢের সম্মান ও ভালোবাসা আমায় দিয়েছে।
-আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না মাইশা।
-তবে মরে যাও। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। মরো! আমার সামনেই মরো৷ আমি তোমার লাশ দেখেই করব বিয়ে।

ফখরুল একটু থেমে বলল-
আমার ভালোবাসার কদর যার কাছে নেই, তার জন্য মরার কোনো মানেই হয় না।
-না মরলেও এখন তোমায় জেলে যেতে হবে। আমার বিয়ের সময় আমাকে বিরক্ত করার অপরাধে। এই তো সাদ্দাম এল বলে!

আর এক মুহুর্তও অপেক্ষা করলো না ফখরুল। দ্রুত চলে গেল গেইটের বাইরে। মাইশা ওর পথের দিকে তাকিয়ে বলল, ওরে ফখরুইল্লা! অহেতুক আগে ভয় পেতাম তোকে। তোর দৌড় কতটুক বুঝেছি আমি।

রুজাইন ও ইধা নিচে নামার সিদ্ধান্ত নেয় মাইশাকে খোঁজার জন্য। তখনি দেখা পায় ওর। ইধা ওকে দেখে বলল, এই ভারী লেহেঙ্গা পরে কোথায় গেছিস তুই?
-ফখরুলের সঙ্গে দেখা করতে।
-মানে?

মাইশা সব খুলে বলে। সবটা শুনে হাসতে থাকে ওরা৷ ইধা বলল, কিন্তু তোর এত সাহস আসলো কোথা থেকে?
-সাদ্দামের জন্য৷ আমি ওকে ফোন করে এসব জানাই। তখন সাদ্দামই আমাকে এই বুদ্ধি দেয়। ফখরুইল্লার দৌঁড়টা যা ছিল না!

আবারও হাসতে থাকে সকলে। রুজাইনের ফোন বাজতে থাকে৷ সাদ্দামের ফোন। ওরা রওনা হয়েছে।
রুজাইন বলল, ফিতা ধরতে রেডি হয়ে যাও।

ইধা বলল, এমন করব ভাবিনি।
-সে কী! এত সহজে ভাগ ছেড়ে দেবে?

মাইশাও তাল মিলিয়ে বলল, ঠিক ঠিক! রুজাইন ভাইয়া? আপনি এখুনি ফিতার ব্যবস্থা করেন। আমার কাজিন আছে, ইধা আর মিলি আছে! সবাই মিলে লুটে দিবি সাদ্দামকে।

রুজাইন বলল, আর আমি?

ইধা বলল, আপনি আমাদের বেশি করে নিয়ে দেবেন তবেই ভাগে আপনিও পাবেন।
-ডান! আমি এখুনি ফিতার ব্যবস্থা করছি।

মেহমান আসতে শুরু করে৷ খানিকবাদে চলে আসে সাদ্দাম ও তার পরিবার। দরজার সামনে সাদ্দাম আসতেই গেইট আঁটকে রাখা হয়। সাদ্দাম বলল, আজও এমনটা হবে তা তো জানা ছিল না।

ইধা বলল, বিয়ে করবেন আর এই নিয়ম জানেন না এটা আমাদেরও জানা ছিল না।
-কাচি কই?
-টাকা দেবেন, কাচি নেবেন!
-দেখেছিস রুজাইন? ওরা ভালোই প্রস্তুতি নিয়েছে৷ আমাদের কী করা উচিত বল?
-ডিমান্ড পূরণ করা।
-এই! তুই কার দলে?
-সেটা তুমি ভালো করেই জানো।

এই বলে চোখ টিপে হাসলো রুজাইন। সাদ্দাম হতাশ কণ্ঠে বলল, তুই যখন ওদের দলে তখন আমারও আর রক্ষা নেই।

এই বলে একটি খাম ওদের দিকে এগিয়ে দেয় সাদ্দাম। ইধা তা হাতে নিয়ে বলল, দুলাভাই জিন্দাবাদ!

মাইশাকে স্টেজে নিয়ে আসা হয়। বর কনের সঙ্গে সবাই ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ইধাও তুলে নেয়।
ওর ফোন বাজতে থাকে। বেশ কয়েকবার বাজার পর রিসিভ করে ও। ওপাশ থেকে মা এর কণ্ঠস্বর শুনে থমকে যায় ইধা।
ও ছুটে নিজের রুমে চলে আসে। এখানেও মানুষ থাকায় বারান্দায় এসে দরজা লাগিয়ে দেয় ও। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল, মা তুমি!
-হা আমি। কেমন আছিস মা তুই?
-আমি ভালো। তুমি কেমন আছ? আর কীভাবে আমায় ফোন করলে?
-তোর ছোটো চাচার কাছ থেকে নাম্বারটা নিয়েছি। তোর কথা ভীষণ মনে পড়ছিল। তাই ফোন দিলাম।
-ফোন পেলে কোথায়?
-এলাকার এক দোকান থেকে করছি। তবে তোর ছোটো চাচা আমার জন্য ফোন পাঠাবে বলেছে। তখন রোজ ফোন দেব।
-ওরা তোমাকে ব্যবহার করতে দেবে?
-এখন আমার কদর হচ্ছে এই বাড়ি।
-মানে?
-তোর জন্মদাতা এসেছিল আমার কাছে। তার সঙ্গে অনেক খারাপ কিছু হয়েছে। স্ত্রী, সন্তানদের কাছে অবহেলিত সে। নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইতে এসেছিল। শুধু তাই নয়! আমার নামে একটি বাড়ি লিখে দেয়। দু’টো আলাদা ফ্ল্যাট আছে এতে। দু’টোতেই ভাড়া চলছে। সেই ভাড়ার টাকা এখন থেকে আমি পাব।
-কী বলছ!
-আমার গয়নাগাটি সব সে আঁটকে রেখেছিল। এক কাপড়ে বের হতে হয়েছিল আমাকে। এসব দিয়ে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করছে। যদিও আমি চাইনি৷ কিন্তু সেই বলল, এসব আমাদের অধিকার। তার এক সন্তানের জননী আমি।
-সব তোমার ধৈর্য্যের ফল মা।
-হয়তো! মা তুই ভালো আছিস ওখানে? চলছিস কীভাবে?
-সব একদম ঠিক আছে। টিউশনির টাকাতে হয়ে যাচ্ছে সব।
-ভাড়া পেলে আমি তোকে টাকা পাঠাব।
-তুমি ওসব নিয়ে ভেবো না। নিজের খেয়াল রাখো।
-টাকা জমিয়ে পারলে আমি ওখানেই চলে আসব। মা মেয়ে ছোট্ট একটা বাসা নিয়ে থাকব। ভাড়ার টাকা, তোর টিউশনির টাকা দিয়ে হয়ে যাবে আমাদের।
-হুম মা।
-আমি চাইলেই ওদের কারো থেকে ফোন নিয়ে কথা বলতে পারতাম। কিন্তু ওদের কারো ছায়াও তোর উপরে পড়ুক আমি চাই না। সব মনে রেখেছি আমি।

এই বলে কেঁদে উঠলেন তিনি। মা কে শান্তনা দেয় ইধা। বেশ অনেকক্ষণ কথা বলার পর ফোন রাখে ও। মুখে ফোটে ওর এক চিলতে হাসি। ওদের দু:খের দিন বুঝি শেষ হতে চলেছে!

কবুল বলার মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যায়।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব শুরু হলে সবাই উপরে চলে যায়। ইধা সবার জন্য সাদ্দামের দেওয়া টাকা সমানভাগে ভাগ করে নেয়। এরপর সিড়ি বেয়ে উপরে উঠার সময় দেখা পায় রুজাইনের। রুজাইন বলল, তোমাকে না পেয়ে খুঁজতে এলাম।
-খাওয়ার পর মাইশার কাজিনরা চলে যাবে, তাই সবার টাকা ভাগ করছিলাম।

কিছু টাকা রুজাইনের দিকে এগিয়ে দেয় ইধা। রুজাইন কিছু বলার আগে একটা বিড়াল ছুটে আসে ওদের দিকে। ইধা হঠাৎ তা দেখে ভয় পেয়ে যায়। ও আচমকা জড়িয়ে ধরে রুজাইনকে। ও বলল, এটা কী!

রুজাইন হেসে বলল, বিড়াল!
-গেছে?
-উপরে চলে গেছে।

রুজাইনকে ছেড়ে দেয় ইধা। কিন্তু ওর চুল গিয়ে আঁটকায় রুজাইনের পাঞ্জাবির বোতামে। ইধা তা ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে রুজাইন বলল, থাক না?

ইধা বলল, কী থাকবে?
-এভাবে আঁটকে থাকুক।
-মানে?

রুজাইন কিছু না বলে ওর চুল ছাড়াতে সাহায্য করে। ইধাকে এত কাছে পেয়ে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না ও। এরপর ইধা ওর দিকে টাকা এগিয়ে দিলে রুজাইন বলল, লাগবে না।
-ভাগ নেওয়ার কথা ছিল আপনার।
-লাগবে না।
-আরে রাখুন!
-রাখতে চাই। তবে অন্যকিছু।
-কী?
-তোমাকে। আমার জীবনে আজীবন রাখতে চাই তোমাকে।

একথা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না ইধা। ও মিনমিনে স্বরে বলল, কী বলছেন?
-আই লাভ ইউ ইধা।

ইধা কী বলবে বুঝে উঠতে পারে না। তবে ও দাঁড়ালো না। ছুটে চলে যায় উপরে।
.
চলবে

বিঃদ্রঃ ডিসেম্বর মাস। বাচ্চাদের এক্সাম শেষে ননদরা এসেছে বাসায়৷ যার কারণে ব্যস্ততায় নিয়মিত দিতে পারছি না। ক’দিন অনিয়মিত গল্প পাবেন। দু:খিত!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here