প্রার্থনায় রবে তুমি #পর্ব ১৫ #Saji Afroz

0
69

#প্রার্থনায় রবে তুমি
#পর্ব ১৫
#Saji Afroz

হুট করে এ কী করে ফেললো রুজাইন? এভাবে হঠাৎ ইধাকে মনের কথা জানিয়ে ভুল করলো না তো ও! ইধার নিশ্চয় বিষয়টি পছন্দ হয়নি। তাই এভাবে ছুটে চলে গেছে ও৷ রুজাইন নিজের আবেগকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না। ইধাকে মনের কথা জানানোর লোভ ও সামলাতে পারেনি। তবে কোনো আয়োজন ছাড়া এই কাজটা করা উচিত হয়নি ওর। সাদ্দাম কত সুন্দরভাবে মনের কথা উপস্থাপন করেছিল মাইশার কাছে। আর রুজাইন? সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে হুট করেই ভালোবাসে বলে দিলো!
আফসোস ছাড়া কিছু করার নেই এখন।

রুজাইন উপরে আসে। ইধাকে দেখে ও৷ সাদ্দামকে আপ্যায়নে ব্যস্ত ও। রুজাইনকে দেখে সাদ্দাম বলল, কোথায় ছিলি? কাছে আয়।

মাইশা বলল, আপনাকে ছাড়া খাওয়া শুরু করছে না।

সাদ্দামের পাশের চেয়ারটা রুজাইনের জন্য খালি রাখা ছিল। ও এখানেই এসে বসলো। ওকে দেখে ইধা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। মাইশার পাশে এসে বসলো ইধা।

সবার প্লেট ভর্তি খাবার। রুজাইনের প্লেট খালি দেখে সাদ্দামই ওকে খাবার পরিবেশন করতে শুরু করে। তা দেখে মাইশা বলল, ইধা আছে। ও করবে।

এটা শুনেই ইধার দিকে প্লেট বাড়িয়ে দেয় রুজাইন।
ইধা ভ্রু কুচকে বলল, আপনি নিজেই নিন না! নতুন বর গো আর নন!

এই বলে ইধা খাওয়া শুরু করে। ওর আচরণে মাইশা অবাক হয়। ও পরিস্থিতি সামলাতে বলল, দুলাভাই এর কাজিনের সঙ্গে মজা না করে কার সঙ্গে করবে?

রুজাইন প্লেট নিজের দিকে টেনে এনে বলল, বুঝলাম।

ও নিজেই প্লেটে খাবার নিয়ে খেতে শুরু করে।

খাওয়া শেষে রুজাইনকে ছাদের একপাশে টেনে এনে সাদ্দাম বলল, ইধা তোর দিকে ওভাবে তাকাচ্ছিল কেন?
-ঘটনা একটা ঘটে গেছে।
-কী?
-প্রপোজ করে ফেলেছি ইধাকে।
-কীভাবে?
-হুট করেই। কোনো পরিকল্পনা ছাড়া। ভুল করলাম, তাই না?
-উহু! যখন মনে করেছিস জানানোর দরকার, জানিয়ে দিয়েছিস। সিম্পল!
-কিন্তু ইধাকে দেখো! পছন্দ করেনি নিশ্চয় ব্যাপারটা। ছুটে চলে এসেছিল তখন। আর এখন তো ফিরেও তাকাচ্ছে না।
-হতাশ হলে চলবে না। ইমপ্রেস করে যা।
-তোমারই ভাগ্য ভালো। একেবারে বিয়েই করে ফেললে।
-কারণ আমার বিয়ের বয়স হয়েছে। তোর সেটাও হয়নি। আপাতত প্রেমই করতে পারবি।

এই বলে হো হো শব্দে হেসে উঠে সাদ্দাম। রুজাইন বলল, নাও মজা!

অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হলো। এখন বিদায় এর মুহুর্ত। যদিও মাইশাকে সাদ্দামের বাড়ি নেওয়া হবে না। সাদ্দাম একটি হোটেল রুম বুকিং করেছে। আজ রাতের জন্য ওখানেই যাবে।

মাইশা বেশ হাসিখুশি ছিল। কিন্তু ইধা যখন ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে ওর চোখেও চলে আসে পানি। মরিয়ম জান্নাতও ওদের দেখে কেঁদে উঠলেন। মুহুর্তের মধ্যেই ওদের কান্নার শব্দে চারপাশ ভারী হয়ে উঠলো।

সাদ্দাম বলল, আরেহ কী হলো? মাইশা কেবল এক রাতের জন্যই যাচ্ছে।

মাইশাকে ছেড়ে ইধা বলল, জানি। তবুও মনে হচ্ছে অনেক পর হয়ে যাবে আজ থেকে ও।
-সে তো হবেই। আজ থেকে ওর প্রিয় এর লিস্টের নাম্বার ওয়ানে থাকব আমি।

মাইশা ধমকের সুরে বলল, মোটেও না। আমার কাছে সবসময় ইধা আপনার আগেই থাকবে।
-আচ্ছা তাই!
-হু।

ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই ইধার বুকটা ধুক করে উঠলো। মাইশা বিহীন রুমটা একদমই খালি খালি লাগছে। রুমের চেয়েও খালি মনেহচ্ছে ওর অন্তরটা। মাইশা মেয়েটা ওর হৃদয় এর কতটা জায়গা জুড়ে আছে সেটা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। অল্প সময়ে কাউকে এত ভালোবাসা যায়! সত্যিই বন্ধুত্ব কেবল মধুর সম্পর্ক নয়, প্রাণের সম্পর্কও বটে।
বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দেয় ও। আজকের দিনে অনেক কিছুই ঘটে গেছে ওর জীবনে। ওর প্রিয় বান্ধবীর বিয়ে হলো, মা এর ফোনকল আসলো আর রুজাইন ওকে ভালোবাসার কথা জানালো। এটা মনে পড়তেই বসে পড়লো ইধা। রুজাইন ওকে ভালোবাসার কথা জানালো, কিন্তু ও কেনো না করলো না রুজাইনকে? সেদিন আলিমকে না করেছিল ও। জানিয়েছিল নিজের সত্যিটা। কিন্তু আজ কেন রুজাইনের মুখের উপরে কিচ্ছুটি ও বলতে পারলো না! তবে কী ওর মনেও রুজাইনের জন্য ভালো লাগা রয়েছে?

-তুমি করেই বলতে হবে আমায়। এই যুগে এসেও কেউ স্বামীকে আপনি ডাকে?

সাদ্দামের কথা শুনে মাইশা বলল, স্বামী একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তাকে আপনি করে বলাই যায়।
-আমি মনেকরি স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা অতিব জরুরি। আর এটির শুরু তুমি দিয়েই করতে হয়৷ তুমি করে বলবে তো?

মাইশা হ্যাঁ সূচকভাবে মাথা নাড়ে।
বাসর ঘরে বসে রয়েছে ওর৷ লাল গোলাপ দিয়ে পুরো রুম আর খাটটি সাজানো হয়েছে। মাইশার প্রিয় ফুল লাল গোলাপ। এটি জেনেই সাদ্দাম গোলাপ ফুলে সাজিয়েছে বাসর।
সাদ্দাম একটি গোলাপ ফুল আর একটি রিং নিয়ে মাইশাকে দেখিয়ে বলল, তোমাকে যদি এখান থেকে একটা বেছে নিতে বলি কোনটা নেবে?

মাইশা বলল, দু’টোই আমার জানি৷ তাই ফুল বলে মহৎ সাজতে চাই না।

ও হাসে। সাদ্দাম ওর দিকে ফুল এগিয়ে দেয়। এরপর ওর একটি আঙুলে রিংটি পরিয়ে দিয়ে বলল, যেমন আছ তেমনি থেকো সবসময়। এই মুখের হাসিটা আমার ভীষণ প্রিয়।

মাইশা গোলাপ ফুলে নাক ডুবিয়ে বলল, আর আমার ফুলের ঘ্রাণ বেশ প্রিয়।
-বেশ সুভাষ তাই না?
-হু।
-আমিও সুভাষিত হতে চাই। তবে তোমার ঘ্রাণে।

এই বলে মাইশার কাছে আসে সাদ্দাম। ও কপালে আলতোভাবে ঠোঁটটা বসিয়ে দেয়। মাইশা কেঁপে উঠে।
সাদ্দাম ওর ঘোমটাটা সরায়। মাইশাকে জড়িয়ে ধরে বলল, আজ রাতটা স্মরণীয় করে রাখতে চাই৷ রাখতে দেবে কী?

মাইশা কিছু বলতে পারে না। ভেবেছিল আজ সাদ্দামকে কাছে আসতেই দেবে না। কিন্তু ওকে দূরে সরাতে মোটেও ইচ্ছে করছে না। আরও কাছে পেতে ইচ্ছে করছে ওকে। না চাইতেও মাইশাও জড়িয়ে ধরে সাদ্দামকে। ওর সম্মতি আছে বুঝতে পেরে সাদ্দাম মাইশার সঙ্গে হারিয়ে যেতে থাকে ভালোবাসার সমুদ্রে।

আজ আতিয়াততে সকালেই পড়াতে এসেছে ইধা। বিকালে মাইশা আসবে৷ তাই আজ বিকালের আগেই সব টিউশনি শেষ করবে বলে মনস্থির করলো ইধা।
আতিয়াতকে পড়াতে এলে দরজা খুলে রুজাইন। ওকে দেখে কী করবে বুঝে উঠতে পারে না ইধা।
রুজাইন ওকে ভেতরে আসতে বলে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। ইধা ভেতরে এসে আতিয়াতকে পড়ানো শুরু করে।
রুজাইনের রুমে এসে শারমিন আক্তার বললেন, ক্লাসে যাবি বলেছিস না?
-আজ আর যাব না। ক্লান্ত লাগছে।
-মুহুর্তের মধ্যেই ক্লান্তি এসে ভর করলো কাঁধে?
-কাল কী কম ধকল গেল?
-কী জানি বাপু! তোর মতিগতি কিছুই বুঝি না। এই বললি কলেজ যাবি, এই আবার যাবি না!

বকবক করতে করতে নিজের রুমে ফিরে যান শারমিন আক্তার। ইধা সবই শুনেছে। আজ ও বুঝলো, যখনি আতিয়াতকে পড়াতে আসে রুজাইনকে কেন দেখে ও। মূলত ইধার জন্যই রুজাইন বসে থাকে। এসব দেখেও ইধা কিছু বুঝলো না এতদিন!

মাইশার আসার পর দুই বান্ধবী জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। মনে হচ্ছে অনেকদিন পর ওদের দেখা হয়েছে।
মাইশা নিজেকে সামলাতে না পেরে সাদ্দামের ডাকে সাড়া দিয়েছে শুনে হেসে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা ইধার। ও ব্যঙ্গসুরে বলল, বড়ো মুখে বলেছিস না? কাছেই আসতে দিবি না সাদ্দাম ভাইকে!
-কী বলব তোকে! রোমান্সের সুখ যখন বিয়ে করবি তখনি বুঝবি। দূরে সরানোর কথা মাথায়ও আসবে না। কেবল ইচ্ছে হবে কাছে যাই, কাছে যাই! এখন মনে হচ্ছে সাদ্দামের বাড়িতেই চলে যেতে হবে তাড়াতাড়ি।

হা হা শব্দে হেসে উঠে ইধা। মাইশা বলল, একটা কথা বলাই হয়নি তোকে। রুজাইন ভাই এর বিষয়ে।
-কিছু জানিস?
-হু। বেচারা মন দিয়ে বসেছে তোকে। আজ আমায় ফোন করেছিল। তোকে রাজি করানোর দায়িত্ব দিয়েছে। সাদ্দামও সব জানে।
-কিন্তু এটা সম্ভব না। তুইও জানিস।
-জানি। কী করা যায়?
-সত্যিটা জানাতে হবে।
-কিন্তু জানিয়ে যদি এই বাসায় থাকাটা অসুবিধা হয় তোর জন্যে?
-হলে হবে। তবে আমি তাকে সত্যিটা জানাব।

মাইশার ফোন বেজে উঠে। রুজাইনের ফোনকল। এটা দেখে মাইশা বলল, আমারও মনেহয় সত্যিটা জানানোই শ্রেয়। এবং খুব তাড়াতাড়ি!
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here