প্রার্থনায় রবে তুমি #পর্ব ১৬ #Saji Afroz

0
62

#প্রার্থনায় রবে তুমি
#পর্ব ১৬
#Saji Afroz

মাইশা ফোন রিসিভ করতেই রুজাইন বলল, বাসায় এসেছ? ওহ স্যরি! আমার ভাবী হয়ে গেলেন এটা মনেই থাকে না। বাসায় এসেছেন?

জবাবে মাইশা বলল, আবারও আপনি আমায় লজ্জা দিচ্ছেন। ভাবীর আগেও আমি আপনার ছোটো বোন হই।
-কিন্তু এখন সম্পর্কে আপনিই আমার বড়ো।
-এসব বলে আমাকে ছোটো করবেন না। ভাবী ডাকতে পারেন তবে আমাকে তুমি করেই বলেন।
-আচ্ছা ঠিক আছে। ইধা আছে বাসায়?
-আছে। কথা বলেছি। ইধা আপনাকে কিছু বলতে চায়।

একথা শুনে খুশি হয়ে যায় রুজাইন৷ ও ভাবলো, ইধাও বুঝি ওকে ভালোবাসে জানাবে? নতুবা কী নিজে কথা বলতে চাইতো! ও মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, হ্যাঁ দাও ওকে ফোন!
-নিন।

কাঁপা হাতে ফোন নেয় ইধা। গলাও যেন কাঁপছে ওর। ওকে এই অবস্থায় দেখে ভ্রু কুচকায় মাইশা। তাকিয়ে থাকে ইধার দিকে এক নজরে। ইধা শান্ত কণ্ঠে বলল, হ্যালো?

সঙ্গে সঙ্গেই রুজাইন বলল, হাই! কেমন আছ?
-ভালো। আপনি?
-মোটেও না। আসলে কালকের ওই ঘটনার জন্য আমি লজ্জিত। প্রপোজের জন্য নয় আবার!
-তবে?
-ঘটা করে কিছু করতে পারিনি তাই। এভাবে হুটহাট মনের কথা জানানো ঠিক হয়নি। স্পেশাল কিছু করার প্রয়োজন ছিল। তুমি আরেকবার সুযোগ দাও, আমি স্পেশাল কিছু করেই আবারও প্রপোজ করব তোমাকে।
-তার আর প্রয়োজন নেই৷ আমার কিছু জানানোর ছিল আপনাকে।
-বলো?
-আমার সম্পর্কে কিছু না জেনেই এতটা আগানো উচিত হয়নি আপনার।
-আচ্ছা তাই! জানার মতো এমন কী আছে! তুমি মানুষ। আমার মনের মানুষ! এর চেয়ে বেশি কিছু জানার প্রয়োজন নেই।
-আমার সাথে আপনার যায় না। কোনো ভাবেই না।
-কেন? আমি কী তোমার যোগ্য না? আমারই সমস্যা?
-আপনি অনেক ভালো একজন ছেলে। আমিই আপনার যোগ্য না।
-এমনটা আমি ভাবি না।
-আমার বাবা অন্য এক নারীর জন্য আমাদের ছেড়ে ছিল। নানা বাড়িতে বড়ো হয়েছি। ওখানে আমাদের কোনো কদর নেই। আমাকে জীবনে জড়িয়ে কিছুই আপনি পাবেন না।
-এই শোনো! আমার ঘর জামাই হওয়ার ইচ্ছে ছিল না। তোমার নানা বাড়ির কদর নিয়ে আমার চিন্তা নেই৷ তুমি কদর করলেই হবে।
-এসব আপনার পরিবার কখনোই মানবে না।
-মানতে বাধ্য। আমি ওদের একমাত্র ছেলে। আমার খুশিতেই ওদের খুশি। না মানলে আমি লড়াই করব। তাও মানাব।
-প্রেমের আগে এসব সবাই বলে৷ বিয়ের সময় এলে পিছু হটে।
-তবে বিয়ের কথা বলব বাসায়?
-এই না!

রুজাইন হাসে। ইধা বলল, সাদ্দাম ভাই হতে যাবেন না। উনার বিয়ের বয়স হয়েছিল।
-হু। তবে তুমি বললে সাদ্দাম ভাই কেন! সম্রাট শাহজাহানও হতে পারি!

ইধা মুচকি হাসে। এইবার ভ্রু এর সঙ্গে মাইশার কপালও কুচকে যায়। ইধার দিক থেকে এখনো নজর ওর সরে না।
মাইশাকে খেয়াল করে ইধা নড়েচড়ে বসে বলল, আমি আপনার প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারব না। ক্ষমা করবেন।

এই বলে ফোনের লাইন কাটে ইধা৷
মাইশাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ও বলল, কী দেখছিস ওভাবে?
-আসল কথাটাই বললি না। কেন?
-বলতে পারলাম না।
-কারণ জানতে চাচ্ছি।
-নিজেও জানি না।
-মন দিয়ে বসছিস রুজাইন ভাইকে?

অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ইধা বলল, কীসব বলছিস! এটা সম্ভব না তুইও জানিস।
-জানি। কিন্তু মন যখন কিছুতে সাই দিতে চায় তখন মনকে মানানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এখুনি নিজেকে সামলে নে ইধা।

হ্যাঁ সূচকভাবে মাথা নাড়ে ইধা।

সাদ্দামের ফোন আসে। মাইশা বারান্দায় এসে ফোন রিসিভ করে৷ ওপাশ থেকে সাদ্দাম বলল, কী করে আমার মেম সাহেবা?
-বসে ছিলাম।
-আমায় মনে পড়ছে না?
-অনেক বেশি।
-এইজন্যই বলছি তাড়াতাড়ি ঘরে নিয়ে আসি।
-সেটা হচ্ছে না মশাই।
-কাল রাতের মতো চাই আমি প্রতিটা রাত।
-সবুর করো।
-আচ্ছা তবে আবারও হোটেল বুকিং করি?
-ইশ! বাসায় কী বলব?
-অসুবিধে কী! হাজবেন্ড আমি তোমার।
-তবুও! খারাপ দেখায়!

সাদ্দামের সাড়া না পেয়ে মাইশা বলল, কী হলো?
-রুজাইনের ফোনকল এসেছে। পরে রিসিভ করব।
-করে দেখো। জরুরি হতে পারে।
-ইধার কথা বলবে। ওর চক্করে পড়ে বউ এর সঙ্গে প্রেমটাও শান্তিতে করতে পারছি না।
-অশান্তির কী হলো এতে?
-এই যে বারবার ফোনকল দিচ্ছে। ওর বিষয়ে মাথা ঘামাব নাকি বউকে কীভাবে আরও কাছে পাওয়া যায় ভাববো!

মাইশা হাসে। সাদ্দাম বলল, ইধাকে রাজি হতে বলো। দুই বান্ধবী আত্মীয়ও হয়ে যাবে। এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে?
-এটা সম্ভব নয়।
-এক কথা শুনে আসছি সম্ভব নয়! কিন্তু কেন নয় এটা বলছ না!
-ইধা আগে বলুক। আমি চাই না ওর ব্যক্তিগত বিষয় আমি তুলে ধরি। ও বললেই আমি ব্যাখ্যা করব।
-আজব! কী এমন বিষয় বুঝি না। আগে বিয়ে টিয়ে হয়নি তো?
-এখন মনে হচ্ছে ওমন হলেও মন্দ হত না।
-তার মানে আরও গুরুতর কিছু! এই? ও কী কখনো মা হতে পারবে না?
-এটা গুরুতর বিষয়? আমি যদি মা না হতে পারতাম তবে আমাকে তুমি বিয়ে করতে না?
-উহু! কথা অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছ তুমি।

মাইশার ফোনেও রুজাইনের ফোনকল আসছে। ও তা দেখে বলল, আমি একটু পরে কথা বলি?
-রাগ করলে?
-নাহ।
-সত্যি?
-আরে সত্যি!
-তবে ভালোবাসো বলো!
-ভালোবাসি। হয়েছে?
-আদর মাখা সুরে বলো!
-কীসব বাচ্চামো করো না তুমি!
-প্রেম করি, প্রেম!

মাইশা মৃদু হেসে সুর টেনে বলল, ভালোবাসি অনেক বেশিই…..

রুজাইনের ফোন রিসিভ করে মাইশা। রুজাইন বলল, ইধা এসব কী লজিক দেখাচ্ছে বলো তো?

মাইশা বলল, ও ঠিকই বলেছে ভাইয়া! এমন ছন্নছাড়া পরিবারের মেয়েকে আপনার পরিবার মেনে নেবে না।
-এটা আমি ম্যানেজ করে নেব। ওকে রাজি করাও প্লিজ!
-ভালোবাসা এভাবে জোর করে হয় না ভাইয়া। ইধাকে জোরাজোরি করে কী ওর মন পাওয়া যাবে?

এইবার নিশ্চুপ হয়ে যায় রুজাইন। মাইশা বলল, নিশ্চয় ভালো কিছু অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।

ফোন রাখলেও মাইশা জানে, এর শেষ এখানেই নয়! এসবের জন্য ওর বৈবাহিক জীবনে কোনো ঝামেলা হবে ভেবেও মনের মাঝে ভয় কাজ করছে ওর। জানে না সামনে কী হতে চলেছে!

আজ সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হলো মাইশার। সারা রাত সাদ্দামের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিল। ফজরের নামাজ আদায় করে ঘুমিয়েছিল।
ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরে আসতেই অবাক হয় ও। ইধা দুপুরের রান্নাবান্নাও করে ফেলেছে। এখন রাইস কুকারে ভাত বসাচ্ছে। মাইশা বুঝতে পারলো, ও নিজেকে ব্যস্ত রাখতে কাজ করছে। নিশ্চয় ভোর থেকেই কাজ শুরু করেছে। নাহলে এতকিছু করা সম্ভব হত না। কী চলছে ইধার মনে!
মাইশাকে দেখে ইধা বলল, ফ্রেশ হয়ে আয়। নাস্তা নিয়ে আসি।

ও ফ্রেশ হয়ে আসে। আলু ভাজি, পরোটা আর ডিম ভাজি নিয়ে হাজির হয় ইধা। ও এসব দেখে বলল, তুই করেছিস তাই না এসব?
-আন্টি চেয়েছিলেন করতে। কিন্তু আজ আমার ইচ্ছে হয়েছে। সদ্য বিবাহিতা বান্ধবীর জন্য মন ভরে রান্নাবান্না করলাম আজ।
-অহেতুক এত কষ্ট করছিস।
-কী যে বলিস না! খেয়ে বল কেমন হয়েছে।

মাইশা মুখে খাবার নিয়ে বলল, মারাত্মক!
-খারাপ?
-উহু! মজা।

মাইশার ফোন বাজতে থাকে। রুজাইনের ফোনকল। ইধা ভেবেছে সাদ্দামের ফোন এসেছে। তাই ও প্রস্থান নেয়। মাইশা ফোন রিসিভ করলে রুজাইন বলল, আমাকে সাহায্য তোমার করতেই হবে। ভাই মানো তো আমায়?

মাইশা বিচলিত হয়ে বলল, অবশ্যই মানি! কেমন সাহায্য?
-আমি ইধার সঙ্গে দেখা করতে চাই। সেটা এখুনি।
-মানে!
-আমি জানি তোমার বাসায় কেউ নেই এখন।
-কিন্তু!
-আমি তোমার দেবর। ভাবীর সঙ্গে দেখা করতেই পারি।

হতাশ কণ্ঠে মাইশা বলল, রুজাইন ভাইয়া!
-সাদ্দাম ভাই হতাশ না হয়ে চেষ্টা চালিয়ে রাজি করিয়েছে না তোমায়, বলো?
-হু।
-আমাকেও একটা চেষ্টা করতে দাও। প্লিজ মাইশা!

একটু থেমে মাইশা বলল, ওকে ফাইন। আসুন।

মিনিট পাঁচেক পরেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শোনা যায়। ইধা ওর রুমের বিছানা গোছাচ্ছে। তাই মাইশা দরজা খোলে। মাইশাকে দেখে রুজাইন ধীরকণ্ঠে ইধা কোথায় জানতে চায়। নিজের রুমে জেনে সেদিকেই পা বাড়ায়। মাইশা তাড়াহুড়ো করে আঁটকে দেয় দরজা।
ড্রয়িংরুমে পায়চারি করা শুরু করে ও৷ এদিকে রুজাইন ইধার রুমে আসতে চমকে উঠে ইধা। ও বলল, আপনি এখানে?

রুজাইন রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। ইধা চ্যাঁচিয়ে বলল, দরজা কেন বন্ধ করছেন?
-উত্তেজিত হবে না প্লিজ। আমি জাস্ট কথা বলতে এসেছি।

ইধা নিজেকে শক্ত করে বলল, কী কথা?
-তুমি আমাকে কেন মেনে নিতে পারছ না?
-সেটা আমি জানিয়েছি। এত বড়ো স্বপ্ন আমি দেখতে চাই না। যে স্বপ্ন কখনো পূরণই হবে না।
-পূরণ করার দায়িত্ব আমার। এটাই যদি কারণ হয় এই কারণ আমি মানি না।
-মানা না মানা আপনার বিষয়৷ আমি আমার মতোই কাউকে চাই লাইফে। অহেতুক অশান্তি নিজের জীবনে চাই না।
-ওকে ফাইন! আমি তোমার জন্য সব ছেড়ে দেব। বাবার পরিচয়ে পরিচিত হব না। নিজের পরিচয় গড়ে তুলব। সেই পরিচয়ে তুমিও পরিচিত হবে। চলবে?
-না। প্লিজ আপনি যান এখান থেকে।
-যাব না। কেন জানো?
-কেন?
-কারণ তুমি কেবল অহেতুক কিছু কারণই বলছ। একবারও বলোনি আমায় ভালো তুমি বাসো না।

ইধার দু-চোখ ছলছলে হয়ে উঠে। ও কী বলবে ভেবে পায় না। রুজাইন বলল, তাই না বলো?

ইধা নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না, কী বলবে ও রুজাইনকে! কবে, কখন, কীভাবে ওর মনেও রুজাইনের জন্য ভালো লাগা তৈরী হয়েছে জানে না ও। কেবল জানে, রুজাইনকে প্রত্যাখ্যান করতে ওর কষ্ট হচ্ছে অনেক বেশি!

রুজাইন ইধার কাছে এসে হাতটা ধরে বলল, ভালোবাসো তো আমায়? একবার মুখ ফুটে বলো! সব সম্ভব করে দেব আমি।

ইধা নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, কিছুতেই পারবেন না।

এইবার উত্তেজিত হয়ে রুজাইন বলল, কেন! কেন তুমি এমনটা ভাবছ!

ইধা প্রায় চ্যাঁচিয়ে বলল, কারণ আমাদের দু’জনের ধর্ম আলাদা! আমি হিন্দু! আমার নাম ইধা রায়!

কথাটি বলেই লম্বা একটা দম ছাড়ে ইধা৷ রুজাইন যেন নিজের কানে কথাটি শুনেও বিশ্বাস করতে পারছে না। চারপাশে ঝাপসা মনে হচ্ছে ওর। ইধা ওর অবস্থা বুঝতে পারে৷ দরজাটা খুলে দেয় ও৷ রুজাইনও আর অপেক্ষা করলো না। হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় ও। মাইশার সঙ্গেও কোনো কথা বলে না। ইধার কাছে ছুটে আসে মাইশা। ও বলল, কী হলো?

জবাবে ইধা বলল, সত্যিটা জানিয়েছি ওকে।

মাইশা ইধার কাঁধে হাত রেখে বলল, ভালো করেছিস। যেটা হওয়ার নয় সেটা ঝুলিয়ে রাখারও কোনো মানে নেই!
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here