#প্রার্থনায় রবে তুমি
#পর্ব ১৮
#Saji Afroz
-আমাকে একটাবারও বললেন না, রুজাইন ভাই আসবে এখানে!
মাইশার কথা শুনে সাদ্দাম বলল, সারপ্রাইজ ছিল।
-আমার জন্যে মোটেও এটা সারপ্রাইজ নয়।
-তোমাকে জানালে তুমি ইধাকে বলে দিতে সবটা। ওর জন্যে অবশ্যই সারপ্রাইজ।
-ওর জন্যেও নয়। ইধাও বিষয়টা পছন্দ করেনি এবং করছে না।
-তুমি কিভাবে শিওর হলে?
-আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ও।
-তাই বলে ওর পেটের কথাও তুমি জানবে?
-মনের কথা জানব।
মাইশার পাশে আসে সাদ্দাম। ওর হাত ধরে বলল, কেন এসব নিয়ে এত ভাবছ বলো তো! ওদের বিষয় ওদেরই বুঝতে দাও না!
-আপনারা কেন বিষয়টা জটিল করছেন! হিন্দু ও মুসলমানের রিলেশন এটা হয় কখনো বলেন?
-কখনো দেখোনি?
-অনেক ঝড়ঝাপটা সামাল দিতে হয়।
-দিতে হলে ওরা দেবে।
-কিন্তু ইধাকে কোনো জটিলতায় আমি পড়তে দেখতে পারি না।
একটু থেমে সাদ্দাম বলল, রুজাইনকে শেষ চেষ্টা করতে দাও৷ ইধা এরপরেও রাজি না হলে আমি নিজে রুজাইনকে সরে যেতে বলব।
ওর কথা শুনে যেন শান্তি পায় মাইশা। সাদ্দাম বলল, এইবার খুশি তো?
হ্যাঁ সূচকভাবে মাথা নাড়ে মাইশা। সাদ্দাম বলল, তবে কাছে আসো এখন।
মাইশা লাজুক হেসে বলল, যখন তখন দুষ্টুমি!
-এসবের মানেই তো হানিমুন ম্যাডাম!
এই বলে মাইশাকে কাছে টেনে নিলো সাদ্দাম।
আজ শান্ত সাগর ইনানীতে এসেছে সবাই৷ প্রবাল পাথরের দেখা মেলে এখানে। যা দেখে বিস্মিত হলো ইধা। কারণ ওর এসব প্রথম বারের মতো দেখা।
কক্সবাজারের মতো উত্তাল নয় এই সাগর৷ এই শান্ত সাগর দেখেই বিমোহিত হলো ইধা। এক নজরে সেদিকেই তাকিয়ে রইলো ও।
-একটা হাসি দাও?
ক্যামেরা হাতে রুজাইনকে দেখলো ইধা। রুজাইনের কথার পিঠে কোনো কথা না বলে অন্যদিকে ঘুরে তাকায় ইধা। রুজাইন ওর সামনে এসে বলল, এমন ফোলা গালে মৎস্য কন্যার মতো লাগছে।
ইধা ভ্রু কুচকে বলল, আজব! আমি পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছি নাকি? এসব আজগুবি কথা বলেন কেন?
-না বললে কী তোমার মুখ থেকে কোনো কথা বের হবে? তাছাড়া মৎস্য কন্যা খারাপ কী! বেশ সুন্দর।
-যেন দেখেছেন?
-শুনেছি। রূপকথার গল্প তুমি শোননি?
-রূপকথাতেই মানায় ওসব।
এই বলে হাঁটতে শুরু করে ইধা। রুজাইনও ওর পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলল, চলো না! আমরাও একটা ইতিহাস গড়ি?
-কী ইতিহাস?
-আমাদের প্রেমের ইতিহাস।
-ইতিহাস গড়তে গিয়ে না আবার হতে হয় হতাশ!
-হতাশ হওয়ার কোনো চান্স নেই।
ইধা থামে। ও বলল, কেন এমন করছেন?
-ভালোবাসি তাই।
-আমি বাসি না।
-চোখে চোখ রেখে বলো?
-বাংলা সিনেমা চলছে না এখানে।
-হৃদয় এর তো চলছে!
কোনো কথা আর ইধা বলল না। মাইশাদের দেখে ওদের দিকে এগিয়ে যায়।
ইধাকে দেখে মায়া হয় মাইশার৷ বুঝতে পারছে ও বিরক্ত হচ্ছে। কিন্তু কিইবা করবে! রুজাইন বলে এসব মেনে নিচ্ছে। নাহলে ইধাকে বিরক্ত করার শাস্তি ও ঠিকই দিয়ে দিতো!
রাতে কাসুন্দি রেস্তোরাঁয় এলো ওরা। মাইশার অনেক শখ ছিল এখানে আসার। আগে কক্সবাজার আসা হলেও এখানে এই প্রথম। সারাদিন ঘুরাঘুরির পর এখানে রাতের খাবার খাবে ওরা ঠিক করলো।
ভিডিওতে এই লাইভ মিউজিক কত দেখেছে মাইশা! আজ বাস্তবে দেখে অনেকটা খুশি ও। ইচ্ছেটা পূরণ হলো বলে!
ওরা খাবার অর্ডার করে। খানিকবাদে খাবার আসে। গান শুনে শুনে রাতের খাবার সেরে নেয় ওরা।
খাওয়া শেষে হঠাৎ রুজাইন সেই বড়ো নৌকা আকৃতির স্টেজে উঠে পড়ে। মাইশা অবাক হয়ে বলল, উনি ওখানে কেন যাচ্ছেন?
সাদ্দাম বলল, এটাও সারপ্রাইজ!
ওকে দেখে স্টেজে থাকা শিল্পী মাইকটা হাতে দেয়। রুজাইন স্মিথ হেসে বলল, গান তেমন পারি না। তবে আমার প্রিয় মানুষের গান অনেক পছন্দের। তাই তার জন্যেই একটু চেষ্টা!
সবাই করতালি দিয়ে উঠে। ইধাও বেশ অবাক হয়ে অপলকভাবে তাকিয়ে থাকে সেদিকে।
রুজাইন গাইতে শুরু করে–
তুমি না ডাকলে আসব না
কাছে না এসে ভালোবাসব না
দুরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়?
না কি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়?
দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরনো
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি….
গান গাইতে গাইতে নিচে নেমে আসে রুজাইন। ইধার সামনে এসে দাঁড়াতেই চমকায় ইধা। মনে মনে ভাবে ওকে কিছু বলবে রুজাইন!
মনের কথা ঠিক হয়ে গেল ওর।
রুজাইন গান থামিয়ে বলল, আজকের এই রাত তোমার জন্যে! আমার গান তোমার জন্যে! এই আমি শুধু তোমার জন্য! ভালোবাসি তোমাকে। সবার সামনে এই সরল স্বীকারোক্তি আমার! এইবার তো বিশ্বাস করো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি!
মাইশা উঠে দাঁড়ায়। আশপাশে তাকিয়ে ও বলল, হোটেলে গিয়ে বাকি কথা হবে। চলুন ভাইয়া।
-এখানেই হোক মাইশা। হয়তো আজ শুরু হবে, নয়তো শেষ!
-ভাইয়া প্লিজ! এভাবে সবার সামনে এসব না করলে হয় না?
সাদ্দাম বলল, মাইশা তুমি এসবে জড়াচ্ছ কেন? ওদের ব্যাপার ওদেরই বুঝতে দাও!
-ইধা আমার সঙ্গে এসেছে। ও আমার দায়িত্ব। ওকে এভাবে সবার সামনে বিব্রত আমি হতে দিতে পারি না।
রুজাইন বলল, বিব্রত আমি করছি না। মনের কথা বলছি!
ইধার দিকে তাকিয়ে রুজাইন বলল, মনের কথা বলার রাইট আমার অবশ্যই আছে। তোমারও হ্যাঁ বা না বলার অপশন আছে। প্লিজ তুমি বলো কিছু!
মাইশা নিজের রাগকে সামাল দিতে না পেরে বলল-
দেখুন ভাইয়া! আপনি আমার অনেক হেল্প করেছেন। এরজন্য আমি আপনাকে আমি অনেক শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তাই বলে সত্যিটাকে সত্যি বলতে পারব না এমন না!
-কী সত্যি?
-আপনি রীতিমতো ইধাকে বিরক্ত করছেন। ও আপনাকে রিজেক্ট করেছে। এরপরেও ওকে ডিস্টার্ব করছেন। ফখরুল আর আপনার মধ্যে তফাৎ কোথায়!
কথা বলে উঠলো সাদ্দাম। ও বলল, মাইশা! তুমি কেন এত উত্তেজিত হচ্ছ বলো? কার সঙ্গে কাকে তুলনা করছ!
-এটা কখনো হতে পারে বলুন আপনি?
-আমি তুমি কেউই বলার নয়। যা বলার বলবে ইধা।
রুজাইন মাইশার এসব কথা উপেক্ষা করে হাঁটু গেড়ে বসে ইধার সামনে। যা দেখে চোখ জোড়া ছলছলে হয়ে আসে ইধার।
রুজাইন পকেট থেকে একটি গোলাপ বের করে বলল, আমি জানি তুমিও আমায় ভালোবাসো। তাই না বলো?
আশপাশ থেকে অনেকেই উচ্চস্বরে বলছে, বলে দাও বলে দাও!
মাইশার দিকে তাকায় ইধা। ওর রাগান্বিত মুখ দেখে উঠে দাঁড়ায় ও৷ রুজাইনের উদ্দেশ্যে ও বলল, এসব তামাশা না করলেই পারতেন।
এই বলে হনহনিয়ে বেরিয়ে যেতে থাকে ও। মাইশা বলল, আমি বলেছিলাম! বলেছিলাম এসব ওর পছন্দ হচ্ছে না।
এই বলে মাইশাও ইধার পিছু নেয়।
রুজাইন!
দিন দিন এই নামটা ইধার মনে অনেকটা জায়গা দখল করে নিচ্ছে। নিজেকে যেন ওর থেকে দূরে সরানো কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে ইধার জন্যে৷ আজকের করা রুজাইনের এই কান্ডে ইধা আসলেই বিরক্ত হয়েছে?
না তো! বরং এসব দেখে একরাশ ভালোলাগা কাজ করছে মনে। ওকে কেউ এভাবেও ভালোবাসবে কখনো ভাবেনি। অবহেলায় কেটেছে আজীবন ওর৷ মাইশার বন্ধুত্ব আর রুজাইনের ভালোবাসা ওর জীবনে আশীর্বাদ। কিন্তু মাইশাও চায় না, রুজাইনের সঙ্গে ও জড়াক। এর কারণ ইধা জানে। এসব ঝড় ঝাপটা ওর বিবাহিত জীবনের হুমকি হতে পারে।
মাইশা ওর রুমেই আছে। মাত্র এলো ও। ইধাকে নিশ্চুপ দেখে বলল, আমি গল্প করতে এলাম আর তুই মুখ ফুলিয়ে বসে আছিস?
-ঝগড়া করে এসেছিস সাদ্দাম ভাই এর সঙ্গে?
-মোটেও না।
-তবে?
-আসতে পারি না বুঝি?
-অবশ্যই পারিস৷
একটু থেমে মাইশা বলল-
টাকা দিয়ে কাসুন্দি রেস্তোরাঁয় নিজে গান গাওয়ার আয়োজন করেছিল রুজাইন ভাই! তুই রাজি হলে সব শিল্পীরা তোদের নিয়ে গান গাইতো। তখন চারপাশে ফুলের পাপড়ি আর বেলুন উড়ানো হত। এমনি পরিকল্পনা ছিল৷ উনি তোকে অনেক ভালোবাসে রে!
-তুই বলছিস এসব?
-একটু আগেও পুরো বিষয়টা আমার কাছে বিরক্তিকর ছিল। কারণ তুই বিরক্ত হচ্ছিস৷ কিন্তু তার কান্না দেখে বুঝলাম, এই ভালোবাসা মিথ্যে নয়!
-কান্না?
-উনি আমার কাছে এসেছিল। আমাদের বিব্রত করে থাকলে দু:খিত জানায়। আর উনি বুঝেছে, তুই ভালোবাসলেও বলবি না কখনো। তোকে পাবে না বলতেই কান্না করে ফেললো। ছেলের কান্না মিথ্যে হয় না। তুই কী আসলেই ভালোবাসিস রুজাইন ভাইকে? বাসলে সবকিছুর উর্ধে নিজের ভালোবাসাকে গুরুত্ব দে। সব নিয়ম ভেঙে নিজেরা নতুন নিয়ম গড়ে তুলে নে। আমি তোর সিদ্ধান্তে পাশে থাকব। আমি শুধু তুই বিরক্ত হচ্ছিস ভেবেই এমন আচরণ করেছি। যদি জানি তুইও তাকে ভালোবাসিস, কেউ তোর সঙ্গ না দিলেও আমি দেব!
.
চলবে