প্রার্থনায় রবে তুমি #পর্ব ২০ #Saji Afroz

0
80

#প্রার্থনায় রবে তুমি
#পর্ব ২০
#Saji Afroz

নিজের রুমে বসে আছে ইধা। আজ রাতের খাবারও খায়নি ও। দুশ্চিন্তায় গলা দিয়ে খাবার নামছে না। এখন থেকেই নানান রকম চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়।
সত্যিটা জানলে রুজাইনের পরিবার কী করবে, তারা কী মেনে নেবে এই সম্পর্ক! না মানলে রুজাইনও কী ছেড়ে দেবে ওর হাত!
ইধার ফোন বাজে। রুজাইন বেশ কয়েকবার ফোনকল দিয়েছে ওকে। কিন্তু রিসিভ করেনি। এখন ও ফোনকল রিসিভ করলো।
সঙ্গে সঙ্গেই ওপাশ থেকে রুজাইন বলল, এতক্ষণ ফোন কেন রিসিভ করছিলে না?
-এমনি।
-রাগ তোমার হতেই পারে৷ তাই বলে আমার উপরে রাগ দেখাবে?
-রাগ নয়৷ আমি ভাবছিলাম আমরা যা করছি ঠিক করছি কি-না।
-কালই প্রেমের শুরু হলো৷ আর এখুনি চিন্তায় ডুবে গেলে তুমি?
-ডোবার মতো বুঝি কিছু হয়নি?
-ওটা তোমার প্রফেশনাল লাইফ। প্রেমে এসব এনো না।
-আর আমার এই লাইফটা আপনার আপনদের সঙ্গে যুক্ত।
-তবে ছেড়ে দাও সেই লাইফ।
-মানে?
-কাল থেকে আতিয়াতকে আর পড়াতে হবে না।
-এটা কোনো সমাধান নয়।
-ফুফু তোমার সঙ্গে যেই আচরণ করেছে এটা আমারও পছন্দ হয়নি। আমি চাই না তুমি আর ওকে পড়াও৷ ওর জন্যে অন্য শিক্ষক আর তোমার জন্য অন্য স্টুডেন্ট আমি খুঁজে নেব।

একটু থেমে ইধা বলল-
আমার জন্য এত ভাবেন জেনে ভালো লাগছে। কিন্তু আমি এটা করলে ওদের চোখে আরও খারাপ হয়ে যাব। কিন্তু সেটা আমি হতে চাই না।
-তবে?
-আমি ছাড়ব না এইটা। নিয়মিত আতিয়াতকে পড়াব। ভালোভাবেই পড়াব। যাতে ও একটা ভালো রেজাল্ট করে। আর আপনার বাসার সবাইও আমায় ভালোবাসে।

ওর কথা শুনে রুজাইন বেশ খুশি হয়৷ তবুও ও ইধাকে বলল, ফুফু যদি আবারও ওমন আচরণ করে?
-ভুল আমার ছিল তাই করেছে। আবার করলে করবে! ভুল ছাড়া করলে আপনার কথা শুনব।
-ওকে ফাইন। ডিনার করেছ।
-না। তুমি?

এটি বলেই জিভে কামড় বসায় ইধা। তুমি করে বলে ফেললো তো রুজাইনকে! রুজাইন হেসে বলল, মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি!
-ভুলবশত বৃষ্টি।
-এই বৃষ্টি আমি সবসময় চাই৷ বৃষ্টিটা খুব মিষ্টি!
-উহু!
-একবার যখন তুমি তে এসেছই, আপনিতে আর যাওয়া যাবে না।
-আসলেই?
-হু।
-তবে তুমিতেই রইলাম!

ক’টা দিন কেটে গেল। চুটিয়ে প্রেম চলছে রুজাইন ও ইধার মধ্যে। একসঙ্গে কলেজে আসা যাওয়াও করা হয় প্রায়। কলেজ শেষে ঘুরতে যাওয়া ও খাওয়াদাওয়া, রাত জেগে ফোনে কথা বলে প্রেম আলাপ করা, ছাদে গিয়ে সময় কাটানো আর আতিয়াতকে পড়ানোর ফাঁকে একে অপরকে দেখে মুচকি হাসা। এভাবে প্রেমময় দিন পার করছে ওরা।
আজ ইধার জন্মদিন৷ ও ঘুম থেকে উঠতেই বিছানায় একটা প্যাকেট দেখতে পায়। প্যাকেটটার উপরে লেখা-
শুভ জন্মদিন ইধা।

এটা মাইশার কাজ বুঝতে পেরে হাসে ও। প্যাকেটটা খুলে তাতে একটি কালো রঙের জামদানী শাড়ি দেখতে পায় ও৷ শাড়িটি দেখে ওর এত ভালো লাগে যে, চিৎকার করে মাইশাকে ধন্যবাদ জানাতে ইচ্ছে করে।
প্যাকেটে আরও রয়েছে চুড়ি, কানের দুল, হাতের রিং, আর এক পাতা টিপ।
ও লাফিয়ে উঠে পড়ে৷ রান্নাঘরে এসে মাইশাকে দেখতে পায়। পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল, ধন্যবাদ জান পাখি। এত সুন্দর শাড়ি! উফফ কী যে মারাত্মক হয়েছে শাড়িটা!

পায়েসের বাটিটা ইধার দিকে এগিয়ে দিয়ে মাইশা বলল, শুভ জন্মদিন বান্ধবী৷ পায়েস শেষ করে শাড়িটা পরে রেডি হয়ে নে। আজ বাইরে লাঞ্চ করব।
-বাইরে?
-হু। সারপ্রাইজ আছে।
-আরও সারপ্রাইজ?
-মাত্র তো শুরু!

মাইশার কথাতে তৈরী হয়ে নেয় ইধা। ওর ফর্সা শরীরে কালো শাড়িটা বেশ মানিয়েছে৷ ওকে দেখে চোখ সরাতে পারছে না মাইশা। ও ইধার কাছে এসে বলল, অনেক সুন্দর লাগছে তোকে!
-তাই?
-হু।
-সারপ্রাইজ কী বল না!
-বললে কী সারপ্রাইজ হবে?
-সেটাও ঠিক।
-রুজাইন ভাই জানে?
-কী?
-তোর জন্মদিন আজ।
-জানে না।
-বলিসনি কেন?
-এটা বলার কী আছে! তুইও মনে রাখবি জানা ছিল না।

ইধার ফোন বেজে উঠে। রিসিভ করতেই মা এর কণ্ঠস্বর শুনতে পায় ও৷ ওপাশ থেকে ওকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান তিনি। ইধা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল, তোমায় অনেক মনে পড়ছে মা!
-আমি আসি তোর ওখানে? ক’টা দিন থেকে যাই?
-আমি আসব।
-কবে?
-সামনে আমাদের ইনর্কোস আছে। ওটা দিয়েই আসব তোমাকে দেখতে।
-আচ্ছা।

ফোন রেখে অঝোরে কাঁদতে শুরু করে ইধা৷ মাইশা বলল, কী হলো রে?
-আম্মুকে খুব মিস করছি। আজ প্রথম কোনো জন্মদিনে পাশে নেই আমার। আমার জন্মদিনে একমাত্র উনিই তো খুশি প্রকাশ করতেন!

ইধাকে বুকে জড়িয়ে নেয় মাইশা। শান্তনা দিয়ে বলল, এক্সাম শেষে দেখে আসিস আন্টিকে।

মাইশার সঙ্গে রেস্টুরেন্টে আসলো ইধা। ভেতরে প্রবেশ করে ও চমকায়। পুরো রেস্টুরেন্টটা সাজানো। চারপাশে ওর ছবি লাগানো। এত এত ফুল ও বেলুন দেখে আনন্দিত হলো ইধা। ও মাইশার উদ্দেশ্যে বলল, এসব তুই করেছিস?
-উহু!

ইধা অবাক হয়ে বলল, তবে?
-সবই করেছে একজন। তোকে এই শাড়ি সহ জুয়েলারি যে দিয়েছে সেই।
-কে?
-যে তোকে এর আগেও শাড়ি গিফট করেছিল আমার বিয়েতে।
-সাদ্দাম ভাই?
-উহু।
-তাহলে?

সাদ্দামের সাথে ভেতরে আসে রুজাইন। ওদের দেখে বিস্ময় এর শেষ পর্যায়ে চলে গেল ইধা।
রুজাইন এক গুচ্ছ গোলাপ হাতে ইধার সামনে এসে দাঁড়ায়। সেও কালো রঙের পাঞ্জাবি পরেছে। ওর থেকে চোখ সরছে না ইধার। মুগ্ধ হয়ে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে দেখছে ও।
রুজাইন বলল, শুভ জন্মদিন ইধা। এখন থেকে তোমার প্রতি জন্মদিনই হবে স্পেশাল। কারণ এই দিনটা আমার জন্যেও অনেক স্পেশাল। আজকের দিনে তুমি না এলে কী আমার হতে? আমার হয়ে জীবনটা এত আনন্দে ভরিয়ে দেওয়ার জন্য তোমাকে অনেক বেশি ধন্যবাদ। শুভ জন্মদিন মাই লাভ!

ইধা শান্তস্বরে বলল, মাইশার বিয়েতে দেওয়া শাড়িটাও তোমার ছিল?
-হু। সাদ্দাম ভাই দিতে চেয়েছে। কিন্তু আমি নিজে পছন্দ করে তোমার জন্য নিয়েছিলাম। আজও তাই করেছি। পছন্দ হয়নি?

ইধার চোখে পানি চলে আসে। তা দেখে রুজাইন বলল, এ কী! কাঁদছ কেন?

মাইশাও ইধার পাশে আসে।

ও বলল, এই! কাঁদছিস কেন তুই?

টেবিলের উপরে থাকা বিশাল কেকটির দিকে তাকিয়ে ইধা বলল-
কখনো জন্মদিনে কেক কাটিনি আমি৷ মা লুকিয়ে চকোলেট এনে দিতো। ওটাই ছিল জন্মদিনের উপহার। বড়ো হওয়ার পর তো কখন জন্মদিনের তারিখ পার হয়ে যেত সেটাই জানতাম না। এত এত ভালোবাসা আমার জীবনেও আসবে কখনো ভাবিনি। কখনো না!

এই বলে অঝোরে কাঁদতে শুরু করে ইধা। রুজাইন মাইশা ও সাদ্দামকে একটু দূরে যেতে ইশারা করে। তারা মুচকি হেসে দূরে যায়।
আচমকা নিজের কাছে টেনে আনে ইধাকে রুজাইন। ইধা চমকায়। রুজাইন ওকে জড়িয়ে ধরে৷ এরপর ফিসফিস করে বলল, এখন থেকে বেশি বেশি ভালোবাসা পাবে তাই আরকি আগে কষ্ট পেয়েছ।
-সত্যি?
-হু।

ইধাকে ছেড়ে রুজাইন বলল, এইবার চোখ বন্ধ করো।
-কেন?
-করো!

ইধা চোখ বন্ধ করলে রুজাইন ওর আঙুলে একটি সোনার রিং পরিয়ে দেয়৷ এরপর ওর হাতে আলতো করে ছুঁয়ে দেয় নিজের ঠোঁট। ইধা চোখ খুলে। রিংটি দেখে অবাক হয় ও। রুজাইন বলল, এটা সবসময় হাতে রাখবে।
-এটা আমি নিতে পারি না।
-কেন?
-সোনার জিনিস এইটা!
-তো! আমার ভালোবাসার মানুষকে দিলাম।

ইধা কিছু বলতে চাইলে ওকে সুযোগ দিলো না রুজাইন। সাদ্দাম ও মাইশাকে ডেকে কেক কেটে নিলো।

এরপর সবাই খেতে বসলো। ইধা যেন এখনো ঘোরের মধ্যে আছে৷ এত ভালোবাসা সইবে তো ওর কপালে!

-কী ব্যাপার আশা? কী বলবে বলো ডেকেছ সেই কবে! এখনো বলছ না কিছুই।

শারমিন আক্তারের উদ্দেশ্যে আশা বললেন, আসলে ভাবী কীভাবে যে বলব বিষয়টা!
-কিছু লাগবে তোমার? সংকোচ ছাড়াই বলো।
-আমার না। তোমার লাগবে।
-আমার!
-হু। তোমার সতর্ক হওয়া লাগবে।
-কী বিষয়ে?
-রুজাইনের।
-খুলে বলো কী বলতে চাইছ।
-রুজাইন আর ইধাকে এক রিকশায় দেখেছি আমি। গতকাল থেকেই কথাটি বলতে চাচ্ছিলাম তোমাকে৷ কিন্তু সাহস পাচ্ছিলাম না।

শারমিন আক্তার হেসে ফেললেন। আশামনি বলল, হাসছ তুমি?
-একই পথে দেখা হয়ে কেউ কাউকে ডেকে রিকশায় নিয়েছে হয়তো।
-সাধারণ ভাবে নিচ্ছ তুমি। আমি ভাবছি অন্যকিছু।
-কী?
-সেদিন ইধার জন্যই আমার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করলে ও দেখলে না?
-ইধা মাইশার বান্ধবী বলে। ওদের রুজাইন বোনের মতো দেখতো আগে থেকেই।
-আমার বলা প্রয়োজন মনে হয়েছে বললাম। বাকিটা তোমার উপরে।

আশামনি রুম থেকে বেরুলো। শারমিন আক্তারের কপালে চিন্তার ভাজ। আশাকে কিছু বুঝতে না দিলেও তার কথায় চিন্তিত। ইধার জন্য ভালোবাসা কাজ করে রুজাইনের মনে? এমন কিছু যেন না হয়৷ এখন থেকেই নজরে রাখতে হবে রুজাইনকে। একমাত্র ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে হেলাফেলা তিনি করবেন না।
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here