প্রার্থনায় রবে তুমি #পর্ব ২২ #Saji Afroz

0
69

#প্রার্থনায় রবে তুমি
#পর্ব ২২
#Saji Afroz

সাদ্দামের বাড়ি থেকে আসার পর থেকেই রুজাইনের সঙ্গে কথাবার্তা কম বলছে ইধা। এমনকি কলেজ গিয়েও ওর সঙ্গে দেখা ইধা করেনি৷ মাইশার সাথে বাড়ি ফিরে এসেছে। রুজাইন দেখা করার কথা বললেও ব্যস্ততা দেখিয়ে এড়িয়ে গেছে।
আতিয়াতকে পড়াতে এসেও কথা বলার সুযোগ পায়নি।
ইধার এরূপ আচরণে চিন্তিত রুজাইন।
আজ ইধার ক্লাস নেই। আর এই সময়ে ওর বাসায় মাইশা ছাড়া কেউ নেই। রুজাইন ঠিক করে, ও দেখা করবে ইধার সঙ্গে। তাই ও মাইশাকে ফোনকল দিয়ে এখানে আসবে জানায়।
মাইশা না করতে পারে না। আসার অনুমতি দেয় ও। রুজাইন আসে। সোজা এসে পড়ে ইধার রুমে।
ইধা ইউটিউবে নাটক দেখছিল। হঠাৎ রুজাইনকে দেখে চমকায় ও।
পাশে রাখা ওড়নাটা শরীরে প্যাচিয়ে বলল, তুমি এখানে?
-আমাকে ইগনোর করে তুমি এখানে আরামে বসে নাটক দেখছ!
-ইগনোর কখন করলাম?
-করোনি!

আমতাআমতা করে ইধা বলল, যখন তখন এভাবে এসো না এখানে। মাইশা কী ভাববে বলো তো!
-কিছুই ভাববে না। তুমিই একটু বেশি ভাবো।
-কারণ এইটা আমার বাসা না।
-ভাড়া যেহেতু দাও বাসা তোমারও।
-উহু! কী বলতে এসেছ বলো।
-আমাকে কষ্টে রেখে নিজে কী করতে এসেছ দেখতে এসেছি।
-কী কষ্টে রাখলাম?
-ফোনে কথা বলো না, দেখা দাও না। হয়েছে কী তোমার?
-জানতে চাও কী হয়েছে?
-জানতেই এলাম।

ইধা একটু থেমে বলল, সেদিনের ঘটনার জন্য আমি অনেক লজ্জিত। ওতটা ঘনিষ্ঠ হওয়া মোটেও উচিত হয়নি।

রুজাইন এইবার যেন ব্যাপারটা বুঝতে পারলো।
ও ইধার পাশে এসে বলল, ওই ঘটনার জন্য আমাকে দোষী মনে করে দূরে সরে থাকছ?
-তোমাকে নয়। নিজেকে! বিয়ের আগে ওসব করা ঠিক হয়নি।
-ওকে ফাইন! তুমি যদি বলো ঠিক হয়নি তবে হয়নি। আর এমনটা হবে না। আমি দু:খিত।
-দেখো বিষয়টা অন্যভাবে নিও না। আমাদের ফিউচারে কী হবে আমরা জানি না।
-আমি জানি। ফিউচারে আমরা হাজবেন্ড ওয়াইফ হবই।
-এখনো হইনি। তাই আমাদের থেমে যেতে হয়েছে। মাইশা আর সাদ্দাম ভাইকে কিন্তু থামতে হয়নি। বুয়া আসার পরেও ওরা ঘন্টা খানেক ওই রুমেই ছিল। কেন জানো? ওদের সম্পর্ক পবিত্র।
-তবে আমরাও বিয়ে করে নিই?
-কিছুই করতে চাই না। দুই পরিবারকে না জানিয়ে কিছুই না। ভুল আমাদের দু’জনেরই। যা এখন থেকেই সংশোধন করতে হবে।
-তুমি কী চাও বলো?
-মিষ্ট একটা প্রেমের সম্পর্ক আমাদের আছে। ওটাই থাক। যে ভুলটা করেছি আমরা সেটা যেন আর না করি। আবেগকে সব অবস্থায় যেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
-তাই হবে। এই বিষয়টা আমাকে খুলে বললেই বুঝতাম।
-কীভাবে বলব বুঝছিলাম না। যদি ভুল বুঝতে?
-তোমার অনুভূতিকে যদি বুঝতেই না পারি তবে ভালোবাসার দাবি কীভাবে করি বলো?

ইধা মৃদু হাসে। রুজাইন বিদায় জানিয়ে বাসায় চলে আসে। এখন মনের মাঝে শান্তি অনুভব করছে ও।

সন্ধ্যা সাতটা….
সামনে পরীক্ষা। তাই মন দিয়ে পড়াশোনা করছে ও। মাইশাও ওর পাশে রয়েছে। সেও পড়তেই ব্যস্ত। কলিংবেলের শব্দ শুনতে পান মরিয়ম জান্নাত। তিনি দরজা খুলে দেখা পান শারমিন আক্তারের। সালাম জানিয়ে ভেতরে আসতে বলেন তাকে।
তিনি ভেতরে এসে বললেন, ইধা কোথায়?
-রুমে আছে। পড়ছে। আপনি বসুন না!
-বসতে আসিনি। ওর সঙ্গে আমার দরকার আছে।

গম্ভীরমুখেই কথাটি বললেন তিনি। মরিয়ম জান্নাতের কপালে পড়ে চিন্তার ভাজ। তিনি বললেন, কিছু হয়েছে কী?
-ওকেই বলব।
-আচ্ছা আমি ডেকে দিচ্ছি।
-আমিই যাই?
-নিশ্চয়।

তিনি ইধার রুমে আসেন। মাইশাকে বাইরে যেতে বলেন। কোনো কথাবার্তা ছাড়া শুধু যাওয়ার কথা শুনেই ঘাবড়ে যায় মাইশা। না চাইতেও ইধাকে একা রেখে বেরুতে হয় ওকে। কারণ শারমিন আক্তার সম্পর্কে তার খালা শাশুড়ী হোন।
আর এই বাড়ির মালকিন তিনি।
মাইশা রুমের বাইরে আসতেই মরিয়ম জান্নাত বললেন, কী হলো হঠাৎ?
-বুঝতে পারছি না।

মা কে কথাটি বললেও মাইশা ঘাবড়ে আছে। ওদের সম্পর্কের বিষয়ে জানলেন না তো তিনি!

ইধা শক্ত হয়ে নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। শারমিন আক্তার বললেন-
যা ভাবছ তাই। তোমার আর রুজাইনের বিষয়ে আমি জেনে গেছি।

ইধার চারপাশে ঝাপসা হয়ে আসছে। ভয়ে মুহুর্তের মধ্যেই গলা শুকিয়ে যায় ওর৷ ও মাথা নিচু করে ফেললো।
শারমিন আক্তার বললেন-
অনেক দিন ধরেই সন্দেহ করছিলাম তোমাদের। তাই নজর রেখেছিলাম। প্রমাণস্বরূপ এলাম আজ। প্রতিটা ফ্লোরে এখানে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে। চেক করেছি আমি। তোমাদের অনেকদিনের কর্মকান্ড দেখলাম। হাত ধরে সিড়ি বেয়ে উঠা, একই সময়ে ছাদে উঠে সময় কাটানো, আবার কখনো রুজাইন এটা ওটা এনে দরজায় তোমাকে দিয়ে যাওয়া। সবই দেখেছি আমি। এসব তো কেবল বন্ধুত্ব নয়। তাই না?

ইধা কিছু বলতে পারে না। তিনি বললেন, নীরবতা সম্মতিকে বোঝায়। অবশ্য তুমি মিথ্যে বলেও পার পাবে না।

এইবারও কিছু বলতে পারে না ইধা। তিনি ইধার কাছে এসে গম্ভীরকণ্ঠে বললেন-
আমি চাই এতটুকুতেই থেমে যাও তুমি। এক মাসের মধ্যে এই বাসা ছেড়েও চলে যাবে। আমার ছেলের জীবনে তোমার ছায়াও দেখতে চাই না।

এইবারও ইধা কিছু না বললে তিনি বললেন-
দেখো আমি চাই না এসব জানাজানি হোক। বাসায় তুমি যা খুশি বলে দাও। বাট আমার ছেলেকে নিয়ে কোনো তামাশা আমি চাই না। আতিয়াতকেও পড়াতে তোমার যেতে হবে না। এবং সেটা এই মুহুর্ত থেকেই। আমার একমাত্র ছেলে রুজাইন। ওকে নিয়ে অনেক আশা আমার। তুমি সেটা ভঙ্গ করো আমি মানতে পারব না। আর সেটা যদি করো, আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।

এই বলে তিনি হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলেন। মরিয়ম জান্নাতের সঙ্গেও দেখা তিনি করলেন না। তাই মরিয়ম জান্নাত ইধার কাছে এসে বললেন, কী হয়েছে ইধা বলো তো?

ইধা সত্যটা লুকিয়ে বলল, আতিয়াতের মা এর কোন আত্মীয় ওকে পড়াবে। তাই আমাকে না যেতে বলেছেন। এই ব্যাপারে আমাকে কিছু মনে না করতে বললেন।

তিনি বললেন, এই ব্যাপার! আমি ভাবলাম অন্যকিছু!

তিনি চলে গেলে মাইশা ইধার পাশে এসে বলল, জেনে গেছে উনি সব?

ইধা হ্যাঁ সূচকভাবে মাথা নাড়ে। মাইশা অবাক হয়ে বলল, কীভাবে?
-সিসিটিভি ফুটেজ।
-আর কী বললেন?
-এক মাসের মধ্যে বাসা ছেড়ে দিতে।

মাইশা একটু থেমে বলল, বাসা ছাড়তে হলে আমরাও ছাড়ব। তুই চিন্তা করিস না।

এইবার কান্না করে ফেললো ইধা। ও বলল, কিন্তু রুজাইনকে ছাড়ব কীভাবে? ভালোবেসে ফেলেছি ওকে।

ওর অবস্থা বুঝতে পেরে মাইশা বলল, সময় এসে গেছে ফাইট করার। দেখার পালা রুজাইন কী করে!

শারমিন আক্তার সবেমাত্র এশারের নামাজ আদায় করে উঠলেন। পেছনে ফিরেই রুজাইনকে দেখতে পান তিনি। হিজাবটা খুলতে খুলতে শান্তভাবেই বললেন, কিছু বলবে?

রুজাইনকে সবকিছু জানিয়েছে ইধা। মেয়েটা ভেঙে পড়েছে অনেক। ওর হাতে মাত্র এক মাস সময় রয়েছে। তারপর এই বাড়ি ছাড়তে হবে। এটা বলতেই কেঁদে ফেলেছে।
রুজাইন ওর কান্না সহ্য করতে পারলো না। চুপ করে বসে ও থাকতে পারেনি। তাই এসেছে মা এর কাছে।
রুজাইন বলল, তুমি সবটা জেনেছ আম্মু। ইধাকে তুমি কী বলেছ আমায় বলেছে। প্লিজ এতটা কঠোর না হও!

তিনি বিছানার উপরে বসে বললেন, কঠোর হয়েছি? তোমার কী মনেহয় রুজাইন? আমার কী করা উচিত? তালি বাজিয়ে তোমাদের সম্মাননা প্রদান করা উচিত?
-এমনটা আমি বলছি না।
-তবে তুমি কেমনটা আশা করছ?
-মাইশার ভরসায় ইধা এখানে আছে। ওর জন্য একা অন্য কোথাও থাকাটা কষ্টকর হয়ে যাবে।
– দুই দিনের মেয়ের জন্য এতটা ভাবো তুমি? আর যে মা তোমাকে এত কষ্ট করে বড়ো করেছে, তার কথা ভাবো না?
-কাউকে ভালো লাগাটা মনের উপরে তাই না বলো! পারিনি নিজেকে আটকাতে।
-আমার পক্ষে এসব মেনে নেওয়া পসিবল না। বয়সই বা কত তোমার! ক্যারিয়ার পড়ে আছে সামনে। আর ওর সঙ্গে তোমার যায় কোনোভাবে?
-সবার উপরে মানুষ সত্য।
-ওসব নীতিবাক্য। ঠিকই সবাই জাত বিচার করে। আমরা একটা উন্নত সমাজের মানুষ। আর ওর পরিচয় দিতে হয় নানা বাড়ির নাম নিয়ে। এটা তোমার বাবা শুনলেও মানবে না।
-তুমি রাজি করাবে।
-তোমার লজ্জা করছে না এই বয়সে এসব বলতে? কোনো অভাব তোমার আমরা হতে দিইনি। তাই বলে কী এত তাড়াতাড়ি বউ প্রয়োজন হয়ে গেল তোমার?
-কীসব বলছ?
-তুমি বেহায়া হতে পারো আর আমি উচিত কথা বললেই দোষ?

রুজাইন নিশ্চুপ হয়ে যায়। তিনি কড়াভাবে বললেন, তোমার বাবার কানে এখুনি কিছু আমি দিচ্ছি না। কিন্তু তুমি না থামলে দিতে দেরী করব না। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমাকে খুব তাড়াতাড়ি বাইরের দেশে পাঠিয়ে দেব। পড়াশোনার প্রস্তুতি এখন থেকে ওভাবেই নাও। ইধা ফিদার কথা ফেলো মাথা থেকে। লাইফে উন্নতি করলে ওমন হাজারটা ইধা ঘুরবে পেছনে।

মা এর কথা শুনে চিন্তিত হয়ে পড়লো রুজাইন। তিনি এখুনি ওদের সম্পর্ক মেনে নিতে রাজি নয়, ইধা হিন্দু ধর্মের মেয়ে জানলে কী করবেন তিনি!
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here