প্রার্থনায় রবে তুমি #পর্ব ২৩ #Saji Afroz

0
63

#প্রার্থনায় রবে তুমি
#পর্ব ২৩
#Saji Afroz

ক’টা দিন কেটে যায়। শারমিন আক্তার তার সিদ্ধান্তে রয়েছেন অচল। তাই ইধারও বাধ্য হয়ে এই বাসা ছাড়ার কথা ভাবতে হয়। ওকে সমর্থন করে রুজাইন। ওর জন্য নিজে বাসা দেখতে শুরু করে। যদিও মাইশা এই বাসা ছাড়তে রাজি ছিল ইধার জন্যে, কিন্তু এরূপ আচরণ ওকে করতে না করে ইধা। ও জানায়, মা কে এখানে নিয়ে আসবে। মা মেয়ে ছোট্ট একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকবে। মা আসবে শুনবে মাইশাও আর কিছু বলল না। তবে ইধার জন্য এখন থেকেই হৃদয়টা কাঁদছে ওর। রুজাইন ইধার জীবনে না এলে হয়তো এসব ঘটতো না। এসবের জন্য রুজাইনকে দায়ী করে মাইশা৷ অনিশ্চিত একটা জীবনে জড়িয়ে গেল ইধা। জানে না সামনে কী হতে চলেছে!

সন্ধ্যায় রুজাইন বাসায় আসতেই শারমিন আক্তার বললেন, বাড়িতে কম বাইরে বেশি থাকো। আবার যখন তুমি বাসায় থাকো না, ওই মেয়েও থাকে না। কী ব্যাপার?

রুজাইন শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলল, ওর জন্য বাসা খুঁজছি। সময় এর আগে এই বাসা ওর ছাড়তে হবে।

তিনি অবাক হয়ে বললেন, তুমি কেন খুঁজছ?
-একা কীভাবে ছেড়ে দিই? আমার জন্যই ওর এই অবস্থা।
-তোমার ওসব করতে হবে না। প্রয়োজনে আমি ব্যবস্থা করে দেব।
-আমি সহানুভূতি দেখাচ্ছি না ইধাকে। আমার কাছ থেকে এটা ওর প্রাপ্য।
-কী বোঝাতে চাচ্ছ?
-এটাই বোঝাতে চাই, বাসা থেকে দূরে গেলেও মন থেকে যাবে না। কখনোই না।
-তার মানে ওর সঙ্গে সম্পর্ক তুমি রাখবে?

রুজাইন মৃদু হেসে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। ওর হাসির রহস্য যেন বুঝতে কষ্ট হচ্ছে শারমিন আক্তারের। তখনি আশামনি এসে বললেন, হলো তো? সর্বনাশ ঘটিয়ে দিলো ওই মেয়ে!

শারমীন আক্তার আমতাআমতা করে বললেন, কিসের কথা বলছ তুমি?
-সব শুনেছি আমি ভাবী। তাছাডা আগে থেকেই সন্দেহ আমি করেছিলাম। তুমিই আমাকে বিশ্বাস করোনি।

আর লুকিয়ে লাভ নেই বুঝতে পেরে তিনি বললেন, তোমার ভাই কে এখুনি কিছু বলো না।
-সে আমি বলব না। কিন্তু শান্তও থাকব না। কতবড়ো সাহস ওই মেয়ের! আমাদের ছেলেকে ফাঁসিয়েছে!
-সেটাই ভাবছি।
-আঙুল বাঁকা করার সময় চলে এসেছে।
-কী করতে পারি?
-ইধার পরিবারে ফোন করে এসব জানাও।
-কিন্তু নাম্বার?
-মরিয়ম জান্নাত যখন থাকবে না, যেও ওর বাসায়। ফোন নিয়ে সরাসরি ফোনকল দিয়ে দেবে। এই মেয়েকে থামানোর এই রাস্তা আছে এখন।

আশামনির পরামর্শে পরের দিনই ইধার কাছে এসে উপস্থিত হলেন শারমিন আক্তার। মরিয়ম জান্নাত বাসায় নেই। মাইশা রয়েছে৷ ওরা সবে ক্লাস থেকে এসেছে। শারমিন আক্তারকে দেখে মাইশা তাকে বসতে বললেন। তিনি বললেন, মাইশা! অন্তত তোমার থেকে এটা আশা আমি করিনি৷ রুজাইন তোমাকে বোন বলে। ভাইকে সঠিক পরামর্শ প্রদান করা তোমার দায়িত্ব ছিল।

মাইশা নরমস্বরে বলল, রুজাইন ভাইকে অনেকবার বলেছিলাম আমি। তিনিই ইধাকে রাজি করিয়েছে। আমি মোটেও এসবের পক্ষে ছিলাম না। কিন্তু রুজাইন ভাই এর কান্না দেখে ভেবেছি, সত্যিই হয়তো ভালোবাসে ইধাকে।

ব্যঙ্গ সুরে তিনি বললেন, ভালোবাসা! সেই বয়স ওর হয়েছে নাকি?

ইধার দিকে তাকিয়ে বললেন, এই মেয়ে? তোমার মা কে ফোনকল দাও দেখি।

ইধা ভাঙা গলায় বলল, কেন?
-দিতে বলেছি দাও!

মাইশা বলল, প্লিজ! রাগের মাথায় কিছু করবেন না।
-মাইশা! সম্পর্কে আমার বউ মা হও তুমি। সম্পর্কের খাতিরে হলেও চুপ থাকো। নাহলে সাদ্দামের সঙ্গে কথা বলতে হবে আমার।

মাইশা নিশ্চুপ হয়ে যায়। ইধার মা কে ওর ছোটো মামা নতুন ফোন পাঠিয়েছে। সেই ফোনেই ফোনকল দেয় ইধা। শারমিন আক্তার ওকে যেভাবে চেপে ধরেছেন, না করেও উপায় ছিল না।
ইধা ফোন দিতেই তিনি রিসিভ করে বললেন, কেমন আছিস মা?

শারমিন আক্তারের ইশারা পেয়ে ইধা বলল, মা? আমার বাড়ির মালকিন তোমার সঙ্গে কথা বলতে চায়।
-কেন?

ইধা কিছু বলার আগেই শারমিন আক্তার ফোন কেড়ে নেন। তিনি বললেন, আসসালামু আলাইকুম। আমিই ইধার বাড়ির মালকিন।

ওপাশ থেকে ইধার মা বললেন, নমস্কার। কেমন আছেন?

এটা শুনেই বিস্ময় এর শেষ পর্যায়ে চলে গেলেন শারমিন আক্তার। তিনি বললেন, নমস্কার মানে! এটা কেন বলছেন আপনি? এটা তো হিন্দুরা বলে!

ইধা ও মাইশা একে অপরের মুখের দিকে তাকালো।
ফোনের ওপাশ থেকে ইধার মা বললেন, জি হিন্দুরা বলে। আর আমি হিন্দু-ই।

তিনি কাঁপা কণ্ঠে বললেন, আর ইধা?
-আমি হিন্ধু হলে ইধাও হিন্দু হবে স্বাভাবিক। আপনি এতদিন জানতেন না?

চারপাশে ঝাপসা দেখছেন শারমিন আক্তার। কিছু বলার শক্তিও যেন হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। ফোনটা রেখে ছুটে আসেন নিজের ঘরে। মাইশা পেছন থেকে ডাকলেও তিনি শুনলেন না।
বাসায় এসে রুজাইনকে ডাকতে শুরু করে। ডাকতে ডাকতেই
মুহুর্তেই জ্ঞান হারান শারমিন আক্তার।

জ্ঞান ফিরলে রুজাইনকে পাশে দেখেই তিনি বললেন, ইধা হিন্দু! এটা জানিস তুই?

আশামনি চ্যাচিয়ে বললেন, কী বলছ ভাবী?
-সত্যি বলছি।
-এতদিন ভাবতাম এই মেয়ের পরিচয় ঠিক নেই। এখন দেখছি জাতও ঠিক নেই।

রুজাইন বলল, ইধাকে নিয়ে ওসব বলো না। হিন্দু ও ঠিকই কিন্তু মানুষ তো!

শারমিন আক্তার শোয়া থেকে উঠে বললেন, মুসলিম ধর্মে মেয়ের অভাব পড়েছে যে হিন্দু মেয়েকে পছন্দ করতে গেলি?
-ও হিন্দু সেটা না জেনেও তোমার সমস্যা ছিল।
-এখন আরও বেশি সমস্যা৷ এটা কোনোভাবেই সম্ভব না।
-তুমি এসব বলে আমাকে আরও বেশি উত্তেজিত করে তুলছ আম্মু।
-উত্তেজিত তুই হচ্ছিস! তামাশাও করবি তুই, উত্তেজিতও তুই হবি?
-আমি ভালোবেসেছি। এটা কোনো তামাশা না। যখন বেসেছি তখন আমিও জানতাম না ও হিন্দু৷ জানার পরেও আমি সরে যাই নি৷ কারণ আমি সত্যিকারের ভালোবাসি। আর এমন একটা দিন আসবে এই নিয়ে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলাম আমি।
-তাই! কী প্রস্তুতি নিয়েছিস শুনি?
-সব ছেড়ে ইধার পাশে থাকার।

কথাটি শুনে থমকে গেলেন শারমিন আক্তার।
রুজাইন চলে যেতে চাইলে তিনি বললেন, ইধা কী পারবে? ওর ধর্ম ত্যাগ করে তোকে বেছে নিতে?

পেছনে ফিরে রুজাইন বলল, আম্মু!
-পারবে ইধা?
-আমি ওকে এমন কোনো শর্ত দেব না বলেছিলাম।
-পরিস্থিতি এখন আগের মতো নেই। তুই ওর জন্যে আমাদেরও ত্যাগ করতে রাজি, কিন্তু ও ধর্ম ত্যাগ করতে পারবে না?

আশামনি বললেন, কীসব বলছ ভাবী? মুসলমান হয়েও লাভ কী! মানসম্মান কিছু থাকবে আমাদের?
-তুমি ওত ভেবো না। আমি আমার ছেলেকে বলছি, ইধা ধর্ম ত্যাগ করতে রাজি হলে আমি আগাবো ওদের বিষয়ে।

এই বলে তিনি রুমে ফিরে যান। রুজাইনের কপালে পড়ে চিন্তার ভাজ। ওর পরিবার যে রাজি হওয়ার জন্য কোনো অপশন দেবে এটাও ওর মানতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ইধা! ওকে এই কথা কীভাবে বলবে রুজাইন!

রুজাইন রুমে এসে ফোন হাতে নেয়। ইধার অনেক ফোনকল এসেছে। কোলাহলে শোনা যায়নি। রুজাইন ফোনকল দিতেই রিসিভ করলো ইধা। ও ব্যস্ত হয়ে বলল, আন্টি সব জেনে গেছেন। আমি হিন্দু সেটাও। উনি কী বললেন তোমায়?
-এখানে এসে জ্ঞান হারিয়েছিলেন।
-বলো কী!
-হু। অনেক কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আমায় বলল, তুমি আমার জন্য ধর্ম ত্যাগ করতে পারবে কি-না।

এই কথা শুনে নিশ্চুপ হয়ে যায় ইধা৷ রুজাইন সময় না নিয়েই বলল, এটা আম্মুর কথা। আমার নয়। এমনটা আমি বলছিও না।
-ধর্ম ত্যাগ করলে আমায় মেনে নেবেন তিনি?
-এমনটা বলেছেন।

আবারও নিশ্চুপ ইধা। রুজাইন বলল, ওসব ভেবো না। যেমন চলছে চলতে দাও। সব অবস্থায় আমি তোমার সাথে আছি। বাসাটা চেইঞ্জ করো। তোমার মা কে আনো। প্রয়োজনে তাকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করে নেব আমরা। আমি তোমার জন্য ফ্যামিলি আর ক্যারিয়ার কেন! জীবন ত্যাগ করতেও সর্বদা প্রস্তুত।
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here