প্রার্থনায় রবে তুমি #পর্ব ৪ #Saji Afroz

0
116

#প্রার্থনায় রবে তুমি
#পর্ব ৪
#Saji Afroz

কলেজ থেকে আসার পথে টাটকা লাল শাক দেখে কিনে নিয়েছিল মাইশা। বিকেলে দুই বান্ধবী শাক পরিষ্কার করে নেয়৷ এরপর মাইশা তা রান্না করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। চুলোয় রান্না বসিয়ে দেয় ও। ওর ফোন বাজে। ফখরুলের ফোন এসেছে। মাইশা রিসিভ করে না। বারবার রিং হতে থাকে৷ ইধা এসে বলল, ফখরু ভাই নাকি?
-একদম ওকে আমার দেওয়া ওই আদর মাখা নামে আর ডাকবি না। ফখরুল ডাকবি। না না! ফখরুলও না।
-তবে?
-ডাকবি ফখরুইল্লা।

ওর কথা শুনে ইধা হাসতে হাসতে বলল, ফখরুইল্লা! জোশ একটা নাম দিলি।
-আসলেই!

মাইশা পাতিলের ঢাকনা সরিয়ে শাক মুখে দিয়ে দেখলো লবণের পরিমাণ ঠিক আছে কিনা।
মুখে দিয়েই ও বলল, বাজে!
-কী হলো?
-লবণ বেশি হয়ে গেছে। আজ আম্মু আবারও বকুনি দেবে। বলবে সামান্য শাকও ঠিকমতো রান্না করতে জানি না।
-উহু! তোকে বলেছিলাম আমি করি। আমাকে তো কোনো কাজই করতে দিস না তুই।
-এখন কী হবে সেটা ভাবছি।
-যা হওয়ার হয়েছে…

ইধার কথা শেষ হওয়ার আগেই মাইশা এক মগ পানি নিয়ে ঢেলে দেয় শাকের পাতিলে।
ইধা ব্যস্ত হয়ে বলে উঠলো-
আরে আরে কী করছিস তুই! এভাবে লাল শাকে কেউ পানি দেয় নাকি!

মাইশা কথার উত্তর না দিয়ে পাতিলটা নাড়াচাড়া করে শাক বাদে বেসিনে সমস্ত পানি ফেলে দেয়।
এরপর অল্প শাক মুখে দিয়ে বলল, হুম পারফেক্ট!
-কী পারফেক্ট?
-পানি দিয়ে লবণের পরিমাণ কমিয়ে দিলাম।

ওর কাণ্ড দেখে ইধা হাসতে হাসতে বলল, এইজন্যই আন্টি তোর রান্না মজা নেই বলে। এভাবে রান্নার স্বাদ থাকে!
-লবণের পরিমাণ বেশি না থাকলেই হলো! এইবার বল বিকেলে কী খাবি?
-তুই সর। আমি নুডলস করব আজ।

মিলিকে নিয়ে বিকেলের নাস্তা সেরে ওরা ছাদে আসলো।
আজ ওরা ফুটবল নিয়ে এসেছে৷ মিলিকে নিয়ে ওরা খেলছে। তবে খুব সাবধানে৷ কারণ আশেপাশে গাছের টব রয়েছে।
খেলার সময়ই ইধা বলল, মাইশা? আমার জন্য টিউশনি দেখছিস তুই?
-দেখছিরে। চিন্তা করিস না। ম্যানেজ হবে।
-অন্তত পনেরো হাজার টিউশনিতে আসতে হবে আমার। কয়েকটা প্রয়োজন।
-হবে হবে৷ এখন খেলায় মন দে তো!

খেলার এক পর্যায়ে মাইশার ফোন বেজে উঠে। অপরিচিত নাম্বার দেখে রিসিভ করে ও। ওপাশ থেকে ফখরুল বলে উঠলো-
অন্য ছেলে মনে করেই ফোনটা রিসিভ করলি।

ওর কণ্ঠ শুনে মাইশা বলল, হ্যাঁ আমার আধ্যাত্মিক শক্তি আছে যে ফোনের ওপাশে কে আছে এটা বলতে পারব!
-আমার ফোন জানলে নিশ্চয় রিসিভ করতি না।
-করতাম না।
-কেন? আজ যে হিরো গিরি দেখালো তার সঙ্গেই নতুন চক্কর বুঝি!
-একদম উল্টাপাল্টা কথা বলবে না।
-কী করবি তুই!

মাইশা কিছু বলার আগেই রুজাইনকে দেখতে পায়। রুজাইন ওদের কথা শুনেছে। ওকে ইশারায় জানতে চায়, ফখরুল কি-না। হ্যাঁ সূচকভাবে মাথা নাড়লে ওকে ফোনটা দিতে বলে। মাইশাও তাই করে। রুজাইন ফোন কানে নিলে শুনতে পায় ফখরুল বলছে, তোকে আর তোর ওই হিরোকে দেখে দেব আমি।
-কী দেখবে?

রুজাইনের কণ্ঠ শুনে অবাক হয়ে ফখরুল বলল, কে?
-আমিই সেই হিরো। তবে ভুল বললে৷ মাইশার হিরো আমি নই। ওর ভাই হই আমি। সবসময় ওর পাশে আমি আছি৷ দেখি তুমি কী করতে পারো।

ফোনকল রেখে ফোনটা মাইশার দিকে এগিয়ে দেয় রুজাইন। শুকনো মুখে মাইশা ওকে ধন্যবাদ জানালে রুজাইন বলল, মন খারাপের কারণ নেই। আমি আছি তোমার সঙ্গে।
-হু।

ইধাকে পাশে দেখে রুজাইন বলল, তোমার কী খবর?
-এইতো চলছে।

মাইশা বলল, একটা কথা ছিল।
-বলোনা?
-ইধার কয়েকটা টিউশনির খুব দরকার। আপনি স্থানীয়, চেনাজানা অনেক আছে। জোগাড় করতে পারবেন কী?

ইধা বলে উঠলো, উনাকে কেন অহেতুক…

ও কথা শেষ করার আগেই রুজাইন বলল, আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব।

আজানের সময় হয়ে এলে নিচে নেমে আসে ওরা৷ রুজাইনও বাসায় এসে নামাজ আদায় করে নেয়। আজ ওর বাসায় মেহমান এসেছে। ওর ফুপি। এখন ঠিক মেহমানও বলা যায় না, কারণ ওরা কয়েকমাস এখানেই থাকবে।
ওরা হুট করেই গ্রাম থেকে এখানে চলে আসে। শশুরবাড়ির লোকের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার কারণেই আসা।
রুজাইনদের তিন তলায় একটা ফ্ল্যাট খালি হবে। তবে সেটা আরও দুই মাস পরে। দুই মাস অবধি ওরা এখানেই থাকবে। কারণ ফুপির স্বামী দেশের বাইরে থাকে। বাইরে একা থাকাটা তার জন্যে অসুবিধে। রুজাইনের বাবাও দেশের বাইরে থাকে৷ এখানে কেবল রুজাইন ও ওর মা রানিয়া বেগম থাকেন। তাই এখানেও কোনো অসুবিধে নেই৷ বরং ওর ফুপি আশা তার মেয়েকে নিয়ে থাকলে বাড়িটাও ক’দিন ভরা থাকবে।

নামাজ আদায় করে ড্রয়িংরুমে আসে রুজাইন। মা হরেক রকমের নাস্তা বানিয়েছে আজ৷ আশা রুজাইনকে দেখে বলল, বসো বসো। কেমন চলছে দিনকাল বলো?

ফুপির বয়স তেমন হয়নি বলা যায়। ওর বাবা-চাচার একমাত্র ছোটো বোন আশামনি। তাই সবার বেশ আদরের।
আশামনির সঙ্গে গল্প করার এক পর্যায়ে তিনি জানায়, তার মেয়ের জন্য একজন শিক্ষিকা প্রয়োজন। রুজাইনের চেনাজানা কেউ আছে কি-না!
এই যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! রুজাইন সঙ্গে সঙ্গেই জবাব দিলো, আছে। আতিয়াতের জন্য ভালো শিক্ষিকা আছে।

রানিয়া বেগম বললেন, তাই! কে?
-ওই যে পঞ্চম তলায় মাইশা থাকে না?
-ওহ! ভালো মেয়ে। স্কুল শিক্ষিকার মেয়ে ও। নিজেও টিউশনি করায়। আমার মনে ছিল না ওর কথা।
-হুম ও ভালো মেয়ে। তবে আমি ওর কথা বলছি না। ওর হাতে সময় নেই।
-তবে?
-ওদের সঙ্গে সাবলেট যে থাকে মানে ওর বান্ধবী ইধার কথা বলছি।
-আমাকে বলেছিল সাবলেটের কথা। ভাড়া এক হাজার বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু মেয়েটার সঙ্গে পরিচয় হয়নি।
-মাইশা আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। সে বলেছে ইধা পড়াতে চায়। ইধাও মাইশার কলেজের একই ডিপার্টমেন্টর ছাত্রী।
-তাহলে ভালোই হবে। আসতে বল বাসায়। দেখি কথাবার্তা বলে কেমন চায় বেতন।
-আরে কথা ফাইনাল আমার সঙ্গেই করো। একেবারে পড়াতেই আসবে। আতিয়াত ক্লাস ফাইভের ছাত্রী তো? পাঁচ হাজার দিলেই হবে।

আশালতা বলল, বেশি হয়ে যাচ্ছে না?
-এর কমে এই এলাকায় পাবে বলে আমার মনে হয় না। এটাই বাজেট রাখো। তবে আমি আরও কমাতে বলে দেখব।

রানিয়া বেগমও তাল মিলিয়ে বললেন, সব সাবজেক্ট পাঁচ তো নেবে যে কেউই। আরও বেশি চায়তে পারে।

আশালতা একটু ভেবে বলল, পাঁচ হাজারেই যেন রাজি হয় দেখ বাবা।

রুজাইন নিজের রুমে আসে। ও কয়েকজন বন্ধুকে ফোন করে টিউশনি খোঁজার কথা বলে। ভাগ্যক্রমে এই ফোনকলেই আরেকটা পেয়ে যায়। বন্ধুর ভাইকে পড়াতে হবে। স্যালারি চার হাজার দেবে জানায়। রুজাইন ওকে জানাবে জানিয়ে ফোন রাখে। এরপর দারোয়ানকে ফোনকল দিয়ে বলল, মাইশা বা ইধাকে দেখলে একটা কথা জানাতে হবে।
-কী?
-ইধার জন্য টিউশনি জোগাড় হয়েছে। ইধার ফোন নাম্বারটা যেন তোমায় দেয়। সেই বিষয়ে কথা বলার আছে।
-আচ্ছা।

রুজাইন চাইলেই দারোয়ানকে ওদের বাসায় পাঠিয়ে এই খবর জানাতে পারতো৷ ফোন নাম্বারের আশায় এমনটা ও করলো না। এখন শুধু সময় এর অপেক্ষা! ফোন নাম্বার পেলেই ইধার কাছে যাওয়ার আরেকটা ধাপ পার করবে রুজাইন।

-হৃদয়টা ভেঙে আমার চুরমার হয়ে গেল বান্ধবী।

মাইশার কথা শুনে একগাল হেসে ইধা বলল, কেন?
-আমায় বোন বানিয়ে দিলো রুজাইন।
-তোর কী তাকে ভাইয়া থেকে ছাইয়্যা বানানোর ইচ্ছে ছিল নাকি?

মাইশা হেসে বলল, এমন কিছু না। উনার সাথে অন্তত আমার কিছু হওয়া সম্ভব না। কারণ উনি আমার অতীত জানে। অতীত জানে এমন কাউকে জীবনে জড়ানো ঠিক নয়।
-কেন?
-খোঁটা দেবে একদিন হলেও।
-তুই বলছিস জীবনে পরবর্তীতে যে আসবে তাকে এসব জানাবি না?
-জানাতে হবেও না কেন! এমন না আমার বিয়ে হয়েছিল ওর সঙ্গে। একটা রিলেশনশিপই মাত্র।

এটা বলার সঙ্গে সঙ্গেই মাইশার ফোনে একটা মেসেজ আসে। ফোন হাতে থাকায় ও মেসেজটা দেখে। দেখেই আঁতকে উঠে ও৷ এতক্ষণ যে মেয়েটি হাসছিল ওর মুখে নেমে আসে অন্ধকার। কথা বলার শক্তিও যেন ও হারিয়েছে। ইধা হঠাৎ ওকে নিশ্চুপ হয়ে যেতে বলল, কীরে? চুপ হয়ে গেলি কেন হঠাৎ?

মাইশার জবাব না পেয়ে আবারও একই প্রশ্ন করলে নড়ে উঠে মাইশা। আমতাআমতা করে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়িয়ে বলল, কিছু না।

না বললেও ইধা বেশ বুঝতে পারছে কিছু হয়েছে। কিন্তু হয়েছে কী!
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here