প্রেমবিভ্রাট ০৭ তানভীর তুহিন

0
711

প্রেমবিভ্রাট
০৭
তানভীর তুহিন

অল্পকিছু শপিং করেছে দীপ্তি। শপিংয়ের মধ্যে তুহিন কেবল একটা শার্ট নিয়েছে। যেটা দীপ্তি পছন্দ করে কিনে দিয়েছে। ব্ল্যাক এ্যন্ড ব্লু কালারের একটা চেক শার্ট। দীপ্তি আয়েশার কাছে জেনেছিলো তুহিনের ডার্ক ব্লু কালার পছন্দের। তুহিন যে প্লেইন আর চেক শার্টই পড়ে সেটাও আয়েশার কাছ থেকেই জেনেছে সে। শার্টটা তুহিনের পছন্দ হয়েছে। তুহিন বুঝতে পেরেছে দীপ্তি তার পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপারে বেশ ভালই জানে।

শপিং শেষে দুপুর দেড়টার দিকে ওরা দীপ্তির বাড়িতে পৌঁছাল। শশুর-শাশুড়ির সঙ্গে কুষলবিনিময় পর্ব মিটিয়ে নেবার পরেই তুহিন আবিষ্কার করল দীপ্তির একটা বড়ভাইও আছে। নাম আকাশ। বয়সে তুহিনের সমানই হবে। তুহিন ভাবল, কেমন ভাই যে নিজের ছোটবোনের বিয়েতেই ছিলনা? আকাশ এসে জড়িয়ে ধরল তুহিনকে। বয়সে সমবয়সী হলেও সম্পর্কে আকাশ তুহিনের চেয়ে বড়। তুহিন আকাশকে আপনি সম্বোধন করে বলল, ” কেমন আছেন ভাইয়া? ”
আকাশ তুহিনকে থামাল। ” আরে! আমি তোমার সমবয়সী। এত ফর্মালিটির কোন দরকার নেই। তুমি আমায় তুমি করেই ডেকো। চাইলে তুইতোকারিও করতে পারো। আমার কোন অবজেকশন নেই। ” কথার শেষে হাসল আকাশ।
আকাশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাসল তুহিন। ” আচ্ছা। ”

তুহিন সোফায় বসতে বসতে বলল, ” তুমি বিয়ের দিন কোথায় ছিলে? ”
– ” আরে ভাই সে আক্ষেপের কথা আর কী বলব। আমি নেদারল্যান্ড ছিলাম। ফ্লাইট ডিলে হবার কারণে আর আসা হয়নি সেদিন। সেই না আসা নিয়ে দীপ্তি ধুয়ে দিয়েছে আমায়। কথা ছিলো রিসেপশন এ্যটেন্ড করবো। দুর্ভাগ্য! তা-ও পারিনি। ”

বেশকিছুক্ষণ ড্রয়িংরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে তুহিন, আকাশ আর দীপ্তির বাবা। দীপ্তি বাড়িতে ঢোকা মাত্রই উধাও। কোন হদিস নেই দীপ্তির। তুহিনের চোখ দুটো দীপ্তির চেহারার সন্ধানে। বাচ্চাদের মতো একটা আপেল কামড়াতে কামড়াতে ড্রয়িংরুমে ঢুকল দীপ্তি। আপেলের কামড়ানো অংশ চিবোতে চিবোতে বলল, ” আব্বু, ভাইয়া, ওনাকে নিয়ে খেতে এসো। ”

খাওয়াদাওয়া শেষে ওরা এখন দীপ্তির রুমে। খানিক জিরিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। দীপ্তির রুমটা বেশ খুটিয়ে দেখছে তুহিন। খুটিয়ে দেখার মতোই রুমটা। যেকেউ মুগ্ধ হবে। বেশ সৃজনশীল কারুকাজ দিয়ে সাজানো দেয়ালগুলো। তুহিন একটা জিনিস লক্ষ্য করেছে দেয়ালের পেইন্টিং গুলোর মধ্যে প্রায় সব পেইন্টিংই সাইন্স ফিকশনের অথচ দীপ্তি কমার্সের স্টুডেন্ট। ব্যাপারটা বেশ ভাবাচ্ছে তুহিনকে। তুহিন পেইন্টিংগুলো দেখিয়ে দীপ্তিকে জিজ্ঞেস করল, ” কমার্সের স্টুডেন্ট হয়েও সাইন্সের প্রতি এত প্রেম? ”
– ” আরে তেমন কিছু না এমনিই সাইন্স ফিকশন ভালো লাগে আমার। ”
– ” ওহ আচ্ছা। তা দেয়ালের এসব হাতের কাজ কী তোমার? ”
– ” হু, আমার রুমের কাজ আবার কে করবে? ”
– ” এক্সসিলেন্ট! আমার রুমের দেয়ালগুলোও এভাবে সাজিয়ে দিয়ো। ”

দীপ্তি ভ্রু কোঁচকাল। ” একদম আমার রুম, আমার রুম মারাবেন না। ওটা এখন আমারও রুম। ”
– ” হ্যা! হ্যা! তোমার ওই রুমের দেয়াল গুলোও সাজিয়ে দিয়ো। ” তুহিনের পরাস্ত গলা।

রুমের দেয়ালও সাজাব, তোমার জীবনের দেয়ালও সাজাব। কথাটা অন্তর্মনে ভেবেই ঠোঁট চেপে লজ্বারাঙা হাসল দীপ্তি। তার মুখাবয়ব ঢাকা পড়ল লাজের রক্তিম আভায়।

সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরল ওরা। দীপ্তিকে বাসায় নামিয়ে দিয়েই তুহিন এয়ারপোর্টে চলে গেল ওর এক বন্ধুকে সী-অফ করতে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা সেরে রাত আটটা নাগাদ বাসায় পৌঁছোল তুহিন। নিজের রুমে ঢুকেই তুহিনের চক্ষু চড়কগাছ। সারা খাট জুড়ে ছড়ানো জামাকাপড়, খাটের এক কোণে খোলা স্যুটকেস; সে স্যুটকেসের পাশে বসে আনমনে ফোন টিপছে দীপ্তি। নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে তুহিন সবটা বোঝার চেষ্টা করল। কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা সে। দীপ্তি পূর্ণ মনোযোগে ফোনে ব্যস্ত। তুহিনের উপস্থিতি এখনো টের পায়নি সে। ” এসব কী দীপ্তি? জামাকাপড় এভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কেন রেখেছ? ব্যাগ প্যাক করবেনা? ”
– ” আপনি করবেন। ” হেটে তুহিনের সামনে এসে বলল দীপ্তি।

মেয়েটি বড়ই গোলমেলে। তুহিনের ভ্রু কুঁচকে গেল। ” আমি কেন? তুমি করছো না কেন? ”
দীপ্তি মিটমিট করে হাসল। বলল, ” আপনার ব্যাগ প্যাক করা দেখতে ইচ্ছে করছে। তাই আপনি ব্যাগ প্যাক করবেন। ”

এই মেয়ের মাথায় নির্ঘাত কোন গুরুতর ব্যামো-ট্যামো আছে; মনেমনে ভাবল তুহিন। ” তা আমারও তো ইচ্ছে করতে পারে তোমার ব্যাগ প্যাকিং করা দেখতে? ” কথার মাধ্যমে দীপ্তিকে কুপোকাত করার চেষ্টা করল তুহিন।
– ” অত ইচ্ছে-টিচ্ছে করা লাগবে না। কে জানতে চেয়েছে আপনার ইচ্ছের কথা? ব্যাগ আপনিই প্যাক করবেন। ব্যস শেষ! ” কপট রেগে বলল দীপ্তি।

দীপ্তি তর্কপটিয়িসী মেয়ে, গত দুদিনে তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে তুহিন। তাই আর তর্ক না বাড়িয়ে সবটা মেনে নিলো তুহিন। ব্যাগ গোছানোর অসহ্যকর দায়িত্বটা নিজের কাধেই তুলে নিলো সে।

তুহিন বাথরুম ছেড়ে বেরিয়ে তোয়ালেতে মুখ মুছতে মুছতে বলল, ” দীপ্তি খিদে পেয়েছে খুব। চলো ডিনার করে আসি। তারপর ব্যাগ প্যাক করব। ”
– ” ওয়েট, ওয়েট খিদে পেয়েছে মানে? আপনি তো দশটা-এগারটার আগে ডিনার করেন না.. ”
– ” এখন খিদে পেলে কী ডিনার না করে দশটা-এগারটা বাজার অপেক্ষা করব? ”
– ” হ্যা করবেন। চুপচাপ ব্যাগ প্যাকিং শুরু করুন। এখন আপনি খেতে গেলেই আম্মু ভাববে, আমার বাপের বাড়িতে আপনাকে কিছু খেতে দেয়নি। ”

দীপ্তির এই কথায় হাসবে নাকি কাঁদবে তা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত তুহিন। এটা কী ধরনের ফাজলামি? ইচ্ছেমতো খাওয়ার স্বাধীনতাটুকু পর্যন্ত হারাল সে?

তর্কে না গিয়ে চুপচাপ ব্যাগ গোছাতে লেগে গেল তুহিন। কারণ সে জানে দীপ্তির সঙ্গে তর্কে যাওয়া মানে নিজের চাপার পায়ে কুড়াল মারা। মিনিট বিশেক যাবৎ রুমে নেই দীপ্তি। হয়তো আয়েশার সঙ্গে গিয়ে আড্ডায় মেতেছে, ভাবল তুহিন। তুহিন মনভরা বিরক্তি নিয়ে ব্যাগ প্যাকিং করছিল। দীপ্তি এক বাটি নুডুলস নিয়ে তুহিনের সামনে এসে দাঁড়াল। দীপ্তির হাতে নুডুলস দেখে কপাল কুঁচকে তাকাল তুহিন। মেয়েটা খানিক আগেই বলল, এখন খাওয়া যাবে না। এখন আবার নিজেই নুডুলস এনে দিচ্ছে? তোর পাগল হতে বেশিদিন নেই তুহিন। দীপ্তির দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে এসব ভাবছিল তুহিন। তার সংবিৎ ফিরল দীপ্তির ধমকে ” কী হলো? নিচ্ছেন না কেন? নিজে রেঁধে এনেছি। খেয়ে বলুন কেমন হয়েছে। ”

তুহিন নিশ্চুপ নুডুলসের বাটিটা হাতে নিলো। নুডুলসের স্বাদ অনেকটা তুহিনের মায়ের হাতের রান্নার মতো। তবে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। ভিন্নতা থাকলেও তুহিনের পছন্দের জিনিস অর্থাৎ নুডুলসের মধ্যে কাঁচামরিচের স্বাদটা ঠিক একই আছে। তুহিন নুডুলস খেতে খেতে দীপ্তিকে বলল, ” এভাবে বিরিয়ানি রান্না করাটাও শিখে নিও। ”
– ” হুম, সবই শিখব। এখন আগে বলুন নুডুলস কেমন হয়েছে? ”
– ” ভালোই! ”
– ” শুধু ভালোই? ”
তুহিন ভ্রু কোঁচকাল। ” তাহলে কী বলবো? নুডুলস খেতে বিরিয়ানির মতো হয়েছে? ”

তুহিনের কথায় হেসে ফেলল দীপ্তি। তুহিন বসে বসে নুডুলস খাচ্ছে আর দীপ্তি দাঁড়িয়ে তুহিনের নুডুলস খাওয়া দেখছে। নুডুলসগুলোকে বেশ আদর করে খাচ্ছে তুহিন। মনে হচ্ছে যেনো নুডুলসগুলোকে চুমু দিতে দিতে মুখে পুরছে। তুহিনের ঠোঁটের স্পর্ষ পাওয়া ওই চামচ দিয়ে আর তুহিনের হাত দিয়ে নুডুলস খাওয়ার লোভ সামলাতে পারল না দীপ্তি। তুহিনের মুখের সামনে নিজের মুখ ধরে বলল, ” আমারও ক্ষুধা লেগেছে। খাইয়ে দিন। ”
– ” এখান থেকে খাবে? ”
– ” হু। ”
– ” আমার মুখে দেয়া চামচ মুখে তুলবে? ”

দীপ্তি মুখ বিকৃত করে বিরক্ত গলায় বলল, ” ধুর! দিন তো তাড়াতাড়ি। ”

নুডুলস খাবার পরে টুকটাক অনর্থক এবং অকারণ ঝগড়া করতে করতে ব্যাগপ্যাক করে নেয় দুজনে। ব্যাগ প্যাক তুহিনই করছিলো; দীপ্তি কেবল ঝগড়ায় অবদান রাখছিলো। তুহিনও সবটা সহ্য করে ব্যাগপ্যাক করছিলো। ব্যাগ গোছানো শেষে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে দুজনে।

ভোর পাঁচটা বাজে। তুহিনের ঘুম ভাঙল মুখে ভেজা চুলের স্পর্ষে।

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে! ♥
” Tanvir’s Writings “

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here