#বিপরীতে_তুমি_আমি
(দ্বিতীয়_পরিচ্ছদ)
#লেখনি_সুমাইয়া_ইসলাম
|৩|
“বন্ধুত্ব! ” এই ছোট্ট শব্দটা যেন প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা খাত। বন্ধুত্বের প্রকৃত গভীরতা সে কখনোই উপলব্ধি করে নি যার একজন খাটি বন্ধু নেই। বন্ধু মানব জাতির মাঝেও বিশেষ এক জাতি। লবণ ছাড়া জীবনের মতো। আর একজন বিশ্বস্ত বন্ধু মানেই জীবন আজীবন সবুজ। মস্ত এক আবেগের নাম বন্ধু। কবি লর্ড বলে গিয়েছেন,
” বন্ধুত্ব হলো ডানাবিহীন ভালোবাসা। ”
কিন্তু এ ডানাবিহীন ভালোবাসাই যখন ডানা ছেটে খাঁচায় বন্ধি করতে চায় তখন! যার বন্ধু মুখোশের আড়ালে রয় তার কি শত্রুর প্রয়োজন হয়?
সন্ধ্যার নামাজ শেষে বারান্দার মেঝেটায় হাটু ভাজ করে বসে বসে কিরণ আপনা মনেই এ প্রশ্ন সুধায়। হিয়ার সাথে তার বন্ধুত্ব অনেক দিনের। প্রাণের মানুষের পর প্রাণের বন্ধুর স্থানে জ্বলজ্বল করে থাকতো হিয়ার নাম। কে জানতো হিয়া তার হিয়ার মাঝে কি রেখেছিল! বিশ্বস্ত হওয়ার মুখোশের আড়ালে তারই মানুষকে নিয়ে চক্রান্ত সাজাবে এ কি কখনো কিরণ দুঃস্বপ্নেও ভেবেছিলো? কিরণের নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে। দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে। দৃষ্টি তার খোলা চাঁদনি আকাশের দিকে। এমন বিষাদ জোৎস্না বিলাস বোধ হয় সে আগে কখনোই করে নি। এভাবেও মন পুড়ে? বন্ধুত্বের বিশ্বাসঘাতকতা এতো মারাত্নক হয় তা কিরণের জানা ছিল না। ভেতরের বিষাক্ত কার্বন ছেড়ে লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে ধাস্ত হওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু ফলাফল শূন্য। বুকের ভেতর হয়তো কয়েক টন পাথর জমা। তাই এতো ভারি।
বিকেল থেকে কাঠ পুড়িয়ে রান্নার দায়িত্ব পালন করছে অর্ণব। লাটিমের মতো ক্রমাগত ঘুরছে কিরণকে কিভাবে একটু সুখ দেবে। তার সূর্যরাণী শীতের শৈত্যপ্রবাহের সূর্যের মতো তেজহীন, নির্জীব হয়ে পড়েছে। তার সকল খুশি কেমন ঘন কুয়াশার চাপে পড়ে গেছে। এমন কিরণকে তো সে চেনে না।
অর্ণব দ্রুত হাতের কাজ শেষ করে খাবার নিয়ে ঘরে এসে কিরণকে দেখতে পেলো না। খাবারের ট্রে সোফার টেবিলটায় রেখে এগিয়ে গেলো বারান্দার দিকে। বারান্দায় পা রাখতেই চোখ পড়লো বারান্দার এক কোণায় বসে থাকা বিধস্ত কিরণকে। টকটকে নীল শাড়ি পড়া ফোলা লালচে চোখ মুখে অস্থির হয়ে ওঠলো অর্ণবের মন। না জানি মেয়েটা কখনো থেকে এমনভাবে আছে! থেকে থেকে ঠান্ডা বাতাসে কেঁপে ওঠছে শরীর। গতকাল অসময়ে ভেজার পর উপলব্ধি হয় কিরণের বিকল্প পোষাক নেই। অর্ণবের পোষাকেই মধ্যাহ্ণ সেরেছে। বিকেলের দিকেই অর্ণব পাশে থেকেই খুবই সাধারণ এ শাড়িটা এনে দিয়েছে। পড়ে দেখার সময় সে পায় নি। ছুটে চলে যায় রান্নার দিকে। কিরণের পছন্দের খাবার তৈরীর উদ্দেশ্যে। কিরণের শুকনো মুখটা তাকে ভিষণ পিড়া দেয়। কিন্তু সে কি জানতো তার পিড়া কমবে না বরং বেড়েই চলবে! তার কল্পনা করে রাখা মায়াবতীতে যে এমন ঘোর অমাবস্যার ছায়া গ্রাস করে নেবে তা কি ভেবেছিল? অর্ণবের ভেতরটা জ্বলে ওঠছে কিরণের বিধস্ত রূপে। ধীর পায়ে এগিয়ে নিঃশব্দে বসলো কিরণের পাশটায়। কিরণ এখনো চাঁদটার দিকে চেয়ে। অর্ণব কিরণের দিকে তাকিয়ে রইলো মিনিট খানেক। তারপর খুব আদুরে স্বরে বললো,
একটা গান শুনাবে সূর্যরাণী? কত যুগ তোমার গান শুনি না।
ভাবনায় ডুবে থাকা কিরণ হঠাৎ অর্ণবের কন্ঠে চমকে ওঠে। পাশে তাকিয়ে অর্ণবের দিকে মুখ ঘুরাতেই দু জোড়া চোখের মিলন ঘটে। অর্ণবের সম্মোহক চোখদ্বয়ে আজ কিরণ কাতরতা দেখতে পেলো। একটা পুরুষ কতটা ভালোবাসলে প্রিয়জনের ব্যথায় কাতর হয়! কিরণ ভাবে কিন্তু উত্তর পায় না। কি করে পাবে সে? অর্ণবকে যে আজও সে জানতে পারলো না। এতো প্রেম, এতো প্রণয় নিয়েও সে কিভাবে পারে প্রিয় মানুষটাকে দূরে ঠেলে দিতে। বারবার নিজেই দূরে ঠেলে আবার নিজেই ছুটে আসে গভীরে বাস করতে।
কিরণের এতো সকল প্রশ্নে তার মস্তিষ্ক বরাবরের মতোই শূন্য উত্তর প্রদশন করে। তাই কিরণও আর মাথা ঘামায় না। ক্লান্ত লাগছে ভিষণ। সেই তেজ কেন জেনো বিলুপ্ত হচ্ছে ধীরে ধীরে। কেন জানি বললে ভুল হবে। তার সকল ভালো মন্দের উৎস অর্ণব। ওর জেদ, তেজ সবকিচুর একচ্ছত্র আধিপতিও অর্ণব। অর্ণব নেই তার এই বৈশিষ্ট্যগুলোও নেই। কিন্তু আজ অর্ণব তার কাছে থাকলেও ভিষণ ক্লান্ত লাগছে। জীবনের বিশেষ এক হিসেব কষতে গিয়ে এতো বড় মন্দা দেখা দেবে কিরণ ভাবে নি।
ঠান্ডা বাতাসে ঠোঁটজোড়া শুকিয়ে আসছে। কিরণের অনীহা প্রবণতা সেই ঠোঁট আর ভেজাতে দিলো না। পড়ে রইলো ওভাবেই শুষ্ক, নির্জীব। ভার হয়ে আসা মাথাটা হঠাৎ অর্ণবের কাঁধে ছেড়ে দিলো। অর্ণব খানিকটা অবাক হলেও তা প্রকাশ করলো না। তাকিয়ে রইলো আকাশের দিকে।
কিছুক্ষণ সময় নিরবতায় কেটে গেলো। তারপর হুট করে কিরণ ওঠে দাঁড়ালো। গ্রিলটার কাছ ঘেষে দাঁড়ায়। দু হাত দিয়ে রেলিংটা শক্ত হাতে মুঠ করে ধরে জ্যোৎস্নার আকাশ দেখে কন্ঠ চিড়ে বের করে বেদনার সুর,
আমি আবার ক্লান্ত পথচারী
এই কাঁটার মুকুট লাগে ভারি।
গেছে জীবন দুদিকে দু’জনারই
মেনে নিলেও কি মেনে নিতে পারি?
ছুতে গিয়েও যেনো হাতের নাগাল না পাই!
এভাবে হেরে যাই
যেই ঘুরে তাকাই
কেমন যেনো আলাদা আলাদা সব!
আলগা থেকে তাই খসে পড়েছি প্রায়ই
কেমন যেনে আলাদা আলাদা সব!
অশ্রুকণা কপল বেয়ে গড়িয়ে কন্ঠ ভার হয়ে আসে কিরণের। সামনের দিকে আর এগোতে পারে না। থেমে যায় ওখানেই। নিঃশ্বাস ঘন হতে শুরু করে। অর্ণব দ্রুত বেগে ওঠে যায় কিরণের কাছে। সঙ্গোপনে কিরণকে জড়িয়ে ধরতেই কিরণ এবার হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। নিরব পরিবেশ কিরণের আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে। অর্ণবের বুকে তোলপাড় শুরু হয়। তার প্রিয়তমা কাঁদছে অথচ তার কাছে কোনো ভাষা নেই। না আছে শান্তনার ভাষা আর না আছে আশার ভাষা। কিরণের আর্তনাদে আঁচড় কেটে যাচ্ছে অর্ণবের বুকে। অর্ণব সেসব উপেক্ষা করে আঁকড়ে ধরে রাখে কিরণকে। মিনিট পনেরো পর ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়ে আসে কিরণের আর্তনাদের শব্দ। মিইয়ে যায়। কিরণের ভারি নিঃশ্বাস অর্ণবের বুকে আঁচড়ে পড়তেই বুঝতে পারলো কিরণ ঘুমিয়ে গিয়েছে। অতি সাবধানে কিরণকে কোলে তুলে বিছানায় সুয়ে কাথা টেনে দেয় শরীরে। হাটু গেড়ে কিরণের লালচে ফুলে ওঠা মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে রয় অপলক। কি ঝড় বইছে তার প্রিয়তমার মনে তা কি অর্ণব বুঝতে পারছে? বুঝতে পারলেও কি তার ভাগ নিতে পারছে? হতাশ নিঃশ্বাস বের হয়ে আসে অর্ণবের বুক চিড়ে। কিরণের ঠান্ডা হয়ে আসা ডান হাতটা দু হাতের মুঠোয় নিয়ে গভীরভাবে চুম্বন দিয়ে আকুল কন্ঠে প্রার্থনা করে,
তোমার সব দুঃখ আমায় ভিজিয়ে যাক
আর তোমার হোক আমার ভাগের সকল সুখের বিশাল ফুলের বাগান।
আমার এ ফুল ঝড়ে না পড়ুক
ঝড়ে পড়েও আমার বুক পকেটে থাকুক..
—
দশটা নাগাদ কিরণের ঘুমের অবসান ঘটে। ক্লান্তভাবে চোখে খুলে ওঠে বসে। মাথাটা প্রচুর ভার লাগছে। নিজের অবস্থান বুঝতে কয়েক মুহুর্ত কেটে যায়। ঘুমের আগ মুহুর্তের কথা মনে পড়তেই অর্ণবকে খুঁজতে থাকতে তার ব্যস্ত চোখ জোড়া। শরীরের কাথা সরিয়ে ওঠে দাঁড়ায়। রান্নার জায়গা থেকে টুকটাক শব্দ পেয়ে এগিয়ে যায় সেদিকে। রান্নার ছোট্ট জায়গাটার সামনে গিয়েই দেখা মিললো অর্ণবের। মানুষটা ওর জন্য কতটা করে! ভাবলেই কেমন অবাক লাগে কিরণের। অর্ণবের অদ্ভুত প্রেমে মাঝে মাঝে বড্ড রাগ হয়। মানুষটার মাঝে কতকিছু লুকিয়ে আছে। কি হয় যদি তাকে সব জানায়? কিরণ কি বুঝবে না তাকে? কিরণের হঠাৎই মনে হলো অর্ণবকে কি তাকে বিশ্বাস করতে পারে না? তাই কি তাকে সব কথা বলে না!
তোমারই তো বর। এতো ডেস্পারেট হয়ে দখার কিছুই নেই। চলো খেয়ে নেবে। তারপর ধীর ধীরে দেখবে। যদি চাও তাহলে সারারাত….
অর্ণবের দিকে তাকিয়ে ভাবতে ভাবতেই অর্ণব কখন কাছে চলে আসে বুঝতেই পারে নি। তাই অর্ণবের কথায় অপ্রস্তুত হলেও পরের কথার অর্থ বুঝতে পেরে অর্ণবকে থামাতে ব্যস্ত হয়ে বলে,
ছিহ ছিহ্! হয়েছে থামুন তো। কিসব আজে বাজে কথা বলেন!
অর্ণব তার নীলচে ট্রাউজারের দু পকেটে হাত গুজে কিরণের দিকে এগিয়ে আসে। নিজেদের মাঝের দূরত্ব কিছুটা ঘুচিয়ে দোটানার মুখোভঙ্গিতে বলে,
ছিহ্ ছিহ্ করছো কেন বল তো? আমি কি পর নারীকে বলছি আমাকে দেখার কথা? আমার একমাত্র শরিয়ত মতে বিয়ে করা হালাল বউকে বলছি।
অর্ণব এক নাগাড়ে কথাগুলো বলেই রান্না করে গরম করে রাখা খাবার ট্রেতে গুছিয়ে রাখতে রাখতে পুনরায় কিরণর দিকে তাকিয়ে বলে,
বাই দা ওয়ে তুমি আজে বাজে বলতে কি বুঝিয়েছ? আমি তো বলতে চেয়েছি সারারাত বসিয়ে দেখতে পারো। কোনোভাবে তুমি কি অন্যকিছুওওওওও…….
আড়চোখে কিরণের মুখোভাব দেখে শয়তানি এ হাসি দিয়ে অবাক হওয়ার অভিনয় করে বলে,
ছিহ্ ছিহ্ কিরণ! তোমাকে তো আমি ভদ্র মেযে ভেবেছিলাম আর তুমি কিনা উল্টোপাল্টা কথা ভাবছো?
কিরণ বোকা বনে গেল অর্ণবে কথার পেঁচে। এ ছেলে কথা কিভাবে টেনে টেনে বড় করছে সেই দক্ষতা দেখেই কিরণ অবাক হচ্ছে। অভিনয়ের কথাটা তো না ভাবে ততই ভালো। এখানে থাকলে নিশ্চিত ঠোঁট কাটা কথা শুনিয়ে লজ্জার সাগড়ে ডুবতে হবে ভেবে কিরণ অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে ” নাটকবাজ ” বলে চলে আসে রুমে। কিন্তু এসেও কি শান্তি আছে? রান্নাঘরে থেকেই অর্ণবের উচ্চকন্ঠ ভেসে আসে,
জান! তুমি চাইলে কিন্তু আমি দু পায়ে রাজি।
কিরণের লজ্জায় কান গরম হয়ে এলো। চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে নেয় উপরের দিকে তাকিয়ে আওরাতে থাকে,
অসভ্য! চরম অসভ্য। হে আল্লাহ! আমার বরটাকেই কি এতো অসভ্য হতে হলো?
—-
খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকিয়ে ফ্রেস হয়ে বের হলো অর্ণব। কিরণ বিছানায় বসে টিভি দেখছে। আগামীকালের ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা জানাচ্ছে সকল চ্যানেলগুলোতে। হঠাৎই কিরণের দিকে তাকিয়ে অর্ণবের কিছু মনে হলো। হুট কর তাড়াহুড়ো করর বেড়িয়ে পড়লো। কিরণ অর্ণবের তাড়াহুড়ো দেখে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই অর্ণব দরজা আটকো বের হয়ে যায়। অর্ণবের হঠাৎ এমন অদ্ভুত আচরণে কিরণের মন অস্থির হয়ে ওঠে। কেন বের হলো এভাবে? কিছু কি ঘটেছে আবার? খারাপ কিছুর আশঙ্কায় মাথা ভো ভো করে ওঠে। রুমময় পায়চারি শুরু করে। ঠিক তেরো মিনিটের মাথায় অর্ণবের আগমন ঘটে। অর্ণবকে দেখে কিরণের দেহে যেনো প্রাণ ফেরে। দ্রুত পায়ে অর্ণবের দিকে এগিয়ে ব্যাকুল হয়ে জিজ্ঞেস করে,
কি হয়েছে? আপনি এভাবে বেড়িয়ে গেলেন কেন? সবকিছু ঠিক আছে? আ আপনার কোনো সমস্যা হয়েছে?
অর্ণব কিরণের এতগুলো প্রশ্নে কেবল একটা মুচকি হাসি উত্তর দেয়। কিরণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রয়। কিরণের মুখশ্রী দেখে অর্ণবের হাসির রেখা আরো প্রশস্ত হয়। কোনো কথা না বলে কেবল কিরণের হাত ধরে এনে সোফায় বসিয়ে দেয়। কিরণের খুব পাশ ঘেষে বসে পকেট থেকে দুটো মেহেদির কোণ বের করে ভ্রু নাচিয়ে কিরণের দিকে তাকায়। কিরণ এবার কারণ বুঝতে পেরে তাজ্জব হয়ে শুধু তাকিয়ে রয়। মানুষটার পাগলামি দেখে কথা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
অর্ণব কিরণের বোকা হয়ে যাওয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকে হেসে বলে,
তোমার আমার বিবাহিত জীবনের প্রথম ঈদ। আমার একমাত্র বউয়ের হাতে ঈদেরদিন খালি থাকবে তা মেনে নেওয়া যায়? এ কথা শুনলে আমার জুনিয়রা আমার কমান্ডই শুনবে না। মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে।
একটু থেমে কোণের মুখের পিনটা সরিয়ে আদুরে গলায় বলে,
বউ! ঈদ মোবারক! তোমার সাথে আমার বার্ধক্যের ঈদও কাটুক।
কিরণের শিরদার বেয়ে যেনো ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। তাদের একসাথে ঈদ! রোজার ঈদে অর্ণবের অনুপস্থিতি ওকে ভীষণ বাজেভাবে পুড়িয়েছে। প্রথম ঈদেই আলাদা। কিন্তু এবার একসাথে বিবাহিত প্রথম ঈদ। মুহুর্তের জন্য বিগত সকল দুঃখ ভুলে গেল যেন।
কিন্তু ভুলে গেল বললেই কি ভুলে যাওয়া যায়?
অর্ণব নিজ মতো কিরণের হাতে নকশা আঁকতে শুরু করে দিয়েছে। প্রিয়তমাকে খুশি করার তার কি আপ্রাণ চেষ্টা! কিরণ তার সুদর্শন প্রিয়তমর দিকে অপলক তাকিয়ে রইলো। এই মানুষকে দূরে ঠেল রাখবে এমন সাধ্য কি তার কল্পনাতেও হবে? কখনই আবারো মনে যায় তিক্ত সত্য। মনের অভ্যন্তরে ঘুরপাক খায়, এই মানুষটা আপাদামস্তক ভালোবাসার মানুষ। ভালো না বেসে পালানোর সব কয়টা দরজাই বন্ধ। হয়তো তাই হিয়াও পারে নি তাকে ভালো না বেসে থাকতে। হোক সে বন্ধুর ভালোবাসা, জীবনসঙ্গী। প্রেম সত্যিই জাত, ভেদ, বয়স ও সম্পর্ক মানে না। প্রেম সবালীল, সুন্দরতম অনুভূতি। প্রেমই ধ্বংসময়ী।
চলবে ~~~