#মায়ার_জীবনী
#Nadia_Afrin
পর্ব:১১
রাগে মাথা যেন ফেটে পড়ছে আমার।
ঘনঘন শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছি।
সারহানকে কল দিচ্ছি সেই কখন থেকে।কল রিসিভ করার নাম নেই।
ডাইনিং রুমের চেয়ারে মাথা দিয়ে চোখ বুজলাম।
রাতের রান্নাটা আজ করিনি আমি।
শাশুড়িমা এলেন আমার সামনে।
বললেন,”তোমাকে ঘরে দেখিয়ে দেই চলো”।
ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও গেলাম।
সায়মার পাশে একটি ছোট্ট রুম আছে।শুধু একটি খাট,টেবিল ও আলনা ব্যাতিত কিচ্ছু নেই রুমে।
:,,,,,,,”এই ঘরে আজ থেকে থাকবে তুমি।একমাস পর নিজের ঘরে উঠে যেও”।
আমি কিছু বললাম না।
বিছানায় গিয়ে বসলাম।
শাশুড়িমা দরজার কাছে যেতেই পিছু ডাকলাম তাকে।
:,,,,,,,,”আমার ঘরের টিভিটি এই ঘরে লাগিয়ে দিয়ে যান।রাতে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখি আমি”।
তিনি মুখ ঘুরিয়ে বললেন,”তোমার টিভি সায়লা তার ঘরে লাগিয়ে নিয়েছে।বলেছে,অন্য একটি টিভি কিনে নিতে তোমায়”।
উক্ত কথাটি বলে হনহনিয়ে চলে গেলেন তিনি।
আমি কিছু বলার সুযোগই পেলাম না।
এরই মধ্যে কল দিলো সারহান।
কল রিসিভ করে বললাম,”তোমার সঙ্গে ঘর করতে এসেছি আমি সারহান।আর তোমরা কীনা আমার ঘরই কেড়ে নিচ্ছো।
এতো ছোট মনমানসিকতা কেন তোমাদের সারহান।
তোমার বাড়ির লোক থেকে এমন কাজ আশা করিনি আমি।একজন স্বামী হিসাবে তোমার উচিত ছিলো বিষয়টির প্রতিবাদ করা।
আশা করি কোনো কিছুই অজানা নয় তোমার”।
:,,,,,,,,”দেখো মায়া,দুদিন এসেই তুমি আমার বাড়ির নিয়ম পাল্টাতে পারো না।
ব্যবসায়িক কাজে বেশির ভাগ সময় বাইরে কাটাই আমি।তাই মা আগে থেকেই আমার ঘর ভাড়ায় দিয়ে রাখতো”।
:,,,,,,,,”আগের দিন আর এখন কার দিন তো এক নয় সারহান।তুমি না থাকলে কী হবে,তোমার অর্ধেক অংশ তোমার স্ত্রী তো থাকবে।
কীভাবে তোমার ফ্যামিলি আমার ঘর ভাড়া দিয়ে দিতে পারে”?
সারহান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,”তোমায় তো অন্য একটি ঘর দেওয়া হয়েছে মায়া।আর এক মাস পর তো রুম খালি করে দেবে।প্লিজ এখন তো এসব আলোচনা বন্ধ করো”।
সারহানের কথা শুনে কেন যেন খুবই বিরক্ত বোধ করলাম আমি।কল কেটে দিলাম নিমিষেই।
বিছানায় সটান হয়ে শুলাম।
চোখ বন্ধ করতেই মেসেজ টোন বেজে উঠলো।
ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি আবারো সেই মেসেজ।কিছু লেখা থাকে না মেসেছে।শুধু ডটডটডট ছাড়া।
কে মজা নিচ্ছে আমার সঙ্গে?
এর শেষ আমি দেখেই ছাড়বো।চোরের সাতদিন আর গৃহস্থের এক দিন।
শাশুড়িমা হন্তদন্ত পায়ে আমার ঘরে এলো।বললো,”আমার ছেলের কাছে বদনাম করা শেষ তোমার?
সামান্য একটা বিষয় নিয়ে ইনিয়েবিনিয়ে কতো কথা বলছো সারহানের কানে”।
আমি কপাল কুচকে বললাম,”তারমানে আপনি কী আড়ালে দাড়িয়ে আমার কথা শুনছিলেন”?
:,,,,,,,,”তা কেন শুনবো।আমার ঐ স্বভাব নেই।
এক দরকারে এসেছিলাম।তাই শুনে ফেললাম আরকি।আচ্ছা যাই হোক শোনো,তোমার গহনা গুলো আমার আলমারিতে রেখেছি।এই ঘরে আলমারি রাখার জায়গা নেই।
আবার ভেবো না তোমার গহনা নিয়ে নেবো।
অন্যদের মতো নই আমি।যে বউমাকে বাবার বাড়ি থেকে জিনিস আনতে নির্যাতন করবো,গহনা নিজে নিয়ে নেবো,ছেলের কানে মন্ত্র দেবো।
ওসব স্বভাব আমার নেই।
সুখেই কিন্তু আছো মায়া”।
:,,,,,,,”সুখ কাকে বলে মা?
এই শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নই আমি”।
আমার কথায় থতমত খেলেন তিনি।
মুখ বেকিয়ে চলে গেলেন নিজের ঘরে।
আমি কিঞ্চিত হাসলাম।উচিৎ কথা গায়ে লাগে ভীষণ।
ভাবলাম এক কাপ চা বানিয়ে নেই।এদের সঙ্গে তর্ক করে মাথাটা ধরেছে ভীষণ
সায়মার ঘরের সামনে দিয়ে রান্নাঘরে যেতে হয়।
কী যেন মনে করে সায়মার ঘরে উকি দিলাম।
আজকেও একই অবস্থা।রাজনের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলছে সে।তবে খুবই উশৃঙ্খল ভাবে।ওরনা ছাড়া।
বিষয়টি নিয়ে রাজনের সঙ্গে কথা বলবো ভাবলাম।দু-পক্ষকেই বোঝানো আমার দায়িত্ব।
এই মেয়েকে বুঝিয়ে কোনো লাভ নেই।
রাজনের সঙ্গেই কথা বলতে হবে আমার।
আগে চা বানালাম।
খেয়ে মাথা ঠান্ডা করলাম।তারপর কল লাগালাম মাকে।মায়ের থেকে রাজনের নাম্বার নিলাম এবং সব কথা খুলে বললাম মাকে।
উত্তরে মা বললেন,”তোর ননদ কে ভালো করে বোঝা।নিজের ভবিষ্যৎ নিজে নষ্ট করছে মেয়েটা।
কিছুদিন যাবত এলাকায় খবর ছড়িয়েছে,রাজন নাকি নেশা চক্রের সঙ্গে জরিত।পুলিশ ও নাকি এসেছিলো।
তবে সত্যতা খুব একটা জানিনা।হাওয়ায় ভাসা খবর পেলাম আরকি”।
চিন্তিত হলাম আমি।
রাজনকে কল দিলাম।
প্রথমবার কল রিসিভ না করলেও দ্বিতীয় বার রিসিভ করে সালাম দিলো।
আমি পরিচয় দিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করলাম।আমার কল পেয়ে ছেলেটা হয়ত কিছুটা অবাকই হলো।
ও বললো,”হটাৎ কল দিলে যে?কোনো কী সমস্যা”?
এবার আসল কথায় এলাম আমি।বললাম,”আমার ননদ সায়মার সঙ্গে কী তোমার সম্পর্ক আছে”?
প্রথমে আমতা আমতা করলো।কিছু বলতে চাইলো না।একপর্যায়ে একটু চাপ প্রয়োগ করতেই স্বীকার করলো সে।
:,,,,,,,”তুমি কী জানো না?সায়মা আমার ননদ।আমাকে কেন্দ্র করে এই বাড়িতে এসেছিলে তুমি।তাই তোমাকে কেন্দ্র করে এখন যদি ওর কোনো ক্ষতি হয় তাহলে তার সম্পূর্ণ দোষ এসে পরবে আমার ওপর”।
আমার কথা শুনে রাজন বললো,”এই জন্যেই আমি সায়মার সঙ্গে ব্রেকআপ করতে চেয়েছিলাম।
দূসম্পর্কের হলেও তুমি আমার বোন তো।
তোমার সংসারে আমার জন্য কোনো সমস্যা হোক এটা আমি চাইনি।আর যাই হোক,নিজের বোনের পায়ে তো আর কুড়োল মারবো না।
সায়মা নিজেই আমার কাছে নাম্বার চেয়েছিলো।আমিও দিয়েছিলাম।প্রথমে ও ই কল দিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দেয়।ছেলে তো আমি।সুযোগ পেয়ে একসেপ্ট করেছিলাম।
বেশ কিছু দিন আগে সায়মা বললো,তুমি নাকি আমাদের ব্যাপারে জেনে গেছো এবং ওকে বুঝিয়েছো।ও আরো বললো,তুমি আমার নামে ওর কাছে অনেক খারাপ খারাপ কথা বলেছো।
যদিও সত্যিই বলেছো তুমি।
তাই আমি সায়মাকে বললাম সম্পর্কটা আর না এগোতে।বিষয়টি যদি ভালো হতো তাহলে তুমি নিশ্চয় তোমার ননদকে বোঝাতে না।
আমিও ওকে বুঝিয়েছিলাম,যে তুমি ভদ্র ঘরের মেয়ে আমার সঙ্গে তোমার মিলবে না।
কিন্তু ও শোনে নি।বারবার কল দিতো আমায়।
এখন তুমিই বলো মায়া,এখানে আমার দোষ বেশি নাকি তোমার ননদের?
রাজনের প্রশ্নে জবাব দিলাম না আমি।
শুধু বললাম,এরপর থেকে সায়মাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবে।
রাজন হ্যা সূচক জবাব দিয়ে কল কেটে দিলো।
ছেলেটা আর যাই হোক,আমাকে মিথ্যা বলবে না।
ছোট থেকেই আমাকে বোনের নজরে দেখেছে।
খারাপি পণা ছিল বাইরের মানুষের সঙ্গে।নিজের আত্মীয়দের সর্বদা সম্মানই করতো সে।
আমার ছোট বোন মিরাকে এলাকার কিছু যুবক ছেলেরা বিরক্ত করলে রাজনই ছেলেগুলাকে শাসিয়ে দিয়েছিলো।
মনে মনে স্থির করলাম কালকেই সারহানকে বিষয়টি জানাবো।
তার বোন সে নিজেই ভালো বুঝবে।
চলবে,,,,,,,