মায়ার_জীবনী #Nadia_Afrin পর্ব:৬

0
564

#মায়ার_জীবনী
#Nadia_Afrin

পর্ব:৬

দুদিন থেকে ফিরে এলাম শশুর বাড়িতে।
বাড়ির কলিং বেল চাপা মাত্রই শাশুড়ি মা দরজা খুলে দিলেন।আমার হাত সহ আশেপাশ উকি মারতে লাগলেন তিনি।
বাড়িতে প্রবেশ করে সোফায় বসলাম।
সাইরা ও সায়মা এগিয়ে এলো।আমার পাশে বসলো।

:,,,,,,,”কেমন কাটলো দিন ভাবী”?

সাইরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম,”ভালোই।তোমাদের তো যেতে বললাম আমার সঙ্গে।গেলে না তোমরা।তোমরা গেলে আরো মজা হতো”।

সাইরা আর কোনো জবাব দিলো না।আমাকে ক্লান্ত দেখে একগ্লাস পানি এনে হাতে দিলো সায়মা।

:,,,,,,,,”তা ভাবী,ভাইয়া তোমাকে নিয়ে বা তোমার ভাই-বোনদের নিয়ে কোথাও ঘুরতে নিয়ে গেছিলো নাকি”?

সায়মার প্রশ্নে কালকের কথা মনে পড়ে গেলো আমার।কিছুটা নত মুখে বললাম,”নাহ”।

সায়মা যেন এবার নিশ্চিন্ত হলো।জোরে শ্বাস ফেললো।

আমি আমার ব‍্যাগ থেকে তিনটি থাকথাক টিফিন বাটি বের করে মার হাতে দিলাম।এ খাবার গুলো তাদের জন্য পাঠিয়েছে আমার মা।
প‍ৌছাতে পৌছাতে প্রায় দুপুর হয়েছে বিধায় ভাবলাম গোসল করে খেয়ে নেই।
নিজের ঘরে গেলাম আমি।সারহান আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে কোথায় যেন বেড়িয়েছে।

গোসল সেরে বের হলাম।
সায়লা আপু আর সেদিনের পর থেকে আমার সঙ্গে কথা বলে না।
বাচ্চা দুটোকেও আসতে দেয় না।

সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে দেখি চার মা-মেয়ে মিলে আমার আনা খাবার গুলো মজা করে খাচ্ছে।বিষয়টি দেখে ভীষণই ভালো লাগলো আমার।

নিচে নেমে কিচেনে গেলাম।
ঢাকনা খুলে দেখি একটি ভাত ও নেই।ভাবলাম ফ্রিজে আছে হয়ত।ফ্রিজের দিকে যাবো এমন সময় শাশুড়িমা আমাকে ডেকে বললো,”ওদিকে কেন যাচ্ছো”?

:,,,,,,,”ভাত খাবো মা,খিদে পেয়েছে আমার “।

শাশুড়ি মা সহ ননদ রা আমার দিকে তাকালো।

:,,,,,,,,”খাবার তো নেই,দুপুরে রান্না হয়নি আজ।বাপের বাড়ি থেকে এলেই তো কিছুক্ষণ আগে।এর মধ্যে খিদে পেয়ে গেলো”?

শাশুড়ির মুখে একথা শুনে লজ্জাবোধ করলাম।আর কিছু না বলে নিজের ঘরে চলে গেলাম।
ভাবতে লাগলাম,এ বাড়িতে তো এই সময়ের আগেই রান্না হয়ে যায়।
তাহলে আজ রান্না করে নি যে!
আমি যে খাবার আনবো,তা কী তারা আগে থেকেই জানতো?

বিছানায় গিয়ে বসলাম।এতো পথ জার্নি করে খিদে পেয়েছে ভীষণই।
বাবার বাড়িতে সেই সকালে খেয়েছি।অবশ‍্য আসার সময় আবার খেতে বলেছিল মা।কিন্তু আমিই খাই নি।
মনে পরলো,বিয়ের পরদিন আনা সারহানের সেই পাউরুটি ও কলা দুটির কথা।ব‍্যাস্ততার মধ্যে মনে নেই সেগুলোর কথা।
ড্রয়ার খুলে দেখলাম,কলাদুটি পচেঁ গেছে।পাউরুটিটি প‍্যাকেট হওয়ায় ভালো আছে এখনো।
কলাগুলো ফেলে দিলাম জানালা দিয়ে।মনে মনে কিছুটা আক্ষেপ হলো,খাবার জিনিস অপচয় করতে নেই।

চিনি এনে পানি দিয়ে গুলে পাউরুটি ভিজিয়ে খেতে লাগলাম।হটাৎ মনে পরলো সারহানের কথা।বাড়িতে তো খাবার নেই।সারহান ও তো আমার সঙ্গে সেই সকালে খেয়েছে।ওর ও খিদে পেয়েছে নিশ্চয়।
বেচারা বাড়ি এসে খাবে কী?
ওর কথা ভেবে অর্ধেক পাউরুটি রেখে দিলাম।
কোনো মতে পেট ভরলো আমার।
বিছানায় শুয়ে একটু রেস্ট নিয়ে নেই।

ঘন্টা দুয়েক পর বাড়ি ফিরলো সারহান।
ওকে দেখেই উঠে বসে বললাম,
“বাড়িতে তো খাবার নেই,এ কথা বলা মাত্রই সারহান বললো,”আমি জানি।তাই বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি আমি “।

সারহান তো বাড়ি ছিল না!
তাহলে খাবার নেই একথা ও জানলো কী করে?

প্রশ্ন করলাম আমি।

:,,,,,,,”একটু আগে বাড়ি ফিরেছিলাম আমি। মা বললো খাবার রান্না হয়নি।
সায়লা আপু,মা,সায়মা সাইরা নাকি তোমার আনা খাবার খেয়ে নিয়েছে।তাই আমি গিয়ে বাইরে থেকে খেয়ে এলাম”।

সারহানের কথা শুনে কেন যেন বুক ভারী হয়ে এলো আমার।তারমানে আমিও যে না খেয়ে আছি তা সারহান জানতো।অথচ সে বাইরে থেকে খেয়ে এলো,আমার কথা একটুও ভাবলো না?
আর আমি কীনা নিজে না খেয়ে তার জন্য পাউরুটি রাখলাম।

এরপর বিকেল হলো।কিচেনে রাতের খাবার রান্না করছিলাম আমি।
সারহান ফোনে কথা বলতে বলতে ঘরে গেল।তার যাওয়ার পানে একনজর তাকিয়ে আবারো রান্নায় মনোযোগী হলাম আমি।

কিছুক্ষণ পর,মায়া মায়া বলে চেচাতে লাগলো।
চুলা বন্ধ করে আমি ঘরের দিকে ছুটলাম।
গিয়ে দেখি,সারহার আলমারি থেকে সব কাপড় এলোমেলো করে কী যেনো খুজছে।
বললাম,কী খুজছো?

:,,,,,,,,,”তোমার বাবা যে আমাদের কাপড় দিলো সেগুলো কোথায় রেখেছো”?

ভাবলাম পড়বে হয়ত।তাই ড্রয়ারের কাপড় আছে বলে দিলাম।

ড্রয়ার খুলে সব জামার ব‍্যাগ গুলো বের করলো।সঙ্গে বাবার দেওয়া আমাকে দুটি শাড়ি ও একটি থ্রিপিছ।
সব কিছু নিয়ে সারহান বাইরের দিকে যেতে লাগলো।
ভাবলাম বাড়ির মানুষকে হয়ত দেখাবে।এসেছি থেকে কাউকে কিছু দেখানো হয়নি।এমনকি আমি নিজেও ভাজ খুলে দেখি নি।ওপর থেকে জামাগুলো যতোটা দেখেছি।
যাক ভালোই হলো।

আমিও সারহানের পেছন পেছন যেতে লাগলাম।সারহান হাটা থামাচ্ছে না কিছুতেই।ড্রয়িংরুম পার হয়ে দরজার দিকে যেতে লাগলো সে।
এবার মনে খটকা লাগলো আমার।

বললাম,”কাপড় নিয়ে বাইরে কোথায় যাচ্ছো তুমি “?

সারহান মুচকি হেসে পেছন ঘুরে বললো,”আমার এক বন্ধুর কাপরের ব‍্যবসা আছে।ওর সঙ্গে কথা বলেছি আমি।যেহেতু নতুন কাপড় সবগুলো।একটাও গায়ে দেওয়া হয়নি তাই এখনো বিক্রি করা যাবে এগুলো।
সেই বন্ধুর কাছে কাপড় গুলো দিয়ে আসি।বিক্রি করে আমায় টাকা দিলে রিণ কিছুটা শোধ করতে পারবো”।

আপনারা বিশ্বাস করবেন কী না জানিনা,রাগে নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছিল আমার।

তীব্র চেচিয়ে বললাম,”এসব কী বলছো তুমি সারহান?
মাথা ঠিক আছে তোমার”?

:,,,,,,,,,”আমি ভুল কী বললাম মায়া?
বিয়েতে তো তোমার বেশ কয়টি শাড়ি এবং থ্রিপিছ উঠেছে।সেগুলোই পড়ো।আর আমারো তো পোশাক আছেই।বাবার দেওয়া গুলো বিক্রি করে টাকাটা দিয়ে রিণ শোধ করলে সমস্যা টা কোথায় “?

:,,,,,,,,,”আমার বাবার ভালোবেসে দেওয়া পোশাক বিক্রি করতে চাচ্ছো মানে?
আমার পোশাক,আমার থেকে অনুমতি না নিয়ে বিক্রি করবে তুমি?
আর কাল থেকে কীসের রিণের কথা বলছো তুমি?
চারতলা বাড়ি তোমাদের ,নিজস্ব গাড়ি আছে,জায়গা-জমি সব আছে।এছাড়াও দাড় করানো ব‍্যবসা আছে।
আমার বাড়ি থেকে বিয়েতে আসা মাত্র ৩০জন মানুষ খাওয়াতে রিণ করা লাগছে তোমাদের?
আর লাগলেও সে কথা আবার আমাকেই বলছো তুমি?
ঠিক আছে মানলাম।যদি আমার বাবার বাড়ির মানুষ খাওয়াতেই তোমার রিণ হয়ে থাকে সে টাকা আমি দিয়ে দেবো তোমায়।

ঐ মূহুর্ত্তেই সারহান বলে উঠলো,’দিলে তো ভালোই হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here