মায়ার_জীবনী #Nadia_Afrin পর্ব:৭

0
560

#মায়ার_জীবনী
#Nadia_Afrin

পর্ব:৭

রাতে আমি ও সারহান বিছানায় শুয়ে ছিলাম।
দুজনের মধ্যে বিরাট দূরত্ব।
সারহান রেগে আছে আমার ওপর।তা আমি ভালোই বুঝতে পেয়েছে।
তার ব‍্যবহার দিনে দিনে অসুস্থ করে তুলছে আমায়।
রাতে কেউ কারো সঙ্গে কথা বললাম না।
ঘুমিয়ে গেলাম দুজনেই।

পরদিন সারহানের দুজন বন্ধু এলো বউ বাচ্চা সহ।নতুন বউ অর্থাৎ আমায় দেখতে এসেছে তারা।
স্বাভাবিক ভাবে তাদের সামনে গেলাম।পরিচিত হলাম।
সায়লা আপু এক পাক দিয়ে গেলেন ড্রয়িংরুম দিয়ে।মানুষ গুলোকে দেখেও না দেখার ভান করে ঘরে চলে গেলেন।

তারা একে ওপরের সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন।
আমি উঠে পাশের ঘরে গেলাম।বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেলো অথচ মানুষ গুলোকে নিয়ে কেউ কিছুই বললো না।

এসেছে সেই কখন,এখনো নাস্তা পানি দেওয়ার কথা বললো না কেউ।

শেষমেষ বাধ্য হয়ে আমি নিজেই ফ্রিজের কাছে গেলাম।
বিয়ের সেই মিষ্টিতে দেখলাম হালকা হালকা পানি উঠেছে।তিন-চারদিন ফ্রিজে থাকার ফলে এই অবস্থা।কিছু মিষ্টি সহ ফল ও বিস্কুট দিলাম তাদের সামনে।
ছোট ছেলেটি হয়ত মিষ্টি পছন্দ করে।সামনে দেওয়া মাত্রই একটি মিষ্টি তুলে মুখে দিলো।

ওপর থেকে সাইরা দেখতে পেলো এ দৃশ্য।
চিৎকার করে আমায় ডাকলো সে।
আমি ওপরে গেলাম দ্রুত।সাইরার কাছে দাড়িয়ে বললাম,”কী বলবে দ্রুত বলো।আমার আবার ওনাদের জন্য খাবার-দাবারের ব‍্যবস্থা করতে হবে”।

এ কথা শুনে চোখ বড়ো বড়ো করে সাইরা তাকালো আমার দিকে।
আমায় টেনে নিয়ে গেলো শাশুড়িমার ঘরে।

:,,,,,,’দেখো মা,তোমার বউমার কান্ড দেখো।
ভাইয়ার কোন জীবনের দুজন বন্ধু এসেছে বউ বাচ্চা নিয়ে।তাদের থালা ভরে খেতে দিচ্ছে।মিষ্টি,ফল সব দিয়েছে’।

আমি কপাল কুচকে সাইরাকে বললাম,”এসব কী বলছো সাইরা।আমি তো তাদের সামান্য কিছু নাস্তা দিয়েছি।খাবার তো দেইনি এখনো।দুপুরের সময় এসেছে খাবার তো দিতেই হবে।
আর ফল,মিষ্টির কথা যদি বলো,সেগুলো তো আমার বাবার বাড়ি থেকে আনা”।

এবার চিৎকার করে সাইরা বললো,”দেখলে মা,তোমার পুত্র বধু তোমার সামনে আমায় খোটা দিচ্ছে”।

শাশুড়িমা তার মেয়ের দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে চুপ করতে বললেন।

:,,,,”তুমি তো দেখছি বউমা আমার সংসার ভাসিয়ে দেবে।যাকে তাকে এভাবে খাবার বিলিয়ে দিলে হবে?
তারা এসেছে তোমায় দেখতে।দেখবে চলে যাবে।
নাস্তা,ভাত,তরকারী আবার কীসের।
তাদের তো আর দাওয়াত করে ডেকে আনিনি যে ভোজন করে খাওয়াবো”।
এবারের মতো মাফ করে দিলাম।এ ভুল আর করো না তুমি।

আমি অবাক নয়নে তাকালাম তার দিকে।
কী বলে এগুলো?
ছোট থেকে দেখেছি,বাড়িতে কোনো মেহমান এলে মা রান্নাঘর থেকে বেরই হতো না।হরেক রকমের খাবার রেধে সামনে দিতেন।এটাই শিখেছি আমি।

শাশুড়িমা নিচে গেলেন।পিছু নিলাম আমি ও সাইরা।

সিড়ি বেয়ে নিচে নামলেন তিনি।
বন্ধুর বউ অর্থাৎ ভাবীদের হাত ধরে দরজার দিকে টেনে নিয়ে গেলেন শাশুড়িমা।
বাইরে বের করে দিয়ে বললো,”আবার একদিন এসো কিন্তু।আজ তো থাকলে না”।

মহিলা দুজন তাদের স্বামীর দিকে সহ আমার দিকে তাকালো।মাথা নত করলাম।
ভাইয়েরা তাদের বাচ্চা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।যাওয়ার সময় বললো,”এ বাড়িতে আসাই ভুল হয়েছে আমাদের “।

মনে মনে বললাম,এ কেমন ছোটলোক এই বাড়ির মানুষেরা।
বিষয়টি ঠিক হজম করতে পারলাম না।
ঘরে দৌড়ে গেলাম।সারহানকে কল দিলাম।তার বন্ধু
সে ই ভালো বুঝবে।

সারহান বাড়ি এলো।সব কথা খুলে বললাম তাকে।
সব শুনেও চুপ করে রইলো সে।যেন অন‍্যায় কিছুই হয়নি।

____

ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে চুল চিরুনী করছিলাম আমি।
হটাৎ কানে থাকা বড়ো দুলটির সঙ্গে চিরুনী বেজে টান লাগলো ভীষণই।
রাগ হলো আমার।দুল জোড়া খুলে হাতে নিলাম।এমন সময় নিচ থেকে ডাকলেন শাশুড়িমা।
তড়িঘড়ি আলমারির শাড়ির ভাজে দুলটি রেখে নিচে গেলাম।

তার কাজে সাহায্য করলাম।দুপুরের খাওয়া শেষ করে ঘরে গেলাম।
একটুপর সারহান ও এলো ঘরে।
আমার পাশে শুলো সে।
আমি ডান কাত হয়ে শুয়ে ছিলাম।পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো সে।
কাছাকাছি এলো।
হটাৎ লাফিয়ে উঠে বললো,”তোমার কানের দুল কই মায়া”?

আমি বললাম,আলমারিতে রেখেছি।

:,,,,,,”নতুন বউ তুমি।কানের দুল খুলে রেখেছো কেন?যাও পড়ে এসো”।

আমি সামান্য হেসে দুলগুলো নিতে আলমারির কাছে গেলাম।এতো শাড়ির ভীরে কোনটির নিচে দুল রেখেছি তা মনে করতে পারলাম না।
একের পর এক শাড়ি এলোমেলো করছিলাম।
আমায় চিন্তিত দেখে বিছানা থেকে নামলো সারহান।

বললো,”কী হলো তোমার?”

:,,,,,”দুল জোড়া পাচ্ছি না।কোথাও কী হারিয়ে
ফেললাম?”

সারহান চমকালো।
আশেপাশ খুজতে লাগলো।
এদিকে দুলটির জন্য ভীষণই খারাপ অনুভব হলো আমার।
মায়ের বিয়ের দুল এটি।বেশ মজবুত ও সুন্দর।স্মৃতি হিসেবে আমায় দিয়েছেন তিনি।

সারহান আমায় দাড় করালো নিজের সামনে।
বললো,”কোথায় রেখেছিলে আর কেনই বা রেখেছিলে”?

:,,,,,,”আসলে এতো বড় দুল তো আমি পড়িনি তেমন।তাই খুব অসুবিধা হচ্ছিলো বিধায় খুলে ছিলাম।
মা ডেকেছিল তাই তারাতারি কাপড়ের ভাজে রেখে চলে গেছিলাম”।

সারহান হাত দিয়ে কপালে চেপে ধরে বললো,”কতো আনা ছিল দুলে”?

আমি কপালের ঘাম মুছে বললাম,”বিয়ের সময় মা যখন সর্নের দোকানে মাপতে গেছিলো তখন বলেছিলেন,দুটো মিলে সাড়ে পাঁচ আনার মতো আছে”।

সারহান এবার হাতের নখ গুনতে লাগলেন।
আচমকা আমার গালে সপাট করে থাপ্পড় মারলো সে।
নিজেকে সামলে নিতে পারলাম না আমি।আলমারির সঙ্গে ধাক্কা খেলাম।

:,,,,,,”আর ইউ ক্রেজি মায়া?
তুমি জানো সর্নের এখন কতো দাম?
দুল তোমার পড়তে ইচ্ছে না করলে আমায় দিয়ে দিতে পারতে।আমি বিক্রি করে টাকাটা আমার একাউন্টে রাখতাম।
এতো দামি জিনিস তুমি হারিয়ে ফেললে”?

আমি তীব্র চিৎকার করে বললাম,”আমার গায়ে হাত তুলো তুমি কোন সাহসে?আমার দুল আমি হারাই,ফেলে দেই যা ইচ্ছে করি।তুমি বলার কে”?

আমার কথা হয়ত আত্মসম্মানে লাগলো সারহানের।
ঘরের দরজায় লাথি দিয়ে বেরিয়ে গেলো সে।

কাদতে কাদতে মেঝেতে বসে পরলাম আমি।

আমি হয়ত পারতাম সারহানের এমন অসুস্থ মনমানসিকতার ব‍্যাপারে নিজের পরিবারকে জানাতে।তাহলে অচিরেই ডিভোর্সি নামক তকমা এসে লাগবে আমার গায়ে।এটা আমি চাইনা।
আমার মামাতো ডিভোর্সি বোনকে দেখেছি সমাজের কাছে,লোকের কাছে লাঞ্চিত হতে।
নিজের এমন পরিণতি চাইনা বিধায় চুপচাপ আছি।
কোন মেয়েই বা নিজের সংসার ভাঙতে চায়।
ধৈর্য্য ধরে আছি।আমার বিশ্বাস এ বাড়ির মানুষ হয়ত একদিন পরিবর্তন হবে।

আমার ভবিষ্যতে কী আছে তা জানি না আমি।তবে খুবই চিন্তা হয়।

(পর্ব ছোট দেওয়ার জন্য দুঃখীত।কাল বড় করে দেবো।সারাদিন পান্ডুলিপি লিখে হাতের বেহাল অবস্থা।
ব‍্যাথা করছে ভীষণ। পেশিতে চাপ পড়ছে।তাই আজ আর না।কাল হালকা টুইস্ট দেবো পর্বে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here