মায়ার_জীবনী #Nadia_afrin পর্ব;৯

0
624

#মায়ার_জীবনী
#Nadia_afrin

পর্ব;৯

খাবার খেয়ে বারান্দায় বসে ছিলাম।
সারহান বাড়িতে ফেরেনি এখনো।রাতের খাবার আমি বাড়ির অন‍্যান‍্য দের সঙ্গে খেয়ে নিই।সারহান বাড়ি ফিরতে দেরি করে অনেক।
রাতের খাবার আবার আমি তারাতারি খাই।

বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর চোখটা লেগে এলো আমার।ঠান্ডার ঔষধ খেয়েছি।ঘুমের ভাব হচ্ছে তাই।
এমন সময় সায়মা এলো আমার ঘরে।

:,,,,,,”কী বলতে ডেকেছিলে?বলো এখন “।

কিঞ্চিত হেসে সায়মাকে আমার পাশে বসালাম।

:,,,,,,,”দেখো সায়মা,বয়সে তুমি আমার ছোট।
আমি তোমায় আমার বোনের মতোই দেখি।আমার নিজের ও একটা বোন আছে।
বড়ো বোনের মতো বলছি।রাজনের সঙ্গে আর যোগাযোগ রেখো না তুমি।ও আমার কাজিন হয়।আমি জানি ও কেমন।
ও তোমার জন্য পারফেক্ট না।এলাকায় ওর অনেক খারাপ রিপোর্ট আছে।এর আগে বিয়েও করেছিলো।অনেক মেয়ের সঙ্গে ওর সম্পর্ক।”।

কথাগুলো বলে সায়মার দিকে তাকালাম আমি।
মেয়েটা চুপচাপ।
আমি বললাম,”কিছু বলছো না যে”?

সায়মা অপকটে জবাব দিলো,”আর কিছু বলবে”?

আমার মনে হলো সায়মা উপেক্ষা করছে আমায়।তাই আর কিছু বললাম না তাকে।
সায়মা হনহনিয়ে চলে গেলো।

আমি তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।

___

এভাবেই কাটছিলো সময়।
দেখতে দেখতে পার হলো দুমাস।
সারহানের মধ্যে কোনো পরিবর্তন খেয়াল করিনি আমি।
এই বাড়ির একটি মানুষকেউ সুস্থ মস্তিষ্কের মনে হয়না আমার।
কেন যেন সারহানের প্রতি এই দু-মাসেও সামান্য পরিমাণের ও ভালোবাসা জন্ম নেয়নি।
জানিনা এর পিছের কারণ কী।
আমিই কী ব‍্যার্থ?
নাকি সারহানের ব‍্যার্থতা?

আমি অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছি এদের সঙ্গে।
চেষ্টা করছি মানুষগুলোকে বদলাবার।
তবে এতো গুলো মানুষের সঙ্গে আমি একা পেড়ে উঠছি না।
আমার অবস্থা ব‍্যাপারে অনেকটাই অবগত আমার মা।
সব ছেড়ে চলে আসতে বলে আমায়।কিন্তু যেতে পারিনা আমি।
সমাজ ও লোকলজ্জার ভয়ে।

আজ সারহানের ব‍্যবসায়িক কাজে অন‍্য জেলায় পাড়ি দেওয়ার কথা।
সকাল থেকে গোছগাছ শুরু করে দিয়েছে সে।
সন্ধ্যায় ট্রেন।
বিকেলে সারহানকে বললাম,”চলেই তো যাচ্ছো।ফিরবে তো চার-পাঁচ মাস পর।আমায় নিয়ে কোথাও ঘুরে এসো”।

সে পরিষ্কার জানিয়ে দিলো,ফালতু কাজে টাকা নষ্ট করার ইচ্ছে তার নেই।
আমি চাইলেই হয়ত প্রতিবাদ করতে পারতাম।
কিন্তু রুচিতে বাধে আমার।ইচ্ছে হয় না এই অসুস্থদের সঙ্গে তর্ক করে নিজেও অসুস্থ হতে।

সন্ধ‍্যা হলো।সারহান বিদায় নিলো।
তার শূন্যতা অনুভব করছিলাম।এটা হলো একজনের অনুপস্থিতি ফিল করা মাত্র।

_____

মোটা কালো ফ্রেমের চশমাটি খুলে টেবিলে রাখলো মায়া।
ছেলে মিহির ও মেহেরের বাড়ি ফেরার সময় হয়েছে।
চোখ কচলে আবারো চশমাটি চোখে দিলো।
মাইগ্রেনের জন‍্য অল্প বয়সেই চশমা ধারণ করতে হয় তাকে।
আজ থেকে সাড়ে ছয়বছর আগে অর্থাৎ সেই দুঃসময়ের পর মায়ার মানসিক সমস্যা সহ মাইগ্রেন দেখা দেয়।
যার ফল স্বরুপ কড়া ডোসের মেডিসিন সহ চশমা।

ডাইরিটি বন্ধ করে রাখলো সে।
মলাটে গাড়ো কালিতে লেখা,মায়ার জীবনী।
লেখাটিতে হাত বুলালো মায়া।

ছোট্ট দুটি হাত পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো তাকে।
হাসি হাসি মুখ করে পেছনে ঘুরলো মায়া।
মেহের মায়ের হাসি মুখ দেখে নিজেও হাসলো।
মিহির কিছুটা দূরে গোমড়া মুখ করে দাড়িয়ে আছে।

ছেলেকে ইশারায় কাছে ডাকলো সে।
গুটিসুটি পায়ে এগিয়ে এলো মিহির।
দুহাতে ছেলের গাল জড়িয়ে ধরে বললো,”মন খারাপ “?

ওপর নিচ মাথা ঝাকালো মিহির।

ক্ষীণস্বরে বললো,”পুতুল মেহেরের কোলে গিয়ে হেসেছে।আর আমি কোলে নিলে ভ‍্যা ভ‍্যা করে কেদেঁছে।
মেহের বলেছে,আমি নাকি পচাঁ তাই পুতুল আমার কোলে কেদেঁছে।পচাঁ ছেলেদের কোলে নাকি বাচ্চারা কাদেঁ।

উক্ত কথাটি বলে মন খারাপ করলো মিহির।

মেহের ও মায়া পরস্পরের দিকে তাকিয়ে কলকলিয়ে হেসে উঠলো।
মিহির গাল ফুলিয়ে দূরে গিয়ে দাড়ালো।

ছেলের কাছে গিয়ে হাটু মুড়ে বসলো মায়া।
স্কুল ড্রেস খুলে দিতে দিতে বললো,”পুতুল তো ছোট।
ও তো ভালো মন্দ বোঝে না।তবে তোমরা দুজনই ভালো”।

তৎক্ষণাৎ মিহির জবাব দিলো,”তাহলে ও আমার কোলে কাদলো কেন”?

মায়া ছেলের গাল টিপে দিয়ে বললো,”মেহের তো পুতুল কে আগে কোলে নিয়েছিল।তুমি হয়ত মেহেরের থেকে জোর করে পুতুলকে নিয়েছিলে,তাই কেদেঁছে ও”।
আচ্ছা দাড়াও,আমি পুতুলকে আবার তোমার কোলে দিচ্ছি।

মায়া ডান দিকের ঘরের দিকে গেলো।
পুতুল হলো মায়ার মেয়ে।
পুতুলকে কোলে নিয়ে মিহিরের কাছে দিলো।
ছোট্ট পুতুল এবার মিহিরের কোলে উঠে বেজায় খুশি।
ভাইয়ের গলা আলতো করে জড়িয়ে ধরলো সে।

চলবে,,,,,,

(2k লাইক উঠা চাই)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here