রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ,০২,০৩

0
288

#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ,০২,০৩
Mahfuza Afrin Shikha.
[০২]

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে নিকোটিনের ধোয়া উড়াচ্ছে আরাভ। দু-আঙ্গুলের মাঝে সিগারেট নিয়ে কিছুক্ষণ পর পর সেটা ঠোঁটের মাঝে রেখে লম্বাটান দিচ্ছে। এখন আর আগের মতো সিগারেট খাওয়া হয়না। ওই দিনে একটা কিংবা দুটো। অথচ বছর খানেক আগেও দিনে পুরো এক প্যাকেট সিগারেট লাগতো তার। সিগারেটটা ফেলে দু-হাতে মাথা চেপে বেলকনির ইজি চেয়ারে বসে আরাভ। একটা ভুল, মাত্র একটা ভুলের জন্যে কত কিছু হয়ে গেল। চেয়ারে হেলান দিয়ে দুচোখ বন্ধ করে নেয় আরাভ। তখন ওর সামনে এসে দাঁড়ায় অনিমা বেগম। মায়ের আগমনে চোখ মেলে তাকায় আরাভ। মায়ের দিকে কিছুক্ষণ শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে। অনিমা বেগম এখানে কেন এসেছে সেটা তার অজানা নয়। এখন হয়তো ভূমিকে নিয়ে কথা উঠবে, ভূমি অনেক ভালো মেয়ে, সুন্দরী শিক্ষিতা ভদ্র তাহলে কেন সে ভূমিকে বিয়ে করতে চায়না ব্লা ব্লা। এই কয়দিনে অনিমা বেগমের সাথে আরাভের যতবার কথা হয়েছে ততবারই ভূমিকে নিয়ে কথা বলেছেন অনিমা বেগম। মায়ের মুখের অঙ্গভঙ্গি দেখে উঠে দাঁড়ায় আরাভ। না এখন সে ভূমিকে নিয়ে কোন কথাই বলতে চায়না। এমনিতেই এই মেয়ে যখন তখন তার কল্পনায় চলে আসে। এই মেয়ে থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই মঙ্গল। বিড়বিড় করে বলল আরাভ,

” ডেঞ্জারাস মেয়ে একটা।”

আরাভ চলেই যাচ্ছিল তখন অনিমা বেগম বলেন,

” কাল ভূমির সাথে তোর বাগদানটা সাড়িয়ে নিব। কাজের বাহানায় কোথাও যাবি না বলে দিলাম।”

থমকে দাঁড়ায় আরাভ। ভ্র দ্বয়ের মাঝে ভাজ ফেলে প্রশ্ন করে,

” বাগদান, মানে কি?”

” তুই এতটাও ছোট নস যে বাগদান মানে জানিস না।”

” কিন্তু মা,,,,

” কোন কিন্তু টিন্তু জানি না। কাল তোদের বাগদান হবে মানে হবে। আর বাগদান মানেই তো বিয়ে নয়। বিয়ের জন্যে তোরা অনেক সময় পাবি। এই সময়টা দুজন দুজনকে দে। একে অপরকে ভালো করে জান। ভূমি খুব লক্ষি মেয়ে। ওর মতো জিবনসঙ্গী তুই কোথাও পাবি না।”

আরাভ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মনে মনে আওড়ায়,
” তুৃমি কেন বুঝতে চাইছো না আমি আমার এই অনিশ্চিত জিবনে কাউকে জড়াতে চাইছি না। আমি চাইছি না ভূমির জিবনটা নষ্ট করতে। কিন্তু মুখে বলল,

” ভূমি রাজি হয়েছে?”

” হুম।

” ঠিক আছে কাল যাব আমি তোমার সাথে।” কথাটা বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে যায় আরাভ।

পরন্তু বিকালে ফুটপাতের দিকে হাটছে আরাভ। পরনে ব্লু প্যান্ট আর সাদা টি-শার্ট। দুই হাত পকেটে গুজে আনমনে হাটছে সে। পকেটে থাকা মোবাইলটা তখন থেকে বেজেই চলেছে ধরার নাম নেই। কিছুদূর এগিয়ে যেতেই একটা ব্রিজ। আর ব্রিজের উপর কয়েকটা ছেলেকে দেখলো সে। যারা নিজেদের মাঝে কিছু নিয়ে হাসি ঠাট্টা করছে। আরাভ কিছুক্ষণ তাদের দিকে তাকিয়ে রইলো সন্দেহের দৃষ্টিতে। তারপর আবার সামনের দিকে হাটতে শুরু করলো। প্রকৃতিকে জ্যোতির অলংকার পড়িয়ে নিবিড় পায়ে সন্ধা নামে পৃথিবীতে। চারিদিকে হালকা আধার নেমে আসে। সেই আধার গাঢ় থেকে গাঢ় হতে হতে অন্ধকারে তলিয়ে যায় পৃথিবী। কুলায় ফিরা পাখিরা নিজ নিজ ঘরে ফেরে। ব্যাস্ত নাগরী ব্যাস্ত মানুষ বাড়ি ফিরে তাদের ব্যাস্ততার অবসান ঘটিয়ে। আরাভ তার নিজের একান্ত ব্যাক্তিগত ফ্ল্যাটে এসে চেয়ারে গা এলিয়ে দেয়। ভাবনায় ডুবে যায় কিছুক্ষণের জন্যে। তারপর ডাকে,

” তাহমিদ,,,,

পাশের রুম থেকে দ্রুত পায় তাহমিদ বেড়িয়ে আসে। আরাভের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

” তোকে এক অস্থির কেন লাগছে? সব ঠিকঠাক আছে তো?”

” না কিচ্ছু ঠিক নেই। মা আজকাল যা শুরু করে দিয়েছে তাতে আমার আর ভালো লাগছে না।”

” আন্টি আবার কি করলো?”

” এতদিন শুধু বিয়ের জন্যে চাপ দিয়েছে। আর এখন সোজা এনগেজমেন্ট। কাল নাকি আমার এনগেজমেন্ট? আমাকে ও বাড়িতে যেতে হবে।” বিরক্তিতে চ উচ্চারণ করে আরাভ। দু-হাতে মাথা চেপে ধরে। পরক্ষনেই বলে,

” এই ভূমি মেয়েটা তোর পরিচিত তাইনা। মেয়েটার নাম্বার জোগাড় করে দিতে পারবি?”

তাহমিদের মুখটা মলিন হয়ে যায়। বিষণ্ণমুখে পকেট থেকে মোবাইল বের করে দিয়াকে কল করে। তারপর দিয়ার কাছ থেকে ভূমির নাম্বার নিয়ে আরাভকে দেয়। আরাভ মোবাইলে নাম্বার উঠিয়ে উঠে দাঁড়ায়। তাহমিদের কাঁধে হাত রেখে বলে,

” মন খারাপ করিসনা দোস্ত। সব ঠিক হয়ে যাবে। দেখবি একদিন ওই,,,,, আচ্ছা বাকিরা কোথায় রে??” বলেই সামনের দিকে এগিয়ে যায়।

____________________
কফির মগ নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে ভূমি। গরম কফির মগ থেকে ধোয়া উড়ে সেটা মিলিয়ে যাচ্ছে বায়ুর সাথে। ভূমি একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে কফির মগের দিকে। ক্যাফেইন জাতীয় খাবার খাওয়া তার নিষিদ্ধ। তবে আজকাল এই নিষিদ্ধ কাজগুলো করতেই ওর বেশ ভালো লাগে। এতে যেন আনন্দ পায় সে। এই যেমন কাল ওর ইনগেজমেন্ট হবে তাও আবার তারই শিক্ষকের সাথে যাকে কিনা কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিলো। এটা নিয়ে যেন ভূমির কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। অথচ কদিন আগেও আরাভকে বিয়ে করা নিয়ে তার মাঝে ছিলো কত সংশয়। ছাত্রী হয়ে কি করে শিক্ষককে বিয়ে করবে সে। মা-কে সে অনেক বুঝিয়েছে। স্যারকে বিয়ে করলে কলেজের সবাই তাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে। সে কারো হাসির পাত্র হতে চায়না। এত বুঝানোর পরেও তার মায়ের এক কথা। আরাভ ভালো ছেলে। হ্যাঁ মাঝে ভুল করে একটা কাজ করেছে তাই বলে ছেলে হিসাবে খারাপ নয়। তার পরিবারও ভালো। যেহেতু তারা চাচ্ছে আরাভের সাথে ভূমির বিয়ে হোক তাহলে তাই হবে। ভূমির ভাবনার মাঝেই ওর মোবাইলটা বেজে উঠে। আননোন নাম্বার। ভূমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে মোবাইলের দিকে। কপালে তার সুক্ষ্ম ভাজ। দুবার রিং হতেই কল রিসিভ করে ভূমি।

” আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?”

” ওয়ালাইকুম আসসালামু। আমি আরাভ। জুহায়িন আহমেদ আরাভ।”

” ওহ স্যার আপনি। হ্যাঁ বলুন,,,,

আরাভ কিছুক্ষণ চুপ থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর বলে,
” তুমিতো জানো,,, ওহ সরি তুমি করে বলে ফেললাম।”

” ঠিক আছে স্যার। তুমি করেই বলুন।”

” আমাকে বিয়ে করতে তোমার কোন আপত্তি নেই তো। দেখো কাল আমাদের এনগেইজমেন্ট। তুমি কি চাও এই এনগেইজমেন্টটা হোক?”

ভূমি নিরউত্তর। ভালো শ্রোতার ন্যায় আরাভের কথা শুনছে। কিন্ত প্রতিউত্তরে কিছু বলছে না। ভূমিকে চুপ দেখে আরাভ আবার বলল,

” দেখো, বিয়ে কোন ছেলেখেলা নয়। দুটো মানুষের সারাজীবনের ব্যাপার। আর কারো জিবন নিয়ে ছেলেখেলা করার সাধ্যি কারো নেই। তুমি জানো আমি ড্রাগ এডেক্ট। যার কারনে আমি কলেজ থেকে বহিষ্কার হয়েছি। রিহ্যাবেও থেকেছি। আচ্ছা এগুলো নিয়ে তোমার কোন আপত্তি নেই?”

এবার মুখ খুলল ভূমি। গলার স্বার নিচু করে বলল,
” একজন শিক্ষক হিসাবে আপনি বেষ্ট। ছেলে হিসাবেও তাই। তাহলে জীবনসঙ্গী হিসাবেও আপনি বেষ্ট হবেন। একটা মেয়ে হিসাবে এটাই আমার জন্যে যথেষ্ট। আর আপনি এক সময় ড্রাগ এডেক্ট ছিলেন। এখন তো নেই।”

” তাহলে বলছো এই বিয়ে নিয়ে তোমার কোন আপত্তি নেই।”

” আমার সময় চাই।”

” কাল তাহলে এইনগেজমেন্ট হচ্ছে?”

কোন জবাব না দিয়ে কল কেটে দেয় ভূমি। মোবাইলের দিকে একপলক তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করে বলে,

” সরি স্যার, জানি আপনি আমাকে বেহায়া ভাবছেন। আমি যে নিরুপায়।

_______________________
লিভিং রুমে বসে টেলিভিশনে খেলা দেখছে তাহমিদ সোহান রেদওয়ান আর তুহিন। বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডের লাইভ লেখা হচ্ছে। সামনে টেলিভিশনে লাইভ খেলা চললেও লিভিং রুম দেখে মনে হচ্চে এখানে ছোটখাটো টর্নেডো হয়ে গেছে। পুরো রুমজুরে টিপস্ পপকন আর সিগারেটের প্যাকেটের ছুড়াছুড়ি। আরাভ লিভিং রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ চুপকরে দাঁড়িয়ে থাকে। বরাবর পরিপাটি থাকা এই ছেলেটা বন্ধুমহলে এলে পুরো এলোমেলো হয়ে যায়। রুমে চোখ বুলিয়ে তাহমিদের পাশে গিয়ে বসলো আরাভ। তাহমিদ ওর আধো খাওয়া সিগারেট আরাভের দিকে বাড়িয়ে দিলো। আরাভ সিগারেটের দিকে তাকিয়ে বলল, ” মুড নেই।” সোহান টোন কেটে বলল,

” তা তোর পাত্রী কি এমন বলল যে, সিগারেটের নেশাও উরে গেলো।”

তুহিন বলল,
” হ্যাঁরে কি বলল ভূমি। বিয়েতে না করে দিয়েছে তো। আমি জানতাম এমনটাই হবে।”

আরাভ তুহিনের মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,
“ম্যাডাম বিয়েতে রাজি।”

ম্যাডাম, টোন কেটে বলল, রেদওয়ান। বাহ্ ছাত্রী থেকে পাত্রী। এখন আবার মেডাম। প্রেমে পড়েগেলে নাকি ব্রো।

” প্রেম।” অধোর চেপে বলল আরাভ। এটাও সম্ভব।”
” অসম্ভবের তোর কিছু নেই।”

আরাভ কিছু বলল না। কুশন বুকে জড়িয়ে খেলা দেখায় মনোযোগ দিলো। পাশ থেকে তাহমিদ বলল,
” রাতে এখানেই থাকবি আজ।”
” আছি।” বলেই চোখ বন্ধকরে নেয় আরাভ। আর তখনি চোখের সামনে ভেসে উঠে মিষ্টি কালার সেলোয়ার কামিজ পরিহিত এক যুবতী। মেয়েটা আরাভের সাথে কথা বলছে কিন্ত আরাভ মেয়েটার কোন কথাই শুনতে পাচ্ছে না। আরাভের চোখ স্থির হয়ে আছে আছে যুবতী মেয়েটার চোখে। গভীর কালো চোখের মনিতে আরাভ থমকে গেছে। অধোর ফুটে উঠে মৃদু হাসি। পাশে থাকা সবাই সন্দিহান চোখে তাকিয়ে আছে আরাভের হাসিমাখা মুখের দিকে।

চলবে,,,,,,
Mahfuza Afrin Shikha.

#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[০৩]

মোবাইল হাতে নিয়ে বিছানায় বসে আছে ভূমি। চোখমুখে তার একরাশ বিস্ময়তা। কিছুক্ষণ আগেই দিয়াকে কল করেছিল সে। দিয়া তখন কলেজে ওর বয়ফ্রেন্ডের দেওয়া চকলেট খাচ্ছে। ভূমি কল করতেই দিয়া তাড়া দিয়ে বলল,

” বিয়ে করছিস তাও আবার আরাভ স্যারকে। একথা আমাকে আগে বলিসনি কেন?

” আগে জানলে কি করতি?

” বিয়েটা ভেঙে দিতাম। ওই খচ্চর স্যারটা নিশ্চয় তোকে জোর করে বিয়ে করছে। দাঁড়া আমি ওর ব্যাবস্থা করছি।

” এই দিয়ু কি করবি তুই?

” আমি কিছু করবোনা। যা করার গুন্ডারা করবে। গুন্ডারা ওই খচ্চরটাকে তুলে নিয়ে হাত পা গুড়া করে বিয়ের সাধ গুচাবে। বেটা খচ্চর নিজেকে ভাবেকি হুম? নিজেতো ড্রাগস এডেক্ট। নিশ্চয় নেশার জোরে তোকে বিয়ে করতে চাইছে। শুন তুই একদম ভয় পাবি না। তোকে বেশী জোর করলে তুই আমার বাড়িতে চলে আয়। শহরের সবচেয়ে ভালো ছেলে দেখে আমি তোর বিয়ে দিবো।

” কার বিয়ে দিবেন আপনি?”

সুস্পষ্ট গম্ভীর কারো কন্ঠশ্বর শুনে থেমে যায় দিয়া। গলার শ্বরটা দিয়ার পরিচিত। হ্যাঁ খুব করে জানে এটা কার কন্ঠশ্বর। এই রুক্ষ কন্ঠশ্বরের মালিক সেদিন দিয়াকে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছিলো। কান থেকে মোবাইল নামিয়ে পিছনের দিকে ঘুরে তাকায় সে। সামনে আরাভকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাথা নিচুকরে নেয় দিয়া। তবে কি স্যার সবটা শুনে ফেলল। আড় চোখে একবার আরাভের দিকে তাকালো দিয়া। আরাভ আবার প্রশ্ন করলো,

” কার বিয়ের ঘটকালি করছেন?”

” আ- আমার ফ্রেন্ড। আ আসলে স্যার ওকে বাসা থেকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছে তাই বলছি বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে।”

আরাভ দিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। কিছু একটা আন্দাজ করে অধোর কামড়ে ধরে। দিয়ার ফ্রেন্ড। সেই ফাস্ট ইয়ার থেকে দিয়াকে শুধু ভূমির সাথে মিশতে দেখেছে। আর বিয়ে? ভূমির বিয়ে। আচ্ছা দিয়া কোনভাবে ভূমির কথা বলছে না তো। তাহলে ভূমিকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আরাভের ভাবনার মাঝেই কেটে পরে দিয়া। আরাভ দিয়াকে কিছু জিগ্যেস করবে দেখে দিয়া নেই। বিরক্তিতে চ উচ্চারণ করে কলেজের বাহিরে চলে যায়। রাস্তার পাশে কিছুক্ষণ পাইচারি করে আরাভ। ভূমি তাহলে পরিবারের চাপে পরে বিয়েতে রাজি হয়েছে। আর কিছু ভাবতে পারছে না আরাভ। নিজের ভবিষ্যৎ হিসাবে অজ্ঞাত আরাভ নিজের মন আর মাথার সাথে পেরে উঠছে না। মন বলছে ভূমিকে কাছে টানটে আর মস্তিষ্ক বলছে ভূমির থেকে নিজেকে দূরে রাখতে। ভূমির বিশ্বাস নিয়ে খেলতে পারবে না সে। নানান নেগেটিভ চিন্তা ঝেকে বসেছে মাথায়। সবশেষে সিদ্ধান্ত নেয় সে আজ ভূমিদের বাড়ি যাবে না। স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে চলে যায় নিজের একান্ত ব্যাক্তিগত ফ্ল্যাটে। ড্রয়িংরুমের সুফায় গা এলিয়ে দিতেই সোহানের চিৎকারের আওয়াজ পায়। আরাভ উঠে দ্রুত একটা রুমের ভিতরে প্রবেশ করে।

_____________________
সন্ধা সাতটায় ভূমিদের বাড়ি পৌঁছায় আরাভ। সাথে তুহিন আর তাহমিদ। সারাদিন কাজ আর দুঃচিন্তায় মাথা ব্যাথা করছে তার। তার উপর অনিমা বেগমের রাগী রাগী কথা আরাভের মাথার যন্ত্রণা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বিকালে দিকে কাজ শেষ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই দুচোখে নিদ্রা নেমে আসে। ঠিক কতক্ষণ ঘুমিয়েছে জানা নেই তার। চোখ মেলে তাকাতেই দেখে তাহমিদ ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাহমিদের পরনে আজ ফরমাল পোষাক। আরাভ লম্বা হাই তুলে উঠে বসতে বসতে বলল,

” কোথাও যাচ্ছিস? ”

তাহমিদ কোন জবাব না দিয়ে আরাভের মোবাইলটা এগিয়ে দিলো। আরাভ মোবাইল হাতে নিতেই অবাক হয়ে যায়। মা, নাম্বার থেকে ষোলোটা মিসড কল। তাড়াতাড়ি কল ব্যাক করে আরাভ। অনিমা বেগম কল রিসিভ করেই ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠেন,

“তোমার কাণ্ডজ্ঞান কোন দিন হবে না। সকালে আসতে বললাম বললে, ক্লাস আছে। দুপুরে বললাম তখন বললে, কাজ করছি বিকালে আসবো। আর বিকালে ফোন করলাম তুমি রিসিভ করলে না। বলছি আমার সম্মানের কথাটা একটু ভাবোনা নাকি। সবসময় নিজের মর্জিমাফিক চলবে। আমি ভূমিদের বাড়িতে আছি। তোমাকে আধঘণ্টা সময় দিলাম এর মধ্যে তোমাকে এ বাড়িতে দেখতে চাই।” বলেই কল কেটে দিলেন অনিমা বেগম।

মোবাইল রেখে তাহমিদের দিকে তাকায় আরাভ। তাহমিদ শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বলে,

” তোকে পাচ মিনিট সময় দেওয়া হলো এর মধ্যে রেডি হয়ে চলে আসবি। আমরা ড্রয়িংরুমে অপেক্ষা করছি।”

” আমরা মানে? তুইও যাবি নাকি?”

” হুম, তুহিন ও যাচ্ছে।” তাহমিদ রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। আরাভ দু-হাতে চুল টেনে ধরে বিড়বিড়ায়, ” আমি যতই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি ততটাই গভীরভাবে জড়িয়ে পড়ছি। ডেঞ্জারাস মেয়ে একটা।”

সকাল থেকেই ব্যাস্ত ছিলেন রোজিনা হোসাইন। একমাত্র মেয়ের এইনগেজমেন্ট বলে কথা। কোন কিছুরই ত্রুটি রাখতে চাননা তিনি। ভোরে উঠে নামায পরে ইউনুছ হোসাইনকে বাজারে পাঠান আর নিজে বাড়ির সব কাজ করেন। ইউনুস হোসাইন বাজার থেকে ফিরলে তিনি রান্না শুরু করে দেন। আরাভদের দুপুরে আসার কথা ছিলো তাই তিনি দুপুরের মাঝে সব রান্না শেষ করেন। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয় কিন্ত আরাভদের আসার কোন নামই নেই। ভূমির এইনগেজমেন্ট উপলক্ষে আসা বাড়ির বাড়ি ভর্তি মেহমান। পাত্র পক্ষ না আসার কারনে তারা নানা কথা বলতে থাকে। তারপর যে যার মতো খাওয়া দাওয়া করে সন্ধা নামার আগেই বাড়ি চলে যায়। থেকে যায় শুধু ভূমির দুই ফুবাতো বোন আর একটা মামাতো বোন। সন্ধায যখন অনিমা বেগম কল করে বলে তারা আসতেছে তখন রোজিনা হোসাইন আবার নতুন করে সব রান্না করেন। সকাল বেলা অনেকগুলা আইটেম থাকলেও এবার শুধু মাত্র তিনটা আইটেম করেছেন তিনি। তুহিন খেতে বলে বলল,

” দোস্ত তোর শ্বশুর বাড়ির লোকজন বোধহয় অনেক কৃপণ। আজ মেয়ের এইনগেজমেন্ট কোথায় ভালো ভালো রান্না করবে তা না করে শুধু ডিম মাংস আর ডাল রান্না করেছে।”

আরাভ চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। তুহিনের কথায় কান দিলো না। তাহমিদ বলল,

” দুপুরে আসার কথা বলে রাতে আসছো। কপালে ডাল আর মাংস জুটছে এটাই অনেক।”

তুহিন অসহায় মুখ করে আরাভের দিকে তাকালো। ব্যাচেলর ফ্ল্যাটে থাকে বলে ভালোমন্দ রান্না করে খাওয়া হয়না। ওই মাঝেমাঝে অনলাইন এ অর্ডার করে যা খায়। ভেবেছিল আরাভের এইনগেজমেন্টে এসে তৃপ্তি সহকারে খাবে সেটাও হলো না।

খাওয়া দাওয়ার পর্ব মিটিয়ে সবাই ড্রয়িংরুমে গল্পে মশগুল। আরাভ তাহমিদ আর তুহিন একপাশে। অনিমা বেগম রোজিনা হোসাইন আর ইউনুস হোসাইন একসাথে বসে কথা বলছেন। আরাভ গল্প করলেও ওর মন বারবার ভূমির সাথে দেখা করতে চাইছে। সকালে দিয়ার কথাগুলো শুনার পর থেকে ভূমির সাথে কথা বলার জন্যে উসখুস করছে। বারবার আশপাশ তাকাচ্ছে আরাভ।

রাত প্রায় সারে এগারোটা। এমনসময় ড্রয়িংরুমে ভূমিকে নিয়ে আসা হয়। ভূমির পরনে আজ মিষ্টি কালারের শাড়ী। মুখে হালকা মেকাপ চোখে গাঢ় কাজল। ঠোটে গাঢ় লিপস্টিক। দু-হাতে রেশমি চুড়ি। মাথায় কৃষ্ণভ্রমরের মতো রাশি রাশি চুল দোলানো কোমড় অব্ধি। ভূমিকে দেখে স্ট্যাচু হয়ে বসে থাকে আরাভ। অপলক দেখে যাচ্ছে। চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেছে আরাভ। ভূমি যতই তার কাছে আসছে আরাভের হার্ট ততদ্রুতই বিট করছে। ভূমি সাথে ওর কাজিন রেশমা এসে বসে ওদের অপজিট পাশে। আরাভের চোখ আটকে যায় ভূমির গলায় থাকা ব্রাউন কালারের তিলে। কেপে উঠে আরাভ। শুকনো ডুক গিয়ে নিজের দৃষ্টিকে সংযত করে নিচের দিকে তাকায় সে।

আধঘণ্টার মাঝে এইনগেজমেন্ট সম্পন্ন হয় ওদের। তারপরেই বাড়ি ফিরে। যদিও এইনগেজমেন্টের পরে আরাভ আর ভূমিকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কথা বলার জন্যে। আরাভ সোজা নিজের কাজের বাহানা দেখিয়ে সেখান থেকে চলে আসে। ঘুমানোর জন্যে চোখ বন্ধ করতেই চোখের সাথে ভেসে উঠে শাড়ি পরিহিত ভূমি। তারপরেই চোখ আটকে যায় ভূমির গলার তিলে। ধড়ফড় করে উঠে বসে আরাভ। পাশ থাক গ্লাস থেকে পানি খেয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে ভূমিকে একটা মেসেজ করে,

” তোমার গলার তিনটা বড্ড নেশাতুর। যতবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে ততবারই আমার তৃষ্ণা আড়িয়ে দিচ্ছে।”

মেসেজ সেন্ড করার কয়েকমুহূর্ত পর মনে পড়লে ও কি লেখেছে। তাড়াতাড়ি মেসেজটা ডিলিট করতে যায় তখনি দেখে ওপাশে মেসেজ সিন হয়েছে। অধোর কামড়ে ঠোট চেপে ধরে আরাভ।তারপর মোবাইল বন্ধকরে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।

চলবে,,,,,,,,

Mahfuza Afrin Shikha.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here