#রোদেলা
লেখা: #মাহাবুবা_মিতু
পর্ব: ৬
গতকাল রাতে নাতাশা ফোন করেছে। বিয়ের পর কল্লোলের সব কাজিন আর ফ্রেন্ডরা মিলে একটা গেটটুগেদার করবে। রোদেলা আর প্রিসিলা যেন এসে পরে। এবার আর এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হলো না, তাছাড়া গেটটুগেদার হবে একটা রেস্টুরেন্টে।
ওরা দুই বোন রেডি হলো, সাথে নোভেলও যাবে। কিন্তু শেষে নোভেল গেলো না, কি নাকি কাজ আছে ওর। রাগে গজগজ করতে থাকে রোদেলা। এত দূর একা কিভাবে যাবে। ও থাকলে ভালো হতো, ফিরতে ফিরতে তো রাত হয়ে যাবে। মা নোভেলের সাথে কথা বলতে গেলো। কি কথা বললো তারাই জানে, মুখের ভাব দেখেই বুঝলো ওকে রাজি করাতে পারেন নি তিনি। এসে বললেন-
তোরা সিএনজি করে চলে যা, ফিরবার সময় কল্লোল তোদের গাড়ি করে পৌছে দিবে বলেছে। উনি গেলো নোভেলর খবর নিতে, ফিরলো কল্লোলের খবর নিয়ে, চতুরতার সাথে এড়িয়ে গেলো নোভেলের ব্যাপারটা। অথচ ওদের দুই বোনের ছোট থেকে ছোট দোষকে বিশাল করে তুলে সবার কাছ, নিজে তো বলেই আবার তার বোন এল তাকে দিয়েও শোনায় দ্বিতীয় দফা। সন্তানের দোষ ভুল ঢাকবার ফালতু সময় তার হয়তো নেই। আসলে তারও দোষ নেই। মানুষ একটা,মাথাও তো একটাই, এই এক মাথায় সংসারের ঝামেলা, নোভেলের প্রতিদিন করা দোষ ঢাকা, ওর খোঁজ খবর রাখা, কই গেলো, কি খেলো, কখন ফিরলো, তার উপর
অসুস্থ মায়ের সেবা করা তো আছেই, এর পর আর কিছু কি সময়, ধৈর্য, ভালোবাসা অবশিষ্ট থাকার কথা….?
দিন দিন যে নোভেল অমানবিক হচ্ছে তা তিনি বুঝতে পারছে না। বলতে গেলে ওকে অমানবিক করে গড়ে তুলছেন তিনি নিজেই। নোভেল সবার সাথে খুব বাজে ব্যাবহার করে, কারো সাথে শান্ত ভাবে ভদ্র ভাবে কথা বলেনা। খারাপ ব্যাবহারকে ও অস্ত্র বানিয়ে নিয়েছে। এমন একটা পরিস্থিতি যে ও যা চায় বা করে কেও ওকে কিছু বলে না, অসম্মানের ভয়ে। ও মানুষজন দেখে না কুকুরের মতো ব্যাবহার শুরু করে দেয় সবার সাথে। তাই সবাই ওকে এড়িয়ে চলে।
রোদেলার মা যে ওকে শেল্টার দেয়, তাকেও আজকাল পাত্তা দেন না, চিৎকার চেচামেচি করে কথা বলেন। আর তিনি বিড়ালের মতো চলে আসেন ধীর পায়ে। দুনিয়ার এই এক জায়গায় নাস্তানাবুদ তিনি। ও এখন বসে কম্পিউটারে গেমস খেলছে, ওকে তিনি বুঝাতে পারলেন না, অথচ নতুন জামাইকে ফোন দিয়ে ঠিকই বুঝাতে পারলেন ওদের পৌঁছে দিতে।
দুনিয়াটা গোল, যেখান থেকে হাঁটা শুরু পৃথিবীর বুকে সেখানেই পথ শেষ। চক্রাকার এই পথে যে কাজই মানুষ করে ভালো কি মন্দ পৃথিবীর পথ ঘুরে তা তার কাছেই ফিরে আসে। আসতেই হয় তাকে…
সিএনজি করে বেইলী রোড পৌঁছাতে সময় লাগলো বেশ, রেস্টুরেন্টে পৌছাতে বাজলো সাড়ে ছয়টা… ভাগ্যিস কল্লোল ভাই পৌঁছে দিবে বলেছেন তা না হলে এত দূরে এ সময় আসা কল্পনাতীত। ওরা পৌছে দেখে সবাই অলরেডি এসে উপস্থিত। ওরাই সবচেয়ে দেরী করে ফেলেছে। সবার সাথে পরিচয় করানো শেষে ফটোসেশান চললো বেশ কিছুটা সময়। কল্লোল ভাইয়ের এক বন্ধু বললো এই যে বিয়াইন সাহেবা আসেন একটা সেলফি তুলি। রোদেলা প্রিসিলাকে সাথে নিয়ে সেলফি তুললো। কল্লোলের এক কাজিন শোভন পেছন থেকে বললো – হ্যারে কল্লোল শালী নাকি আধা ঘর বালী হয়, রোদেলা ম্যাডাম তো ভাবীর বড় বোন উনি তাহলে কি…. পুরো ঘরবালী নাকি….
বলে হেসে গড়িয়ে পরলো তিনি, তার সাথে যোগ দিলো সকলে। রোদেলা এ পরিস্থিতি দেখে এমন হাসি হাসলো, এত শব্দ করে সবাই ওর সাথে মজা নিবে কি ও নিজেই খুব মজা করলো, বললো এখনকার দিনে এসব কোন সমস্যা না…
প্যারা নাই চিল…..
ও যে এত মজার একটা মানুষ। কল্লোল জানতো না, ওর ওই কাজিনকে মাথায় হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো সাবধান…. আমার শ্বশুর বাড়ির লোক, শুনে সবাই একসাথে আবার হেসে উঠলো…
অনেক সুন্দর একটা সন্ধ্যা কাটলো ওদের। একেবারে আলাদা, সারাজীবন মনে থাকবে এই সন্ধ্যা। সবাই যার যার মতো করে চলে গেলো। কল্লোল ভাই ওদের পৌছে দিতে চাইলো, ওরা বললো আপনার আসতে হবে না, ড্রাইভারকে বলে দিলেই হবে। শেষে শোভন ওদেরকে পৌঁছে দিলো বাড়ি পর্যন্ত। রোদেলার মামী রাতে খেয়ে যেতে বললো। মাত্র খেয়ে আসার কারনে কিছু খেতে পারলো না শোভন। তাই সবার সাথে কথা বলে রোদেলার মায়ের তৈরি কফি খেয়ে বিদায় নিলো।
ফ্রেশ হয়ে পরের দিনের জন্য ব্যাগ গুছিয়ে রাখলো রোদেলা। প্রিসিলা ফ্রেশ হয়েই শুয়ে পরলো। রাতে ডায়রী লিখলো রোদেলা, ওর আগে নাতাশার বিয়ে হওয়া নিয়ে আজ প্রথমবারের মতো কষ্ট হলো ওর। আত্মীয়দের অনেকেই আড়ালে আবডালে হাসে, কেও বা সহানুভূতি জানায় আহারে…
এমন দুই পরিস্থিতির একটাও চায় না রোদেলা। কষ্টে ওর কান্না পায়। মায়েরা নাকি সব বুঝেন। কিন্তু এই কষ্টের খবরও জানেনা ওর মা, ওদের মা-টা এমন কেন। দুনিয়ার সবার কষ্টে সে বুক ভাসায় আবেগে, খবরে কোন দূর্ঘটনা দেখলে হাপুস নয়নে কাঁদে, দোয়া করেন তাদের জন্য নফল নামায পড়ে। আর ওদের কষ্ট ওদের মাকে কেন ছুঁতে পারেনা…..?
মেঝ খালামনি বলেন কি যে বলিস তোরা ভালো কি নাই বাসে, লাফ দিয়ে কি বড় হয়ে গেছিস…
ঠিকই বাসে তোদের, তবে ওর প্রকাশ ক্ষমতা কম। তাছাড়া সারাজীবন কষ্ট করতে করতে মেজাজটা বেড়েছে। দেখিস না আমাদের ভাইবোনের সাথেই কেমন করে,
একই…
অনেক রাতে ঘুম আসে রোদেলার, সাথে সেদিনের স্বপ্নটাও । আজ ওরা চন্দ্রিমা উদ্যানের সামনে কৃষ্ণচূড়া বিছানো পথটাতে হাটে হাত ধরে। হাসি আর কথায় পথ চলতে চলতে দুজনে কত রঙিন স্বপ্ন বুনে ভবিষ্যতের। রোদেলাকে আগের জীবণের গল্প বলতে দেখা যায়। ওর মা বাবা, ওদের লাঞ্চিত জীবণ, মায়ের ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্ট সব বলে রোদেলা। ওর বর ওর হাতটা ধরে সব ভুলে যেতে বলে, ক্ষমা করে দিতে বলে বাবা-মা দুজনকেই। বলে কষ্টের পর্ব শেষ তোমার রোদেলা, ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি কষ্ট যেন তোমায় না ছুঁতে পারে, আমি যেন এমন একটা জীবণ দিতে পারি তোমায়। রোদেলা কাঁদে এমন কথা শুনে। জীবণে কেও কখনো ওর কষ্টটাকে এত গভীর ভাবে দেখতে পারে নি। বাস্তবের রোদেলা স্বপ্নে অনেক চেষ্টা করে ওর বরের চেহারাটা দেখার কিন্তু পারে না…
গত বেশ কয়েক দিন ধরে এমনি আসছে ও। ঘুম ভাঙলে সব মনে থাকে শুধু মানুষটাকেই অদেখা রয়ে যায়…. স্বপ্নে জীবণটাকে অনেক সুন্দর মনে হয় রোদেলার। ঘুম ভেঙে ভাবে সত্যিই কি কেও আসবে যে ওকে ভালোবাসায় আগলে রাখবে….
চলবে….
previous :
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/1478648092596377/
Next:
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/1487208481740338/