শুধু তুমি 💞 পর্বঃ- ১০ Samira Afrin Samia #নিপা

0
334

শুধু তুমি 💞
পর্বঃ- ১০
Samira Afrin Samia
#নিপা

তার পর কি হলো আপু? (লিনা)
তনা এতক্ষণ অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো লিনার কাছে বলছিল।
— তার পর? তার পর তোর ভাইয়া আমাকে আচ্চা করে বকা দিছে। অনেক গুলো কথা শুনিয়েছিল সেদিন।
— ভাইয়া তোমাকে বকা দিছে? তাহলে কি ভাবে কি হলো বলো না আপু।
— তোর ভাইয়ার থেকে আমি কম যাই নাকি। যতদিন পর্যন্ত তোর ভাইয়া না মানছে ততদিন তোর ভাইয়ার পিছু ছাড়ি নি। জীবনের প্রথম ভালোবাসা বলে কথা। এতো সহজেই হার মেনে নিতাম নাকি?
অনেক দিন নীলের পিছু পিছু ঘুরে এটা সেটা কত কিছু বুঝিয়ে কত বকা খেয়ে কত কান্না করে অবশেষে ওর ভালোবাসা পেয়েছি। তোর ভাইয়া রাজি হওয়ার পর আমার আব্বু কিছুতেই মানছিল না।
— আঙ্কেল কি ভাইয়া কে পছন্দ করতেন না?
— নীল প্রথম যেমন ছিল। সেই নীলকে তো সবাই পছন্দ করতো। কিন্তু ওই যে বললাম না। ছ্যাকা খাওয়ার পর পুরো দেবদাস হয়ে গেছিল। ওই রকম দেবদাস কে কেউ কি ভাবে পছন্দ করবে। আর কি ভাবে তার মেয়েকে একটা ছ্যাকাখোর বেকার ছেলের হাতে তুলে দিবে?
— তাহলে পরে আঙ্কেল কেমন করে রাজি হলো?
— নীলের মত ঘাড় ত্যারা লোক কে যদি সোজা করতে পারছি। তাহলে আব্বু কে রাজি করানো এমন কি কঠিন কাজ ছিল। আব্বুর একমাত্র মেয়ের পছন্দ খারাপ হলেও না করতে পারেনি। প্রথমে না করছিল পরে আমার কথা ভেবে রাজি হয়ে গেছে।
— তুমি পারো ও আপু। তুমি আগে এতো চঞ্চল ছিলে তা এখন তোমাকে দেখে বুঝা ই যায় না। আর মেঘা আপু এখন কোথায়?
— না পারলে কি তোর ভাইয়া কে আমার করে পেতাম? এখন গৃহিণী হয়ে গেছি রে বোন। পুরো দিন বাসায় একা থেকে সব চঞ্চলতা কোথায় যে পালাইছে তা আল্লাহ ই জানে। মেঘা এখন একটা জব করে। ওর হাজবেন্ড তো নীলের সাথে ই বিজনেস করে।
— ভাইয়া আগে আনিকা নামের ওই মেয়েটা কে ভালোবাসতো?
— হুম।
কিন্তু আনিকা চলে যাওয়ার পর। তোর ভাইয়া কে আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করি। আনিকা ওকে ছেড়ে চলে গেছে। তার জন্য একদম দেবদাস হয়ে গেছিল। বজ্জাত একটা। আমাকে কত দিন ওর পিছনে ঘুরাইছে। কতো কষ্ট দিছে আমাকে।
— এখন তো ভাইয়া তোমার জন্য পাগল। তোমাকে না দেখে এক মুহূর্তে ও থাকতে পারে না।তোমাকে কত ভালোবাসে।ভাইয়ার তো মনে হয় এখন ওই আনিকার কথা মনে ও নেই। সবই তো তোমার কামাল আপু।
আপু তুমি আনিকা কে দেখছো? এখন আনিকা কোথায়?
আনিকার কথা শুনে তনার মুখটা কালো হয়ে গেল। আনিকা তো আবার ফিরে এসেছে ওদের লাইফে।
— আগে আনিকা কে কখনও দেখিনি। কিন্তু কিছু দিন আগে শপিং মলে আনিকার সাথে দেখা হয়ে যায়। ওর নাকি ডির্বোস হয়ে গেছে।
— কি বলো আপু? তাহলে এখন কি ও আবার ভাইয়ার কাছে আসবে?
— তোর কি মনে হয়। তোর ভাইয়া আমাকে রেখে আনিকা কে ওর লাইফে ফিরিয়ে আনার কথা কল্পনা ও করবে?
— না আপু। ভাইয়া এমন কিছুই করবে না। আমি দেখছি তো ভাইয়া কে।ভাইয়া তোমাকে অনেক ভালোবাসে। নিজের থেকে ও বেশি।
— হুম পাকা বুড়ি এবার তো সব শুনা হয়েছে। চল নিচে যাই। রাতের জন্য রান্না করতে হবে না? তোর ভাইয়া তো একটু পরেই অফিস থেকে চলে আসবে।
— তুমি একদম চিন্তা করো না আপু।আমি মুহূর্তের মধ্যে সব রান্না সেরে ফেলবো।
— হুম পারবি ই তো। তুই তো পাক্কা গৃহিণী।
— ধুর আপু তুমি সব সময় শুধু আমার মজা নেও।
তনা নিচে এসে নিজের রুমে চলে আসলো।আনিকার কথা মনে হওয়ায় তনার কষ্ট হচ্ছে। না কষ্ট বললে ঠিক হবে না। অজানা একটা ভয় হচ্ছে। ঐ দিন তো আনিকার সাথে দেখা হয়েছিল। তার পর আনিকা কোথায় গেছে তা তো আর জানা হলো না। তনা বেডে হেলান দিয়ে বসে এগুলো ভাবছে। কখন তনার চোখ লেগে গেল।তা তনার খেয়াল নেই। রাতে নীলের ডাকে তনার চোখ খুললো। নীল অফিস থেকে এসে তনা কে দেখতে না পেয়ে লিনাকে জিঙ্গেস করলে।লিনা বললো তনা রুমে আছে।
নীল তনার পাশে বসে
— কি হলো সন্ধ্যা থেকে নাকি রুম থেকে বের হওনি।কি হয়েছে। শরীর খারাপ লাগছে?
— কিছুই হয়নি। একটু ঘুমিয়ে গেছিলাম।
— তুমি তো দিনের বেলা তেমন একটা ঘুমাও না।
— আজ বিকেলে একটু শুয়ে ছিলাম। কখন যে চোখ দু’টো লেগে গেল। বুঝতেই পারিনি।
নীল তনার হাত ধরে
— তনা কোন কিছু নিয়ে কি তোমার মন খারাপ। তোমাকে এতো আপসেট লাগছে কেন?
তনা জানে ও নীলের থেকে কিছু লুকাতে পারে না। নীল ঠিকই তনার মনে কি চলছে তা বুঝে যায়।তনার চোখের দিকে তাকিয়ে নীল ওর না বলা প্রতিটা কথা খুব সহজেই বুঝে নিতে পারে। তাই তনা আর বৃথা চেষ্টা করলো না। তনা চাইলে ও নীলের চোখে ফাঁকি দিতে পারবে না।
তনা নীলের বুকে মাথা রেখে
— নীল ঐ দিনের পর কি আনিকার সাথে তোমার দেখা হয়েছে?
নীল এমন কিছুই আন্দাজ করে ছিল। আনিকার কথা মনে করেই হয়ত তনার মন খারাপ। নীল তনার মাথায় হাত বুলিয়ে।
— হঠাৎ করে আনিকার কথা মনে পড়লো কেন?
— এমনি। তুমি বলো না আনিকার সাথে কি তোমার দেখা হয়?ও এখন কোথায় থাকে?
আনিকা নীলের অফিসে জব করে এটা জানলে তনা নীলকে নিয়ে আরো টেনশন করবে। তাই নীল তনার কাছে সত্যি টা বললো না। শুধু শুধু তনাকে টেনশনে ফেলতে চায় না নীল।
— আনিকা তো মনে হয় ওর বাবার বাসায় ই থাকে।
— আনিকার সাথে কি তোমার দেখা হয়?
নীল তনার কাছে মিথ্যে বলতে পারে না। কিন্তু সত্যি টা ও বলার সাহস হচ্ছে না। তনা এমনিতেই নীলকে হারানোর ভয়ে থাকে। এখন যদি তনা জানতে পারে আনিকা সব সময় নীলের সাথে নীলের সামনেই থাকে। তাহলে তনা কিছুতেই ভালো থাকবে না। টেনশন করে শরীর খারাপ করে ফেলবে। নীল মনে মনে একথা গুলো ভাবছে। নীলকে চুপ থাকতে দেখে তনা আবার জিঙ্গেস করলো।
— কি হলো চুপ করে আছো কেন? বলো।
— না। আনিকার সাথে আমার দেখা হয় না।
— ওহ। তুমি তো অফিস থেকে এসে ফ্রেশ হও নি।যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।
— হুম।
নীল ফ্রেশ হতে চলে গেল। তনার কাছে মিথ্যা বলা নীলের ঠিক হয়নি পরেও নীল তনাকে সত্যি টা বলতে পারলো না। বলতে পারলো না আনিকা যে নীলের অফিসে ই জব করে। পরে তনা এটা জানতে পারলে হয়ত খুব রাগ করবে। তনা যখন জানতে পারবে নীল ওকে মিথ্যা বলেছে তখন নীল তনাকে কিভাবে বুঝাবে এটা নিয়ে নীলের অনেক ভয় হচ্ছে।

রাতে খাবার জন্য তনা নিচে যায় নি। নীল ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। লিনা খাবার দিচ্ছে। কিন্তু তনার যাওয়ার নাম নেই।
— লিনা তোমার আপুর কি হয়েছে বলতে পারো?
— কেন ভাইয়া। আপুর আবার কি হবে?
— দেখো না। নিচে আসছে না। ওর সাথে কথা বলে মনে হলো ওর মন ভালো না। আর কোন কিছু নিয়ে হয়ত চিন্তিত আছে।
— হুম ভাইয়া। আপু আজ পুরো সন্ধ্যায় নিচে আসেনি। একবার আপুকে ডাকতে আপুর রুমে গেছিলাম। গিয়ে দেখি আপু ঘুমাচ্ছে তাই আর ডাকি নি।
ভাইয়া,,,,?
— হুম বলো।
— আপু তোমাকে অনেক ভালোবাসে। আপু সারাক্ষণ তোমার কথাই চিন্তা করে। আজ তো আপু আনিকা আপুর কথা ও বলেছে অনেক বার। আপু তোমাকে হারাতে চায় না। আপু তোমাকে হারালে হয়ত পাগল ই হয়ে যাবে।
লিনার মুখে আনিকার নাম শুধু নীল কিছুটা অবাক হয়ে। লিনা কে জিঙ্গেস করলো।
— লিনা তুমি আনিকার কথা কি ভাবে জানো?
— আপু বলেছে।
— ওহ।
নীল এবার তনার মন খারাপের আসল কারণ বুঝতে পারলো। অতীতের কথা গুলো নিয়ে তনা আবার ঘাটাঘাটি করেছে। তাই তো এমন মনমরা হয়ে আছে। মেয়েটা কে নিয়ে আর পারলাম না। পাগল একটা। এখনো ও আনিকা কে নিয়ে টেনশন করে। নীল উঠে উপরে চলে আসলো। তনা এখনও শুয়ে আছে। নীল এসে সোজা তনাকে কোলে তুলে নিলো।
— নীল কি করছো। এভাবে কোলে নিলা কেন?
— নিচে যাচ্ছ না কেন? কখন থেকে বসে আছি তোমার জন্য। কিন্তু তুমি তো যাচ্ছই না। আমার অনেক খোদা লাগছে। চলো খেতে যাবো।
— নীল আমি খাবো না। তুমি যেয়ে খেয়ে নেও।লিনা কে বলো তোমাকে খাবার দিতে।
— খাবো না মানে? কেন খাবে না।
— আমার খিদে নেই।
— খিদে নেই বললেই হলো। তোমার খিদে আছে নাকি নেই তা আমি বুঝবো। আর তুমি তো এটা খুব ভালো করেই জানো তোমাকে ছাড়া আমি কখনও খায়নি। এখন তুমি যদি চাও আমি না খেয়ে থাকি। তাহলে তোমার ও খেতে হবে না।
নীল এটা বলে তনাকে কোল থেকে নামিয়ে চলে যেতে নিচ্ছিল। তনা বুঝতে পারছে নীল ওর উপর অভিমান করেছে। তনা পিছন থেকে নীল কে ডেকে
— কোথায় যাচ্ছ?
— নিচে। তুমি তো খাবে না।তুমি না খেলে আমার ও আর খাওয়া হবে না। তাই খিদে পেটে বাইরে গিয়ে বাতাস খাবো।
— তুমি আমাকে তোমার হাতে খাইয়ে দিলে আমি খাবো। কথায় কথায় শুধু রাগ করা। আমি না খেতে চাইলে কই একটু জোর করে খাওয়াবে। তা না উনি উল্টো আমার উপর রাগ করে না খেয়ে থাকবে।
নীল কিছু না বলে তনাকে কোলে তুলে নিয়ে নিচে চলে গেল।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here