শুধু তুমি 💞 পর্বঃ- ১৪ Samira Afrin Samia #নিপা

0
369

শুধু তুমি 💞
পর্বঃ- ১৪
Samira Afrin Samia
#নিপা

–নীল আমি কখনও মা হতে পারবো না।আমি তোমাকে কখনও বাবা হওয়ার সুখ দিতে পারবো না। আমার জন্য তুমি কোন দিন বাবা ডাক শুনতে পারবে না।
কথা গুলো বলে তনা নীল কে ধরে কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়লো। তনা নীলের পায়ের কাছে বসে কাঁদছে। নীল রাগে চুপ করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলছে না। নীলের অনেক রাগ হলে কোন কিছুর দিকে খেয়াল থাকে না। তনা কেঁদে কেঁদে আবার বলতে শুরু করলো।
— আমি জানি তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো। কিন্তু শুধু ভালোবাসা দিয়ে জীবন চলে না। আমি মা হতে পারবো না। কোন দিন একটা বাচ্চার মুখ দেখতে পারবো না।তাই বলছি তুমি আরেকটা বিয়ে করো। আবার নতুন করে সব কিছু সাজাও। তোমার সংসার আলো করে ছোট একটা বাচ্চা আসবে। পুরো বাড়ি হেসে খেলে বেড়াবে। তোমাকে বাবা ডাকবে। দেখো তুমি অনেক খুশি থাকবে তাদের নিয়ে।
তনা আরো কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু কান্নার কারনে আর বলতে পারলো না। নীল সব সহ্য করতে পারে কিন্তু তনার কান্না সহ্য করতে পারে না। তনা চোখে এক ফোঁটা জল নীল দেখতে পারে না। তনা কে এভাবে কাঁদতে দেখে নীল নিজের রাগ ধরে রাখতে পারলো না। মুহূর্তের মধ্যে নীলের সব রাগ পানি হয়ে গেল।নীল তনার পাশে বসে তনার মাথা নীলের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে
— তুমি আমার সুখের কথা ভাবছো। কিন্তু তুমি কি এটা জানো না আমার সব সুখ দুঃখ যে তোমাকে ঘিরে। তুমি মা হতে পারবে না তো কি হয়েছে। আমাদের বাচ্চার দরকার নেই। আমি বাবা ডাক শুনতে চাই না। আমি শুধু তোমাকে চাই। সারা জীবন আমার পাশে শুধুই তোমাকে চাই। আর কাউকে না। আমি অন্য কাউকে বিয়ে করলে তুমি ভালো থাকবে? নাকি আমি নিজেই ভালো থাকবো বলো?
পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে যাদের বাচ্চা নেই। এমন অনেক স্বামী স্ত্রী আছে যাদের বেবী হয় না। তাই বলে কি তারা একে অপরকে ছেড়ে চলে গেছে?
তোমার যদি একটা বাচ্চার খুব দরকার হয় তাহলে আমরা বাচ্চা এডাপ্ট করবো। পরেও তুমি এসব বলোনা তনা। তোমাকে ছাড়া যে আমার পৃথিবী অন্ধকার।
তনা নীলের বুকে মাথা রেখে সমানে কেঁদে যাচ্ছে। নীলের কথা গুলো শুনে যেন তনার কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেল। কেঁদে কেঁদে হিচকি উঠে গেছে। তনার কান্না নীলের আর সহ্য হচ্ছে না।
— তনা এখন কিন্তু আমার দৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। তুমি খুব ভালো করে জানো আমি তোমার চোখের পানি সহ্য করতে পারি না। পরেও তুমি আমার সামনে কান্না করে যাচ্ছ।
তনা কিছুই বলছে না। শুধু কান্না করেই যাচ্ছে।
এবার নীল রেগে তনাকে বললো
— ওকে তুমি এভাবে মানবে না তো। ঠিক আছে দাঁড়াও এখন আমি উল্টা পাল্টা কিছু করে ফেললে তখন তুমি সহ্য করতে পারবে তো?
নীল তনা কে রেখে উঠতে নিচ্ছিল। তনা নীল কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখে। ওকে ছেড়ে নীল কে যেতে দেয় না। কিন্তু তনার কান্না ও থামে না। তনা কান্না জড়িত কন্ঠে বলতে লাগলো
— তুমি আমাকে একা রেখে যেও না নীল। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না। তুমি আমার কাছেই থাক।
নীল তনার কথা শুনে একটু মুচকি হেসে তনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। তনা কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসেই নীলের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেল। নীল তনাকে কোলে নিয়ে বেডে গিয়ে তনাকে শুইয়ে দিল।
— পাগলী টা কে নিয়ে আমি কি করবো? কখন কি করে কি বলে কিছুই বুঝে করে না। মাঝে মাঝে এমন এমন কিছু করে বসে যাতে ও নিজেও কষ্ট পায় সাথে আমাকে ও কষ্ট দেয়।
নীল তনার গায়ে চাদর টেনে দিয়ে সোফায় গিয়ে বসলো।নীল ভাবছে তনা আজ হঠাৎ এমন পাগলামি কেন করলো। তনা তো বাচ্চার কথা প্রায় ভুলেই গেছিল। অনেক দিন ধরে এসব কথা মাথায় আনে না। আজ কি এমন হলো যার জন্য তনা এমন করলো। তনা তো সারাক্ষণ লিনার সাথে থাকে। এসব বেপারে লিনা কিছু জানে কি?
লিনা কে এসব জিঙ্গেস করা টা কি ঠিক হবে? অনেক চিন্তা ভাবনা করে নীল নিচে গেল। নীল লিনা কে ডাকলে লিনা রুম থেকে বের হয়ে আসে
— ভাইয়া আপু এখন কেমন আছে? তখন আপুর কি হয়েছিল?
— কিছু হয়নি। এখন তনা ঘুমাচ্ছে। আচ্ছা লিনা তোমাকে একটা কথা জিঙ্গেস করবো?
— হ্যা ভাইয়া করো।
— আচ্ছা লিনা তনার হঠাৎ করে বেবীর কথা মনে হলো কেন? না মানে ও কি কোথাও বের হয়েছিল। নাকি বাসায় কেউ বেবী নিয়ে আসছিল।
— বাসায় তো কেউ বেবী নিয়ে আসেনি। তবে ভাইয়া
লিনা এটুকু বলে থেমে গেল।
— তবে কি লিনা বলো?
তনা আর লিনা যে ঐ দিন বের হয়েছিল এটা তো তনা নীলকে বলতে বারণ করেছিল।
— কি হলো লিনা বলো।
— আসলে ভাইয়া। ঐ দিন আমার জ্বর আসছিল না। পরে আপু আমাকে নিয়ে ডক্টর এর কাছে গেছিল।
— কি?
— হুম ভাইয়া।
— কবে গেছিলে আমাকে বলোনি কেন?
— আপু বারণ করছিল। তাই তোমাকে জানাই নি।
— আচ্ছা পরে কি হলো?
— ওখানে মেঘা আপু ও আসছিল। তনা আপু মেঘা আপুর ফোনে ওর বাচ্চার ছবি দেখে। আমরা তিন জন রেস্টুরেন্টে খেতে গেছিলাম। ওখানে তোমাকে দেখি। তুমি একটা মেয়ের সাথে বসে ছিলে।দুজন পুরুষ ও ছিল।
লিনার আর কিছু বলতে হলো না। এইটুকু তে ই নীল সব বুঝে গেছে। তনা ঐ দিন আনিকার সাথে নীল কে দেখছে তাই কিছু দিন ধরে তনা এমন করছে।
— ভাইয়া আপু তোমাকে ওই মেয়েটার সাথে দেখে আসার পর থেকেই কেমন যেন হয়ে গেছে।
আজ আপুর সাথে বেবী নিয়ে কথা হওয়ার পর থেকেই আপু যে রুমে গেছে। আর বের হয়নি। এখন তো তুমি দেখলেই তুমি আসার পরে আপু কি করলো।
নীল লিনা কে থামিয়ে দিয়ে রুমে যেতে বললো। লিনা রুমে চলে যাচ্ছিল। রুমে যাওয়ার সময় আবার পিছনে ফিরে
— ভাইয়া কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি।
— হুম।
— আপুর কি হয়েছে?
নীল লিনার থেকে আর কিছু লুকালো না। লিনা কে বলে দিল তনা যে কোন দিন মা হতে পারবে না। তনা মা হতে পারবে না একথা শুনে লিনা থমকে গেল। লিনা ভাবছে বিকেলে তনার সাথে বেবী নিয়ে কথা বলাতেই হয়ত তনা এমন করেছে। লিনা কাঁদতে লাগলো।
— ভাইয়া আমাকে হ্মমা করে দাও। আমি আপুর একথা জানতাম না। আমি না জেনেই আপুকে সব থেকে বড় কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।
— এতে তোমার কোন দোষ নেই। তুমি শুধু শুধু হ্মমা চাইছো কেন?
অনেক রাত হয়েছে যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আর লিনা তনার একটু খেয়াল রেখো কেমন?
— হুম ভাইয়া।

পরের দিন নীল অফিসে ওর ক্যাবিনে বসে আছে। কোন কাজেই মন দিতে পারছে না। বার বার তনার চিন্তা মাথায় আসছে। নীল টাকা দিয়ে পৃথিবীর সমস্ত সুখ কিনে এনে তনার পায়ের কাছে রাখতে পারবে। তনার সব দুঃখ কষ্ট দূর করতে পারবে। কিন্তু টাকা দিয়ে তনার এই কষ্ট কিভাবে দূর করবে। আল্লাহ নীল কে সব কিছু দিয়েছে। কোন কিছুর কমতি রাখেনি। কিন্ত আল্লাহ তো ওদের থেকে ওদের সবচেয়ে বড় খুশি আর সবচেয়ে বড় সুখ টা দূরে রেখেছে। একটা মেয়ে মা হতে পারবে না। তার কাছে এর থেকে বড় কষ্ট আর কি আছে?
তনার এমন অবস্থা নীল সহ্য করতে পারছে না।
তনা যে দিন জানতে পারছে ও মা হতে পারবে না। সেদিন থেকে তনা পাগলের মত করতে শুরু করে দিছিল। সারাদিন চিৎকার করে কান্না করতো। রুমে নিজেকে বন্দী করে নিয়েছিল। রুম থেকে বের হতো না কারো সাথে কথা বলতো না। মানসিক ভাবেও অসুস্থ হয়ে গেছিল। নীল অনেক কষ্টে তনা কে এসব থেকে বের করে আনে। তনাকে শহরের নামি দামী কত ডক্টর দেখিয়েছে কিন্তু সবাই ই ব্যর্থ। আল্লাহ যা দেয় নি। ডক্টর রা তা কি করে দিতে পারবে। লাস্ট যে ডক্টরের কাছে গেছিল উনি অন্ধকারের মাঝে একটু আশার আলো দেখিয়েছিল। উনি তনার কিছু টেস্ট করিয়েছিল যার রিপোর্ট এখনও আসেনি। ওই টেস্ট এর রিপোর্ট গুলো আসলে ডক্টর কিছু বলতে পারবে। এখন সব কিছু আল্লাহর হাতে। নিশ্চয় আল্লাহ তনাকে এতো বড় শাস্তি দিবে না। তনা তো কারো কোন হ্মতি করেনি।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here