শুধু তুমি 💞 পর্বঃ- ৪ Samira Afrin Samia #নিপা

0
404

শুধু তুমি 💞
পর্বঃ- ৪
Samira Afrin Samia
#নিপা

দুপুরে সবাই এক সাথে ডাইনিং টেবিলে বসে লাঞ্চ করছে। তনার বাবা আর নীল বিজনেস নিয়ে নানা কথা বলে যাচ্ছে। তনা ওসবে কান না দিয়ে চুপ চাপ নিজের মত খেয়ে যাচ্ছে। নীল তনার দিকে লক্ষ্য করে
— তনা তুমি তো সকালে খেতে চাইছিলে না। সব কিছু নাকি তোমার কাছে বাজে লাগে। খেতে ইচ্ছে হয় না। এখন তো দেখছি রাহ্মসনীদের মত সব কিছু একাই খেয়ে যাচ্ছ।
— তুমি আর একবার আমাকে রাহ্মসনী বললে তোমার সামনের দু’টা দাঁত ভেঙ্গে দিব তখন আর কারো সামনে কথা বলতে পারবে না।
–দেখলেন তো আম্মু আপনার মেয়ে কতটা গুন্ডি। সারাক্ষণ শুধু আমাকে মারার কথা বলে।
— তনা এসব কি কথা নিজের স্বামী কে কেউ মারে নাকি? (তনার আম্মু)
— আম্মু তুমি দেখনা নীল আমাকে কেমন রাহ্মসনী বলে।বাসায় নিজে রান্না করি। নিজের রান্না খেতে ভালো লাগে??
আর আমি তো ভালো করে রান্না করতে পারি না। তাই সব কিছু কেমন বাজে লাগে।
— তাহলে স্বীকার করলে তো তোমার রান্না যে বাজে??
— 😡😡😡
— রাগ দেখালে কি সত্য পাল্টে যাবে। আম্মু আপনার মেয়ের হাতে ওসব বাজে রান্না খেতে খেতে আমার রুচি ই নষ্ট হয়ে গেল। কত বার বলছি একটা কাজের লোক রাখি।কিন্তু কে শুনে কার কথা। পাকনামি করে সব কাজ একা করতে চায়।
— আমার যে মেয়েটা এক গ্লাস পানি নিজে নিয়ে খেত না সে কিনা একা বাসার সব কাজ করে। আর কাজের লোক ও রাখতে দেয় না।(তনার আব্বু)
— কাজ করে না আব্বু। সব কাজ উলট পালট করে। কোন কাজ ঠিক ভাবে হয় না।
— নীল একটু বেশি ই বলছ না? আচ্ছা এবার থেকে বাসার সব কাজ তোমাকে দিয়ে করাবো।দেখবো তুমি কতটা কাজ পারো।
— এই তোরা থামবি। তনা নীলকে চিংড়ি মাছ টা দে।নীল তোমার পছন্দের চিংড়ির মালাইকারি করেছি। খেয়ে দেখ তো কেমন হয়েছে।
— আম্মুর হাতের রান্না কি আর খারাপ হতে পারে?
শুধু আম্মুর মেয়ের হাতের রান্না ই ভালো না।
— নীল,,,,,,,,? 😡
–আচ্ছা নীল রাফসান সাহেবের সাথে তোমার ওই ডিল টার কি হয়েছে?
— আব্বু ওই ডিল টা গত মাসেই ফাইনাল করে ফেলেছি।
— ওহহ।।।আমার এখন বয়স হয়েছে সব কিছু ঠিক সামলাতে পারি না। তুমি না থাকলে যে আমার বিজনেস কোথায় যেত তা আল্লাহ ই জানে।
তুমি নিজের কোম্পানি গুলো সাথে সাথে যে ভাবে আমার কোম্পানি গুলো ও সামলাও তোমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে তা পারত না।
— আপনি যদি আমার উপর আস্থা না রেখে আমাকে আপনার কোম্পানির দায়িত্ব না দিতেন তাহলে আমার পহ্মে এসব কিছু করাই সম্ভব হত না।
আমার বলতে তো আমার কাছে কিছু ই ছিল না। এখন সব কিছুই হয়েছে সব তো আপনার জন্য ই।
— সব আমার জন্য হয়নি। আমি তোমাকে যা যা দিছি তুমি তোমার বুদ্ধি আর পরিশ্রম দিয়ে তার দ্বিগুণ গড়ে তুলেছ।তোমার কোম্পানির সাথে সাথে আমার কোম্পানি গুলো কে ও সাফল্যতার চূড়ান্ত সীমানায় পৌঁছে নিয়েছ। শহরের সকল কোম্পানি গুলোর মাঝে আমাদের কোম্পানি এক নাম্বার পজিশনে আছে। এসব তো তোমার জন্য ই সম্ভব হয়েছে।
— খেতে বসে কি শুরু করলে তোমরা? তোমাদের যত কাজের কথা আছে তা কি খাওয়ায় বসলেই মনে পড়ে।
নীল কতদিন পর আমাদের বাসায় আসছে।এখন খেতে বসে ও ছেলেটা কে শান্তি দিচ্ছ না। এখানে ও বিজনেসের কথা টেনে নিয়ে আসছো।( তনার আম্মু)
তনা কিছু বলছে না। কারণ তনা জানে ওর বাবা আর নীল এক সাথে হলে ওখানে বিজনেসের কথা হবেই।
— আম্মু কিছু বলো না। শহরে বিশিষ্ট দু’জন বিজনেসম্যান কথা বলছে। ওদের ডিস্টার্ব করো না তো।
— ঠিকই বলেছিস ওদের দুজনের সামনে থেকে ই খাবার প্লেট গুলো নিয়ে কিছু ফাইল রেখে দেই।তাহলে তো ওদের পেট ভরে যাবে। (তনার আম্মু)
— একদম ঠিক। তবে দেরি কিসের তাই করা হোক।
— আর কিছু বলবো না আমি তাহলে তোমার শাশুড়ি আমাকে না খাইয়েই রাখবে। (তনার আম্মু)
— শুধু আপনাকে না আব্বু। আপনার মেয়ে আমাকে ও না খাইয়ে রাখবে। শুধু না খাইয়ে রাখলে ও তো ভালো হবে। আপনার যে মেয়ে দেখা গেল জোর করে আমাকে ভাত এর বদলে কিছু ফাইল খাইয়ে দিছে।
— আইডিয়া টা তুমি খারাপ দেও নাই নীল। এর পর থেকে খাবার টেবিলে বসে কাজের কথা বললে ভাত এর বদল ফাইল খাইয়েই রাখবো।
— দেখছেন আম্মু, দেখছেন আব্বু কি ডেঞ্জারাস মেয়ে আপনাদের। শশুড় শাশুড়ির সামনে আমাকে কি ভাবে
থ্রেট দিচ্ছে।
— নীল অনেক কথা বলছো আজ। ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।
— তোরা আবার শুরু করছিস।বাচ্চা নাকি তোরা? সারাক্ষণ ঝগড়া করতেই থাকিস।(তনার আম্মু)
— আমি কিছু করি নাই আম্মু। (তনা)
— আমিও কিছু করি নাই আম্মু।(নীল)
— হুম তোরা কেউ কিছু করিস নি।তনা আজ থাকবি নাকি প্রতি বারের মত এবার ও চলে যাবি?(তনার আম্মু)
— থাকবো আম্মু।
তনার কথা শুনে নীল তনার দিকে তাকালো কিন্তু তনা অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। নীলের দিকে একবার ও তাকাচ্ছে না। নীল ডাইনিং টেবিলের নিচ দিয়ে ওর বাম হাত দিয়ে তনার হাত চেপে ধরলো। নীল তনার হাত ধরায় তনা নীলের দিকে প্রশ্নসুচক দৃষ্টি নিয়ে তাকালো।
নীল তনার কানের কাছে গিয়ে বিরবির করে বলতে লাগলো
— ম্যাম কি কথা ছিল? আমি কিন্তু এটা বলে এখানে নিয়ে আসছিলাম যে তুমি আমার সাথে চলে যাবে।
— হুম কথা তো তা ই ছিল। কিন্তু এখন আর আমি যাবো না। খুব বেশি কথা বলছো আজ। আরো কি কি বলেছ। আমার রান্না বাজে। আমার রান্না খেয়ে তোমার রুচি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাই না। তাহলে কিছু দিন এখানে থেকে আম্মুর হাতের রান্না খাও।কিছু দিন কেন আমি তো ভাবছি এখন থেকে আমি এখানেই থাকবো।
— তনা😭😭😭😭
— কি হয়েছে। কি বিরবির করছিস তোরা?( তনার আম্মু)
— আসলে আম্মু তনা বলছে ও নাকি বাসায় চলে যাবে।
নীলের কথা শুনে তমা রাগী ভাবে নীলের দিকে তাকালো।নীল তনাকে কিছু বলার সুযোগ দিল না।নীল আবার বলতে শুরু করলো।
— আম্মু কাল আমার অফিসে খুব ইমপোরটেন্ট একটা মিটিং আছে তো তাই আর কি।
তনা নীলের হাতে জোরে চিমটি দিয়ে নীলের কানের কাছে গিয়ে
— কাল তোমার কোন ইমপোরটেন্ট মিটিং আছে বলো তো একটু শুনি।আম্মু আব্বুর সামনে মিথ্যা বলছো কেন।
— আরে জান বাসায় তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। আজ তুমি বাসায় না গেলে সারপ্রাইজ টা কি করে দিব বলো তো।
— কিসের সারপ্রাইজ? তুমি সত্যি বলছো তো?
— হুম বউ একদম তিন সত্যি। এখন প্লিজ আম্মু আব্বু কে বুঝাও আর বাসায় চলো।
— আচ্ছা।
তনা ওর আম্মু আব্বুর উদেশ্যে বললো
— আম্মু আব্বু আজ থাকতে পারবো না। কাল নীলের একটা মিটিং আছে। আর এখান থেকে ওর অফিস অনেক টা দূরে। কাল যদি ও অফিসে যেতে না পারে তাহলে অনেক বড় লস হয়ে যাবে। তাই আজ বাসায় চলে যাই। অন্য কোন দিন এসে থাকবো।
নীল তনার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে
— ইস আমার বউ টা কত বুদ্ধিমতী। কত সুন্দর করে বানিয়ে বানিয়ে আম্মু আব্বুর কাছে মিথ্যা বললো।

——————
সন্ধ্যায় নীল আর তনা ওর বাবা মা’র থেকে বিদায় নিয়ে নিজেদের বাসার উদেশ্যে রওনা দিল।নীল কার ড্রাইভ করছে তনা পাশের সিটে বসে আছে। নীল ড্রাইভ করতে করতে সামনের দিকে তাকিয়ে
— কি হলো চুপ আছো যে? বাবা মা’কে ছেড়ে আসতে খারাপ লাগছে?
— তা তো একটু লাগছে ই। কিন্তু আমি এটা ভাবছি তুমি আমাকে কি সারপ্রাইজ দিবে?
— ওহ আচ্ছা।
— হুম। আচ্ছা তোমার সারপ্রাইজ টা কি গো?
— বুদ্ধু বউ আমার। সারপ্রাইজ টা কি তা বলে দিলে কি সারপ্রাইজ আর সারপ্রাইজ থাকবে?
— কিন্তু আমার তো জানার খুব ইচ্ছে হচ্ছে। বলো না প্লিজ।
— জি না ম্যাম। বাসায় গিয়েই দেখতে পাবে।
———————————-
নীল আর তনা বাসায় এসে গেছে দু’জনই অনেক ট্রায়াড। তনা রুমে এসে সোজা গিয়ে বেড়ে শুয়ে পড়লো। নীল একটু পরে রুমে এসে দেখে তনা শুয়ে আছে। নীল গিয়ে তনার পাশে শুয়ে
— তনা, এই তনা খারাপ লাগছে।
— না। শুধু একটু মাথা ব্যথা করছে।
— ফ্রেশ হয়েছ?
— না।
— এমনিতে মাথা ব্যাথা তার উপর ফ্রেশ হওনি।আরো খারাপ লাগবে তো। যাও ফ্রেশ হয়ে এসো দেখবে ভালো লাগছে।
তনা চুপ করে নীলের কথা শুনছে কিছু বলছে না। তনা একটু ও জার্নি করতে পারে না। কোথাও বের হলেই তনার মাথা ব্যাথা হয়ে যায়। নীল বুঝে গেছে এখন তনাকে হাজার কথা বললে ও কোন লাভ হবে না তাই নীল আর কিছু না বলে তনা কোলে তুলে নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে ঝর্না ছেড়ে দিল।নীল তনা কে কোলে নিয়ে ঝর্নার নিচে দাড়িয়ে আছে। দুজনেই পুরো ভিজে গেছে।তনা নীলের কোল থেকে নামার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। তনা অবশেষে হাত পা ছুড়তে শুরু করে দিল।
— নীল করছো টা কি। ভিজে গেলাম তো। এই রাতের বেলা এভাবে কেউ ঝর্নার নিচে দাড়িয়ে থাকে। তোমার তো ঠান্ডা লাগবে সাথে আমার ও।
— কি করবো তুমি ফ্রেশ না হয়েই শুয়ে গেলে যে।
— তাই বলে আর কিছু না। ভেজা অবস্থায় তোমাকে কিন্তু অনেক সুন্দর লাগছে। ইচ্ছে হচ্ছে এখুনি একটু আদর করে দেই।আর কিছুক্ষন এভাবে থাকলে আমি কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না। এখানেই কিন্তু রোমান্স শুরু করে দিব।
— নীল দিন দিন তুমি বড্ড দুষ্টু হয়ে যাচ্ছ। যেখানে সেখানেই তোমার রোমান্স করতে ইচ্ছে করে।অসভ্য হচ্ছ কেন?
রাতের বেলা ঝর্নার নিচে ও নাকি উনার রোমান্স করতে ইচ্ছে হচ্ছে কি রোমান্টিক বর আমার!
— কি করবো।।। এতো কিউট একটা বউ থাকলে হাজবেন্ড রোমান্টিক না হয়ে কি পারে?
— হয়ছে এবার নামাও আমাকে। ভিজা শরীরে থেকে জ্বর আসলে ডাক্তারের এতো বড় বড় ইনজেকশন আমি নিতে পারবো না। তোমার ইচ্ছে থাকলে তুমি সারা রাত এভাবে ঝর্নার নিচে দাড়িয়ে থাক।আমি গেলাম।

তনা নীলের কোলে থেকে নেমে ভিজা কাপড়ে দৌড়ে রুমে চলে আসলো। তনার শাড়ি থেকে পানি পড়ে ফ্লোরের অনেক টা অংশ ভিজে গেছে।নীল তনার পিছনে দৌড়ে এসে ফ্লোরে থাকা পানিতে পা পিছলে নিচে পড়ে গেল। তনার নীল কে নিচে পড়ে থাকা অবস্থায় দেখে জোরে জোরে হাসতে লাগলো।
— এ মা মি.নীল আপনি তো দেখছি হাঁটতে ও শিখেন নাই।ছোট বাচ্চাদের মত যেখানে সেখানে পা পিছলে পড়ে যান।বড্ড লাগলো বুঝি। ইস মনে হয় কোমর টা ভেঙ্গেই গেছে ।
— অনেক হাসি পাচ্ছে তাই না। আচ্ছা ঠিক আছে দাঁড়াও তুমি।
নীল উঠতে নিলে তনা এক দৌড়ে বেডের উপর উঠে গেল। নীল ও উঠে তনার পিছনে দৌড় দিল।দুজন ভিজে কাপড় নিয়েই পুরো রুমে দৌড়াচ্ছে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here