#সূর্যোদয়
#পর্ব_৩৫
#কারিমা_দিলশাদ
রাতের বেলায় জয় ছাঁদে গিয়ে কল দেয় ঐশীকে। একবার ফোনে রিং হয়ে বেজে যায়, কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো রেসপন্স পায় না। জয় আবার কল দেয়, দ্বিতীয়বারে ঐশী কল রিসিভ করে। ঐশী তখন লেপটপে কিছু কাজ করছিল। জয়ের ফোন দেখে কল রিসিভ করে কাধঁ দিয়ে কানে ঠেকিয়ে হ্যালো বলে।
“ বিজি?”
“ না না বলুন।”
“ ওহ। একবার রিং হয়ে কেটে গেল যে। তাই জিজ্ঞেস করলাম বিজি কি না।”
“ ওহহ সরি ফোন সাইলেন্টে ছিল।”
“ কি করছো?”
“ তেমন কিছু না। টুকটাক একটু কাজ ছিল তাই করছিলাম।”
এটুকুতেই দু’জনে চুপ হয়ে যায়। ঐশী কাজের ধান্দায় বিষয়টা তাৎক্ষণিক খেয়াল করে নি। খেয়াল করতেই কান থেকে ফোন নিয়ে দেখে কল কেটে গেছে কি না। নাহ্ কল তো কা’টে নি। ঐশী আবার হ্যালো বলে। জয়ও ওপাশ থেকে হ্যালো বলে। আবার চুপ হয়ে যায় দুজনেই। ঐশী হেসে ফেলে। ঐশীর হাসি দেখে জয়ও ওপাশ থেকে নিঃশব্দে হাসে। ঐশী বলে,
“ চুপ হয়ে যাচ্ছেন যে। আপনি কি কিছু বলার জন্য ফোন দিয়েছেন নাকি এমনেই?”
“ এমনেই। কেন? আমরা কি এখন একটু কথা বলতে পারি না?”
ঐশী কথা বলতে বলতেই বারান্দায় এসে চেয়ারে বসে। আর বলে,
“ হুমম বলতেই পারি। তো বলুন না, আমি শুনছি। আমি বাবা ফোনে অত কথা বলতে পারি না। হাই হ্যালো, কি করো এই পর্যন্তই আমার দৌড়। কথা বলতে চাইলে আপনাকেই বলতে হবে।”
জয় এবার জোরে জোরে হেসে উঠে। এরপর হুট করেই গলায় একরাশ মায়া ঢেলে ডাকে,
“ ঐশী….”
এমন ডাকে ঐশীর বুকটা সবসময় কেমন জানি ধুক করে উঠে। ঐশী জবাব দেয়,
“ হুমম..”
“ অনেক মিস করছি তোমাকে। ছাঁদে আছি এখন। হু হু করে ঠান্ডা বাতাস বইছে। ঝকঝকে আকাশ। আর আকাশে মস্ত বড় এক চাঁদ। যদিও তারা নেই কোনো। এমন সময় আমার তোমাকে পাশে পেতে ইচ্ছে করছে।চলো না তাড়াতাড়ি বিয়েটা করে ফেলি? এরপর যখন তখন তোমাকে পাশে পাবো। তোমাকে দেখতে পারবো, তোমাকে ছুঁতে পারবো। আজকাল মনটা বড্ড বেশি বে’হায়া হয়ে যাচ্ছে জানো। বড্ড লাগাম ছাড়া হয়ে গেছে। আমার কোনো কথাই শুনে না। মনটা শুধু তুমি তুমি করে।”
ঐশী জয়ের কথায় একবার আকাশ দেখার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু চারদেয়ালের মাঝে থেকে আকাশ দেখার সুযোগ পায় না। জয়ের কথাগুলোয় হালকা একটা ভালো লাগার কাজ করলেও মনে মনে ‘আবেগি’ আর ‘মেয়ে পটানো কথা’ বলে আখ্যা দিয়ে দেয়। কথাগুলো হৃদয়ে প্রবেশ করতে করতেও করলো না। উত্তরে কেবল বললো,
“ এসব বাদ দিয়ে ঘরে এসে ঘুমিয়ে পড়ুন। ঠিক হয়ে যাবে।” -ওপাশ থেকে শ্বাস ফেলার শব্দ আসে। বোঝায় যাচ্ছে জয়ের একমুঠো অনুভূতিতে ঐশী এক বালতি পানি ঢেলে দিয়েছে। জয় গরম নিশ্বাস ফেলে বলে উঠে,
“ তুমি আমার কথাগুলো কিন্তু সিরিয়াসলি নিচ্ছ না ঐশী। আমার অনুভূতির কোনো দামই দিলে না তুমি?”
“ আরে দাম দেওয়ার কি হলো আজিব। আপনি বললেন আমি তো শুনলাম বলুন। এরপর ভালো একটা উপদেশও দিলাম। আর কি চান বলুন তো?”
“ মানে… মানে তুমি না, একটা যা তা। নিজের মনের চাওয়াটা তোমার কাছে এতো প্রেমময় ভাবে উপস্থাপন করলাম কই সে একটু লজ্জা পাবে, একটু রোমান্টিক কথা বলবে তা না। সে আমাকে ঘুমের কথা বলছে!” -অসহনীয় স্বরে কথাগুলো বলে উঠে জয়। আর জয়ের এমন কথাশুনে ঐশী খিলখিলিয়ে হেসে উঠে।
“ আচ্ছা! তো কি বলা উচিত ছিল আমার?”
“ রোমান্টিক কিছু একটা। কিংবা লজ্জাই পেতে। হালকা করে লজ্জা মিশ্রিত একটা হাসি। বুঝলে?”
“ আপনার বয়স কতো?” -আচমকা ঐশীর এমন প্রশ্নে জয় আহাম্মক হয়ে যায়।
“ কেন?”
“ আহ বলুন না।”
“ টুয়েন্টি নাইন হবো এবার।”
“ এখনো নিব্বা-নিব্বিদের মতো এতো আবেগী ভাবসাব করেন কি করে বলুন তো? এসব আপনার সাথে আদোও যায়?”
জয় এবার থমথমে গলায় বলে,
“ তোমার কাছে এগুলো নিব্বা-নিব্বিদের আবেগ মনে হলো? কিন্তু আমি তো আমার বর্তমান চাওয়াটা বলেছিলাম। কষ্ট পেলাম আমি ঐশী।”
ঐশী এবার একটু মিইয়ে যায়। ভাবে তার এভাবে বলা উচিত হয় নি। সে কিছু বলবে তার আগেই জয় বলে,
“ আর এমনেতেও এখন আমার আবার নিব্বা হতে ইচ্ছে করছে জানো তো। ওই টাইমটাই ভালো ছিল। যা মনে আসতো বলা যেত, করা যেত। আগে পিছে কোনো ভাবাভাবি ছিল না। মনে এলো আর করে ফেললাম ব্যাস। আর এখন তো একটা কাজ, একটা কথা বলার আগেও সবদিক দশবার বিচার বিবেচনা করে বলতে হয়। তখন এসব করার দরকার ছিল। ভুল করেছি তখন সারাদিন বইয়ে মুখ ডুবিয়ে না থেকে এসবই করা দরকার ছিল। এখন এগুলো করতে গেলে ১৮ বছরের যুবতীর কাছ থেকেও ৮০ বছরের বুড়ির মতো জ্ঞানমূলক বাক্য শুনতে হয়।”
ঐশী জয়ের কথায় খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। ঐশীর সাথে জয়ও তাল মিলিয়ে হাসে। ঐশী একটুপর নিজেকে সামলে বলে,
“ অবশ্যই। সময় উপযোগী কাজ করতে হবে তো। নাহলে জ্ঞানমূলক বাক্য তো শুনতেই হবে। বাই দ্যা ওয়ে আমি ১৮ বছরের কচি মেয়ে না। আমি এখন টুয়েন্টি ওয়ান।”
ওপাশ থেকে আঁতকে উঠার আওয়াজ পায় ঐশী। জয় আশ্চর্যান্বিত আওয়াজে বলে উঠে,
“ তুমি বয়স বলে দিলে? মেয়েদের বয়স তো বলতে নেই।”
“ খুব ফানি না? ড্রামা কুইন একটা।”
“ উহুম কুইন না। আমি কিং। ড্রামা কিং। তোমার ড্রামা কিং।”
ঐশী হালকা হেসে উঠে। এভাবেই কথা দুজনের চলতে থাকে।
———————————-
সময় যে কখন কোন দিক দিয়ে চলে যায় খোঁজই পাওয়া যায় না। অনেকগুলো দিন কে’টে গেছে। জয় তার ভালোবাসা জাহির করতে করতে কাটিয়ে দিচ্ছে আর ঐশী জয়ের সেই ভালোবাসা না মানার জন্য এক অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করে রেখেছে। জয় বিষয়টা বুঝতে পারে। তবে সে তো হার মানার পাত্র নয়। সেও দিনের পর দিন ঐশীর মনে তার জন্য বিশ্বাস, ভরসা আর ভালোবাসা সৃষ্টি করতে লেগে রয়েছে।
প্রতিদিন রাতে কথা হওয়াটা তো এখন বাধ্যতামূলক। যদিও ঐশী কখনো নিজে থেকে কল দেয় না। তবে অবচেতন মনে সেও রাত হলে জয়ের কলের অপেক্ষায় থাকে। বেশ কয়েকমাস হলো স্মৃতিও আর ডান্স ক্লাসে যায় না। স্মৃতি সেকেন্ড ইয়ারে উঠার পর ঐশী নিজেই না করেছে। তাই এখন জয় রোজ কোনো না কোনো বাহানায় ঐশীর সাথে দেখা করে। জয়ের এসব পাগলামিতে ঐশী খুবই বিরক্ত তবুও জয় তা আমলে নেয় না। যেদিন দেখা করার সুযোগ পায় না সেদিন জয় নিজেই মনে মনে ছটফট করতে থাকে।
আজও জয় কাজে ফাঁকি দিয়ে চলে এসেছে নৃত্যশৈলিতে। এসে দেখে ঐশী বাইরে সিমেন্টের বেদীতে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। তার নজর একটা ছোট্ট বাচ্চার দিকে। বাচ্চাটা একা একাই খেলছে আবার ঐশীর সাথেও কিছু বলছে। আশেপাশে আর কেউ নেই। বাইক থেকে নামতে নামতেই জয় এসব অবলোকন করে। সে এগিয়ে যায় ঐশীর দিকে। যেতে যেতে বাচ্চাটাকে ভালো করে দেখে নেয়।
পিচ্চি একটা মেয়ে। যার গায়ে গ্রাম্যভাবে শাড়ি জড়ানো। এত্তো কিউট লাগছে দেখতে। জয়ের ঠোঁটের কোণে আপনাআপনি হাসি ফুটে উঠে। বাচ্চাটার দিকে নজর রেখেই ঐশীর সামনের বেদীতে গিয়ে বসে ঐশীকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“ এভাবে গালে হাত দিয়ে বসে আছো কেন? আর পিচ্চিটা কে?”
ঐশীও বাচ্চাটার দিকে নজর রেখেই বলে,
“ ম্যাজিস্ট্রেটের মেয়ে। কয়েকদিন হলো আমার কাছে নাচ শিখতে পাঠায়। ওদের বাসার হেল্পিং হ্যান্ড মেয়ে নিয়ে আসে। আজকে ও একটা কাজে গেছে। দেরি হবে। তাই আমাকে বলে গেছে যেন ছুটি হলেও ওকে আমার কাছেই রাখি। ও এসে নিয়ে যাবে।”
“ বেশ কিউট তো বেবিটা।” -এরপর বাচ্চাটাকে ডেকে তার সাথে কথা বলতে চায়।
“ হেই বেবি! এদিকে আসো, এদিকে আসো। ”
বাচ্চাটাও দৌড়ে আসে জয়ের কাছে। জয় কোলে নিয়ে গালে একটা চু*মু দিয়ে বলে,
“ কিউটিটার নাম কি? নাম কি তোমার মা?”
“ আমাল নাম আয়না।”
“ ওয়াও!! তোমার মতো তোমার নামটাও তো খুব সুন্দর।”
জয় আয়নার সাথে কথা বলতে থাকে, আয়নাও জয়ের সাথে কথা বলতে থাকে। দু’জনের মধ্যে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ভাব হয়ে যায়। আর ঐশী তা দেখতে থাকে। ঐশী একদৃষ্টিতে জয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। ঘেমে গেছে মানুষটা। তার বলিষ্ঠ গায়ে নীল শার্টটা একদম সেঁটে আছে। বলিষ্ঠ বাহুটা টান টান হয়ে আছে। আগাগোড়া জয়কে পরখ করে ঐশী বলতে বাধ্য জয় খুবই সুদর্শন একজন পুরুষ। জয়ের হাইট, বডি ফিটনেস, হাঁটাচলা, পুরুষালি ভারি গলার স্বর, এটিটিউট যেকোনো নারীর রাতের ঘুম কেড়ে নিতে সক্ষম।
ভিতরে কেমন তা তার জানা নেই। যদিও এখন পর্যন্ত তেমন খারাপ কিছু তার নজরে পড়ে নি। বেশ পোক্ত একজন মানুষ। কি সুন্দর বাচ্চাটার সাথে কথা বলছে। কোনো ক্লান্তি ছাড়া। আর সে এই বাচ্চাকে নিয়ে এতক্ষণ কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। এসব ভাবতে ভাবতেই ঐশীর অজান্তেই ঐশীর ঠোঁটের কোণে হাসির দেখা মিলেছে। সে একদৃষ্টিতে জয়কে দেখে যাচ্ছে। লোকটার হাসিটাও সুন্দর। জয় আয়নার সাথে কথা বলতে বলতেই ঐশীর দিকে তাকায়। ওকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশারা করে জানতে চাই কি হয়েছে। ঐশী মাথা নেড়ে কিছু না বোঝায়। এরপর বলে,
“ আপনার বাচ্চা অনেক পছন্দ তাই না?”
“ হুমম খুব….. বাচ্চা কার না পছন্দ। তোমার পছন্দ না?”
“ উমম…. পছন্দ। খুব পছন্দ। কিন্তু বাচ্চাদের দুষ্টামি পছন্দ না। উফফ কি দুষ্টু এরা। এই যে আপনি ওর সাথে কি সুন্দর হেসে হেসে কতো কথা বলছেন। আমি এসব পারি না। বাবারে বাবা!
আমি এতো ছোট বাচ্চাদের কক্ষনো নাচ শিখায় না। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট আর তার বউ এসে দিয়ে গেছে না তো আর করতে পারি না বলেন। আর এত ছোট বাচ্চা অবভিয়েসলি ও কিছু বুঝে না পারে না। কিন্তু এই চারদিনেই আমি পাগল হয়ে গেছি জানেন। কি কথা বলে, আর কি যে দৌড়াদৌড়ি করে। আর আজকে তো আমি একদম শেষ। ”
মাথায় হাত দিয়ে আফসোসের সুরে কথাগুলো বলে ঐশী। জয় তা শুনে জোরে জোরে হেসে উঠে। আয়না কি বুঝলো কে জানে সেও জয়ের সাথে খিলখিলিয়ে হাসতে শুরু করে। জয় তা দেখে আয়নাকে চেপে ধরে তার গালে একটা চু*মু একে দেয়। এরপর ঐশীকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“ সিরিয়াসলি ঐশী! বাচ্চারা তো দুষ্টুমি করবেই। ওরা কি আর চুপচাপ বসে থাকা বুঝে?”
“ সেটা তো আমিও জানি। কিন্তু আমি তো ওদের সাথে এতো কথা বলতে পারি না, এতো লাফঝাঁপ দেখতে পারি না। আমার তো ওই যে কেবল কেবল বসতে শিখেছে, নতুন নতুন দাঁত উঠেছে, নতুন নতুন হামাগুড়ি দিতে শিখেছে, কথা বলতে পারে না এমন বাচ্চায় বেশি ভালো লাগে। এরপরে কথা বলতে শিখে গেলে অন্যরা কথা বলছে এগুলো দেখতেই ভালো লাগে। আমার সাথে প্যাচাল পারলে ভালো লাগে না৷ হায় আল্লাহ এতোক্ষণ যে কত প্রশ্ন করছিল! আমি শুধু ভাবি আমার নিজের বাচ্চা হলে তখন আমি কি করবো? ইয়া আল্লাহ বাঁচাও আমারে। ”
বলেই লজ্জায় পড়ে যায়। দাঁত দিয়ে জিহ্বা কা’টে। যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তার সামনে নিজের বাচ্চার কথা বলছে, বিয়ের আগেই। ঐশী অস্বস্তি নিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে। আর জয় ঐশীর কথায় নিঃশব্দে হেসে উঠে। ঐশীকে আরেকটু লজ্জায় ফেলতে বলে উঠে,
“ আরে ব্যাপার না। আমি আছি না। আমি বাচ্চা আর বাচ্চার মা দুজনকেই সামলে নিব।”
ঐশী এবার আর চোখটাও খুলতে পারছে না। মাথা নিচু করে বসে আছে। আর জয় ঐশীর লজ্জায় রাঙা মুখ উপভোগ করতে ব্যস্ত। তবে আয়নার জন্য তা বেশিক্ষণ উপভোগ করতে পারলো না। আয়না বলছে তার সাথে খেলার জন্য। সেও আয়নার সাথে খেলতে শুরু করে।
———————————-
ঐশী বসে বসে জয় আর আয়নার দৌড়াদৌড়ি দেখছে আর হাসছে। দূর থেকে দৃশ্যটা দেখলে মনে হবে মা,বাবা আর এক বাচ্চার সুখী এক পরিবার। জয়কে দেখে মনে হচ্ছে সে নিজেও বাচ্চা হয়ে গেছে। দেখতে দেখতেই ঐশীর একবার মনে হলো জয় তার আর ঐশীর বাচ্চার সাথেও এভাবে খেলবে। তখন নিশ্চয়ই আরও বেশি আদর করবে তাদের বাচ্চাকে।
ভেবে নিজেই আবার নিজেকে মনে মনে শাসায় এসব চিন্তা করার জন্য। আরও অনেকক্ষণ দৌড়াদৌড়ি করার পর জয় ক্লান্ত হয়ে ঐশীর পাশে এসে বসে পিছন দিকে গা এলিয়ে দেয়। রীতিমতো হাঁপাচ্ছে জয়।ঘেমে শরীর একদম জুবুথুবু হয়ে গেছে। মুখের ঘামগুলো মুছার জন্য ঐশী তার ওড়নায় হাত দিতেই আবার থেমে যায়। ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে জয়ের দিকে এগিয়ে দেয়। জয় তারদিকে তাকিয়ে হালকা হেসে টিস্যু নিয়ে ঘাম মুছতে থাকে। জয় ক্লান্ত হলেও আয়নার কোনো ক্লান্তি নেই। বরং সে জয়কে বলছে,
“ আংতেল আমাকে ধলো, আমাকে ধলো।”
আয়নার মুখে আংতেল শুনে ঐশী হেসে দেয়। আয়নাকে ডেকে এনে কিছুক্ষণ বিশ্রামের জন্য জোর করে ধরে থাকে। আরেকটা টিস্যু বের করে নিজেই আয়নার মুখ মুছিয়ে দেয়। মুখ মুছা হলেই আয়না আবার দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। জয় তখন তাকিয়ে ঐশীর যত্ন করা দেখছিল। মা মা লাগছিল দেখতে মেয়েটাকে। ভেবেই জয় মৃদু হাসে।
জয় আর ঐশী দুজনেই এবার আয়নার দিকে তাকিয়ে ওর খেলা দেখছে। আয়নার দিকে তাকিয়েই জয় বলে,
“ আমাদেরও এমন একটা সময় আসবে তাই না? আল্লাহ চাইলে এমন কিউট একটা বাচ্চা আমাদের ঘরেও আসবে। একটা সুখী ফ্যামিলি আমাদেরও হবে ইনশাআল্লাহ। আমরাও একদিন বাবা মা হবো।”
জবাবে ঐশী মুখে কিছু না বললেও মনে মনে বলে,
” আমিন…।”
#চলবে
( কপি করা নিষেধ। কেউ কপি করবেন না। আশা করি সবাই মন্তব্য করবেন।)