সূর্যোদয় #সূচনা_পর্ব #কারিমা_দিলশাদ (লেখনীতে)

0
3161

#সূর্যোদয়
#সূচনা_পর্ব
#কারিমা_দিলশাদ (লেখনীতে)

১.
একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে ঐশী। নার্ভাস ফিল হচ্ছে তার। এই প্রথম কোনো পাত্রের সাথে দেখা করতে এসেছে সে। চারদিন আগে কলেজ থেকে বাসায় ফিরে দেখে মা দুজন ভদ্রমহিলার সাথে কথা বলছে। তারমধ্যে একজনকে সে চিনে। তিনি ঐশীর এক স্টুডেন্টের মা। তখন তাদের আসার কারণ না জানলেও, পরে অবশ্য জানতে পেরেছে তাদের আসার কারণ। সাথের ভদ্রমহিলার নাম ইলোরা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর । স্টুডেন্টের মা তার কলিগ। মূলত তিনি তার কলিগের বাসাতেই প্রথম ঐশীকে দেখে। সেইখান থেকেই ঐশীকে তার পছন্দ হয়। আর তারপর তার কলিগের মাধ্যমে ঐশীর বাসায় প্রস্তাব দেন, একদিন এসে দেখেও যান। ঐশীকে তার খুবই পছন্দ হয়েছে। আর ঐশীর পরিবার তো যেন হাতে স্বর্গ পেয়ে গেছে। এমন ভালো পাত্র হাতছাড়া করার মতো বোকামি তারা কিছুতেই করতে পারেন না। তাই দুই পরিবারের সম্মতিতে আজকে পাত্রপাত্রী দুজনেই দেখা করতে আসার কথা এই রেস্টুরেন্টে। ঐশী ৪০ মিনিট ধরে এসে বসে আছে কিন্তু লোকটার আসার কোনো নামই নেই। সে ভাবে ডাক্তার মানুষ নিশ্চয়ই রোগী নিয়ে ব্যস্ত।
কিছুক্ষন পর দেখল লোকটা আসছে। মা আগেই উনার ছবি দেখিয়েছিল, তাই চিনতে অসুবিধা হয় নি। লোকটা এদিক ওদিক তাকিয়ে হয়তো তাকেই খুজঁছে, সে হাত নেড়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই লোকটা এসে তার সামনের চেয়ারে বসতে বসতে বলল- “সরি সরি, আসতে একটু লেইট হয়ে গেল। আই এম এক্সট্রিমলি সরি।“
“ ইটস ওকে। যদিও আপনি একটু না পাক্কা ৪৫ মিনিট লেইট করেছেন, তবুও ব্যাপার না। আই আন্ডারস্ট্যান্ড।” মুচকি হেসে বলল ঐশী। জবাবে জয় লজ্জা মিশ্রিত একটা হাসি দেয় এবং ম্যানুকার্ডটা ঐশীর দিকে এগিয়ে দিয়ে হাসিমুখেই জিগ্যেস করে-
“অর্ডার করেন নি নিশ্চয়ই। কি খাবেন অর্ডার করুন প্লিজ।”
ঐশী কার্ডটা নিয়ে বলে, “বেশ গরম পড়েছে তাই আমি লাচ্ছি অর্ডার করব। আর আপনি?”
“আমিও। আর কি নিবেন?”
“ না আর কিছু না। থ্যাক্স।”- হালকা হেসে জবাব দেয় ঐশী। ওয়েটার এসে অর্ডার নিয়ে গিয়েছে। জয় আর ঐশী দুজনেই আপাতত চুপ করে আছে। কোত্থেকে শুরু করবে বুঝতে পারছে না। নিরবতা ভেঙ্গে জয়-ই প্রথম কথা শুরু করল। গলাটা একটু পরিষ্কার করে বলল-
“ আমি আহসান কবির জয়। পেশায় একজন ডাক্তার। এখন আমি ময়মনসিংহ মেডিকেলে কর্মরত আছি। ”
জয়ের কথায় হেসে ফেলে ঐশী। লোকটা যে নার্ভাস সেটা তার হড়বড় করে কথা বলাতেই বুঝা যাচ্ছে। সেও বলল-
“ আমি তারান্নুম ঐশী। আমি আনন্দমোহন কলেজে অনার্স ২য় বর্ষে পড়ি। আমি আপনার নাম আর কাজ সম্পর্কে জানি মি:জয়।” জয় ঐশীর কথায় কিছুটা লজ্জা পেলো এবং নিজের উপর কিছুটা বিরক্ত বোধও করল। আজকে কেন যেন তার সব কিছু গোলমেলে হয়ে যাচ্ছে। প্রথমে তো পেশেন্ট বেশি থাকার কারনে বের হতে লেট হয়ে গেছে, তার উপর নার্ভাসনেস। আর এই মেয়েটাকেও কেন মুখের উপর সব বলে দিতে হবে? যত্তসব হুহ্।

“ মি. জয় কোথায় হারালেন?”-ঐশীর ডাকে যেন হুস ফিরে তার।
“ না না হারায় নি,সরি একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম আরকি।”
ঐশী সে বিষয়ে আর কিছু না বলে বলল,” তা মি: জয় আপনি কি নিজের ইচ্ছেতেই আমার সাথে দেখা করতে এসছেন নাকি আন্টির চাপে পড়ে এসছেন?”
“মানে?” একটু ইতস্ততা ও বিস্ময়ের সুরে।
“ দেখুন আমি মনে এক রেখে মুখে আরেক কথা বলতে পারি না। আমি সোজাসোজি কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আপনি পেশায় একজন ডাক্তার। এইখানে বেশ নাম-ডাক আছে আপনার। আপনি লাইফে সাকসেসফুল, তো আপনার জীবনসঙ্গী হিসেবে তেমন কাউকেই আপনি ডিজার্ভ করেন। সেখানে ন্যাশনালে কোনোরকম অর্নাস পড়ুয়া মেয়ে নিশ্চয়ই আপনার কাম্য নয়। আপনার ফ্যামিলি স্ট্যাটাসের সাথেও আমার ফ্যামিলি যায় না। আর আপনার হাবভাবে বারবার বিরক্তি প্রকাশ পাচ্ছে। আপনাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে আপনি এই বিয়েতে রাজি না। এম আই রাইট মি: জয়?”
জয় কিছুক্ষন চুপ করে থেকে একটা নি:শ্বাস নিয়ে বলল,“ইয়েস।”

২.
ঐশী জয়ের জবাবে নির্বিকার রইল। এমন জবাবই যে আসবে সে জানত। বরং এমন জবাব না আসলেই সে অবাক হতো। উল্টো তার ধারণা সঠিক হওয়ায় সে একটা মুচকি হাসি দিল। সে বলল- “ বিয়ে সারাটাজীবনের ব্যাপার। এখানে জোরজবরদস্তী করাও চলে না, জোরজবরদস্তী মানাও চলে না। বিয়ে শাদী কোন ছেলে খেলা না। আর আপনার সাথে অন্য একটা মানুষ,তার সারাটাজীবন,তার পরিবারও জরিয়ে যাবে। তার জীবন নিয়ে ছেলে খেলা করার অধিকার আপনার নেই। তাই চিন্তাভাবনা করে বিবেকবুদ্ধি কাজে লাগিয়ে চলুন। দোয়া করি আপনি আপনার যোগ্য জীবনসঙ্গী খোঁজে পান।“ তারপর ওয়েটারকে ডেকে বিল দিতে বলল। এরমধ্যে জয় একটা কথাও বলে নি। ওয়েটার বিল নিয়ে আসতেই ঐশী বিল দিতে নেয়। তা দেখে জয় বলে উঠে,” একি করছেন আপনি বিল দিচ্ছেন কেন? বিলটা আমি দিব। প্লিজ বিলটা আমাকে দিতে দিন।“
“ না থাক। কোন মেয়ের সাথে আসলেই যে সবসময় ছেলেদের বিল দিতে হবে এমন কোনো আইন নেই। আর এটুকু বিল দেওয়ার ক্যাপাবিলিটি আমার আছে। টেক ইট ইজি। তবে এবার যে আমাকে উঠতে হবে মি: জয়। আসি, ভালো থাকবেন।“ মুচকি হেসে বলল ঐশী।
“জ্বি।“
ঐশী উঠে চলে গেল। জয় ওখানেই থম ধরে বসে রইল । তার ভিতরে কিছু একটা চলছে। মেয়েটা এই অল্প সময়ের মধ্যে অল্প কয়েকটা কথাতেই অনেক কিছু বুঝিয়ে দিয়ে গেল। হঠাৎ করেই তার মনে হলো তার সমস্যাগুলো এই মেয়েটাই সমাধান করতে পারবে। তার ভিতরের কথাগুলো এই মেয়েটাকে বলতেই হবে। এই মেয়েটাই তাকে এই দমবন্ধকর পরিস্থিতি থেকে বাচাঁতে পারে। সে একপ্রকার দৌড়ে বেরিয়ে গেল রেস্টুরেন্ট থেকে। বাইরে বেরিয়ে দেখল ঐশী একটা রিকশায় উঠছে। সে ঐশীকে ডাক দিল।
“ ঐশী…..”
ঐশী ততক্ষনে রিকশায় বসে গেছে। ঐশী অবাক হয়ে জয় কে জিগ্যেস করল, “এনিথিং রং মি: জয়?”
“ ঐশী আমার আপনাকে কিছু বলার আছে। আমাকে কিছু সময় দিন। প্লিজ হেল্প মি।”

ক্রমশ……….

[ কার্টেসি ব্যতিত কপি করা নিষেধ। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here