অন্তরালে_তুমি পর্ব_১| kache ashar golpo

0
9910

আমার স্বামী আমাকে আজ সাজিয়ে দিচ্ছে কেন দিচ্ছেন জানেন তার বসের সাথে এক ঘন্টা সময় কাটানোর জন্য ..অবাক হচ্ছেন তাই না ..হুম ওর মুখে এই কথা শুনে আমিও খুব অবাক হয়..তার নাকি প্রমোশনের খুব প্রয়োজন ..আর তার বস শর্ত দিয়েছে সে নাকি এক ঘন্টার জন্য আমাকে চাই..আর উনিও প্রোমোশনের লোভে রাজি হয়ে যায় ..আর আমি ভাগ্যের কাছে হেরে গিয়ে উনার কথায় রাজি হই.কি অদ্ভুত আমার স্বামী যত্ন সহকারে আমায় সাজাচ্ছে ..অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু উনি শুনেননি আমার কথা ..উনি সরাসরি বলে দিয়েছেন তার প্রোমোশনের জন্য নাকি সে সবকিছু করতে পারবে..আমিও আর কিছু বলিনি আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছি সব কিছু.এখন উনি যা চাইবেন তাই হবে..

—-উফফ জান দেখো তোমায় কি সুন্দর লাগছে..

আমি আয়নার দিকে একবার তাকাই ..এর আগে কোনো দিন উনি আমাকে সাজিয়ে দেননি ..অবাক হয়ে নিজেকে দেখছি..তার মধ্যে বাইরে থেকে গাড়ির আওয়াজ এলো মনে হয় উনার বস চলে এসেছেন..

—-রুপা স্যার মনে হয় এসে পড়েছেন..তুমি বিছানায় বস ..আমি উনাকে নিয়ে আসছি..

আমি কিছু বললাম না..বিছানায় বসে এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলাম..কোনোদিন ভাবিনি আকাশ এতটা নিচে নেমে যাবে..কি করবো আমি এখন..কি করে এসব আটকাবো..আমার ভাবনার মাঝখানে দরজার খুলার শব্দ হলো মনে হয় আকাশের বস চলে এসেছেন ..আমি এখনো উনাকে দেখেনি তাকাতে ইচ্ছে করছে না এমন নোংরা মানুষের দিকে উনিই তো আকাশকে লোভ দেখিয়েছেন নাহলে আকাশ এমন করতো না ..লোকটি দরজাটা আটকে দিয়ে আমার পাশে এসে বসেন..

—-রুপ..!!

উনি আমাকে রূপ বলে কেন ডাকছেন রূপ তো আমাকে শুধু একজনই ডাকতো তাহলে কি ..আমি এবার উনার দিকে তাকাই ..

—-আপনি..আপনি এখানে কি করছেন?

—-কেন রূপ জানো না আমি এখানে কি করছি..তোমার স্বামীর থেকে এক ঘন্টার জন্য তোমাকে কিনে নিয়েছে সো এই এক ঘন্টা আমিই তোমার কাছে থাকবো..

—-আদি আপনি আকাশের বস?

—-হু. আমিই আকাশ আহমেদের বস..

—-কি করে পারলেন এমন করতে..আপনি আকাশকে প্রোমোশনের লোভ দেখিয়ে আমাকে চেয়েছেন ছি আদি..আপনিতো এমন নন তাহলে..

—-ও কাম ওন বেবি ..আকাশের প্রমোশনের প্রয়োজন তাই ওকে আমি প্রমোশন দিচ্ছি আর আমার! আমার তো তোমাকে প্রয়োজন..সো কথা বলে আমি টাইম নষ্ট করতে চাই না ..

কথাটা বলে উনি আমার দিকে এগুতে আরাম্ভ করে ..

—-খবরদার আদি আপনি আমার দিকে এগুবেন না..কেন করছেন আপনি এমন ..কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার?

—-ক্ষতি তুমি জানো না রূপ তুমি আমার কি ক্ষতি করেছো ..বেশি কিছু না শুধু জীবন্ত লাশ বানিয়ে দিয়েছো ..

—-সেটা আপনি নিজের দোষেই হয়েছেন ..

—-আমার দোষ ?আমার কি দোষ ছিল তোমাকে ভালোবাসাটা তোমাকে বিয়ে করতে চাওয়াটা ?কোনটা আমার দোষ বলো কোনটা?

—-না ভালোবাসাটা দোষের না তবে এক তরফ ভালোবাসাটা দোষের ..কেন ভালোবাসতে গেলেন আমায় ..আমি তো প্রথম দিনই বলে দিয়েছিলাম আমি আপনার ভালোবাসার মূল্য দিতে পারবো না ..আমি আমার ফ্যামিলির উপরে যেতে পারবো না তারপর ও কেন পরে ছিলেন আমার পেছনে ..কি পেয়েছেন এসব করে ..আমি তো বিয়ে করে সংসার করছি কিন্তু আপনি এখনো সেই আমাকে নিয়েই পরে আছেন ..

—-আচ্ছা রূপ তুমি কি আকাশের সাথে সুখে আছো?

—-হুম আদি আমি আকাশের সাথে সুখে আছি ..

আদি আমার কথা শুনে হো হা করে হেসে দে ..

—-কি হলো হাসছেন কেন?

—-যে স্বামী সামান্য প্রমোশানের জন্য নিজের স্ত্রীকে অন্য কারো হাতে তুলে দেয় তুমি কিনা তার সাথে সুখে আছো ..তা আজকাল বুঝি মেয়েরা এমন স্বামীই চাই..

—-চুপ করুন ..আকাশের কোনো দোষ নেয় আপনি আকাশের মাথা খেয়েছেন ..

—-তাই নাকি..জাস্ট এ মিনিট ..নাও এই ভিডিও টা দেখো ..

উনি আমার সামনে উনার মোবাইল থেকে একটা ভিডিও প্লে করে দেন ..

[—-স্যার আমার প্রমোশনটা খুব প্রয়োজন প্লিজ স্যার.

—-দেখুন মি. আকাশ প্রমোশন বললেই পাওয়া যায় না ..তার জন্য খাটতে হয় . আপনি চেষ্টা করুন তাহলে ঠিকই হবে ..

—-স্যার যত টাকা লাগে আমি দিবো তবু প্রমোশনটা..

—-হেই মি. আপনি আমাকে এই আদিত্য চৌধুরীকে টাকার লোভ দেখাচ্ছেন ..আমার যা টাকা আছে তাতে আমি কোনো কাজ না করে সারাজীবন পায়ের উপর পা তুলে খেতে পারবো ..

—-সরি স্যার ..আসলে প্রোমোশনের চিন্তায় মাথা কাজ করছে না ..তবে স্যার আমার কাছে আরো একটা অফার আছে..

—-দেখুন আমাকে কোনো অফার দিতে আসবেন না ..আমি কাজে বিশ্বাসী কাজ করে দেখান তাহালে আপনার চাওয়া পূর্ণ হবে ..

—-স্যার আপনি যদি বলেন তাহলে আমি আমার বউকেও আপনাকে দিতে পারবো . না মানে স্যার আপনি তো এখনো বিয়ে করেননি ..আপনার যদি প্রয়োজন হয় তবে আমি আমার বউকে রাজি করবো ..স্যার আমি গেরান্টি সহকারে বলছি আমার বউ আপনার মন জয় করে দিতে পারবে ..]

—-আমি তো আগেই জানি যে আকাশের বউ তুমি ..যদি অন্য কেউ হতো তাহলে এতক্ষনে আকাশের জবটা আর থাকতো না ..কারণ এই রকম কুৎসিত মনের মানুষ কখনো আমার অফিসে কাজ করতে পারে না ..কিন্তু ওই যে তোমাকে পাওয়ার লোভ ..

ভিডিওটা দেখে আমি অঝরে কেঁদেই চলছি ..

—-এখন কেন কাঁদছো ..আজকে ও তোমাকে আমার কাছে তুলে দিয়েছে কালকে নিশ্চই ও অন্য কারো হাতে তুলে দিবে ..আর তুমি এভাবেই শেষ হয়ে যাবে ..

উনার কোথায় আমি ঠুকরে কেঁদে উঠি

—-কি করবো আমি এখন ..?(কাঁদতে কাঁদতে বলি)

—-কি আর করবে ডিভোর্স দিয়ে দাও আকাশকে..

উনার কথা শুনে উনার দিকে তাকাই .

—-এত সহজ সবকিছু ..যে বললেই হয়ে যাবে ..উনি আমার স্বামী ..আমাদের বিয়ের সবে ৫ মাস হয়েছে ..এর মধ্যে উনি এমন করছেন ..কি করে থাকবো উনার সাথে আমি ..

—-থাকতে পারবে না তুমি তাই তো বলছি সময় থাকতে ওর থেকে নিজেকে মুক্তি করো ..ও তোমায় ভালোবাসে না ..শুধু মাত্র নিজের স্বার্থের জন্য ও তোমাকে ব্যবহার করছে ..

উনার কথায় মনে মনে ভাবছি ..আদি বোধ ওই ঠিকি বলছে ..বিয়ের পর থেকে উনি কখনো আমার সাথে ভালো ভাবে কথা বলেননি ..বিয়ের পর দিন থেকেই অফিসে যাওয়া শুরু করেন সারাদিন অফিস করে এসে রাতে আমার উপর জাপিয়ে পড়তেন ..প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হতো কিন্তু উনি শুনেননি আমার কথা . এই পাঁচ মাসে একদিনও আমার সাথে বসে দুটো কথা বলেননি খুব প্রয়োজন ছাড়া …মাঝেমাঝে মনে হয় আমাদের সম্পর্কটা শুধু শারীরিকভাবে ..মনের দিক দিয়ে একটুও নেয় ..বাবা মাকে বলতে গিয়েও বলতে পারিনি উনারা কষ্ট পাবেন . আর কথা আছে না স্বামী যেমনই হোক মেয়েদের নাকি মানিয়ে নিয়ে চলতে হয় তাই আমিও চলছিলাম ..কিন্তু আজকে যা করেছেন তারপরও কি আমি পারবো এভাবেই চালিয়ে যেতে ..

—-রূপ কি ভাবছো ..তুমি শুধু একবার বলো আমি সব ব্যবস্থা করবো ..

আমি অসহায় দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকাই ..

—-কি হলো চুপ করে আছো কেন ..বলো থাকতে পারবে তুমি এই নোংরা মানুষটার সাথে .?

—-এছাড়া আর কি উপায় আছে ..?

—-কি উপায় আছে মানে ..ওকে ছেড়ে দাও তুমি ..মুক্ত করো নিজেকে..ওর সাথে থাকলে তুমি শেষ হয়ে যাবে রূপ ..বুঝতে পারছো না কেন ..

—-আমি বুঝতে পারছি ..কিন্তু আমার কি করার আছে আমরা মেয়েরা চাইলেই যে হুট করেই একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না ..আমাদের নিজের কথা ভাবার আগে পরিবারের কথা ভাবতে হয় .সমাজের কথা ভাবতে হয় ..আজ যদি আমি উনাকে ডিভোর্স দেই তাহলে সবাই উনার দোষ খুঁজবে না সবাই আমার দোষই খুঁজে বের করবে বলবে মেয়ের নিশ্চয় অন্য কারো সাথে সম্পর্ক ছিল ..তাই স্বামীকে ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছে ..আমার পরিবারকে কথা শুনাবে ..বলবে এই পরবিবার ভালো শিক্ষা দিতে পারে নাই তাইতো মেয়ে ৫ মাসও সংসার করতে পারলো না ..আরো যে কত কিছু বলবে ..কিভাবে সহ্য করবো তখন এইসব ..

—-কেউ তোমাকে কিছু বলবে না আমি আছি তোমার সাথে..সারাজীবন থাকবো ..

উনার কথায় মেকি হাসি দিয়ে বললাম ..

—-সবাই কি বলবে জানেন আপনার সাথে আমার বিয়ের আগে সম্পর্ক ছিল ..তাই বিয়ের পরও আপনার টানে আমি স্বামী সংসার ফেলে রেখে আপনার কাছে চলে এসেছি ..কেউ বুঝবে না আমার সাথে কি হয়েছে ..কেউ খুঁজ নিতে আসবে না আকাশ কেমন ..আঙুলটা আমার আর আমার পরিবারের দিকেই তুলবে ..

—-তাহলে কি তুমি আকাশের সাথেই থাকতে চাও ..?

—-হুম আমি আকাশকে বুঝিয়ে বলবো ..ও নিশ্চই বুঝবে ..

আমার কথা শুনে আদি রেগে বেরিয়ে যায় .

—-স্যার স্যার কি হয়েছে এখনতো এক ঘন্টা হয়নি ..কোনো সমস্যা.?

আদি আকাশের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় ..আকাশ দৌড়ে রুমে এসে দেখে রুপা জানালার দিকে তাকিয়ে বসে আছে ..

—-এই তুই স্যারকে কি বলেছিস যে উনি এভাবে রেগে বেরিয়ে গেলো ..?

আকাশের কথা শুনে আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকাই ..উনি আমাকে তুই করে বলছেন .
.

—-আকাশ আপনি আমার সাথে তুই তোকারি করছেন ..

—-নাতো কি আপনি করে বলব?

—-না আপনি করে বলতে হবে না তবে আমাকে তুই করেও বলতে পারবেন না ..

আমার কথা শুনার পর উনি একিয়ে এসে আমাকে ঠাস করে থাপ্পড় মারেন .এতো জোরে মারলেন যে আমি খাটের সাথে কপালে প্রচন্ড অঘাত পাই …তারপর আমার আর কিছু মনে নেয় ..
চলবে ..

অন্তরালে_তুমি পর্ব_১
#প্রত্যাশা
(আল্লাহকে ভয় করো,পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here