অবুঝ ভালোবাসা,part:8+9

0
12800

অবুঝ ভালোবাসা,part:8+9
writer:ঝরা পাতা(খাদিজা)
?

সকলেই বলা বলি করছিলো আমার কী হয়েছে।
রিয়ান ভাইয়া ও আমার কাছে এসে বললো।
কীরে কী হয়েছে তোর।এমন করে কান্না করছিস কেনো।
আমি আর ওখানে এক মিনিট ও দাড়ালাম না।দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।
রিয়ান ভাইয়া কাকিমা অনেক বার ডেকেছে।
একটু পরেই রিয়ান ভাইয়ার বিয়ে।আমি এখন ও ঘরে বসে আছি।নিজেকে আজ আর নিজের কাছে ভালো লাগছে না।নিজের কাছে নিজেকে আজ বোঝা মনে হচ্ছে।

কীছু না ভেবেই একটা চিঠি লিখতে বসলাম।লেখা শেষ এ বিষ এর বোতল টা হাতে নিয়ে বসে আছি।
একটু পরেই বোতল এর সব টুকু বিষ খেয়ে ফেললাম। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।বাইরে থেকে অনেক বার ডাকা ডাকি করে যখন আমার কোনো সারা পাই নাই।তখনই রিয়ান ভাইয়া দরজাটা ভেঙে ফেললো।
রিয়ান ভাইয়া দৌড়ে আমার কাছে এসে আমার নাম ধরে বার বার ডাকছে।কীছু বলার শক্তি টুকুও আজ আমার নেই।চোখ দুটো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসলো। তার পরে কী হয়েছে আর বলতে পারবো না।

চোখ খুলে নিজেকে রিয়ান ভাইয়ার বুকে আবিষ্কার করলাম,ঘুমিয়ে আছে রিয়ান ভাইয়া। কীছু সময় তার বুকে থেকে বোঝার চেষ্টা করলাম কী হয়েছে আর কোথাই আমি।একটু নরে চরে উঠতেই ভাইয়া ধরপরিয়ে উঠলো। আমাকে দেখেই জোরিয়ে ধরে বসে আছে তার চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছে। কীছু বলতেও পারছে না।

একটু পরেই রুমে কাকিমা,কাকু আসলো আমাকে এমন দেখে যেনো তারা তাদের প্রাণ ফিরে পেলে।
রিয়ান ভাইয়া একপাশে মাথা নিচু করে বসে আছে।আর ডাক্তার আমাকে চেক-আপ করছে।একটু পরে ডাক্তার বললো।
আর কোনো চিন্তা নেই।আপনাদেে মেয়ে এখন সুস্থ। ওকে আপনারা বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন।বলেই চলে গেলো।

কাকু,কাকিমা আমার পাশে বসে আছে।রিয়ান ভাইয়া আমার বেডের এক সাইডে চুপ করে বসে আছে।
হঠাৎ কাকু আমার হাতটা ধরে বলতে শুরু করলো।
আমাকে ক্ষমা করে দে মা।
আমি কাকুর হাত দুটো ধরে বললাম,এই সব কী বলছো কাকু।তুমি কেনো ক্ষমা চাইছো।

আসলে মা তিথি হলো তোর কাকিমার বান্ধবীর মেয়ে কাল ওর বিয়ে ছিলো তবে সেটা রিয়ান এর সাথে না,আমাদের অফিস এর শাওন এর সাথে।ওদের বিয়ের কথা শুনেই আমি ওদের বলি বিয়ে টা যেনো আমাদের বাড়ি থেকে হয়।
আর সকল কে তোর সাথে অভিনয় করতে বলেছিলাম।যেনো তুই তোর মনের কথাটা নিজে বুজতে পারিস।আর আমার কথা মতোি রিয়ান তোকে বলে রিয়ান এর সাথে তিথির বিয়ে, তবে বিশ্বাস কর মা।তুই এমন কীছু করবি আমি কখন ও ভাবি নাই।

আমি তোদের এক করতে গিয়ে তোদের জীবনটা শেষ করে দিতে গিয়েছিলাম।আমাকে মাফ করে দে (কাকু কথাগুলো বলছিলো আর কান্না করছিলো)

আমি কী বলবো কীছুই বুজতে পারছিলাম না।হঠাত কাকিমা বললো কাল থেকে আজ পর্যন্ত দুই এই বেডে শুয়ে ছিলি।তোর কাছ থেকে আমার ছেলেকে কেউ সরাতে পারেনি।এই দুদিনে এক ফোটা পানি ও খাইনি।
আমাদের কারো সাথে কথাও বলছে না।তুই প্লিজ ওকে একটু বুঝিয়ে শুনে খাওয়া, এই যে খাবার। খাবার টা আমার পাশে রেখেই কাকু কাকিমা চলে গেলো।
আর রিয়ান ভাইয়া এখন ও আগের মতোই দাড়িয়ে আছে।

হঠাৎ আমার কাছে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে পড়তে শুরু করলি।

প্রিয় রিয়ান ভাইয়া
যখন তুমি আমার মনের কথাগুলো জানতে পারবে তখন হয়তো আমি আর এই দুনিয়ায়
থাকবো না।জানো ভাইয়া তোমাকে না তিথি আপুর সাথে খুব মানিয়েছে।কিন্তু বিশ্বাস করো তোমাদের এক সাথে দেখে আমি যে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিনা।খুব কষ্ট হচ্ছে আমার নিশ্বাস টাও নিতে পারছি না।
শপিংমল এ যখন তুমি তিথি আপুকে জোরিয়ে ধরলে তখন যেনো আমার পুরো পৃথিবী টাই অন্ধকার হয়ে গেয়েছিলো।আচ্ছা ভাইয়া তুমি তো বলেছিলে তুমি আমাকেই বিয়ে করবে,আর তখনই বিয়ে করবে যখন আমি তোমাকে ভালোবাসবো।তবে কেনো আজ তিথি আপুকে বিয়ে করছো?তবে কী তোমার বলা কথা গুলো সব মিথ্যা ছিলো। আচ্ছা ভাইয়া আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে তুমি কী বুজতে পারছো না।
এই কষ্ট টাকে তুমি কী নাম দেবে আমি জানি না।তবে আমি তোমাকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি। তাই আমি বেঁচে থাকতে তোমাকে অন্য কারো পাশে দেখতে পারবো না।
প্রথম এবং শেষ বার তোমাকে বলে যাচ্ছি ভাইয়া।
i love u,i really love u.
ভালো থেকো।
ইতি তোমার না পাওয়া ভালোবাসা।

চিঠি টা আমার লেখে,আমি ভাইয়া দিকে তাকাতে পারছিনা, খুব ভয় করছে।ভাইয়া চিঠিটা পড়ে আমার দিকে তাকালো।আমি সাথে সাথে মাথা নামিয়ে নিলাম।

ভাইয়া আমাকে কীছু বলার আগেই আমি ভাইয়াকে অসহায় ভাবে বললাম।

ভাইয়া আমার না খুব খুদা লাগছে।
ভাইয়া আর কীছু না বলে প্লেট এ খাবার নিয়ে নিজ হাতে আমাকে খাওয়াতে শুরু করলো।আমি কীছু না ভেবেই প্লেট টা হাতে নিয়ে এক লোকমা খাবার ভাইয়ার মুখের কাছে ধরলাম।ভাইয়াও কোনো কথা না বলে খেয়ে নিলো।
খাওয়া শেষ করে ভাইয়া বললো।
এর শাস্তি তুই পাবি।নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করার শাস্তি তো তুই পাবিই।আর এই চিঠির শাস্তি ও তুই পাবি।বলেই চলে গেলো।আর আমি ভয়ে চুপসে গেলাম।

একটু পরে কাকিমা এসে আমাকে চেন্স করে দিয়ে গেলো তার একটু পরেই ভাইয়া রুমে এসে কোনো কথা না বলেই আমাকে কোলে নিয়ে হাটা শুরু করলো।
হসপিটালের অনেকেই আমাদের দেখে আসছে।
খুব লজ্জা লাগছে।আর ভাইয়ার যেনো কোনো দিকে খেয়াল নেই,আমাকে কোলে করে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।

বাড়িতে এসে আমাকে আমার রুমে যেতে না দিয়ে ভাইয়ার রুমে নিয়ে গেলো আর কাকিমাকে ডেকে বললো বিকেলে যেনো কাজি বাড়িতে চলে আসে। না আসলে কী করবো তুমি তো তা জানোই আশা করি।

বিকেলে সুয়ে আছি কোথা থেকে আমার বান্ধবী নিশি এসে কীছু না বলেই আমার হাতে একটা নীল রং এর শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে বললো এটা পড়ে ৫মিনিট এর মধ্যে নিচে চলে আয়,নয়লে রিয়ান ভাইয়া তোর কপালে শনি ডেকে আনবে। বলেই চলে গেলো।
কীছুই বুজতে পারলাম না।

একটু পরে শাড়িটা পড়ে নিচে চলে গেলাম।নিচে গিয়ে আমাদের কীছু কাজিনদের দেখতে পেলাম।বুজতে পারছিনা কী হচ্ছে।
কাকিমা আমাকে টেনে রিয়ান ভাইয়ার পাশে বসিয়ে দিলো, একটু পড়েই কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিলো।

আমার মাথাই যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। কী হচ্ছে আমার সাথে।আজ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলাম আর আজিই বিয়ে।

কখন থেকে কাজি সাহেব বলেই যাচ্ছে বলো মা কবুল।আমি কীছু বলতে পারছিলাম না।

হঠাৎ একটা শীতল হাত,সকলের চোখের আড়ালে আমার শাড়ির নীচ দিয়ে আমার পেট টা চাপ দিয়ে ধরলো।
ভয়ে আপনা আপনি মুখ দিয়ে কবুল বের হয়ে গেলো।
কবুল বলে রিয়ান ভাইয়ার দিকে তাকালাম।ভাইয়া মুচকি মুচকি হাসছে। কারণ হাতটা রিয়ান ভাইয়ার ছিলো।
আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলো।
এভাবে বিয়ে হবে কখনও ভাবিনি।
রাতের মধ্যে সকল কাজিনরা খাওয়া দাওয়া করে চলে গেলো।

আর আমি চুপ করে বসে আছি।বাড়িতে আসার পর থেকে রিয়ান ভাইয়া আমার সাথে একটা কথাও বলেনি।
রাতে তিথি আমাকে বউ সাজিয়ে রিয়ান ভাইয়ার রুমে বসিয়ে দিয়ে গেলো।

আমি বসে বসে চিন্তা করছি কোথা থেকে কী হয়ে গেলো।
নিজের বিয়ে আর নিজেই জানি না।হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে দরজার দিকে তাকালাম রিয়ান ভাইয়া দরজা বন্দ করে ভেতরে এলো।
আমি উঠে তার পা ধরে সালাম দিলাম।যতোই হক এটা তো নিয়ম।
রিয়ান ভাইয়া আমার বাহু ধরে দার করিয়ে বললো।
অনেক রাত হয়েছে যা চেন্স করে নে।
আমি আর কোনো কথা না বলে।ফ্রেস হতে চলে গেলাম।ঘরে এসে দেখি রিয়ান ভাইয়া নেই।
তাই বেলকুনিতে চলে গেলাম।রিয়ান ভাইয়ার পিছনে দাড়াতেই আমাকে না দেখেই বললো।

তোর উপর শুধু আমার অধিকার আছে আর কারণ না তোর নিজের ও না।
জানিস রিনি ভালোবাসার মানুষ টাকে কাছে পেয়েও না পাওয়ার কষ্ট টা কত বেদনার।

জানিস না।আজ থেকে তোকে বোঝাবো।সেই কষ্টটা কাকে বলে। আমি তোর সাথেই থাকবো তবে তুই আমাকে তোর সাথে মিশে পাবি না।
নিজেকে শেষ করে দেওয়ার শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে সুইটহার্ট। বলেই আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে আমাকে কীছু বলতে না দিয়ে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে চলে আসলো।

আমাকে খাটে সুয়ে দিয়ে নিজে আমার উপর সুয়ে পড়ে নিজের সব টুকু ভর ছেরে দিলো।
কতক্ষণ আমার দিকে চেয়ে থেকে আমার ঠোঁট এ নিজের ঠোঁট টা ডুবিয়ে দিলো।

দুজন কতক্ষণ ধরে এমন ছিলাম জানি না।
আমার সারা মুখে পাগল এর মতো চুমু দিচ্ছিলো।গলাই মুখ ডুবিয়ে দিয়ে বললো,এবার তুই বুজবি কাছে এসেও না আসার যন্ত্র না কতো টুকু।
বলেই বুকে জোরিয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে গেলো।

ভাইয়ার এমন আচরণে আমি শুধু অবাক হচ্ছি।
এই ভালোবাসা দেখাচ্ছে তো এই ভিলেন গিরি দেখাচ্ছে।ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।ঘুম থেকে উঠে দেখি রিয়ান ভাইয়া নেই। তাই উঠে ফ্রেস হয়ে নিচে চলে গেলাম।নাস্তার টেবিলে হঠাৎ রিয়ান ভাইয়া বললো।

তো আব্বু সারপ্রাইজ টা কেমন ছিলো?

আব্বু কীছুই বললো না শুধু মুচকি হাসলো আর বললো।
তুই কী সত্যি আমাদের ছেলে নাকী বন্ধু।
রিয়ান ভাইয়াও কীছু না বলে হাসলো।

আমি বললাম।
কীসের সারপ্রাইজ কাকু।
তখন পিছন থেকে নিশি বললো,

আরে তুই জানিস না,কাল তো আন্টিদের রুম রিয়ান ভাইয়া ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছিলো।সেটা আন্টিরা জানতো না।

আমি নিশির কথা শুনে রিয়ান ভাইয়ার দিকে একবার তাকালাম।
আর মনে মনে বললাম মানুষ টা পারেও বটে বাবা মার ফুলসোজ্জার খাট সাজিয়ে দিয়েছে ভাবা যায়।
রুমে বসে আছি রিয়ান ভাইয়া সোফায় বসে ল্যাপটবে কাজ করছে।
এমন সময় আমাদের এক চাচাতো ভাই এর বউ রুমে এসে বললো।

কী গো নতুন জামাই বউ কী করো।

আরে ভাবি আসেন ভিতরে আসেন(রিয়ান)

ভাবি তুমি, এসে বসো(আমি)

হুম বসবো তো।আর কাল রাতের সব কথা শুনবো।তো রিয়ান সাব কাল রাতে কী বিড়াল মারতে পেরেছেন নাকী পারেন নাই।

কী যে বলেন ভাবি বিড়াল মারার রাত তো একটাই, না মেরে থাকি কী ভাবে
ভাইয়ার কথাই ভাবি হেসে উঠলো।

আর আমার দিকে তাকিয়ে বললো তো কী আমি চাচি আম্মা হচ্ছি কবে।
আমাকে কীছু বলতে না দিয়েই রিয়ান ভাইয়া বললো।
খুব তারা তারি হবেন চিন্ত করেন না ভাবি।কী বলিস রিনি বলেই চোখ মারলেন আমাকে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here