আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ১

0
22863

আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ১
Tanisha Sultana

ফুল দিয়ে সাজানো খাটে বসে আছে রাই। পচন্ড ভয় করছে রাইয়ের। যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে ভীষণ ভয়ংকর। প্রায় এক ঘন্টা যাবৎ বসে আছে। জেসি (জিহাতের চাচাতো বোন) বারবার বলেছে জিহাত না আসা পর্যন্ত না ঘুমাতে। আর ঘোমটা টেনে বসে থাকতে। রাইয়ের এবার বেশ বিরক্ত লাগছে। শাড়ি গহনা সব কিছুই কেমন বোঝা বোঝা লাগছে। তারওপর আবার তাকে সাজ দেখানোর জন্য বসে থাকতে হবে। এমনিতেই শরীরটা ভালো নেই। তারপর প্রচুর ঘুম পাচ্ছে। কিন্তু লোকটার কোনো খবর নেই। রাই হাই তুলছে একটু পরপর। নেহাৎ জিহাত নামটার মধ্যে একরাশ ভয় লুকিয়ে আছে নাহলে রাই এভাবে বসে থাকতো না।
এবার পুরো রুমটা খুঁটিয়ে খুটিয়ে দেখছে রায়। বেশ পরিপাটি। আর রুমটা সাজিয়েছেও বেশ ভালো। লাল গোলাপ হলুদ গাঁধা আর সাদা রজনীগন্ধা যেনো ঘরের পরিবেশটাই বদলে দিয়েছে। চারপাশে তাজা ফুলের গন্ধ ম ম করছে। টেবিলের ওপর রাখা এক গ্লাস দুধ আর এক গ্লাস পানি। এটা জিহাতকে খাওয়াতে বলে গেছে মুরব্বিরা।

এবাড়ির কাউকেই রাই চেনে না। সব মানিয়ে নিতে পারবে তো?

জিহাতের রুমের বড় দেয়াল ঘড়িটা টিক টিক করছে। বারোটা বাজলো। রাই এবার ভাবছে আর বসে থাকবে না এখন শুয়ে পড়বে যা হওয়ার হবে। হয়ত বকবে। তাই বিছানা থেকে নামার জন্য পা বাড়ায়। তখনই প্রচন্ড জোরে দরজা খোলার আওয়াজ আসে। রাই কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। কাচুমাচু হয়ে বসে।

জিহাদ পা দিয়ে দরজা ঢেলে ঠাপ করে লাগিয়ে দেয়। রাই আবার কেঁপে ওঠে। জিহাতের সারাশরীর ঘামে ভিজে একাকার হয়ে গেছে। রাই জিহাতকে আগে দেখলেও কখনো ভালে করে দেখে নি। আসলে তাকানোর সাহসই পায় নি।
জিহাত শার্ট খুলে সোফায় ছুড়ে মেরে নিজেও সোফায় ঢেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে।
রাই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে জিহাতকে। লম্বা, হলুদ ফর্সা, গালে চাপ দাঁড়ি কালো টিশার্ট আর কালো জিন্স এ খুব মানিয়েছে। একদম পারফেক্ট। কপালের কাছে পড়ে থাকা সিল্কি চুল ওর সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। জিহাত হাঁপাচ্ছে। হয়ত কোনো মহৎ কাজ করে এসেছে।

জিহাত নরেচরে রাইয়ের দিকে তাকায়। জিহাত তাকাতে রাই চোখ সরিয়ে নেয়। জিহাত আবার চোখ বন্ধ করে বলে
“আমি খুব টায়ার্ড। তোমাকে সময় দিতে পারবো না। ঘুমিয়ে পড়ো। যা হওয়ার কাল হবে। আজ এনার্জি নাই। সরি বেবি

রাই একটা ঢোক গিলে। এই ছেলেটা এতে অভদ্র কেনো? ভদ্র ভাবে বললেও তো পারতো।
রাই আস্তে আস্তে খাট থেকে নেমে লাগেজ নিয়ে লাল একটা শাড়ি বের করে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে গহনা খুলে শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমে যায়।
ওয়াশরুম পুরোটা ময়লা জামাকাপড় আর সিগারেটের বাকি অংশ দিয়ে বোঝাই করা। রাই বেরিয়ে আসে। বিরক্ত লাগছে এবার।

জিহাত বিছানা থেকে ফুল ঝাড়ছিলো আর ফোনে কথা বলছিলো রাইকে দেখে ফোন কেটে দেয়। রাইয়ের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে

” কি হলো?

“আআসলে ওয়াশরুম খুব নোংরা। ওটা ওয়াশরুম না ডাস্টবিন বুঝতে পারলাম না

” দুটোই। আমার সব কিছুই এমন অগোছালো। মা বা অন্য কারো ওয়াশরুমে যাও

রাই কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

জিহাত খাটে লম্বা হয়ে শুয়ে ফোন দেখছে। রাইকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে

“হোয়াট?

” না মানে আপনি একটু রুম থেকে বের হলে আমি চেঞ্জ করতে পারতাম।

জিহাত বিরক্ত নিয়ে এক পলক রাইয়ের দিকে তাকিয়ে উঠে বসে। রাইয়ের হাত ধরে টান দিয়ে রাইকে নিজের পাশে বসিয়ে দেয়। রাই হালকা চমকে ওঠে।
জিহাত রাইয়ের মুখে হাতের একটা আঙুল নারাতে নারাতে বলে

“তোমার বোনের মুখে তোমার অনেক কথা শুনেছি। কিন্তু কখনো বলে নি তুমি খুব নেকা টাইপের মেয়ে। হয়ত ভুলে গেছিলো নয়ত চেপে গেছে।

রাই চোখ বন্ধ করে আছে৷ জিহাত রাইয়ের মুখে ফু দিয়ে ফোন কানে নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। রাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়। তারপর শাড়ি চেঞ্জ করে।

হঠাৎ রাইয়ের পেট ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। রাই খুব ভয় পেয়ে যায়। এবার কি হবে? কি করবো? কাকে বলবো? এসব ভেবেই রাই ঘামতে শুরু করে। এই বাড়ির কাউকেই তো রাই চেনে না। কোনোরকম শাড়ি পড়ে নেয় রাই। জিহাতের কাছে কি করে যাবে? কি বলবে? এইসব ভাবছে আর এক পা এক পা করে এগোচ্ছে।

উঁকি মেরে দেখে জিহাত ফোনে কথা বলছে হেসেহেসে। রাই আস্তে আস্তে জিহাতের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে কাশি দেয়। জিহাত ফুল বিরক্তির সাথে রাইয়ের দিকে তাকায় এবার আর ফোন কাটে না

” কি হয়েছে?

“না মানে বলছিলাম আপনাদের এখান থেকে ফার্মেসীর দোকান কতো দুর?
আমতাআমতা করে বলে রাই।

” বেবি পরে কথা বলছি।
ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে রাইয়ের দিকে ঘুরে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে বলে

“কেনো?

” দরকার ছিলো

“এতো রাতে

” হুমমম। কতো দুরে?

“আধ ঘন্টা লাগে।

” ওহহহ

“হুমমম যাও

রাই পরেছে বিপদে। ওতো অন্ধকারেই ভয় পায় দোকানে যাবে কি করে? ভেবেছিলো জিহাত হয়ত বলবে আমাকে বলো আমি এনে দিচ্ছি। রাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে হাত কচলাচ্ছে।

” কি হলো যাও?

“না মানে আমি তো যেতে পারবো না। আপনি এনে দিন প্লিজ

জিহাত ঠোঁট বাঁকিয়ে একটু হাসে।

” তো ফাস্টেই বলতে পারতে। দেখো আমার সাথে চলতে গেলে আমার মতো হয়ে চলতে হবে। স্ট্রেট কথা বলতে হবে। কোনো কাঁপা-কাঁপি চলবে না। এসব আমার বোরিং লাগে।

রাই মাথা নিচু করে শুনছে। যেভাবে ডাকাতের মতো তুলে এনে বিয়ে করে নিয়েছে তাতে একে ভয় না পেয়ে উপায় আছে?

“পবলেম কি?
রাই কিভাবে বলবে বুঝতে পারছে না। রাইয়ের দৃষ্টি ফ্লোরে।

” পিরিয়ড
সহজভাবে বলে জিহাত।
রাই মাথা ঝাকায় মানে হ্যাঁ।
জিহাতের ফোন বেজে ওঠে। জিহাত তারাহুরো করে রুমে এসে শার্টটা নিয়ে বেরিয়ে যায়।

রাই চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিশ্বাস নেয়। কি থেকে কি হয়ে গেলো? হঠাৎ কোথা থেকে জিহাত এলো আর ওদের বিয়েটাও হয়ে গেলো।

চাঁদটা ঠিক মাথার ওপরে। রাই মাথা উঁচু করে চাঁদটাকে দেখছে। চাঁদের আবসা আলোতে রাই বোঝার চেষ্টা করছে বাড়িটার চারপাশ। বাইকের শব্দে রাই বুঝতে পারে জিহাত বোধয় গেলো। রাই বেলকনির দরজা বন্ধ করে দিয়ে রুমে ফেরত আসে।

একটু পরেই জিহাত ফিরে আসে। কান থেকে হেডফোন খুলে রাইয়ের দিকে প্যাকেটটা এগিয়ে দিয়ে বলে
“ইউ আর লুকিং সো হট বউ। গোল আলুর মতো লাগে তোমায় আমার কাছে। তোমার বোনের থেকেও তুমি বেশি কিউট। যদি তোমার বোনের আগে আমাদের দেখা হতো

রাই বরবড় চোখ করে তাকায় জিহাতের দিকে। জিহাত প্যাকেটটা রাইয়ের হাতে ধরিয়ে দেয়। রাইয়ের মুখের ওপর পড়ে থাকা ছোটছোট চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে বলে

” ইসসস আজ যদি তোমার পবলেম না হতো কতো ভালো হতো। যাক গে কোনো বেপার না।

“আমি চেঞ্জ করবো
থেমে থেমে বলে রাই।
” তো
ভ্রু কুচকে বলে জিহাত

“একটু বাইরে গেলে ভালো হতো।
আমতাআমতা করে বলে রাই।
জিহাত জোরে একটা শ্বাস নেয় বিরক্তি নিয়ে রাইয়ের দিকে তাকিয়ে ফোন দেখতে দেখতে বেলকনিতে চলে যায়।

রাই বিছানায় শুয়ে পড়ে তখনই আবার জিহাত আসে। রাই লাফ দিয়ে বসে

” কুল কুল। আমি হেডফোন নিতে এসেছি। হেডফোন ছাড়া কথা বলে মজা নাই। গুড নাইট আমার গোল আলু বউ
বলে খাটের পাশ থেকে হেডফোন নিয়ে রাইকে চোখ মেরে চলে যায় জিহাত।

“এই ছেলেকে বিশ্বাস নেই আমি বরং সোফায় গিয়ে ঘুমাই

রাই উঠে সোফায় শুয়ে পরে। বুকের ভেতর তোলপাড় করছে। কেমন ভয় ভয় লাগছে। এরপর কি হবে এটা ভেবেই রাইয়ের হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here