আসক্তি Mr_Arrogant_4 #পর্ব_৩৫

0
456

#আসক্তি Mr_Arrogant_4
#পর্ব_৩৫
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida

চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা উইশ চেয়ে ক্যান্ডেল নিভাল নীল। সাথে সাথে হাত তালির শব্দে চারপাশ ভরে গেল।

কেক থেকে ছোট একটা টুকরো তুলে সবার আগে রওশনের মুখে তুলে দিল নীল, রওশন হালকা ঝুঁকে অল্প পরিমাণ কেক নিল আর নীলকে খাইয়ে ধীর স্বরে বলল ‘হ্যাপি বার্থডে নীল!’

বড় একটা হাসি ঠোঁটে টেনে রওশনকে জড়িয়ে ধরলো নীল তারপর আদুরে গলায় বলতে শুরু করল, ‘আই লাভ ইউ ভাইয়া! ইউ আর দ্যা বেস্ট ব্রাদার ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড।’

রওশন নীলের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিল। ঝুঁকার ফলে ব্যান্ডেজের জায়গাটায় টান লাগে ওর যার কারণে জমে থাকা ব্যথা টুকু নাড়া দিয়ে উঠে। কিন্তু তবুও ও নিজেকে নরমাল দেখানোর চেষ্টা করছে। অবশ্য রওশন যথেষ্ট স্ট্রং নিজেকে সামলানোর জন্য। তবুও এতবড় একটা আঘাত সহ্য করে অপারেশন এর পরপরই এমন নরমাল থাকার জন্য, শক্ত মনোবল এর সাথে ধৈর্য্যের ও প্রয়োজন হয়।

নীল পরের টুকরো তুলে পাশে ফিরে কনফিউজড হয়ে থেমে যায়, কারণ সামনে আভি আর সুবহা দু’জনে দাঁড়িয়ে।

ওরা দু’জনই আশায় আছে যে নীল ওদের কেক খাইয়ে দিবে, কিন্তু নীল যেন দ্বিধায় আঁটকে পড়ে। কাকে আগে ও কেক খাওয়াবে সেটার সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারছে না বেচারা।

অনেক গভীর মনোযোগ নিয়ে কিছু সময় ভাবে নীল। ওর মাথায় দারুন একটা বুদ্ধি এসেছে। নীল মুচকি হেসে কেকের টুকরোটা হাতে নিয়ে বলে, ‘লেডিস ফার্স্ট!’ – সুবহা মুচকি হেসে হাঁটু ভাঁজ করে বসে নীলের হাত থেকে কেক খেয়ে নেয় আর ও-ও নীলকে খাইয়ে দেয় তারপর নীলের গাল টেনে ওকে উইশ করে বলে, ‘হ্যাপি বার্থডে নীলু!’

নীল নাক কুঁচকে নেয় তারপর ঠোঁট ফুলিয়ে বলে, ‘ওফফো সুবা আমার নাম নীল, নীলু টিলু না। ডোন্ট স্পয়েল মাই নেইম!’

সুবহা হেসে উঠলো নীলের মুখের ভাব দেখে। সুবহা উঠে যেতেই নীল আভির সামনে চলে আসে, কিন্তু আভি ওর দিকে কিছুটা ভাব নিয়ে তাকিয়ে বলে, ‘তুমি আমাকেও ভাইয়া বলে ডাকতে পারো আমি কিছু মনে করব না।’

নীল দুষ্টু হাসলো, তারপর বলল – ‘সত্যি?’

আভি মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘হুম!’

‘ওকে।’ – বলেই নীল ঠোঁটে দুষ্টু হাসি টেনে আভিকে কেক খাওয়ানোর জন্য এগোয়, আভি নীলের কাছ থেকে কেক খাওয়ার জন্য ঝুঁকে হাঁ করতেই নীল সম্পূর্ণ কেকের টুকরো আভির পুরো মুখে লেপ্টে দিল।

আভি পুরোই হতভম্ব, বোকার মত তাকায় ও নীলের দিকে। বেচারা কেক টেস্ট করতে গিয়ে কেকই ওর ফেইস টেস্ট করে ফেলেছে।

নীল খিলখিলিয়ে হেসে উঠে আভির মুখ দেখে, ওর সাথে বাকিদেরও একই অবস্থা।

আভি ভালোই বুঝতে পেরেছে যে এই পিচ্চি ছেলের সাথে এত সহজে ও সুধী করতে পারবে না। ওর আরও মেহেনত করতে হবে নীলের সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য।

আভি মুখ ফুলিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রুমাল দিয়ে নিজের মুখ পরিষ্কার করে নেয় তারপর বলে, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ হেসে নাও, আমারও দিন আসবে তখন আমি তোমাকে কেক দিয়ে গোসলই করিয়ে দিব।’

নীল জিভ বের করে আভিকে ভেংচি কেটে নিজের জায়গায় এসে দাঁড়ায়।

আভিও নীলকে ভেংচি কাটে কিন্তু পরপরই একটা বড় গিফট বক্স আর সেটার উপর একটা ছোট বক্স নীলের সামনে রেখে দেয় তারপর বলে, ‘হ্যাপি বার্থডে, নীলু!’ – নীলু শব্দটা শুনেই নীল আবার মুখ ফুলিয়ে নেয়। অবশ্য আভি ওকে রাগানোর জন্যই বলেছে এভাবে।

নীল আভির দিকে কিছুক্ষণ রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে নিজের গিফট দু’টোর দিকে তাকায়। আভি ওকে একসাথে দুটো গিফট দিয়েছে?

নীল অবাক হয়, বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে ও গিফট দুটোর দিকে। ওর যেন বিশ্বাস হচ্ছে না আভি ওর জন্য দুই দুটো গিফট এনেছে। কিছুটা খটকাও লাগছে কিন্তু তবুও নীল উপরের ছোট বক্সটা হাতে নিয়ে খুলতে শুরু করে।

আভির ঠোঁটে দুষ্টু হাসি, ও ঠোঁট চেপে নিজের হাসি লুকোনোর চেষ্টা করছে। আর এইদিকে নীল গিফটের বক্সটা খুলছে।

বক্স খুলতেই ভেতরে আরেকটা ঢাকনা যুক্ত বক্স পায় নীল। সেই বক্সটা বের করে কিছু না ভেবে উপরের ঢাকনাটা খুলতেই, আচমকা ঝট করে একটা রাবারের টিকটিকি লাফিয়ে বের হয়।

সাথে সাথে নীল ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে দূরে ছিটকে সরে আসে। বক্সটাও নিচে ফেলে দিয়েছে ও। টিকটিকিকে প্রচুর ভয় পায় নীল, আর এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে এখন আভি।

নীলের কাঁদো কাঁদো অবস্থা। ভয়ে মুখটা লালও হয়ে গেছে ওর। আর এই দিকে ওর অবস্থা দেখে আভি হেসে কুটিকুটি।

নীল আভির দিকে রেগে তাকায়, তারপর ওর দিকে তেড়ে যায়। কিন্তু আভিও এত সহজে ধরা দেওয়ার মানুষ না। নীল‌ যতই ওকে ধরার চেষ্টা করে ততই ও সরে অন্যদিকে চলে যায়।

সুবহা ওদের দুজনের কান্ড দেখছে আর হাসছে, কিন্তু তখনই ও খেয়াল করে রওশন নেই এখানে। সুবহা চারপাশে চোখ বুলোয় কিন্তু রওশনকে দেখতে পায় না।

ও ভেবে নেয় হয়ত রওশন নিজের কামরায় চলে গেছে। কারণ রওশন বাসায় আসার পর‌ থেকেই চুপচাপ আর ক্লান্ত ছিল। তখনও সুবহার এতগুলো প্রশ্নের প্রতিউত্তরে কোনো জবাব দেয় নি, আর না পুরো অনুষ্ঠানের সময় বাড়তি কোনো কথা বলেছে।

সুবহা এ বিষয়ে রওশনের সাথে পরে কথা বলবে বলে ভেবে নেয়। এই মুহূর্তে অনুষ্ঠানটা সুন্দর ভাবে শেষ করাটা জরুরি মনে করছে সুবহা।

কিছু সময় পর,,,

রাত এগারোটা, সবাইকে বিদায় জানিয়ে সুবহা সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে। নীল বসে বসে ওর জন্মদিনের গিফট গুলো খুলে খুলে দেখছে, অন্য দিকে আভি নীলের সাথে বসে খুনসুটি দুষ্টিমি করছে।

সুবহা কাজের ফাঁকে ফাঁকে উপরের রুমটার দিকে তাকাচ্ছে। রওশনের জন্য চিন্তা হচ্ছে ওর। কিন্তু উপরে এখন যাওয়াটা ঠিক হবে কিনা সেটা ভেবে পাচ্ছে না সুবহা।‌

আভি নীলের সাথে মজা করার ফাঁকে নিজের ফোন হাতে নেয়। আজ সারাদিন ফোনটা চেক করেনি আভি, তাই গুরুত্বপূর্ণ কোনো খবর বা ম্যাসেজ এসেছে কিনা চেক করছে ও।

হঠাৎ একটা ম্যাসেজ দেখে চমকে উঠে আভি, মুখের রং যেন সেকেন্ডেই উড়ে যায়‌ ওর। বিস্ময় নিয়ে বিরবির করে বলে উঠে ও – ‘এসব কী? ভাইয়ের বিরুদ্ধে এসব কে করছে?’

উঠে দাঁড়ায় আভি, চিন্তার রেখা কপালে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে ওর। ফোনটা দেখতে দেখতেই দ্রুত সরে আসে ওখান থেকে আভি।

একপাশে গিয়ে দাঁড়ায় ও, তারপর খুব মনোযোগ সহকারে পুরো ম্যাসেজ, ফাইল আর পাঠানো ছবি গুলো চেক করে ও। আভি কিভাবে কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। উপরে রওশনের রুমের দিকে তাকায় আভি তারপর নিজে নিজে বলতে শুরু করে, ‘ভাইকে কী জানান ঠিক হবে? নাকি পড়ে জানাব? নাহ, আগে আমি নিজে বিষয়টা ক্লিয়ার করে নেই তারপর নাহয় ভাইকে এ বিষয়ে জানাব।’

আভি দ্রুত নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে একজনের নাম্বারে কল করে।

এইদিকে সুবহা রওশনের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। ও ভেতরে যাওয়ার সাহস টুকু পাচ্ছে না। মনের মধ্যে যেন দ্বিধাদ্বন্দ্ব চলছে সুবহার।

তবুও বুকে ফুঁ দিয়ে সাহস জুগিয়ে আলতো হাতে রওশনের রুমের দরজা খোলে ও, তারপর ঘন নিঃশ্বাস ফেলে ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করলো সুবহা।

রুমের লাইট জ্বালানো, ভেতরে আসতেই হঠাৎ পায়ের নিচে কিছু‌র লাগল সুবহার। সুবহা নিচে তাকাতেই দেখে রওশনের শার্ট পরে আছে। সুবহা সাথে সাথে ঝুঁকে শার্টটা তোলে কিন্তু তখনই হাতে ছিপছিপে তরল কিছু অনুভব করে ও। শার্টটা বাম হাতে নিয়ে ডান হাতের দিকে তাকাতেই চোখ দুটোয় ভয় নেমে আসে ওর। ঘাবড়ে শার্টটা হাত থেকে পড়ে গেল সুবহার। কিন্তু রক্তে ভেজা হাতটার থেকে যেন চোখই সরছে না ওর। বুকের ভেতরটা ঢিপঢিপ করছে ওর।‌

হঠাৎ রওশনের কথা মনে পড়তেই রুমের ভেতরে চোখ বুলিয়ে তাকে খুঁজতে শুরু করে সুবহা। রুমে না পেয়ে ওয়াশরুম চেক করে সুবহা কিন্তু সেখানেও নেই রওশন।

সবশেষে বারান্দায় যেতেই রওশনকে দেখতে পায় ও। খোলা আকাশের নিচে বেতের সোফায় শুয়ে আছে ও। এক‌ হাত মাথার নিচে আরেক হাত বুকে রেখে চোখ বন্ধ করে আছে। রওশন ঘুমিয়ে আছে নাকি চোখ বন্ধ করে রেখেছে শুধু, সেটাই বুঝতে পারে না সুবহা।

তবুও কাঁপা কাঁপা পায়ে রওশনের সামনে যায় ও, দু হাঁটু গেড়ে রওশনের পাশে বসল সুবহা। ওর হাত দুটো খেয়াল করে পর্যবেক্ষন করতে শুরু করে সুবহা। শার্টে লেগে থাকা র*ক্ত রওশনের কিনা সেটা
নিশ্চিত করছে ও। কিন্তু রওশনের হাতে বা মাথায় কোথাও কোনো কাঁটা ঘা নেই।

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সুবহা, কিন্তু তখনই ওর‌ খেয়াল হয় শার্টের নিচের দিক থেকে র*ক্ত লেগেছে ওর হাতে।

সুবহা কাঁপা কাঁপা হাতে রওশনের শার্টটা উপরের দিকে তুলতে নিলেই হঠাৎ খপ করে ওর হাত ধরে ফেলে কেউ।

সাথে সাথেই যেন সুবহা জমে যায়। ভয়ে ভয়ে দৃষ্টি জোড়া তুলে তাকায় ও…

To be continued…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here