তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি,৭,৮

0
3441

#তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি,৭,৮
#রোকসানা_রাহমান
পর্ব (৭)

তিহি তাজের কথামতো শাড়ী পরেছে। চুলটাও আচড়িয়েছে। কিন্তু নেই কোনো মেকাপের ছোঁয়া। এমন সাজে সে এই নিয়ে দু’বার সেজেছে।

” কী হলো সামনে এসে বসতে বললাম না? ”

তাজের অধিকারী কণ্ঠে তিহি সামান্য ছিটকে উঠেছে। গাড়ির পেছনের দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে সামনের দরজার দিকে এগুচ্ছে। চোখ, মুখ এখনও ভাবনালেশ!

সকাল শেষ হয়ে দুপুর ঘনিয়ে আসতে চলেছে। আকাশে সূর্যের তাপটা বেশ ভালোই। কিন্তু তেমন গায়ে লাগছে না তিহির। জানালার কাচটা খোলা থাকায় বাইরের মৃদু হাওয়াটা বাড়ি খাচ্ছে মুখে। রোদমিশ্রিত বাতাস তিহির মনের ভেতরটাও মিশ্রিত করে দিচ্ছে। যে মিশ্রণে রয়েছে তাজ আর ইশাদ। জীবনের তরির বৈঠা ঠিক কে, কোন দিকে বাইছে বুঝে উঠতে পারছে না। নদীর স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে বহিয়া যাওয়াই এখন তার কর্ম। রোদের ছোঁয়াটা কেমন জানি অসহ্য লাগছে তিহির কাছে। হাতের কনুইটা জানালার ধারে ভর দিয়ে চোখটা ঢেকে আছে। ভালো লাগছে না তার কোনো কিছু। কিভাবে লাগবে ভালো? যে লাগায় ইশাদ নেই!

” তিহিপাখি, ঝটপট এই শাড়ীটা পরে নাও তো!”

তিহি আর ইনা দুষ্টুৃমীতে মেতে থাকায় হুট করে ইশাদের কণ্ঠে দুজনেই হালকা কেঁপে উঠে। দুজনের চোখ ইশাদের দিকে। কেমন জানি অস্থির আর হাসি হাসি মুখ।
তিহি প্রশ্নাত্মক চোখে ইশাদের দিকে তাকাতে ও আবার বলল,
” ইনামা, আমার সাথে আসো। এখন তোমার প্রাইভেট মামনি একটু সাজুগুজু করবে। ”

ইনা তিহির বাঁধন থেকে সরে এসে ইশাদের কোলে ঝাপিয়ে পড়ে বলল,
” কেন, বাবাই? আজ কি সাজুগুজুর দিন? ”
” হুম। ”
” তাহলে তো আমারও সাজা উচিত, বাবাই! ”

ইশাদ আড়চোখে তিহির দিকে তাকিয়ে বলল,
” আজ শুধু তোমার প্রাইভেট মামনির সাজুগুজুর দিন। ”

ইনা অনুরাগের সুরে বলল,
” কিন্তু আমারও সাজতে ইচ্ছে করছে, বাবাই! ”
” তাই? ”
” হুম। ”
” চলো, তোমাকে আমি সাজিয়ে দিব। ”

ইনা, ইশাদের কোল থেকে নেমে তিহির কাছে গিয়ে বলল,
” না, বাবাই। আমি প্রাইভেট মামনির কাছেই সাজব। তুমি কিছু পারো না। তুমি তো আমার চুলটাও সুন্দর করে আচড়িয়ে দিতে পার না। ”

ইশাদ, ইনার দিকে তাকাতেই তিহি বলল,
” আমি কিছুই বুঝছি না। কী হচ্ছে এখানে? ”

তিহির কথায় এবার ইশাদ আর ইনা দুজনেই বিরক্ত।
” উফ! এটা না বুঝার কী হলো প্রাইভেট মামনি? সাজুগুজুর দিনে সাজুগুজু করতে হয়। তুমি জানো না? ”
” সাজুগুজুর দিন? ”
” হুম। ”

ইশাদ কয়েক কদম হেঁটে এসে তিহির কাছ ঘেষে দাঁড়াল। কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
” আজ বউ সাজার দিন। আমার তোমাকে বউ সাজে দেখতে ইচ্ছে করছে, আর একটু..”

তিহি ঘাড় ঘুরিয়ে ইশাদের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আর একটু? ”
” কামড় দিতে ইচ্ছে করছে। তোমার ঠোঁটে! ”

তিহি ঘাড় ঘুরানো অবস্থাই ইশাদের দিকে তাকিয়ে হাঁ হয়ে আছে। সাথে সাথে ইশাদও অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।

শাড়ী পরা তো দূর শাড়ী কখনো পরতে হবে এমনটাও কখনও ভাবা হয়নি তিহির। হয়তো ভাবার সময় পায়নি। সে কি জানতো তার জীবনেও কখনও এমন রঙিন মুহূর্ত আসবে? মায়ের সামান্য বেতনে বাসা ভাড়া, দু’বোনের পড়ালেখার খরচ, তিনবেলা দু’মুঠো ভাত, সাথে প্রয়োজনীয় টুকিটাকি জিনিসেই হিমশিম খেয়ে যায়। সেখানে নতুন করে শখ, আহ্লাদটা যে বড়ই বেমানান! তবে এখন সে স্বপ্ন দেখছে, লাল, নীল, বেগুনী রঙে নয়। ইশাদের রঙে, যে রঙ শুধু তার জন্য। একান্তই তার!

তিহির ভাবনার মাঝে ইশাদ দরজায় নক করে বলল,
” তিহিপাখি, তাড়াতাড়ি করো প্লিজ। তোমাকে শাড়ী জড়ানোর অবস্থায় দেখতে আমার মনটা আকুপুকু করছে!”

ইশাদের কণ্ঠে তিহি বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। সে কি বলবে যে সে শাড়ী পরতে পারে না? কিভাবে নিবে ব্যাপারটা? তিহি হাতে আকাশী রঙের শাড়ীটার দিকে তাকিয়ে আছে। এটা কি আসলেই আকাশী রঙ? আকাশ কি কখনও এমন রঙ ধারণ করে?

তিহি পাক্কা দেড় ঘন্টা হাতে নিয়ে শাড়ী পরেছে। সাহায্যকারি হিসেবে ইশাদের থেকে ইউটিউবকেই বেশি চতুর মনে হয়েছিল। এর মধ্যে ইশাদ নাহলেও আট থেকে ন’বার দরজায় নক করেছে। একেক বার এসে একেক রকম ধমক দিয়ে গেছে। যেমন কিছুক্ষণ আগে এসে বলে গেছে, ‘তুমি কি শাড়ীর সাথে প্রেম করছো তিহিপাখি? আমাকে তো ৫ টা মিনিটও সময় দাও না। অথচ শাড়ীকে পুরো দুঘন্টা সময় দিচ্ছো। কী এতো প্রেমালাপ হচ্ছে শুনি? এই লাস্ট ওয়ার্নিং! আমার থেকে অন্য কোনো জিনিসে এতো সময় দেওয়া আমি সহ্য করব না। হোক সেটা শাড়ী অর বিড়ি!’

তিহি আঁচলটা ঠিকঠাক মতো গুছিয়ে নিতে আবার নক। এবার তিহির মেজাজটাও চড়ে গেছে। দ্রুত পদে দরজা খুলে বলল,
” এত অধৈর্য্য কেন তুমি? একটু শান্তি মতো যদি শাড়ীটা পরতে না-ই দিবে তাহলে পড়তে বললে কেন? আমি বলেছিলাম, আমি শাড়ী পড়ব? ”

তিহির ধমকানিতে ইশাদ আমতা আমতা করে বলল,
” আমি শাড়ীতে আমার বউকে দেখতে চাচ্ছিলাম,কিন্তু এখনতো জল্লাদকে দেখছি। এমন মিষ্টি সাজে কেউ চোখ রাঙায়? ”
” আমি জল্লাদ? ”

ইশাদ মুচকি হেঁসে তিহির মুখের কাছে মুখ নিয়ে চোখে চোখ রেখে বলল,
” হুম, আমার জল্লাদ বউ! এখন আসো তো। ”

তিহিকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ওর হাতটা ধরে ব্যস্ত পায়ে হাঁটা ধরল। ড্রয়িং রুমে এসে মিসেস মরিয়ম বেগমকে দেখতে পায়। ছোট টি-টেবিলটার উপরে একটা ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে। তিহির উপস্থিতে ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি উপহার দিয়েছেন। চোখের ইশারায় উনার কাছে যেতে বলছেন। তিহিও ঠোঁটে হাসি ফুটানোর ভঙ্গিমায় এগুতে নিলেই নিজের হাতে বাধা পেল। পেছনে ঘুরে দেখতে পেল ইশাদ তার হাতটা এখনও ধরে আছে। কিন্তু মনোযোগ তার আম্মুর দিকে। এমন একটা ভাব যেন সে অজান্তেই হাত ধরে আছে। যতক্ষণ না তিহি মনে করিয়ে দিয়ে বলবে যে হাত ছাড়ো ততক্ষণ পর্যন্ত ছাড়বে না।

” কী রে,মা। আয়। ”

মিসেস মরিয়ম বেগমের কথায় তিহি ইশাদের উদ্দেশ্যে ফিসফিসিয়ে ছোট্ট করে বলল,
” লজ্জা লাগে না, মায়ের সামনে একটা মেয়ের হাত ধরে থাকতে? ”

ইশাদ ভ্রূ কুঁচকে তিহির দিকে তাকাতে তিহিও ইশারায় নিজের বাঁধন হাতটি ইশাদকে দেখাচ্ছে। এবার ইশাদও ফিসফিসিয়ে বলল,
” আম্মু আছে দেখে শুধু হাতটাই ধরে আছি। না থাকলে আঁচলটা ধরতাম! ”

তিহির চোখ ক্রমশ বড় হতে যাচ্ছে বুঝতে পেরে ইশাদ একটু উচু স্বরে বলল,
” কী হলো যাচ্ছ না কেন? ”

তিহি, ইশাদের দিকে চোখ রেখে ধীর পায়ে মিসেস মরিয়ম বেগমের দিকে এগুচ্ছে। কাছটাতে আসতেই উনি খপ করে তিহিকে নিজের পাশে বসিয়ে নিল।

তিহি আচমকা টান খাওয়াতে মনে হলো তার দেড় ঘন্টার পরিশ্রমে বুঝি পানি পড়ল। কিছুটা বিব্রত হয়ে মিসেস মরিয়মের দিকে অসহায়ভাবে তাকাতে দেখলো উনি চোখের ইশারায় সামনে তাকাতে বলছেন। উনার কথা মতো সামনে তাকাতে ল্যাপটপের মধ্যে এক সুদর্শন যুবককে দেখতে পেল। ঠোঁটে লেগে আছে মধুর হাসি। তিহি মিসেস মরিয়মের দিকে তাকাতে উনি উৎসাহী কণ্ঠে বলল,
” আমার বড় ছেলে, ইফরাদ। ”

‘বড় ছেলে মানে ইনার বাবা? উফ! উনাকে দেখার কত শখ ছিল। ইশাদকে যে কতবার বলেছি উনাকে দেখানোর কথা। পাঁজিটা তো আমার এই ছোট্ট আবদারটা গায়েই মাখেনি। শুধু মিটিমিটি হাসে আর বলবে, আমাকে দেখে তোমার স্বাদ মেটে না? আমার ভাইকেও দেখতে লাগবে? ইনার জন্মদাতা ভাইয়া হলেও আমি তো ইনার পোষ্যদাতা! দুজনেই দাতা, সো একজনকে দেখলেই হলো। তুমি আমাকে দেখ। চোখ ভরে গেলে, মন ভরে দেখ। যদি মনও ভরে যায় তাহলে পেট ভরে দেখ। তখন ইচ্ছে করতো মাথাটা বাড়ি দিয়ে ফাটিয়ে দেই। সব কিছুতে নিজেকে না জড়ালে যেন উনার কোনো অস্তিত্বই নেই,যত্তসব! তিহি লোভাতুর নয়নে ল্যাপটপে ভেসে উঠা সুদর্শন যুবকটিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।

মাথায় ঘন কালো ঝাকড়া চুল, মোটা ভ্রূ, সরু নাকের সামনের দিকটা একটু মোটা হওয়ায় ইশাদের মতো এতো লম্বা নাক বোঝা যাচ্ছে না। চোখগুলো মাঝারি আকার হলেও ভ্রূর জন্য কিছুটা আকার ছোট লাগছে। গাল ভর্তি চাপা দাড়ি, দাড়ি জিনিসটা যদিও ওর তেমন পছন্দ না কিন্তু সাদা রঙের মুখ অবয়বে উনাকে চমৎকার লাগছে। তিহি আরও কিছু দেখার আগেই সুদর্শন যুবকটি অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। তাতে তিহির মনোযোগটি ক্ষুন্ন হয়ে কিছুটা কেঁপে উঠতেই ইফরাদ বলল,
” ইশাদ, তোর হবু বউটি আমাকে যেভাবে দেখছে মনে তো হচ্ছে চিড়িয়াখানায় আমাকে কত টাকায় বেচা যাবে তা হিসেব করছে! ”

উনার কথাতে এবার ইশাদসহ মিসেস মরিয়ম বেগমও হেঁসে কুটি কুটি। কিন্তু সবার মাঝে থেকে তিহি বেচারা বিরক্ত মুখ নিয়ে একেকজনকে দেখে যাচ্ছে। ইশাদের চোখ তিহির দিকে পড়তে হাসি থামিয়ে ওর পাশে এসে বসল,
” ভাইয়া,আসবি কবে? আমার পাখিকে আমি আর খোলা আকাশে উড়তে দিতে পারছি না। খাচায় বন্দী করবো। ”
” তোর পাখি তুই বন্দী করবি। সেখানে আমার কী কাজ? ”
” তোকে ছাড়াই আমি বিয়ের পাগড়ি পড়ব? ”
” পড়ে ফেল। আমার অপেক্ষায় থাকলে দেখবি পাখি ফুড়ুৎ! ”

দু’ভাইয়ের কথার মাঝখানে তিহি কি বলবে বুঝতে পারছে না৷ দুজন এমনভাবে কথা বলছে, যেন জানে জিগার দোস্ত!

মিসেস মরিয়ম বেগমকে হঠাৎ উঠে যেতে দেখে তিহি উনার দিকে তাকায়। গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসা ইনাকে কোলে নিয়ে চলে যেতে নিলেই তিহি বলল,
” ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? ইনাকে আমার কাছে দিন। ”

তিহিও উঠে গিয়ে ইনাকে জোরপূর্বক নিজের আয়ত্বে নিয়ে এসে সোফায় বসতেই হাঁ হয়ে গেল। ইশাদের উদ্দশ্যে বলল,
” তোমার ভাই কোথায় গেলো? ”

ইশাদ ল্যাপটপ বন্ধ করতে করতে ছোট করে উত্তর দিল,
” মেয়ে থাকলে বাবাকে পাবে না। ”
“এটা কেমন কথা, ইশ? ”
” উফ! এমন করে ডেক না তো। আমার হার্টঅ্যাটাক পায়। ”
” মানে? ”

ইনাকে তিহির কোল থেকে নামিয়ে বলল,
” ইনামা, দেখে আসো তোমার দিদুনী কী করছে? ”
” আচ্ছা বাবাই। ”

ইনা দিদুনীর রুমের দিকে ছুটতেই ইশাদ তিহির একটু পাশ ঘেষে বসে বলল,
” বউ তো সাজা শেষ, তাহলে এবার…”
” এবার কী? ”
” চুম….”

ইশাদের কথা শেষ করতে না দিয়ে তিহি খেকিয়ে উঠে বলল,
” তোমার ঐ খাচ্চড় মার্কা ঠোঁট দিয়ে তুমি অন্য কাউকে চুমু খাও। আমাকে খেতে আসবে না। ছি! কী বিচ্ছিরি! ”

ইশাদ দুই ভ্রূ কুঁচকে বলল,
” কী! ”
” জ্বী। ”

তিহি চট করে উঠে হাঁটা ধরবে ভাবতেই থমকে গিয়েছে। ইশাদের দিকে অসহায়ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে,
” কী হয়েছে? ”
” গেছে! ”
“” কি?””
” খুলে! ”

ইশাদ এবার উঠে এসে তিহির মুখোমুখি হয়ে বোঝার চেষ্টা করে বলল,
” কী খুলে গেছে? ”
” শাড়ী! ”
” হোয়াট? ”

তিহি নিচের দিকে তাকাতে ইশাদও নিচে তাকাল। তিহির কোমরে গুজে থাকা শাড়ীর কুঁচি সব ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে আছে।

ইশাদের হাসি পাচ্ছে। দুনিয়া কাপানো অট্টহাসি। কিন্তু সে এখন হাসবে না। দুষ্টুমী করবে আর তিহিকে রাগাবে। ‘তাকে রাগাতে আমার কেন এতো ভালো লাগে?’

” কুঁচিই তো খুলেছে সোনা, আর কিছু খুলেনি! ”

তিহি ফ্লোর থেকে চোখ সরিয়ে ইশাদের দিকে তাকাল। ইশাদ ঠোঁট টিপে হেসে নিয়ে আবার দুষ্টুমী কণ্ঠে বলল,
“এ রকম এইটুকু খোলাতে তোমাকে মানাচ্ছে না। হয় পুরোটা পরতে হবে নাহয় পুরোটা খুলতে হবে। তোমার কোনটা চাই? ”

ইশাদ কথার তালে শাড়ীর কুঁচি নিজের হাতে নিচ্ছে। তিহি ঝট করে ওর হাত থেকে শাড়ীর কুঁচি নিজের হাতে নিয়ে রুষ্ট কণ্ঠে বলল,
” তোমার শুধু ঠোঁটটাই খাচ্চর মার্কা নয়। পুরো শরীর, কণ্ঠ, কথা এমন কী তোমার চোখের চাহনিও খাচ্চড় মার্কা! ”

তিহি নিজের বক্তব্য শেষ করে হনহন করে হাঁটা ধরল। পেছন থেকে ইশাদ বলল,
” আরে চলে যাচ্ছো যে! চুমুটা নাহয় বিয়ের পরে খাব। একটু শাড়ীর ছোঁয়াও নিতে দিবে না? ”

ইশাদের কথা যেন তিহি শুনতেই পায়নি এমন ভঙ্গিমায় বড় বড় পা ফেলে চলে যাচ্ছে। কানে আসছে ইশাদের সেই ভুবন ভোলানো হাসি। যে হাসির প্রেমে তিহি বারংবার হোঁচট খায়।

” পাগলের মতো একা একা হাসছো কেন? ”

তাজের তাচ্ছিল্যমাখা প্রশ্নে তিহির ঠোঁটের হাসি মিলিয়ে গেল। তার দিকে তাকিয়ে বলল,
” আপনি হাসেন না কেন? ”

তিহির প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই ব্রেক কষে তাজ। আকস্মিক ব্রেক কষাই তিহি সামনে ঝুকে পড়েছে।

” চলে এসেছি, নামো। ”

তিহি নিজেকে স্বাভাবিকে নিতে নিতে তাজ নেমে পড়েছে। হাঁটা শুরু করতে গিয়ে থেমে গিয়ে বলল,
” কানে কথা যায় না? ”

তাজের কথায় তিহি তখনও থম মেরেই বসে আছে। কিভাবে নামবে সে? তার যে এবারও শাড়ী খুলে গেছে!

তাজ এবার তিহির পাশে এসে দরজাটা খুলে নিয়ে দাঁতে দাঁত ঘষে বলল,
” তুমি কি চাচ্ছো এখানে কোনো সিনক্রিয়েট হোক? ”

তিহি জমে যাওয়া কণ্ঠে বলল,
” খুলে গেছে! ”
” কী? ”
” শাড়ী! ”

তিহির কথায় তাজ আশ্চর্য হয়েও হলো না। চোখে, মুখে বিরক্ত নিয়ে বলল,
” আমার সাথে ফাজলামি করা হচ্ছে? আমাকে তোমার ফাজলামির লোক মনে হয়? তুমি এখন নামবে নাকি আমি টেনে বের করব? ”

তিহি ভয়ে ভয়ে পা ফেলে নিচে নেমে দাড়াতেই ঝমঝম করে শাড়ীর কুঁচি রাস্তাতে বিছিয়ে পড়ছে। তাজ এবার আর আশ্চর্য না হয়ে পারল না। ‘কেমন মেয়ে এটা যে নিজের শাড়ীর কুঁচি সামলিয়ে রাখতে পারে না? অথচ আমাকে তো বিষ ভরা প্রশ্নে ঘায়েল ঠিকই করতে পারে। কথা নেই, নেই মানে নেই। কিন্তু সেই নেইয়ের মাঝেই এমন এক প্রশ্ন করবে যেটা আমি কেন কোনো বিশাল পাহাড়ও নড়ে উঠবে।’

রাস্তার মধ্যে এমন এক কাণ্ড করে বসবে ভাবতেও পারেনি তাজ। তাই নিজের রাগ, আশ্চর্য আর বিরক্তকে ফেলে দিয়ে তিহির বিছিয়ে পড়া কুঁচিতে হাত লাগায়। চটপট কুঁচিগুলো হাতে নিঙরে নিয়ে তিহির পেটের দিক থেকে শাড়ীর অংশটা সরাতেই তিহি কম্পিত কন্ঠে বলল,
” আরে,কী করছেন? ”

তিহির প্রশ্নকে অগ্রাহ্য করেই তাজ ওর কোমরে শাড়ীর কুঁচি গুজে দিচ্ছে।

” আপু,তুই! ”

তিহি হকচকিয়ে গিয়ে সামনে তাকাতেই বুকটা ধক করে উঠল। মিহির ঠিক পেছনেই একটি কালো গাড়ী দাঁড়িয়ে। ড্রাইভিং সিটে বসে আছে তার জীবনের সব থেকে ভয়ংকর মানুষটি। যে কিনা তার জীবনে এনে দিয়েছিলো এক ভয়ংকর সুখের পৃথিবী আবার সেই তো আজ তাকে ঠেলে দিয়েছে এক ভয়ংকর অন্ধকার পৃথিবীতে!

চলবে

#তোমার সমাপ্তিত-আমার প্রাপ্তি

#রোকসানা-রাহমান

পর্ব (৮)

তিহির প্রশ্নকে অগ্রাহ্য করেই তাজ ওর কোমড়ে শাড়ীর কুচি গুজে দিচ্ছে।

“” আপু,তুই!””

তিহি হকচকিয়ে গিয়ে সামনে তাকাতেই বুকটা ধক করে উঠেছে। মিহির ঠিক পেছনেই একটি কালো গাড়ী দাড়িয়ে। ড্রাইভিং সিটে বসে আছে তার জীবনের সবথেকে ভয়ংকর মানুষটি। যে কিনা তার জীবনে এনে দিয়েছিলো এক ভয়ংকর সুখের পৃথিবী আবার সেই তো আজ তাকে ঠেলে দিয়েছে এক ভয়ংকর অন্ধকার পৃথিবীতে! সে কি জানে এই অন্ধকার পৃথিবীটাতেও আমি ক্ষনে ক্ষনে তাকেই খুজে বেড়াই? তার স্মৃতিতেই হারিয়ে যায় অন্ধকারের কালো অধ্যায়তে???

তিহি পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে সামনের কালো গাড়ীটার দিকে। খুব বেশি দুরত্বে নেই গাড়ীটা,কতটা দুরত্ব হবে?? ৮-১০ হাতের রাস্তাটার এপারওপার। কাচ নামানো থাকাই স্পষ্ট দেখতে পারছে ইশাদের দমে যাওয়া মুখটি! চোখ,মুখে নেমে এসেছে হারানোর নির্জীবের ছায়া। ইশাদের চোখ তার দিকে নেই। তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। কিন্তু তিহিকে কি এতোটাই বোকা বানানো সম্ভব?? যার ভালোবাসার ছোট্টকুটিরটিতে বসবাস ছিলো দেড়টা বছর,সে কি জানেনা সেই কুটিরটার কোথায় আর কিভাবে ভালোবাসা রয়েছে??? সামনে তাকিয়ে থাকলেও যে প্রান ভরে নিশ্বাস নিচ্ছে তিহির অস্ত্বিত্বের তা কি তিহির অজানা?? আড়চোখের সাথেও যে আরেকটি চোখ তার দিকে চেয়ে আছে সেটাও কি তিহির অজানা? না কোনো কিছুই অজানা নয়,ইশাদের অন্তরচক্ষুদ্বয় তিহিকে দেখছে,গাঢ় চাহনি আর লোভাতুর দৃষ্টি দিয়ে দেখছে!

ইশাদ একটু নড়ে গিয়ে গাড়ীটা স্টার্ট দিতেই তিহিরও চোখের পলক পড়েছে। তাজ তখনো তিহির কোমড়ে হাত রেখে শাড়ীর কুচি ঠিক করায় ব্যস্ত। এই মুহুর্তে পৃথিবীতে সবচেয়ে বিরক্ত মানুষ যদি আর কেউ থাকে তা হলো তাজ। তিহির ইচ্ছে হচ্ছে এই লোকটাকে কোনো এক যাদুতে ভেনিস করে ফেলতে,এমন ভাবে ভেনিস করতে যার কোনো নাম গন্ধ,ছোয়া,পরিচিতি,উপস্থিতি কোনোকিছুই না থাকে। না থাকে তার আর ইশাদের জীবনে তাজের কোনো পদস্পর্শ!

গাড়ীর ইঞ্জিনের শব্দে তিহির ভেতরের সবকিছুকে তোলপাড় করে দিচ্ছে। তার ইশাদ যে আবার তার চোখের আড়াল হতে চলেছে। কেন আড়ালে যেতে হবে তাকে?? আমার যে তাকে দেখাই হলোনা! চোখ ভরেই দেখা হলোনা,তাহলে মন, পেট ভরে কখন দেখবো?? আজ পাঁচটা রাত আর চারটা দিন বাদে একটু চোখের সামনে এসেছো ইশাদ,তাও এতো তাড়া? আমি বুঝি এতোই পর হয়ে গেছি? এতোটা পর কি করে করতে পারলে??

তিহির নানাভাবনায় গলা ধরে আসছে,মাথাটাও আর কিছু ভাবতে পারছেনা। শুধু এতোটুকুই বুঝছে,তার পিপাসা পেয়েছে,মরন পিপাসা,ইশাদকে আজ ভালো করে দেখতে না পারলে,ছুতে না পারলে,তার কন্ঠে দুটো কথা শুনতে না পারলে সে আজ মরে যাবে,হ্যা মরে যাবে,ইশাদের জন্য সে মরেই যাবে।

তাজকে ধাক্কা দিয়ে নিজের সামনে থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এক চাপা আর্তনাদ আর পিপাসা নিয়ে তাকিয়ে আছে ইশাদের দিকে। পা ফেলে দৌড় দিতেই হাতে বাধন পড়ে গেছে। নিজের একটি হাত তাজের হাতে আটকে পড়ে আছে। তিহি রক্তচক্ষু নিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখতে পাচ্ছে তাজ উল্টো ঘুরেই তার হাত চেপে ধরে আছে। হাটু ঘেরে বসে আছে সে। হাতের শক্ত বাধনে বন্দী তিহির হাত! তিহির রক্তচক্ষু নিমিষেই আকুলতায় পাল্টে গিয়েছে। এক আকুল বিনয় নিয়েই বললো,,

“” আমি ইশাদের কাছে যাবো। ছেড়ে দিননা প্লিজ!””
“”….””
“” আমি শুধু ওকে চোখ ভরে দেখেই চলে আসবো। প্লিজ,হাত ছাড়ুন। আমি আপনার পায়ে…””

তিহি কথা শেষ করার আগেই ইশাদ গাড়ী নিয়ে বেড়িয়ে চলে গেছে। তিহি চট করে তাজের থেকে মাথাটা ঘুড়িয়ে নিয়ে রাস্তার ওপার তাকিয়ে আছে। রাস্তার উড়ন্ত ধুলোবালিগুলোও যেন আজ তাকে দেখে হাসছে,নানা বিদ্রুপ আর তাচ্ছিল্য সুরে বলছে,কেমন ভালোবাসায় বেধেছিলি তুই যে হালকা টানেই বাধন ছিড়ে আলগা হয়ে গেছে? তোর তো মরে যাওয়া উচিত। আর সেই মরন তোকে তোর স্বামীনামক পশুচারী তাজের কাছেই পাবি,শেষ হয়ে যাবি তুই ওর প্রত্যেকটা আচড়ে,খুন হয়ে যাবি ওর প্রত্যেকটা গোঙানির শব্দে,ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবি তুই ওর মাতালের গন্ধে! যে ভালোবেসে ভালোবাসার মানুষকে শক্ত গিট্টুতে বাধতে পারেনা,তার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই,তুই শেষ হয়ে যাবি,পতনে পতিত হবি তাজের হিংস্রতায়!

“” আপনি একটা পাষান,নির্দয়,পশু,হিংস্র, এইভাবে দুটো মানুষকে আলাদা করতে আপনার বুকটা কেঁপে উঠেনি? কিভাবে পারছেন অন্ধকারে জ্বলে উঠা কুপির আগুন নিভিয়ে দিতে?? আপনার কখনো ভালো হবেনা,কখনো না। আমি আজ বুঝতে পারছি আপনার ভালোবাসার মানুষটি আপনাকে কেন ছেড়ে চলে গেছে। যার বুকে হৃদয়ের কোনো বসবাস নেই,ভালোবাসার ছিটেফোটাও নেই তার কাছে কেন একটা মেয়ে পড়ে থাকবে?? ছি! আমি আপনাকে ঘৃনা করি,ততটাই করি,যতটা আপনি কল্পনা করতে পারবেননা!””

তিহি চোখ ভর্তি নোনা পানি নিয়ে বাসার ভেতর ঢুকে পড়েছে। পেছন পেছন মিহিও প্রবেশ করেছে।

~~
তিহি বিছানায় বসে দুই হাটু ভাজের ন্যায় উচু করে আছে। তার মধ্যে মাথা রেখে মুখ ঢেকে ভেঙে পড়েছে কান্নায়। এতো কষ্ট সে সয়তে পারছেনা। ভালোবাসার মানুষটিকে এতোটা কাছে পেয়েও তার দেখা হলো না। আর কত সয়বে সে??

“” আপু,এতো কাঁদলে কিভাবে হবে?? কাঁদিসনা প্লিজ।””

মিহি, তিহির পাশে বসে আছে। আপুর কষ্টে নিজেও একটু একটু কষ্ট অনুভব করছে। হয়তো তার কষ্ট টা কি সেটা বুঝে উঠতে পারছেনা মিহি। কিন্তু আপন মানুষের কষ্টে যে নিজেকেও কষ্ট পেতে হয়,এটাই তো প্রকৃতির নিয়ম। মিহি ধরা গলায় তিহিকে প্রশ্ন করলো,,,

“” তোর খুব কষ্ট হচ্ছে তাইনা রে আপু?? প্রেম মানেই কি কষ্ট? ভালেবাসা মানেই কি বিরহ?? তুই এতো কেন কষ্ট পাচ্ছিস সুন্দর ভাইয়াকে বিয়ে করতে পারিস নি বলে?””

তিহি মাথা উচু করে ছলছল নয়নেই মিহির দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের চোখের পানিগুলো মুছে নিয়ে বললো,,

“” প্রেম কি আর ভালোবাসা কি, আমি জানিনা বোন। কিন্তু বিরহ কি সেটা আমি বুঝতে পারছি। ভালোবাসায় ফাটল ধরিয়ে একটা মেয়ের যখন বিয়ে হয়ে যায় তখন ছেলেটি এটা ভেবে কষ্ট পায় কেন সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে পেলোনা,কেন ঠকালো তাকে?? মেয়েটিকে হাজার অপমান,গালিগালাজ,দোষারোপ করে সে ভুলে যেতে চাই। কিন্তু একটা মেয়ে?””

মিহি,তিহির কথা বুঝার জন্য উৎসুক নয়নে তাকিয়ে আছে। তিহি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,,

“” কিন্তু একটা মেয়ে কতগুলো ঝড়ের মধ্যে টিকে থাকে একমাত্র সেই জানে। প্রথমত,সে এটা ভেবে কষ্টের সাগরে নামে যে,আমি কিভাবে পারলাম তাকে কষ্ট দিতে? তার মন ভাঙতে?? এইটুকু অনুভব করতে করতেই কষ্টের সাগর তাকে টেনে নিয়ে যায় দ্বিতীয় প্রশ্নে! দ্বিতীয়ত,যে শরীর,প্রান,হৃদয় একজনের নামে লিখে রাখা হয়েছিলো সেখানে হুট করে অন্য একজনের নাম বসিয়ে দিতে হয়,নিজেকে সপে দিতে হয় তার কাছে। এটা একমাত্র একটা মেয়েই বুঝবে কতটা যন্ত্রনাদায়ক! আর পরিশেষে,তাকে ডুবে যেতে হয় দায়িত্বনামক এক কঠিন খেলায়,যেখানে না চাইলেও মিথ্যেভাষায় বলতে হবে ভালেবাসি! দায়িত্বের খেলায় এতোটাই ব্যস্ত হয়ে থাকতে হয় যে নিজের ভালেবাসার মানুষটির সাথে কাটানো ভালোবাসার স্মৃতিচারন করারও সময়টুকু হয়ে উঠেনা!””

তিহি কি বলছে কিছুই ঢুকছেনা মিহির মাথায়। কি কঠিন কঠিন ভাষা। এতোটুকু বুঝে উঠতে পারছে,ভালোবাসা মানেই কঠিন ভাষার যন্ত্রণা!

“” যা ফ্রেশ হয়ে আয়,আমি কিছু রান্না করে ফেলি,কি খাবি বোন?””

তিহির হাতের রান্নার কথা শুনতেই মিহির চোখ চকচক করে উঠেছে। আপুর হাতের রান্না মানেই জীহ্বে পানি চলে আসা আর হাত চেটেপুটে খাওয়া। কতদিন হলো আপুর হাতে রান্না খাওয়া হয়না।

মিহি আনন্দিত কন্ঠে বললো,,

“” ভুনা খিচুড়ি আর ভর্তা!””

মিহির মাথায় হাত বুলিয়ে ঠোটে হাসি নিয়ে তিহি বললো,,

“” ওকে। যা ঝটপট ড্রেস চেন্জ করে আয় আর হ্যা একদম গোসল করে বের হবি! ঘেমে কি অবস্থা!””

মিহি মাথা নাড়িয়ে গোসলখানার উদ্দেশ্যে পা ফেলছে।

জানি তুই আমার কথার আগামাথা কিছুই বুঝিসনি,কিন্তু তবুও তোকে বলাতে আমার মনটা অনেকটাই হালকা হয়ে এসেছে। মাঝে মাঝে মনের কথা প্রানহীন মানুষের কাছে বলেও আনন্দ পাওয়া যায়,আমি নাহয় আমার অবুঝ বোনটাকে বলেই হালকা হলাম,তবে হ্যা আমার ইশাদ যে আমার থেকেও বেশি কষ্টে আছে সেটা আমি উপলব্ধি করি,কারন ভালোবাসার প্রাপ্তি থেকে ও আমাকে বঞ্চিত করেছে, আমি নই!

তিহি রান্নাঘরে দিকে এগুনোর কথায় উঠে দাড়িয়েছে। হঠাৎই নিজের আচলে টান খাওয়াই পেছনে তাকায়।

“” শাড়ী চেন্জ করে নাও। পরে দেখা যাবে ছোট বোনের সামনে অর্ধনগ্ন হয়ে দাড়িয়ে আছো!””

তাজের কথাতে তিহির গা জ্বলে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে সেই জ্বলুনিতে এই লোকটাকেও জ্বলসিয়ে কাবাব বানিয়ে ফেলতে। তিহি রাগ নিয়েই তাজের হাত থেকে আচল ছাড়িয়ে রান্নাঘরের দিকে ছুটলো।

~~
খিচুড়ি চুলোয় বসিয়ে দিতে দিতে কি কি ভর্তা বানাবে তা গুছিয়ে নিচ্ছে। এর মধ্যে মিহিও গোসল সেরে চলে এসেছে। তিহির সাথে হাত মিলাচ্ছে,,,

“” আম্মু কখন আসবে রে?””
“” কালতো সন্ধ্যেতে চলে এসেছিলো।””
“”মিহি!””

মিহি,তিহির ডাকে রসুন ছিলা বন্ধ করে তাকিয়েছে,,

“” কি?””
“” কিছুনা!””

নিজের ভেতরের কথা ভেতরে রেখেই তিহি খিচুড়িটা নেড়ে নিচ্ছে। পেছন থেকে মিহি নিজ থেকেই বললো,,

“” সুন্দর ভাইয়া ভালো নেই আপু। রোজ আমার সাথে দেখা করতে আসে। আমি তো জানি তোর খবর নেওয়ার জন্যই ছুটে আসে। কিন্তু মুখে বলেনা,তোর মতো। আমার সাথে হাসি হাসি মুখ করে কথা বলবে,দুষ্টুমী করবে,এসব কিছুর পেছনেও যে আমি উনার কান্নাজরিত মুখটা দেখতে পাই সেটা প্রকাশ করিনা।””

মিহির কথায় তিহি নাড়া বন্ধ করে দিয়েছে। থম মেরে ইশাদের কথা শুনে যাচ্ছে। মানুষটাকে দেখতে না পারুক তার ব্যাপারে কথা শুনলেও যে ভালো লাগার পরশ বয়ে যায় বুকের মধ্যে।

মিহি রসুন ছিলা শেষ করে পেয়াজ আর বটি নিয়ে বললো,,

“” উনার সাথে মিশতে মিশতে আমিও অভিনয় শিখে গেছি আপু,এখন আমিও উনার সাথে দুষ্টুমী করি,হেসে হেসে কথা বলি,এটা খাবো ওটা খাবো বলে বলে উনাকে পাগল করে দেই।””

তিহি খিচুড়ি রেখে মিহির কাছ থেকে টান দিয়ে বটিটা নিয়ে বললো,,

“” কয়দিন পর পরীক্ষা আর তুই বটি নাড়ছিস? হাত কেটে গেলে কি হবে?? আর তোর কাছে আমি এসব শুনতে চাইছি?””

মিহি ঠোঁট টিপে হেঁসে নিয়ে মাথা দুদিকে নেড়ে না বলতেই তিহি পেয়াজ কাটায় মন দিয়ে বললো,,

“” তোর ফর্মফিলাপের টাকা ব্যবস্থা হয়েছে?””
“” সুন্দর ভাইয়া করে দিয়েছে।””

তিহি কিছু সেকেন্ড থেমে আবার বললো,,

“” আম্মুর ঔষুধ কেনা হয়েছে?””
“” সুন্দর ভাইয়া কিনে দিয়ে গেছেন।””
“” আম্মুর তো গতকাল ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা ছিলো,কোমড়টা চেকআপ করাতে,গিয়েছিলো?””
“” সুন্দর ভাইয়া নিয়ে গিয়েছিলো।””
“” নতুন প্রাইভেট টিউটর পেয়েছিস?””
“” সুন্দর ভাইয়া খুজে দিয়েছেন।””
“” বিদ্যুৎবিল দেওয়া হয়েছে?””
“” সুন্দর ভা….””

তিহি ঠাস করে বটিটা ফেলে দিয়ে ধমকে উঠলো মিহিকে,,,

“” থাপ্পড় খাবি একটা। তখন থেকে সুন্দর ভাইয়া সুন্দর ভাইয়া করছিস কেন? আর কোনো কথা নাই?””
“” আমার কি দোষ,তুই যে প্রশ্ন করছিস আমি তো সেই প্রশ্নের উত্তরই দিলাম।””

তিহি পাটা’টা বিছিয়ে বললো,,,

“” ধুর হ,আমার সামনে থেকে। রান্না হলে আমি ডাকবো।””

মিহি মাথা নিচু করে চলে যেতেই তিহি চট করে চোখের কার্নিশটা মুছে নিচ্ছে। আমার পরিবারের সবকিছুকেই এতো আগলে রেখেছো শুধু আমি বাদে। যাকে কেন্দ্র করে তুমি আমার পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছিলে আজ তাকেই পর করে দিয়েছো। তাহলে কেন এখনো আমার পরিবারকে আগলে রাখছো? কোন মায়া থেকে? কোন টান থেকে???

“” আপু!””

তিহি একটু ধমকের সুরেই বললো,,

“” আবার কি?””
“” কিছুনা!””

মিহি চলে যেতে নিলে তিহি ডেকে উঠে,,,

“” শোন!””
“” হুম,বল।””
“” আম্মুতো তোর সুন্দর ভাইয়ার উপর খুব চটে ছিলো,তাহলে সবকিছু স্বাভাবিক কি করে হলো? তাও এতো জলদি?””

মিহি দরজা ছেড়ে ভেতরে এসে বললো,,

“” তাতো জানিনা,কিন্তু তুই যেদিন শ্বশুড়বাড়ি চলে গেলি সেদিন রাতেই ভাইয়া এসেছিলো। আম্মু তো অনেক রাগ দেখাচ্ছিলো,কিন্তু হুট করেই আম্মুকে টেনে নিয়ে দরজা আটকে কি যে পরামর্শ দিলো তারপর দেখি আম্মুও ভাইয়ার সাথে কান্না করছে আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে!””
“” কিহ!””

মিহি দুকদম এগিয়ে এসে অনেকটা ফিসফিসের ভঙ্গিমায় বললো,,

“” আমার মনে হয়,সুন্দর ভাইয়া দরজা আটকে আম্মুর পা ধরে ক্ষমা চাইছে। আমার সামনে লজ্জা পাবে দেখে আমাকে বাইরে রেখে দিয়েছিলো!””

মিহি নিজের কথা শেষ করেই হাসিতে কুটিকুটি খাচ্ছে। তিহি খুন্তিটা হাতে নিয়ে বললো,,,

“” হাসি থামা নাহলে মাইর খাবি।””

মিহি হাত দিয়ে মুখ চেপে হাসি আটকিয়ে জোরে নিশ্বাস নিয়ে বললো,,

“” ভাইয়ার সাথে কথা বলবি?””
“” মানে?””

মিহি জামা উচু করে পাজামায় গুটিয়ে রাখা ফোনটা বের করে তিহির সামনে ধরে বললো,,

“” সুন্দর ভাইয়া এটা আমাকে গিফট করেছে। বলেছে আমি যেকোনো সময় কল করতে পারবো। নাম্বারও সেভ আছে। কথা বলবি? কল দিবো?””

তিহি ভাব দেখিয়ে না বলতে গিয়েও থেমে গিয়েছে। ইশাদের কন্ঠ শোনার লোভটা সামলাতে পারছেনা। চুলার আচটা কমিয়ে দিয়ে বললো,,,

“” দে,শুনি তার ভাবের কথা!””

মিহি যেন এ কথাটা শুনার অপেক্ষায় ছিলো। তিহির ইশারা পেতেই চটজলদি মোবাইলের সেভলিস্টে ঢুকে গিয়েছে। ইশাদের শিখানো পদ্ধতি ফলো করে কল দিয়ে বসলো।

তিহির দিকে ফোন বাড়িয়ে ধরে আছে মিহি। মিহির চোখে আনন্দ আর তিহির চোখে ভয়। ভয়ভয় নিয়ে মিহির হাত থেকে ফোনটা নিতে গিয়েও নিতে পারেনি। তার আগেই তাজ ছো মেরে ফোনটা নিয়ে নিয়েছে। ফোন আছাড় মারার ভঙ্গিতে যেতেই মিহি চিৎকার করে বললো,,

“” ওটা আমার ফোন। ভাংবেননা,প্লিজ!””

তাজ আছাড় দেওয়ার মাঝখানেই থেমে গিয়েছে। মিহির দিকে তাকিয়ে বললো,,

“” ভাঙিনি,চোখ খুলো শালি!””

মিহি চোখ খুলে তাজের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বললো,,

“” আপনি আমাকে শালি বলবেননা।””
“” কেন? “”
“” আপনার মতো মোছওয়ালা বুড়ো কখনোই আমার দুলাভাই হতে পারেনা। আই হেট মোছ!””

মিহির সরুসরু চোখের চাহনি আর তীক্ষ্ণ কথায় তাজ হেঁসে উঠেছে,বেশ শব্দ করেই হাসছে। সেই হাঁসি মিহিকে দমাতে না পারলেও তিহিকে দমিয়ে দিয়েছে। বিস্ময়ের চরম সীমায় দাড়িয়ে,,,লোকটির হাসি আবার তাকে ভাবনায় ডুব দিতে বলছে। এমন চোখ বন্ধ করে হাসিটাও যে তার চেনা। খুব পছন্দের একটা হাসি! কিন্তু এটা কি করে হতে পারে?

~~
শহর থেকে কিছুটা দুরের রাস্তায় পাড়ি দিয়েছিলো ইশাদ। একটা ভাঙা বাঁশের সাঁকোতে দাড়িয়ে আছে সে। নিচে পানির তেমন গভীরতা না থাকলেও সেখানেই গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইশাদ।

সাঁকোটার একটিক দিয়ে কিছুটা ভাঙা তার উপর আশেপাশে তেমন ঘনবসতি গড়ে না উঠায় এদিকটাই তেমন জনমানবের দেখা মিলেনা। বেশ পুরোনো বাঁশের সাঁকোর শুরু আর শেষ মাথায় রয়েছে অসংখ্য নাম না জানা গাছপালা আর দুধারে দীর্ঘ ঝিল। বর্ষাকালে ঝিল পানিতে টুইটুম্বুর থাকে। সপ্তাহে একদিন হলেও তিহিকে নিয়ে এখানে আসা হতো ইশাদের। এইখানেই দুজন বেশ সময় নিয়ে স্বপ্নের মালা গাথা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। ইশাদ পানি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিজের পাশে আনতেই অনুভব করতে থাকে দুটি প্রাণবন্ত মানব-মানবীর!

~~
তিহির হাত ধরে ইশাদ অভিমানে সুরে বলছে,,

“” তোমার এই হাত যেন আমি ছাড়া আর কেউ না ধরে। শুধু হাত কেন তোমার কোনো জিনিসেই যেন অন্য কারো ছোয়া না পড়ে তিহিপাখি,তাহলে আমি পাগল হয়ে যাবো। আমি একটুও সহ্য করতে পারবোনা।””
“” আচ্ছা।””
“” আমি মরে গেলেও তুমি এমন কুমারীই থাকবে। খবরদার কাউকে বিয়ে করবেনা।””

এবার তিহি কিছুটা ধারগলায় বললো,,

“” কেন?””
“” বিয়ে করলেতো সে তোমায় ছুতে চাইবে তাই।””
“” সে ছুলে তোমার কি?””
“” আমার কি মানে? আমার জিনিস আমি ছাড়া অন্য কেউ কেন ছুবে?””
“” তোমার জিনিস কখন হলাম?””
“” তিহিপাখি,আমাকে রাগাবেনা,আমি সিরিয়াস। আমার ছোয়া জিনিসে অন্যকেউ ছুবেনা মানে ছুবেনা!””
“” আমিও সিরিয়াস! তোমার ছুয়া কখন হলো,তুমি কি আমাকে ছুয়েছো?””

ইশাদ রাগ নিয়ে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গিয়েছে। তিহি মিটিমিটি হাসছে। কিছু একটা ভেবে নিয়ে আচমকা তিহির কোমড় পেচিয়ে ধরে বললো,,

“” তাইতো,এটা তো আমি ভাবিইনি!””

ইশাদ হাতের বাধন শক্ত করে তিহিকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বললো,,

“” আজ তাহলে একটু ছোয়া দিয়ে এগিয়ে রাখা যাক!””

তিহির যেন এতক্ষনে হুশ এলো,মজার ছলে সে কি বলে ফেলেছে। আশেপাশে তাকিয়ে কারো কোনো চিন্হ না পেয়ে তিহির গলা শুকিয়ে আসছে। ভুলেভালে পাগলটাকে কেন ক্ষ্যাপাতে গেলাম?? লজ্জায় তো মরি মরি অবস্থা,উফ! কি যে করি।

তিহি, ইশাদের চোখের দিকে তাকাতে পারছেনা। চোখ নামিয়ে ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বললো,,

“” ইশ! আমি মজা করছিলাম!””

ইশাদ নিজের একটা হাত তিহির গালে রেখে ওর দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,,

“” তুমি নিজেই বলেছিলে তুমি সিরিয়াস,এখন কোনো মিথ্যে কথা চলবেনা। আমি তো ভেবেছিলাম তোমাকে ছোয়ার জন্য আমি একাই ছটফট করি,কিন্তু এখন তো দেখছি তুমিও আমার ছোয়া নেওয়ার জন্য ছটফট করছো!””

কথার ছলে ইশাদ তিহির মুখটা একদম নিজের কাছে নিয়ে এসেছে,খুব কাছে,খুব বেশিই কাছে।

“” ইশাদ প্লিজ! আমি সত্যি..””

তিহির ঠোটে ইশাদ নিজের আঙুল দিয়ে চেপে ধরে বললো,,,

“” চুপ,আজ,কোনো কথা শুনাশুনি হবেনা। আজ শুধু করাকরি হবে!””

তিহিকে গাঢ়ভাবে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোটে নিজের ঠোট ছুইছুই অবস্থায় যেতেই তিহি চোখ বন্ধ করেই চিৎকার করে বললো,,,

“” বিয়ের আগে এগুলো পাপ!””

তিহির এমন কান্ডে ইশাদ থতথম হয়ে গেলো। তিহি ইশাদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাড়িয়ে বললো,,,

“” তুমি খাচ্চড়মার্কার শ্রেষ্ঠ উপাধিকেও পার করে ফেলছো!””
“” যাব্বাবাহ! কিছু ছুলামনা,ধরলামনা,করলাম না তাও আমার এতো উপাধি?””
“” হুম! তুমি না ছুয়ে,না করেই আমার কানকে পাপী করে দিয়েছো। এতো পচা পচা কথা কই পাও?””
“” তোমাকে দেখলেই আমার পচা কথা চলে আসে। ও সুন্দরী শুধুতো একটা চুমুই খেতে চেয়েছি। আসোনা!””

তিহি হাটা ধরে বললো,,

“” আমার প্রেম পবিত্র রেখেই আমরা বিবাহ বন্দনে আবদ্ধ হবো। বুঝেছো জনাব?””

ইশাদ বসা থেকে উঠে তিহির পিছপিছ হাটতে হাটতে বললো,,

“” তাহলে চলো বিয়ে করে ফেলি!””

তিহি হাটা থামিয়ে ইশাদের দিকে তাকিয়ে বললো,,

“” তুমি সত্যিই পাগল হয়ে গেছো মিঃইস!””
“” তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য আমি পাগল কেন আরো কিছু হতে পারি। একবছর তো প্রেম করলাম আর কত? এবার বিয়ে করে নেওয়া উচিত। নাহলে আমি সত্যি সত্যি তোমার দুরে থাকার বিরহে অক্কা পাবো!””

তিহি উইথআউট নোটিশেই ইশাদকে জড়িয়ে ধরে বললো,,

“” সবসময়ই এতো মরে যাওয়ার কামনা কেন? আমার কষ্ট হয়, বুঝোনা?””
“” তাহলে বলো বিয়ে করবে কবে?””
“” করবোতো। মিহিটা আরেকটু বড় হোক তারপর।””
“”ওকে আমি বড় করে দিবো। তুমি শুধু বিয়ের জন্য রাজী হয়ে দেখো।””
“” মানে?””
“” আরে ওর বড় হওয়া উঠা থেকে শুরু করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া পর্যন্ত সব দায়িত্ব আমার। তুমি শুধু হ্যা বলো। আর কত এমন পানসে প্রেম করবো?””

তিহি লজ্জায় ইশাদের বুকে ঢুকে যাওয়ার উপক্রম। ইশাদ দুষ্টু হাসি নিয়ে ভাব রেখে বললো,,

“” কে জানি বলেছিলো বিয়ের আগে এসব করা পাপ,তা তার এসবের মধ্যে কি জড়িয়ে ধরাটা বহির্ভুত? তাহলে আমিও একটু জড়িয়ে ধরতাম। তার দুর্বল জড়িয়ে ধরায় আমার মনের পিয়াস মিটছেনা!””

~~
সেই মধুর মুহুর্তগুলো আজ স্মৃতির পাতায় এঁকে আছে। ভাবতেই ইশাদের বুকে ব্যথা উঠেছে। চোখ ভরে যাচ্ছে নোনা জলে। একটু পরেই হয়তো বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়বে। আর দাড়িয়ে থাকতে পারছেনা। হাটুগেড়ে বসে কান্নার কোলে ঢলে পড়ে চিৎকার করছে,কেন এলে আবার আমার সামনে? চোখের সামনে অন্যকেউ তোমার শাড়ী ধরে আছে,অন্যকেউ তোমার কোমড়ে শাড়ী গুজে দিচ্ছে এটা আমি কিভাবে সহ্য করবো,তিহিপাখি?? আজ তোমার শরীরে আমার ছোয়া নেই কিন্তু অন্যকারো ছোয়া যে ঠিকই পড়ছে। এতোকিছু দেখেও আমি কিভাবে বেঁচে আছি???

ইশাদের অন্তর্কন্ঠ বিড়বিড় করে বলছে,

বিরহের দহনে জ্বলছি, তুমি আর আমি
হয়তো এটাই প্রেমের অপরাধ সোন্তামি!(শাস্তি)

~~
ঘুমের মাঝেই ভয়ার্ত চিৎকারে ফেটে পড়েছে তিহি। চোখ মেলে দেখতে পাচ্ছে, নিজের বা’হাতের বৃদ্ধা আঙুলে জ্বলন্ত সিগারেট ধরে আছে তাজ। আবার এক ভয়ংকর চিৎকারে ফেটে পড়তেই তাজ ওর মুখ চেপে ধরে ফেলে!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here