নিস্তব্ধ বিচরণ,পর্ব -১০

0
2145

নিস্তব্ধ বিচরণ,পর্ব -১০
তানজিলা

ঘরজুড়ে বিরাজ করছে প্রখর নিস্তব্ধতা। ইনায়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!
সকাল সাতটার দিকে ইনায়ার চাচা এসেই দেখে মেইন ডোর খোলা। সাথে সাথেই মনে ভয়ের আভাস জাগলো। বুকটা মোচর দিয়ে ওঠে। বাড়িতে তার স্ত্রী, কন্যা আর ভাতিজি। খারাপ কিছু হয়নি তো! বাড়ির ভেতরে এসেই নিজের ঘরে ঢুকে দেখে তার আর কন্যা গভীর নিদ্রায় বিভোর। অন্তরে হালকা স্বস্তির উপস্থিতি টের পেয়ে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লো।

স্ত্রীকে জাগাতেই সে চোখ কচলে রাগী চোখে তার স্বামীর দিকে তাকালো। কয়েকদিন ধরে না বলে কোথায় কোথায় যেন চলে যায়। কিছু জিজ্ঞেস করলে এমন ভাব করে যেন ও শুধু শুধু এতো টেনশন নিচ্ছে। দুটো মেয়েকে চোখে চোখে রাখা এতই সোজা নাকি! ইনায়ার জ্বরটাও কাল রাতে বেড়ে গেছিলো। কথা হয়েছিল সকালে একবার ডাক্তার দেখাবে। মেয়েগুলো একটাও কথা শুনবে না। দুটোই বদের হাড্ডি! কতো করে বললো কালই একবার ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু মেয়ের এককথা, তার বাবা না আসলে ডাক্তার দেখাবে না। অনেক কষ্টে বুঝিয়ে আজকের জন্য রাজি করিয়েছে। ইনায়ার কিছু হলে নিজের ভাসুরকে কি জবাব দিত!

ইনায়ার ঘরে গিয়ে দেখে ঘর সম্পূর্ণ খালি। বাথরুমেও নেই। এইতো রাতেও ইনায়ার সাথে কথা হলো। কয়েকদিন ধরেই বেশ দুশ্চিন্তায় আচ্ছন্ন মনে হচ্ছিল ওকে। চঞ্চল মেয়েটা হঠাৎ করেই কেমন চুপচাপ হয়ে গেল। ইনায়ার চাচী মনে করেছিল হয়তো জ্বরের জন্য এমন হচ্ছে।
ইনায়ার ফ্রেন্ডদের জিজ্ঞেস করেও কোন খবর পাওয়া যায়নি। এক রাতের মধ্যেই কোথায় গেল ও!
পুলিশ কমপ্লেন করার সিদ্ধান্ত নিল সবাই। প্রতিবেশিদের কেউ কেউ বিষয়টা টের পেয়ে একেকজন নানান কথা উঠাচ্ছে। আরিফা এতক্ষণ চুপচাপ ওর বাবা মাকে ছুটোছুটি করতে দেখলেও হঠাৎ করে ফুপিয়ে বললো,
-“আমি ঐ গাড়িটায় কাঁদা ছুড়েছি দেখে আপুকে নিয়ে গেছে তাই না!”

আরিফার কথায় একটু নড়েচড়ে বসলো ইনায়ার চাচা। আরিফার মা আরিফার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।
-“কোন গাড়ির কথা বলছো তুমি?”
__________________________________

হুঁশ ফিরতেই কারো কথা বলার আওয়াজ পেল ইনায়া। প্রচন্ড মাথাব্যাথাকে উপেক্ষা করেই পিটপিট করে চোখ খুললো। চাইলেও নড়তে পারছে না। চেয়ারে বাধা অবস্থায় নিজেকে আবিষ্কার করে আঁতকে উঠলো ইনায়া। ও তো ওর বাবার সাথে দেখা করতে বেরিয়েছিল৷ তারপরের কোন স্মৃতিই যেন মস্তিষ্ক হতে ওর কাছে ধরা দিচ্ছে না। সাইডে ভাঙা কাঠের জানালার ছিদ্র ভেদ করে কিঞ্চিত সূর্যের কিরণ ওর সামনে এসে পড়েছে। দরজার দিকে কারও ছায়া দেখা যাচ্ছে। মুখ খুলে কথা পর্যন্ত বলতে পারছে না। একটা কাপড় দিয়ে শক্ত করে মুখটা বাঁধা। কথা বলার ব্যর্থ প্রচেষ্টা কেমন গোঙানির মতো আওয়াজে পরিণত হচ্ছে।
অসাড় হয়ে আছে পুরো শরীর। হাত পা এতটাই শক্ত করে বাঁধা যে দেহে রক্ত সঞ্চালনও যেন ধীর হয়ে আসছে।

ইনায়ার গোঙানির আওয়াজ বাড়তেই ছায়াটা হঠাৎ করে যেন থমকে গেল। বাইরে যার সাথেই কথা বলছিল তা থামিয়ে দিল।
কালো মাস্ক পরিহিত এক ব্যাক্তি রুমে প্রবেশ করতেই ইনায়া বুঝতে পারলো এতক্ষণ এই লোকের ছায়াই দরজার দিকে দেখা যাচ্ছিলো। লোকটাকে এগিয়ে আসতে দেখে হঠাৎ নিজেকে গুটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে ইনায়া। ফলে চেয়ার সহ উল্টে নিচে পড়লো ও। আচমকা এভাবে পড়ে যাওয়ায় হাতে ভিষণ চোট লেগেছে। মাথায় অস্বাভাবিক জ্বালা হচ্ছে। লোকটা শান্ত ভাবে দাঁড়িয়ে ইনায়ার সমস্ত গতিবিধি লক্ষ করছে। চেয়ার সহ নিচে পরে থাকা মানবীকে দেখে লোকটার চোখে যেন কোন প্রতিক্রিয়াই নেই।এক দৃষ্টিতে সামনে ছটফট করতে থাকা ইনায়ার চোখে তাকিয়ে আছে। এভাবে বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হলে লোকটা এক টানে চেয়ার দাড় করায়। ইনায়ার মুখ থেকে কাপড়টা খুলে ওর গাল শক্ত করে চেপে ধরে প্রশ্ন করে,
-“হাবিব কোথায়? তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিলো না!”
-“আ…আমি জানি না!”
সাথে সাথেই নিজের গালে তীব্র ব্যাথা অনুভব করলো ইনায়া। একটা চড় মেরেও যেন লোকটা ক্ষান্ত হয়নি। আঘাত প্রাপ্ত গালে আরও জোরে চেপে ধরলো। ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো ইনায়া।

-“ডোন্ট ওয়েস্ট মাই টাইম। আই হেট দ্যাট! খুবই সিম্পল একটা প্রশ্ন ছিল। উত্তর দিলেই অক্ষত অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হবে তোমাকে…হয়তো!”

শেষের বাক্যতা বলার সময় কন্ঠে কেন যেন খারাপ কোন ইঙ্গিত পাচ্ছে ইনায়া। লোকটা ওর বাবাকে কেন খুঁজবে! ইনায়া তো ওর বাবার সাথে দেখাও করতে পারেনি। ও নিজেও জানে না ওর বাবা কোথায়। আর জানলেও এই হিংস্র লোককে কখনও বলবে না।

-“আমি সত্যি কিছু জানি না!”

অনেক কষ্টে কথাটা উচ্চারণ করতেই লোকটা ওকে ছেড়ে উন্মাদের মতো উচ্চশব্দে হাসতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর ওর গালে হাত রেখে নরম কন্ঠে বললো,
-“আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে যেও না!”

ইনায়ার ইচ্ছে করছে ঐ হাত ওর গাল থেকে সরিয়ে দা দিয়ে এক কোপে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে। গা গুলিয়ে আসছে ওর। ইনায়ার অস্বস্তি খেয়াল করে লোকটা ইনায়ার কানের কাছে মুখ এনে বললো,

-“এখনি এই অবস্থা!”
ইনায়া সাথে সাথে নিজের চোখ বন্ধ করে ফেললো। অসহায়ত্বের শেষ সীমানায় যেন পৌঁছে গেছে। লোকটা আর কিছু না বলে ইনায়ার বাঁধন খুলতে শুরু করলো। মুহূর্তেই ও কিছুটা সচেতন হয়ে গেল৷ এই হয়তো সুযোগ!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here