ভালবাসার এপিঠ ওপিঠ পর্বঃ ০৫ | ভালোবাসার নতুন গল্প

0
5511

ভালবাসার এপিঠ ওপিঠ পর্বঃ ০৫
লেখকঃ আবির খান

সামিরা দেখে নিহান একটা অসম্ভব সুন্দরী মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে৷ সামিরার চোখমুখে মুহূর্তেই অন্ধকার নেমে আসে। ও আস্তে আস্তে করে নিহানের কাছে এসে জিজ্ঞেস করে,

~ উনি কে?

নিহান আর অপরিচিত মেয়েটা একসাথে হাসতে হাসতে সামিরার দিকে তাকায়। নিহান বলে,

– ওহ! ম্যাম। জি ও আমার কলেজ এবং ভার্সিটির ফ্রেন্ড। আমরা একসাথে গ্রাজুয়েট হয়েছি। আমার সবচেয়ে কাছের সুন্দরী ফ্রেন্ড ও।
~ নিহান তুই সবসময় একটু বেশী বলিস। (লজ্জা পেয়ে)
– আরে চুপ থাক তুই। ম্যাম এই শপটা ওরই।
~ ওহ!
– আচ্ছা অবনী আমি এতক্ষণ যার কথা বলছিলাম, এই যে উনিই হলেন আমাদের সবার ছোট প্রিন্সেস মানে রায়হান আঙ্কেলের ছোট মেয়ে সামিরা খান৷
~ ওয়াও৷ ম্যাম আপনি তো অনেক সুন্দরী।
~ না না আপনার চেয়ে অনেকটাই কম।
~ কি যে বলেন না৷ (লজ্জাসিক্ত হয়ে)

আবনী আর নিহান যে বেশ ক্লোজ ফ্রেন্ড তা আর সামিরার বুঝতে বাকি নেই৷ ওদের একসাথে দেখে সামিরার গায়ে রীতিমতো আগুন জ্বলছে। হঠাৎই ও অনুভব করে ওর কাঁধে কে যেন হাত রেখেছে। সাথে পরিচিত সেই কণ্ঠ।

~ তুই শপিং রেখে এখানে কি করছিস?

সামিরা পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে তাসনিন দাঁড়িয়ে আছে। তাসনিন সামিরার দিকে তাকিয়ে দেখে ওর মুখখানা মলিন হয়ে আছে। সামিরা কিছু বলার আগেই নিহান বলে উঠে,

– অবনী উনি হলেন আমাদের রায়হান আঙ্কেলের বড়ো মেয়ে তাসনিন খান৷ আর ম্যাম ও হলো এই শপের ওউনার।
~ হ্যালো ম্যাম, নাইস টু মিট ইউ।
~ থ্যাঙ্কিউ। সামিরা আমার সাথে আয়৷
~ হুম।

তাসনিন সামিরাকে নিয়ে চলে যায়। তবে নিহানের দিকে বিরক্তমাখা দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে চলে যায়। নিহানের চোখ থেকে সেটা আবার এড়াতে পারে নি। কিন্তু ও বুঝে না এই লুকের কারণ কি। তাসনিন আর সামিরা ভিতরে গেলে অবনী বলে উঠে,

~ বড়ো জনটা একটু অন্যরকম তাই না?
– আরে বলিস না। খুব ডেঞ্জারাস। কিন্তু ভালো আছে৷ সবসময় ছোটটার খেয়াল রাখে৷
~ হুম তাতো দেখতেই পেলাম। তা স্যার আপনার কাকে ভালো লাগছে হুম? ছোটটা নাকি বড়োটা?
– একটাকেও না৷ শুধু তোকে পাগলি।
~ যাহ! (লজ্জা পায় খুব)

নিহান হাসতে হাসতে বলে,

– বাহ! এখন আবার লজ্জাও পাচ্ছিস। কদিন পর সব লজ্জা বের হবে নে৷ হাহা।
~ চুপ কর শয়তান।

এদিকে সামিরা একটা ড্রেস হাতে নিয়ে দূর থেকে নিহান আর অবনীর দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে। তাসনিন বিষয়টা বুঝতে পেরে সামিরাকে বলছে,

~ এরজন্য আগেই না করেছিলাম। দেখ প্রথম মিথ্যাটা বের হয়ে গেল। উনি গাড়িতে বলেছিল ওনার কোন জিএফ নাই। তাহলে এই মেয়েটা কে?
~ ফ্রেন্ড নাকি বলল।
~ শুধু ফ্রেন্ডের হলে এত ক্লোজ হয়ে কেউ কথা বলে না। নিশ্চয়ই এটা গার্লফ্রেন্ড।
~ হুম।
~ আচ্ছা আমি বুঝিনা, সে বলতে গেলে আমাদের বাসার চাকরের মতো। তুই কেন ওই বজ্জাতটার জন্য মন খারাপ করছিস! তোর জন্য কোটি কোটি ছেলে পাগল তা জানিস? ওই মেয়ের চেয়ে কোটি গুণ বেশী সুন্দরী আমার বোন৷ মন খারাপ না করে মন দিয়ে শপিং কর।
~ আচ্ছা।

তাসনিনের কথা মতো সামিরা শপিং এ মন দিলেও ভিতরে ভিতরে ঠিকই ও কষ্ট পাচ্ছে। নিহান এমন একটা বাটপারি করবে ও ভাবতে পারে নি। সামিরা মন খারাপ করে শপিং শেষ করে। ক্যাশিয়ারে এসে ওরা তিনজন দাঁড়িয়ে আছে৷ নিহান ওর ক্রেডিট কার্ডটা অবনীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

– ডিসকাউন্ট দিস কিন্তু।
~ হাহা৷ আচ্ছা যা ২০% ছাড় দিলাম।
– আরে না না৷ মজা করেছি। এত ছাড় লাগবে না৷ এমনিই যা আসে দে।
~ উহুম। যা ১০% দিলাম। এর কম হবে না৷
– হাহা৷ তুইও না৷
~ তাড়াতাড়ি করুন৷ (কড়া গলায় তাসনিন)

তাসনিনের কড়া গলায় কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে যায়। অবনী দ্রুত ক্যাশ ম্যামো দিয়ে দেয়৷ নিহান হাসি দিয়ে বলে,

– আচ্ছা আসি। ভালো থাকিস।
~ হুম তুইও।
– কোন সমস্যা হলে বলিস।
~ আচ্ছা। (হাসি দিয়ে)

সামিরা মুখ বেজার করে তাসনিনের সাথে চলে আসে৷ বডিগার্ডরা শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে ওদের গাড়িতে রেখে দেয়৷ আর তাসনিন আর সামিরা নিহানের গাড়িতে উঠে বসে। তবে অবাক করা বিষয় হলো, সামিরা এখন পিছনে তাসনিনের সাথে বসে আছে। নিহান কিছু বুঝতে পারে না। ও ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাসার দিকে রওনা হয়৷ সামিরা আনমনে বাইরে তাকিয়ে আছে মনের দুঃখে। ও মনে মনে ভাবছে,

~ কোন কিছু হওয়ার আগেই সব শেষ হয়ে গেল৷

হঠাৎই সামিরার হাতে তাসনিন হাত রাখে। সামিরা তাসনিনের দিকে তাকায়৷ তাসনিন সামিরার দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দেয়। মানে ওকেও হাসতে বলে। সামিরা অনেক কষ্টে একটা হাসি দেয়। এদিকে সামিরাকে এত চুপচাপ দেখে নিহানের কিছুটা অদ্ভুত লাগে৷ ও মনে মনে বলে,

– ব্যাপার কি! ছোটটা হঠাৎ এত চুপচাপ হয়ে গেল কেন? বড়োটা আবার কিছু বলছে নাকি! কি জানি।

এরপর ওরা বাসায় চলে আসে। তাসনিন আর সামিরা চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। সাথে নিহানও। সামিরা গাড়ি থেকে বের হয়ে নিহানের দিকে একবার তাকায়৷ ওদের চোখাচোখি হয়। নিহান স্পষ্ট বুঝতে পারে সামিরা ওর সাথে রাগ করেছে। কিন্তু কেন! নিহান উত্তর খুঁজে পায় না। সামিরা আর তাসনিন দুজনই রাগ দেখিয়ে ভিতরে চলে যায়৷ নিহান বোকার মতো এই সন্ধ্যাবেলা দাঁড়িয়ে থাকে। কি আর করবে? ও ওর রুমে চলে যায়৷ ফ্রেশ হয়ে অফিসিয়াল কাজ দেখতে থাকে।

১০.
রাত ১১ টার মতো বাজে। খাওয়া দাওয়া শেষ সবার। নিহানের প্রতি রাতে খাওয়া দাওয়ার পর হাঁটাহাঁটির স্বভাব আছে। আজও তার ব্যতিক্রম হয় নি। ও ওর রুম থেকে বের হয়ে করিডরে হাঁটতে হাঁটতে তাসনিন আর সামিরার রুমের সামনে আসতেই দেখে সামিরা করিডরের বারান্দায় একা দাঁড়িয়ে আছে৷ নিহান আস্তে আস্তে হেঁটে সামিরার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় আর বলে,

– জায়গাটা অনেক সুন্দর তাই না ম্যাম?

হঠাৎই নিহানের কণ্ঠ শুনে সামিরা চমকে উঠে। ও ঘুরে তাকিয়ে দেখে পাশে নিহান দাঁড়িয়ে আছে। করিডরের আলোতে দুজনের মুখখানা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সামিরা নিহানের দিকে এক নজর তাকিয়ে আস্তে করে বলে,

~ হুম।
– আমি প্রায়ই এখানে এসে দাঁড়িয়ে থাকি। এখান থেকে পুরো জায়গাটা দেখা যায়৷ বডিগার্ডরা ঠিক মতো পাহারা দিচ্ছে কিনা, কোথাও কোন সমস্যা হলো কিনা সব দেখা যায়৷
~ ওহ!
– তা ম্যাম আপনি হঠাৎ এত চুপচাপ হয়ে গেলেন কেন? বড়ো ম্যাম কিছু বলেছেন?
~ না না। কেউ কিছু বলে নি।
– ওও। তাহলে কি শপিং মন মতো করতে পারেন নি? তাহলে কালকে আবার যাবেন অবনীর ওখানে?
~ নায়ায়ায়া।
– আচ্ছা আচ্ছা৷
~ হুম। একটা প্রশ্ন করি? সত্যি সত্যি উত্তর দিবেন।
– ওকে।
~ অবনী আপুর সাথে আপনার আসল সম্পর্ক কি?

নিহান একটা হাসি দিয়ে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে হাত দুটো একসাথে করে বাইরে তাকিয়ে বলে,

– বলছি। আমি আমার মায়ের একমাত্র ছেলে হওয়ায় আমার কোন ভাই বোন ছিল না। আর পারিবারিক সমস্যার কারণে কোন বন্ধুও ছিল না। সবসময় একা থাকতাম। কিন্তু যখন কলেজে উঠি আমার জীবনে প্রথম বান্ধবী কিংবা আপন বোনই হয় অবনী। আমাদের মাঝে কখনো ভাইবোন আবার কখনো বন্ধুত্বের সম্পর্ক। ও সবসময় আমাকে বিভিন্ন ভাবে সাপোর্ট করে এসেছে। আমি ওকে সবসময় বোনের দৃষ্টিতেই দেখি। সেটা ও ভালো ভাবেই জানে। ওর সব কথা আমার সাথে শেয়ার করে। ওর ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা শেষ করে মেয়েদের জন্য এরকম একটা শপ খুলবে। আমি ওকে সাহায্য করেছি ওর স্বপ্ন পূরণে৷ ভাই বোনকে সাহায্য না করলে আর কে করবে বলেন? কিন্তু বোনটা কদিন পর অন্যের কাছে চলে যাবে৷
~ কার কাছে যাবে?
– ওর বিয়ে সামনের মাসে। সেটা নিয়েই আজ ওর সাথে মজা করছিলাম অনেক। ও কি লজ্জাই না পাচ্ছিলো। হাহা।
~ তার মানে আপনারা ভাই বোন?
– হ্যাঁ।

সামিরার অন্ধকারে ঢাকা মুখখানা মুহূর্তেই চাঁদের মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠে। মায়ায় ভরে যায় পুরো মুখখানা। নিহান স্পষ্ট তা বুঝতে পারছে। ও শুধু মিটমিট করে হাসছে। সামিরার যে এখন কি খুশীটাই না লাগছে ও বুঝাতে পারছে না। ওর মন চাচ্ছে ও নাচবে। নিহান বলে উঠে,

– তা ম্যাম আপনি বুঝি ভেবেছিলেন ওর সাথে আমার অন্যরকম কোন সম্পর্ক আছে?

সামিরা অস্বস্তির মধ্যে পড়ে যায়। কারণ ও তো তাসনিনের কথা মতো তাই ই ভাবতে ছিল। কিন্তু নিহানকে সেটা বুঝতে দেওয়া যাবে না। তাই সামিরা হাসি দিয়ে বলে,

~ আরে না না। আমি কেন এমন কিছু ভাববো। আর সম্পর্ক থাকলেও বা আমার কি তাই না।
– হুম। সেটাই। তাহলে এবার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ুন। অনেক রাত হয়েছে। এখন বাইরে থাকা ঠিক হবে না।
~ আচ্ছা৷ গুড নাইট৷
– গুড নাইট।

সামিরা মুচকি হেসে হেসে ওর রুমের দিকে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু আবার ব্যাক করে এসে নিহানকে জিজ্ঞেস করলো,

~ তারমানে আপনি এখনো সিঙ্গেল তাই না?
– জি।
~ ওকে।

বলেই দৌড়ে ওর রুমে চলে যায়৷ নিহান হাসতে থাকে। ও এবার বুঝতে পারছে সামিরা কেন রাগ করে ছিল। নিহান মনে মনে বলে,

– উফফ! মেয়েরা যে কেন আমার জন্য এত পাগল!

সামিরা ওর রুমে ঢুকে দেখে তাসনিন ভ্রুকুচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সামিরা ওর মিষ্টি ঠোঁটের কোণায় হাসিটা রেখেই তাসনিনকে জড়িয়ে ধরে বলে,

~ আপু তুমি ভুল ছিলা। উনি আসলে…
~ জানি আমি। তোদের সব কথাই আমি শুনেছি।
~ এহহ!
~ এহহ! না হ্যাঁ। এত রাতে আমার সুন্দরী বোনটা বাইরে থাকলে আমি তার খবর নিব না বুঝি। যেয়ে তো দেখি সেই ওনার পিছনেই পড়ে আছিস।
~ উনি অনেক ভালো আপু৷ দেখবা তোমারও একসময় ভালো লাগবে ওনাকে। হিহি।
~ চুপচাপ ঘুমায় পড়। নাহলে মেরে তক্তা বানাবো।
~ আচ্ছা আচ্ছা।

সামিরা খুব খুশী মনে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ে। তাসনিন ওর পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়৷ ও মনে মনে ভাবে,

~ এই বজ্জাত লোকটাকে আমার ভালো লাগবে! সেটা অসম্ভব ব্যাপার। এই লোকের মধ্যে নিশ্চয়ই কোন রহস্য লুকিয়ে আছে৷ আমাকে তা জানতেই হবে৷

এভাবে ২ দিন চলে যায়। কালকে তাসনিন আর সামিরা ভার্সিটিতে যাবে৷ ওদের প্রথম ক্লাস কালকে।

১১.
পরদিন সকালে নিহান রেডি হয়ে তাসনিন আর সামিরাকে ওদের ভার্সিটিতে দিয়ে আসে। তাসনিন আর সামিরা একই ক্লাসে পড়ে। তাই ওরা একসাথে বসে সবার সাথে পরিচিত হচ্ছে। পুরো ক্লাসে ওদের মতো সুন্দরী রূপসী আর একটা মেয়েও নেই। ছেলেরা পাগল হয়ে আছে ওদের জন্য৷ এরপর স্যার আসে ক্লাসে। আস্তে সবাই স্যারকে তাদের পরিচয় দিচ্ছিল। হঠাৎই কেই একজন দরজায় বলে উঠলো,

– স্যার আসতে পারি?

সবাই একসাথে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে৷ ক্লাসের সব মেয়ে হা করে তাকিয়ে আছে। তবে তাসনিন আর সামিরা বিশাল বড়ো সক খেয়েছে। ওরা দুজন একসাথে বলে উঠে,

~ উনি এখানে? তাও আবার এভাবে!

চলবে..?

সবার ভালো সাড়া চাই। আর কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। সাথে থাকবেন সবসময়।

আগের এবং পরবর্তী পর্বের লিংক কমেন্টে দেওয়া হবে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here