মিথ্যে অভিনয় পর্বঃ ০৫ | ভালোবাসার কষ্টের গল্প

0
3049

মিথ্যে অভিনয় পর্বঃ ০৫
লেখকঃ আবির খান

মাইরা কফি হাতে হা করে তাকিয়ে আছে তাহসানের দিকে। কারণ তাহসান মাত্র সাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে৷ ও শুধুমাত্র একটা ট্রাউজার পরে আছে। টি-শার্ট নিতে খেয়াল ছিলো না। তাই খালি গায়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। আর ঠিক সে সময়ই মাইরা কফি নিয়ে চলে আসে। তাহসানকে খালি গায়ে দেখে মাইরা পুরো অবাক হয়ে যায়। সাথে লজ্জায় মেয়েটার পুরো মুখ গোলাপি হয়ে গিয়েছে। তাহসানের হাতেই টি-শার্টটা ছিলো। ও আর একমুহূর্ত সময় নষ্ট না করে মাইরার সামনেই অন্যদিকে ঘুরে টি-শার্টটা পরে ফেলে। এদিকে মাইরা এই দৃশ্য দেখে লজ্জায় মরে যাচ্ছে। টি-শার্ট পরা হলে তাহসান ঘুরে কিছুটা রাগী ভাব নিয়ে মাইরার দিকে তাকায়৷ মাইরা এদিক ওদিক তাকাচ্ছে৷ কি করবে বুঝতে পারছে না। অসম্ভব লজ্জা পাচ্ছে ও। তাহসানকে এমন একটা অবস্থায় ও দেখবে তা ও কল্পনাও করে নি। মাইরা আড় চোখে দেখে তাহসান রাগী ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷ ও কি করবে কিছুই বলতে পারছে না৷ হঠাৎ ওর মনে হয় তাহসান ওর দিকেই আসছে। মাইরা তাকিয়ে দেখে হ্যাঁ তাহসান ওর কাছে আসছে৷ ও ভয়ে আস্তে আস্তে অজান্তেই পিছনে যেতে থাকে। তাহসান সামনে আসছে আর মাইরা পিছনে যাচ্ছে৷ একসময় মাইরা রুমের দেয়ালের সাথে গিয়ে ঠেকে যায়। ফলে আর পিছনে যেতে পারে না। ততক্ষণে তাহসান মাইরার একদম কাছে চলে এসেছে। ওর হাতটা ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। বেচারির অবস্থা খুব খারাপ। একে তো তাহসানকে এমন একটা অবস্থায় দেখেছে তার উপর তাহসান রেগে গিয়েছে। মাইরা মনে মনে বলছে, আজ বোধহয় কপালে শনি, রবি, সোম সব আছে৷ আল্লাহ আমাকে বাঁচাও। তাহসান মাইরার কাছে এসেই ওর হাত থেকে খপ করে কফিটা নিয়েই পাশে টুলের উপর রেখে দেয়৷ এখন মাইরা পুরো ফ্রী। ও পালাতে নিয়েও পারে না। তাহসান রাগী ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷ মাইরা মাথা নিচু করে আছে৷ ওর অসম্ভব লজ্জা আর ভয় করছে৷ তাহসান ওর সাথে এখন কি করবে? এই ভেবেই ওর অবস্থা আরো খারাপ। মাইরা মাথা নিচু করে থাকায় তাহসান ওর থুতনি ধরে ওর দিকে মুখ তুলে। এবার দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। বাইরে থাকে আসা রোদের আলোতে দুজনের মুখ একদম স্পষ্ট উজ্জ্বল হয়ে আছে৷ দুজনের চোখগুলো চকচক করছে। তবে তাহসান রাগ করে আছে৷ মাইরা অসহায় ভাবে তাহসানের দিকে তাকিয়ে আছে৷ এই বুঝি মেয়েটা কেঁদে দিবে৷ তবে মনে মনে ও অনেক খুশী। কারণ তাহসান এখন ওর অনেক কাছে৷ অনেক মানে অনেক। ওদের দুজনের নিঃশ্বাস ওরা অনুভব করতে পারছে৷ মাইরার ঠোঁটজোড়ার দিকে বারবার তাহসান তাকাচ্ছে৷ হয়তো অজান্তেই। তবে কেন জানি তাকাচ্ছে ও। হয়তো সেগুলো ওকে নেশা লাগাচ্ছে৷ দুজনের মাঝে চরম নিরবতা। তবে সেটা বেশীক্ষণ রইলো না৷ তাহসান গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,

– নক না করে তুমি ভিতরে আসলে কেন?
~ আম..উমম..না মানে..
– আমতা আমতা করো কেন?
~ আমি বুঝি নি। সরিইই। (অসহায় ভাবে)
– আমাকে তো দেখেই ফেলছো। এখন এর শাস্তি কি হবে বলো?

মাইরা ভীতু হয়ে যায়। অসহায় ভাবে ছলছল নয়নে তাহসানের দিকে তাকিয়ে থাকে। তাহসান রসিকতাটা আরো চালিয়ে যেতে চায়। কেন জানি মাইরাকে জ্বালাতে ওর ভালোই লাগছে৷ তাই ও আবার বলে,

– বলো কি শাস্তি দিবো?
~ আপনি আমাকে শাস্তি দিবেন?(বাচ্চাদের মতো মুখ করে)

তাহসান মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে শুধু। এখন ওর মাইরা ছাড়া মাথায় আর কিছুই নেই। ও মাইরার ঘোরে পড়ে গিয়েছে। মাইরার মুখটা অসম্ভব মায়াবী লাগছে৷ ওর চোখ আর ঠোঁট দুটো তাহসানের মনে অজানা এক উত্তেজনা সৃষ্টি করছে৷ তাহসান বলে,

– অবশ্যই দিবো। তুমি নক না করে ভিতরে আসছো কেন?
~ বললাম তো সরি। ভুল হয়েছে। মাফ করে দিন৷
– উহুম। শাস্তি দিবো।
~ আমাকে শাস্তি দিলে আমি আপনার নাকে কামড় দিবো। দিবো? দিবো?

তাহসান ভয় পেয়ে যায়। আর সাথে সাথে মাইরাকে ছেড়ে দেয়। কারণ ওর সকালের কথা মনে পড়ে যায়। ঘুমন্ত অবস্থায় ও শুনেছিলো মাইরা ওর নাকে কামড় দিবে। তাই তাহসান ভাবে যে, সত্যি সত্যি কামড় দিলেও দিতে পারে। মাইরা তাহসানের কাছ থেকে সরে যেয়ে হাসতে হাসতে বলে,

~ হিহি। কফিটা খেয়ে নিয়েন। আর সরি নক করে না আসার জন্য।

বলেই ও রুম ত্যাগ করে। তাহসান হাসতে হাসতে কফিটা হাতে নিয়ে চুমুক দেয়। এক চুমুক দিয়েই সাথে দ্বিতীয় চুমুক দেয়। তাহসানের মনে হচ্ছে, ওর খাওয়া বেস্ট কফি এটা। তাহসান বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে আর মাইরার কথা ভেবে মুচকি হাসছে। মেয়েটা সত্যিই পাজি।

৯.
মাইরা আবার কিচেনে চলে আসে। এসে দেখে ভাবী নাস্তা বানাচ্ছে। মাইরাকে দেখে ভাবী বলে উঠে,

~ কি কফি খাওয়ানো হলো জামাইকে?

মাইরা লজ্জা পেয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নক খোটাতে থাকে। ভাবী হাসি দিয়ে বলে,

~ ইসস লজ্জা আর লজ্জা খালি। তা জামাইকে ছেড়ে এখানে কেন? যাও যাও তাহসানকে সময় দেও।
~ না না ভাবী, উনি কফি খাচ্ছেন। আমি আপনাকে নাস্তা বানাতে সাহায্য করবো।
~ পাগলিটা বলে কি! তুমি এ বাসার নতুন বউ। আজ প্রথম দিনই রান্না করতে হবে না৷ আমি আছি তো।
~ না ভাবী। এতদিন আপনি অনেক কষ্ট করেছেন। আজ থেকে আমিও আপনাকে সাহায্য করবো। প্লিজ না করবেন না। প্লিজ।
~ আচ্ছা আচ্ছা। তা তুমি কি রান্নাবান্না পারো?
~ আপনি শুধু বলেন কি রান্না করতে হবে। দেখি পারি কিনা।
~ বাহ! কার কাছ থেকে রান্না শিখছো?
~ আম্মু।
~ আমিও। এক কাজ করো ভাজিটা আজ তাহলে তুমিই বানাও। আমি কেটে রেখে দিয়েছি।
~ আচ্ছা৷

এরপর মাইরা আর ভাবী মিলে অনেক গল্প করতে করতে নাস্তা বানিয়ে ফেলে। নাস্তা বানানো শেষ হলে মাইরা আর ভাবী মিলে সেগুলো সার্ভ করে ডাইনিং টেবিলে। এরমধ্যেই মাইরার শাশুরি চলে আসেন। মাইরা প্রথমেই তাকে সালাম দেয়।

~ আসসালামু আলাইকুম।
~ ওলাইকুম আসসালাম। কেমন আছো মাইরা?
~ আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?
~ আল্লাহ ভালো রেখেছেন।
~ মা, মাইরা আজকে নিজ হাতে রান্না করেছে আমাদের জন্য। (হাসি দিয়ে)
~ কি বলো সত্যিই?(অবাক হয়ে)
~ জি মা।
~ মাশাল্লাহ। তবে আজ প্রথম দিন রান্না না করলেও হতো বউমা। তবে করেছো যখন অনেক খুশী হয়েছি।
~ ধন্যবাদ। (হাসি দিয়ে)
~ বাহ! কি মিষ্টি হাসি। আল্লাহ আমাকে মেয়ে না দিলেও তোমাদের মতো দুইটা সোনার টুকরার বউমা দিয়েছে। যারা আমার মেয়ের মতোই। আজ থেকে এই সংসারের দায়িত্ব তোমাদের দুজনার। আমি এখন নিশ্চিন্তে থাকতে পারবো।
~ জি মা আপনি এখন থেকে শুধু রেস্টে থাকবেন। কোন কিছু লাগলে আমাদের বলবেন। আমি আর ভাবী আপনাদের জন্য সবসময় আছি।

এরমধ্যে মাইরার শ্বশুর, তাহসান আর রাহুল চলে আসে। সবাই টেবিলে বসতে বসতে বলে,

– বাহ! দেখেছো সাথী মাইরা কতো ভালো। মাকে রেস্ট দিয়ে দিয়েছে। (রাহুল)
– দেখতে হবে না কার বন্ধুর মেয়ে। (তাহসানের বাবা)
~ হ্যাঁ তুমি খালি বসে বসে ক্রেডিট নিতেই পারো। যাই হোক আজ মাইরা আমাদের জন্য নাকি নাস্তা বানিয়েছে৷ আসো খাওয়া শুরু করি। দেখি বউমার রান্নার হাত কেমন।

তাহসান আড় চোখে মাইরার দিকে তাকাচ্ছে৷ মাইরা সবাইকে নাস্তা বেরে দিচ্ছে। হঠাৎই ওদের চোখাচোখি হয়। দুজনেই লজ্জা পায় অনেক। এদিকে সাথী আর রাহুল ওদের কান্ড দেখে মিটমিট করে হাসছে। তাহসানের মা বলে উঠে,

~ মাইরা তুমি তাহসানের পাশে বসো। তোমাদের দুজনকে একসাথে দেখি।

মাইরা লজ্জাসিক্ত হয়ে তাহসানের পাশে বসে। তাহসান চুপচাপ বসে আছে। মাঝে মাঝে মাইরার দিকে তাকাচ্ছে। এরপর সবাই একসাথে নাস্তা খাওয়া শুরু করে। কিছুক্ষণ পর মাইরার শ্বশুর বলে উঠে,

– বাহ! আজকে ভাজিটা তো অনেক মজা হয়েছে। যত খাচ্ছি মন ভরছে না৷
~ বাবা, আমাদের মাইরা বানিয়েছে ভাজি।
– ওও। খুব মজা হয়েছে বউমা।
~ মাশাল্লাহ। সত্যিই অনেক মজা হয়েছে বউমা।
– ঠিক বলছো মা। কিরে তাহসান তুই কিছু বল। তোর ভালো লাগে নি?

তাহসান মন দিয়ে খাচ্ছিলো। হঠাৎ ভাইয়ের প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় ও। কোন কিছু না ভেবেই মাইরার দিকে তাকিয়ে বলে,

– অনেক মজা হয়েছে।
~ জি ধন্যবাদ।

সবাই ওদের দেখে মিটমিট করে হাসছে। তাহসান সবাইকে না বলে শুধু মাইরাকে বলায় পরে ও নিজেই জিহবায় কামড় দেয়৷ ওরা দু’জন লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে আসলে। তাই নার্ভাস হয়ে যাচ্ছে৷ এরপর এটা ওটা কথা বলতে বলতে খাওয়া দাওয়া যখন প্রায় শেষের পর্যায়ে তখন তাহসানের মা বলে উঠেন,

~ তাহসান বউমাকে নিয়ে ওর বাসা থেকে ঘুরে আসিস আজকে।
– আচ্ছা মা।
– বেয়াই আর বেয়াইন সাবের জন্য কিছু নিয়ে যাস। আর মাইরা যদি থাকতে চায় তাহলে থাকিস। সমস্যা নেই।
– ঠিক আছে বাবা।
~ ধন্যবাদ বাবা। (অনেক খুশী হয়ে)
– এভাবে হাসিখুশী থাকবে মা।

মাইরা অনেক খুশী হয়। ও ভাবতেই পারেনি তাহসানের বাবা মা এত ভালো এত মিশুক। মাইরা অনেক খুশী আজ। এদিকে রাহুল খেতে খেতে হঠাৎ বলে উঠে,

– আচ্ছা তাহসান তোরা হানিমুনে কই যাবি বল? আমি টিকিট রেডি করতে থাকি।

হানিমুনের কথা শুনে মাইরা আর তাহসানের একসাথে কাশি উঠে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে ওরা একে অপরের জন্য পানি ঢেলে এগিয়ে দেয়। এই রোমান্টিক দৃশ্য দেখে সবাই হেসে দেয়। তাহসান মাইরার হাতের পানি নিয়ে খেয়ে নেয় আর মাইরা তাহসানের। দুজনেই লজ্জায় শেষ হয়ে যায়৷ ওরা একে অপরের অনেক কেয়ার করে বুঝা গেল। তাহসান লজ্জায় বলে,

– ভাইয়া পরে বলবো নে।
– হাহা৷ আচ্ছা আচ্ছা।

এরপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে আসে৷ তাহসান রুমে এসে সোফায় বসে আছে। মনে মনে রাহুলকে যাতা বলছে। এতগুলো মানুষের মধ্যে হানিমুনের কথা বলার কোন দরকার ছিলো! এসব ভাবতে ভাবতেই মাইরা রুমে চলে আসে। ও আসতেই তাহসানের সাথে চোখাচোখি হয়। দুজনেই লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে ফিরে তাকায়। মাইরা কি করবে বুঝতে পারছে না। হানিমুনের কথা বারবার মনে পড়ছে। তাহসান আড় চোখে মাইরার দিকে তাকিয়ে আছে। মাইরা সত্যিই অনেক সুন্দর। যেমন রূপে, বুদ্ধিতে আর দুষ্টামিতেও। সব দিক থেকেই ও পার্ফেক্ট। মাইরা রুমের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করছে। তাহসানকে একটা প্রশ্ন করবে ও। কিন্তু লজ্জায় ওর কাছে যেতে পারছে না৷ তবে প্রশ্নটা করা জরুরি। তাই ও আস্তে আস্তে করে তাহসানের কাছে গিয়ে ওর সামনে বেডে বসে। তাহসান মাইরার দিকে একবার তাকায়৷ ওদের চোখাচোখি হয়। মাইরা দেখে তাহসান উঠে ওর কাছেই আসছে৷ ও পুরো বোকা হয়ে যায়। তাহসান কোন কথা না বলে মাইরার একদম কাছে চলে আসে। মাইরার হার্টবিট অনেক বেড়ে গিয়েছে। ও চোখগুলো বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে৷ তাহসান কেন এভাবে ওর কাছে আসছে! দেখতে দেখতে তাহসান মাইরার মুখের একদম কাছে এসে ওর…

চলবে..?

সবার ভালো সাড়া চাই। আর কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। সাথে থাকবেন সবসময়।

আগের এবং পরবর্তী পর্বের লিংক কমেন্টে দেওয়া হবে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here