সত্যি ভালোবাসো,part_07

0
3746

সত্যি ভালোবাসো,part_07
writer Fatema Khan

আরিশকে সামনে দেখে তাহিয়া খুশি হলেও তা মুখে প্রকাশ করছে না।

তাহিয়াঃতুমি,এখানে কেনো এসেছো?আর এভাবে হাত ধরে রুমে নিয়ে আসা এটা কি ধরনের কাজ ছিলো,কেউ দেখলে কি ভাববে।ছাড়ো আমাকে।

আরিশঃআমি যা ইচ্ছে করবো বিয়ে করা বউ আমার।কে কি বললো তাতে আমার কিছু যায় আসে না।বুঝলে আমার কিউট বউটা।

তাহিয়াঃছাড়ো তোমার আবার মিটিং আছে না।আমার জন্য নিজের মুল্যবান সময় নষ্ট না করাই ভালো।তাছাড়া আমি কিউট বউ হলাম কবে আমিতো ষ্টুপিড বউ ছিলাম।

আরিশ জোরে হেসে বলে-

আরিশঃনা আজ থেকে তুমি আমার কিউট বউ।আর আমার কিউট বউয়ের অভিমান হয়েছে বুঝি।

তাহিয়াঃঅভিমান কেনো হতে যাবে।এখন ছাড়ো আমাকে কেউ দেখলে খারাপ ভাববে।

আরিশঃসকালের মিটিং টা খুব ইম্পর্ট্যান্ট ছিলো রেজোয়ান আংকেলের সাথে।রেজোয়ান আংকেল কাল দুবাই ফিরে যাচ্ছে তাই মিটিং করার জন্য তোমাকে নিয়ে আসতে পারি নি কলেজে।সরি(কানে হাত দিয়ে)

তাহিয়াঃআচ্ছা ঠিক আছে এবারের মত ক্ষমা করে দিলাম সেইম ভুল আবার করলে আর ক্ষমা হবে না।মিটিং এতো ইম্পর্ট্যান্ট ছিলো তাহলে তুমি এখানে কি করো।

আরিশঃতারাতাড়ি শেষ হলো তাই ভাবলাম আমার কিউট বউটার সাথে একটু ঘুরে আসবো।

তাহিয়াঃতাই।অনেক মজা করবো আজ দুইজন মিলে অনেক ঘুরবো।

আরিশঃজ্বি।এখন চলো তারাতাড়ি দাঁড়িয়ে আছো কেনো।
_________________________________

আরিশ আর আমি অনেক ঘুরাঘুরি করি।সবসময় আমি আরিশ আমার হাত ধরে রেখেছে। একবারের জন্য হাত ছাড়েনি।খুব ভালো লাগা কাজ করছে আরিশের হাতে হাত রেখে ঘুরতে।

সময় ১ঃ৩০মিনিট।আরিশ আমাকে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলো। আমরা খাবার খেয়ে নিলে আরিশ আমাকে আবার কলেজে দিয়ে আসবে।আরিশের আবার অফিসে যেতে হবে। কিন্তু এবার আমার অভিযোগ নেই।অনেক ভালো লাগছে আরিশের সাথে সময় কাটিয়ে।এটাই মনে হয় ভালোবাসা।হ্যাঁ ছোট ছোট অভিমান, অভিযোগ, রাগ করা,আবার সব ঠিক করে নেয়া।যতই অভিযোগ থাকুক তার বাচ্চাদের মত কান ধরে সরি বললে সব রাগ এক নিমিষেই শেষ। আরিশের ডাকে আমি আমার ভাবনার জগৎ থেকে বের হই।

আরিশঃতাহিয়া কি হলো,কোথায় হারিয়ে গেলে কখন থেকে ডাকছি।কলেজ এসে গেছে যাও।আমি অফিস যাবো। তুমি তনিমা আর তাহসিনের সাথে চলে এসো।

তাহিয়াঃঠিক আছে।সাবধানে যেও।(নামার আগে ফট করে আরিশের গালে একটা চুমু দিয়ে কলেজের ভিতরে দিলাম দৌড়।এইমুহুর্তে তার সামনে দাড়নো মানেই লজ্জা পাওয়া)

আরিশঃতার হুটহাট কাজে আমি জাস্ট শকড।পাগলী একটা।(পরে আরিশ চলে যায়)
_______________________________

রেজোয়ানঃসব ঠিকভাবে চলছে তো আরিশ।

আরিশঃজ্বি।সবকিছু আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী চলছে।আপনি একদম টেনশন নিবেন না।

রেজোয়ানঃআমি কাল দুবাই চলে যাবো।এবার তো মাত্র ৭০০ ডেলিভারি হয়েছে।নেক্সট টাইম যখন আসবো তখন ৩০০০-৫০০০ টা ডেলিভারি করতে হবে,মাথায় রেখো আমার কথাগুলো।

রায়হানঃআরে রেজোয়ান তুমি এইদিকের টেনশন করো না।এইদিকে আমি আর আরিশ সামলে নিবো।

আরিশঃআর আংকেল আপনি নিশ্চিন্তে দুবাই যান।আপনি আবার দেশে আসার আগেই ৩০০০এর উপরে রেডি থাকবে।

রেজোয়ানঃআমার তোমার উপর অগাধ বিশ্বাস আছে তাই তো সব তোমার উপর রেখে যাচ্ছি।

আরিশঃআপনি আমার আর বাবার উপর বিশ্বাস করে দুবাই যান।আপনাকে নিরাশ করবো না।

রায়হানঃআচ্ছা তাহলে আমি আর রাজোয়ান এয়ারপোর্টে যাই।তুমি তোমার কাজে লেগে পরো আরিশ।

আরিশঃজ্বি বাবা।
______________________________

তাহিয়া দাঁড়িয়ে তনিমা আর তাহসিনের জন্য অপেক্ষা করছে তারা আসলে একসাথে বাড়ি যাবে।দেরি করে আসাতে তাহিয়া আর ক্লাস করতে পারে নাই।এমন সময় তনিমা আর তাহসিনকে দেখা গেলো তারা একসাথে আসছে।

তাহিয়াঃতাহসিন ভাইয়ার কি হলো কেমন মনমরা হয়ে থাকে।আগে কত মজা করতো এখন কত চুপচাপ।আগে সবসময় তো আমাকে রাগানোর জন্য উঠে পরে লাগতো।আর এখন আমকে কেমন এড়িয়ে চলে আমার সাথে কথা বলে না আমার দিকে তাকায়ও না।বুঝলাম না ব্যাপারটা কি?

তনিমাঃকিরে ভাবনাকুমাড়ি কি এত ভাবছিলি।আর তুই বাইরে দাড়িয়ে আছিস কেনো?

তাহিয়াঃও আসলে আরিশ এসেছিলো আমরা একটু ঘুরতে গেছিলাম তো এসে দেখি যেই ক্লাস বাকি আছে ওইটা স্টার্ট হয়ে গেছে তাই তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি।

তনিমাঃওহ আচ্ছা তাই বল।আমিও তো বলি ক্লাস এখনো শেষ হয়নি তোদের তুই বাইরে কি কেনো।

তাহসিনঃতাহলে তুই আরিশের সাথেই বাসায় চলে যেতি।এখানে অপেক্ষা করার কোনো মানে হয় নাকি।আরেকটু টাইম দিতি দুইজন একে অপরকে।আর আরিশ সকালে কত ব্যাস্ত ছিলো তাহলে এখন কি হলো।

তাহিয়াঃভাইয়া ওর অফিস আছে।তাই চলে গেছে।বলছে তোমাদের সাথে যেতে।আর সকালের মিটিং টা তারাতাড়ি শেষ হয়ে গেছে।

তনিমাঃতোরা চুপ কর তো।এখন রাসেল আসবে তারপর আমরা একটা পার্কে যাবো।কিছুক্ষণ থেকে তারপর চলে আসবো।

“আমি আর তাহসিন ভাইয়া কিছু বললাম না।তাহসিন ভাইয়া আমাকে এভাবে বললো কেনো।আমার উপর কি রেগে আছে।হুম তাই হবে হয়তো।না হয় সবার সাথে কত হাসিমুখে কথা বলে আর আমার বেলায় কথাই বলে না।মনে হয় আমার কাছ থেকে লুকানোর চেষ্টা করছে সে।কিন্তু তার চোখ যেন কিছু বলতে চায় আমাকে।”
“আমার ভাবনার মাঝেই রাসেল ভাইয়া চলে আসলেন।আমরা গাড়িতে উঠে পরি।সামনে রাসেল ভাইয়া আর তনিমা আপু পাশাপাশি আর পিছনে আমি আর তাহসিন ভাইয়া।অনেকটা দূরত্ব রেখে বসেছেন আমার থেকে।”

“আমরা একটা পার্কে বসে আছি।আমি আর তাহসিন ভাইয়া একটা বেন্স এ বসে আছি।আর রাসেল ভাইয়া ও তনিমা আপু নিজেদের মত ঘুরছে।”

তাহিয়াঃভাইয়া।

তাহসিনঃ হুম।বল।

তাহিয়াঃতুমি কি আমার উপর রাগ করে আছ?

তাহসিনঃএমন কেনো মনে হচ্ছে তোর যে আমি তোর উপর রাগ করে আছি।আমি নিজের উপর রেগে আছি।নিজের একটু ভুলের জন্য সব হারিয়ে ফেললাম।

তাহিয়াঃতুমি যে কাজে একবছর ঢাকায় ছিলে না সেটা কি হয়নি।

তাহসিনঃসেটা করতে গিয়ে তো নিজের সবথেকে মুল্যবান জিনিসটা হাতছাড়া হয়ে গেলো।
(ভাইয়ার চোখে পানি)

তাহিয়াঃভাইয়া তুমি কান্না করো না।আমরা আছি তো তোমার সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।আর এভাবে বাচ্চাদের মত কে কান্না করে বলতো।

“ভাইয়া আর কিছু বললো না।”

“আমার মনে হচ্ছে কেউ আমাকে ফলো করছে বুঝতে পারছি না মনের ভুল নাকি সত্যি।আমি চারপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখতে থাকি হঠাৎ চোখ যায় দূরে একটা বেন্সে একা বসে থাকে লোকটা।ভালো করে তাকাতে দেখি লোকটা উঠে দ্রুত চলে গেলো।আরে এটা তো সেই মাস্ক পরা লোকটা। আমি তাকে দেখে তাকে ডাকতে থাকি আর তার পিছনে যেতে থাকি।”
“ভাইয়াও আমার পিছনে গেলো আমার ডাক শুনে।অনকেটুক গিয়ে দেখি লোকটা আজকেও পালিয়েছে।”

তাহসিনঃকি হয়েছে কাকে ডাকছিস?আর এভাবে কার পিছনে আসলি।পরিচিত কেউ।

তাহিয়াঃচলো বলছি।
“তারপর ভাইয়াকে সবকিছু খুলে বললাম ওই দিনের কথা আবার আজকেও সেইম।আবার মাস্কও পরা।”

তাহসিনঃএটা তো খুব ভাবার বিষয়।তোরা থানায় জানিয়েছিস।

তাহিয়াঃনা।আরিশকে আজ বলব।

“এভাবে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলো।সূর্য ডুবছে আমি তাকিয়ে আছি, সূর্য ডুবা দেখতে ব্যাস্ত আমি।আর একজোড়া চোখ আমাকে দেখে চলছে।কিছুক্ষণ পর রাসেল ভাইয়া আর তনিমা আপু আসলো।
আমরা বাসায় চলে এলাম।এখনো আরিশ আসেনি।তাহসিনকে মা রেখে দিছে বলছে আমরা পরশু চলে যাব তাকেও পরশু যেতে।সে মানা করলেও সবার জোরাজোরিতে বেচারার হার মানতে হলো।”

“রাত ৮টার দিকে আরিশ বাসায় আসে।আরিশ ফ্রেশ হয়ে আসলে আমরা সবাই একসাথে খেতে বসি।”

খাবার টেবিলে,
তাহিয়াঃআংকেল চলে গেছে আরিশ?

আরিশঃহ্যা ওনার ফ্লাইট বিকাল ৫টায় ছিলো।

আরমানঃকোন আংকেল তাহিয়া?

তাহিয়াঃরেজোয়ান আংকেল বাবা।আরিশের মুখ থেকে শুনেছি অনেক ভালো মানুষ।

আরমানঃরেজোয়ান হোসেন। (আনমনে নামটি বললেন বাবা)

তাহিয়াঃ হুম বাবা রেজোয়ান হোসেন ই নাম আংকেলের।উনি তো আমাদের বউ-ভাতের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন।

আরমানঃঅহ।আচ্ছা খেয়ে ঘুমাতে যাও।

তাহসিনঃ(আরমান আংকেলকে রেজোয়ান হোসেনের নাম শুনে এমন চিন্তিত দেখচ্ছে কেনো)

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here