সাজু ভাই পর্ব:-১০ (শেষ) কাছে আসার গল্প

1
7290

সাজু ভাই
পর্ব:-১০ (শেষ)

– রুহি খুন করেছে সেটা আমি মেনে নিতে পারছি না সাজু, নিশ্চয়ই তোর ভাবনার মধ্যে ভুল হচ্ছে। ভালো করে আরেকটু গভীরে চিন্তা করে দেখ তো মতামত পরিবর্তন করা যায় কিনা।

– সাজু ভাই বললেন, আমার সবকিছু চিন্তা করা শেষ হয়ে গেছে এখন তুই আর আতিক ভাই মিলে আমাকে ওই গ্রামের মধ্যে নেবার ব্যবস্থা কর। আর সেখানেই সকল রহস্যের উন্মোচন করা হবে, তুই যেভাবেই হোক ব্যবস্থা কর।

– সেটা খুব কঠিন হবে।

– সমস্যা নেই আতিক ভাই সাহায্য করলে সেটা অবশ্যই সম্ভব, যত দ্রুত সম্ভব করে ফেল।

– আচ্ছা ঠিক আছে চেষ্টা করছি।

– – – – –

চেয়ারম্যান বাড়ির সম্মুখে অজস্র মানুষের ভিড় জমে উঠেছে, রহস্যময় খুনের রহস্য বের হবে সেই খবর ছড়িয়ে গেছে অনেক আগেই। কিন্তু জেলা প্রশাসক এখনো তার পুলিশ এবং সাজু ভাইকে নিয়ে চেয়ারম্যান বাড়িতে উপস্থিত হননি। তাদের এখানে আনার ব্যবস্থা করতে সজীব আর আতিক অনেক পরিশ্রম করেছে। এদিক সেদিক দৌড়ে তারপর ম্যানেজ করা হয়েছে তাো মাত্র তিন ঘন্টার সময় পাবে।

রুহির পাঁচ মৃত বান্ধবী বাদে বাকি সবাই উপস্থিত হয়েছে, সকালের চোখে আতঙ্ক তাই তাদের বাবা মা সঙ্গে আছে। রুহি তার মা-বাবার সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে পারুলের পাশেই, পারুল বেশ চিন্তিত।

রুহির বাবা তার মেয়েকে বললো ” যেখানে খুনি ধরা পরেছে সেখানে কেন যে এত নাটক তৈরি করা হয়েছে কে জানে? রুহি মা তুই কিন্তু সবকিছু সত্যি বলবি, তোকে কিডন্যাপ করে তারপর যা যা বলে হুমকি দিয়েছে সবকিছু। ”

রুহি শুধু মাথা নাড়লো, সে ভাবছে সাজু ভাই কি তাহলে সত্যি সত্যি খুনি নয়? কিন্তু তাহলে কে? আর আমাকে সাজু ভাই কেন কিডন্যাপ করলো?

সাজু ভাই এবং জেলা প্রশাসককে নিয়ে পুলিশের গাড়ি এসে উপস্থিত হয়েছে। হাতে হাতকড়া পরিয়ে সাজু ভাইাে বসানো হয়েছে চেয়ারম্যান ও প্রশাসক দুজনের সামনে। পুলিশ তাদের হাতে হ্যান্ড মাইক নিয়ে সবাইকে চুপ করতে বলছে, সবাই একটু যেন টানটান উত্তেজনার মধ্যে।

প্রথমে কথা বললো চেয়ারম্যান সাহেব।

– তিনি বললেন, স্যার এসবের কোন দরকার তো দেখিনা, খুনি ধরা পরেছে তারপর তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এখন তো আদালতে হাজির করে দিবেন তারপর আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবে।

– প্রশাসক বললেন, আমি তো আসতে চাইনাই চেয়ারম্যান সাহেব, কিন্তু এমপি নিজেই আমাকে নিয়ে আসতে বলেছে। তিনি বলেন যে নিয়ে যাও একটু, যদি কিছু করতে পারে।

– কি করতে পারবে? কি বলার আছে এই খুনির?

– প্রশাসক বললেন, সেটা তাকেই জিজ্ঞেস করি।

তারপর সাজু ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে প্রশাসক বললেন, তুমি কি প্রস্তুত?

– চেয়ারম্যান বললো, তাকে আবার প্রস্তুত হতে হয় নাকি? শয়তান ছেলে…

– এমন সময় সাজু ভাই বললো, চেয়ারম্যান সাহেব আপনার ছেলে পলাশ ঠিক আপনার মত মনে হয় অধৈর্য্যের ছিল তাই না?

থমকে গেল চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক নিজে চোখের চশমা ফাঁক করে তাকালেন।

– চেয়ারম্যান বললো, তু তুমি আমার ছেলের নাম জানো? আবার অধৈর্য? সে তো মারা গেছে তাই তাকে কেন টানা হচ্ছে এখানে?

– মিথ্যা কথা বলবেন না চেয়ারম্যান সাহেব, কারণ আপনার ছেলে পলাশ মরেনি। আপনি তাকে নিজ দায়িত্বে পাসপোর্টের ব্যবস্থা করে সৌদি আরবে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

উপস্থিত সবাই নড়েচড়ে গেল, জেলা প্রশাসক তো থম মেরে ফেলেছেন, কি হচ্ছে এসব?

চেয়ারম্যান আমতাআমতা করতে লাগলো, ঠিক তখনই সাজু ভাই বললেন,

– অস্বীকার করে কোন লাভ নেই চেয়ারম্যান স্যার কারণ আপনার ছেলের সকল ডিটেইলস আমি বের করেছি। প্রবাসী কল্যাণ সংস্থার সাহায্য নিয়ে আমি কাজগুলো করেছি, সুতরাং যত দ্রুত সম্ভব স্বীকার করুন।

পারুল এবার বিস্মিত, রুহি হা করে সাজুর দিকে তাকিয়ে রইল আর তার বাবা ফিসফিস করে তাখন বললো ” কি সাংঘাতিক ব্যাপার। ”

যেহেতু প্রচুর মানুষের উপস্থিতি তাই সবার কানে সাজু ভাইয়ের কথা পৌঁছাচ্ছে না। কিন্তু যতটুকু যাচ্ছে তারা সবাই গুনগুন করছে, তখনই পুলিশ মাইক দিয়ে চুপ করতে বললো। সবাই নিস্তব্ধ।

– চেয়ারম্যান বললো, হ্যাঁ আমি স্বীকার করছি যে আমার সন্তানকে আমি সৌদি আরবে পাঠিয়ে দিয়েছি। কারণ ওর জিদ অনেক বেশি, ঢাকা গিয়ে তার মামার সঙ্গে বলছিল সে প্রতিশোধ নেবে। এই সামান্য বিষয় নিয়ে ও বাড়াবাড়ি করছিল তাই বাধ্য হয়ে পাঠাতে হয়েছে।

– কিন্তু মৃত্যুর খবর কেন প্রচার করলেন?

– এটা আমার খুবই মারাত্মক ভুল ছিল, ওর জন্য আমি প্রায়ই অপদস্ত হতাম। তাই ওকে বলেছি যে দেশের বাইরে চলে যাক আর যেন কখনো দেশে না আসে। কিন্তু ও পলাশ তখন বললো যে, আমি যেতে পারি এবং আর কোনদিন দেশে আসবো না ঠিক আছে। কিন্তু এলাকার সবার কাছে তাকে মৃত ঘোষণা করতে হবে, যদি তার শর্ত মানি তাহলে সে যেতে পারে। আমি প্রথমে রাজি হচ্ছিলাম না, কিন্তু যখন পলাশ বললো ” দেশে থাকলে সে এদের কাউকে ছাড়বে না তখন ভয় হচ্ছিল আমার, তাই বাধ্য হয়েছিলাম। ”

– প্রশাসক বললেন, আপনার সন্তানের জিদ কেন উঠেছিল এদের উপর?

– স্যার এটা একটা সাধারণ বিষয় ছিল, শারমিন নামের যেই মেয়েটা প্রথমে খুন হয়েছে সেই মেয়ে টাকে আমার ছেলে একদিন রাস্তায় বিরক্ত করে। তখন তার সঙ্গে তাদের সকল বান্ধবী ছিল এবং ওরা সবাই সাক্ষী দেয়।

– ওহ্ আচ্ছা, কিন্তু সাজু সাহেব এমন ছোট্ট একটা ঘটনার জন্য সে এভাবে খুন করেছে? তাছাড়া সে তো সৌদি আরব আছে এটা আপনিই বললেন।

– সাজু ভাই বললো, হ্যাঁ পলাশ সৌদি আরব আছে ঠিকই কিন্তু তার কথাতেই খুন হয়েছে। তাকে এই ব্যাপারে সাহায্য করা হয়েছে।

– চেয়ারম্যান বললো, বিশ্বাস করুন আমার ছেলে ভালো হয়ে গেছে, আমার ছেলে এসব করেনি।

– সাজু বললো, আপনার সন্তান জীবিত আছে সে কথা আপনি আর আপনার মেয়ে ছাড়া কেউ কিন্তু জানে না চেয়ারম্যান সাহেব।

– এমন সময় রুহির বাবা বললো, এসব কথা কেন পেঁচানো হচ্ছে সাজু সাহেব? আপনি কিন্তু আমার মেয়েকে কিডন্যাপ করেছেন, ভাগ্যিস আমার মেয়ে বেঁচে আছে। কিরে রুহি মা, সবাই কে বল সাজু তোকে কিডন্যাপ করেননি?

– রুহি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো।

– সাজু ভাই বললো, চেয়ারম্যান সাহেব আপনি কি নিশ্চিত যে আপনার ছেলে খুন করেনি? আমি কিন্তু আপনার ছেলের আরেকটা অপরাধ জানি।

– মা-মা- মানে?

– আপনার ছেলে সৌদি আরব গিয়ে এক ভারতীয় মালিকের দোকানে কাজ করে। তিনি ছিলেন খুব বয়স্ক, তার পরিবারে কেউ ছিল না কারণ তারা নাকি দিল্লিতে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। আপনার ছেলে সেই বৃদ্ধকে কৌশলে হত্যা করে নিজেই দোকানের মালিক হয়ে যায়।

– কি বাজে বকছেন?

– হাহাহা বাজে বকছি? তাহলে একটা ছেলে এত তাড়াতাড়ি রাতারাতি সৌদি আরব গিয়ে একটা দোকানের মালিক হয়ে যায়?

– আমি এসবের কিছু জানি না, আমার ছেলে যদি জড়িত থাকেও তা আমি জানি না। এসবের বিষয় কোন হাত নেই আমার, বিশ্বাস করুন আমাকে।

– সাজু ভাই বললো, আমি জানি আপনি এসবের সঙ্গে জড়িত নয় কিন্তু কেউ একজন অবশ্যই আছে। ঠিকনা পারুল মেডাম?

সবাই পারুলের দিকে তাকালো, পারুল কিছু বলা দিয়ে আবার থেমে গেল। তার মুখ দিয়ে কথা কেড়ে নিয়ে সাজু ভাই বললোঃ-

– রুহি তোমাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে তোমার কি সবকিছু মনে আছে?

– রুহি বললো, হ্যাঁ মনে আছে।

– তোমাকে আমার কথা কে বলেছিল?

– প্রথমে আপনার একটা লোক বলেছিল তারপর তো আমি নিজেই দেখলাম আপনাকে।

– সাজু ভাই পকেট থেকে রুহির লেখা কাগজটা বের করে বললোঃ- এটা তোমার লেখা?

– হ্যাঁ।

– আমি এই কাগজটা পাবার পরেই তোমার বিষয় জানতে পেরেছি, কিন্তু সেই মুহূর্তে ঘটনা সবার সামনে আনা উচিৎ ছিল না তাই গোপন করার চেষ্টা করছি। মোতালেব দারোগা জামিল চোরাকে আটকে রাখার ব্যবস্থা করে আর আমি চলে যাই তোমাকে উদ্ধার করতে। তোমাকে সেখান থেকে বের করতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে নাহলে তো এতদূর আসতে পারতাম না।

– রুহির বাবা বললো, মিথ্যা কথা তুমিই আমার মেয়ে কিডন্যাপ করেছো।

– আঙ্কেল আমাকে বলতে দেন, তারপর রুহির দিকে তাকিয়ে বললো:- তোমার কি কখনো মনে হয়নি যে সবাই কে খুন করা হয়েছে কিন্তু তোমাকে কেন বাচিঁয়ে রাখা হচ্ছে?

– আপনিই তো বললেন আপনার বন্ধু সজীবের জন্য আমাকে বাঁচাবেন।

– হ্যাঁ বলেছি এবং এখনো বলছি, তবে সবকিছু থেকে বাচানোর চেষ্টা করেছি।

– মানে?

– তোমার বাবার ব্যাঙ্কের লোন কি শেষ হয়ে গেছে নাকি রুহি? ওই যে ব্যবসা করার জন্য নিজের জমির কাগজপত্র জমা দিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে লোন এনেছিল।

– রুহির বাবা থতমত খেয়ে গেল, রুহি তখন বললো:- এটা আমাদের পারিবারিক বিষয়।

– হ্যাঁ জানি, কিন্তু পারিবারিক সমস্যার জন্য যখন এলাকাবাসী সমস্যার সম্মুখীন হয়ে যায় তখন তো সেটা পারিবারিক বিষয় নয় বরং সেটা তখন হয়ে যায় এলাকাবাসীর বিষয়।

– কি বলতে চাইছেন আপনি? আর আমাদের এই বিষয় আপনাকে কে বলেছে?

– আস্তে আস্তে বলছি, যেদিন রাতে তোমাদের বাসায় ফারজানা খুন হয়েছে সেই রাতেই কিন্তু আমি টাঙ্গাইলে এসেছি। মনে আছে?

– হ্যাঁ।

– সকাল বেলা তোমাদের বাগানে ফারজানার লাশ দেখতে এসেছিলাম এবং তোমাদের বাড়ির মধ্যে গিয়ে বসেছিলাম।

– জ্বি মনে আছে।

– তারপর আমি আর হাসান ভাই যখন মোতালেব দারোগার সঙ্গে উপজেলায় যাচ্ছি তখন দারোগার কাছে তোমার বাবার বিষয় প্রশ্ন করেছিলাম।

– কোন বিষয়?

– এই ধরো তোমাদের আয়ের উৎস কি? তারপর কীভাবে এত সুন্দর বাড়ি বানালে এসব। তখন তো দারোগা বললেন যে তোমার বাবার কাছে নাকি ব্যাঙ্ক ২০ লক্ষ টাকা পাওনা আছে। এবং মেয়াদ শেষ হবার জন্য কর্তৃপক্ষ নাকি থানায় মামলা পর্যন্ত করেছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে মামলা করার আটদিন পরে তোমার বাবা সকল টাকা পরিশোধ করে দেয়। অথচ তখন তার সকল ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে এবং তিনি বাড়িঘর কিছুই বিক্রি করে নাই। তাহলে মাত্র আটদিনের মধ্যে কীভাবে কুড়ি লক্ষ টাকা যোগাড় হলো?

– রুহির বাবা তখন ঘামছিল, রুহি কি জবাব দেবে সেটা ভেবে পাচ্ছে না। উপস্থিতি সবাই তো তখন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি দেখছেন।

– সাজু ভাই বললেন, আমার তখনই মনের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হলো এবং আমি দারোগা সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাঙ্কে গেলাম। তারপর মোতালেব দারোগার সাহায্য অনেক কিছু বের করতে সক্ষম হলাম। তখন জানতে পারলাম যে তোমার বাবার একাউন্টে সৌদি আরব থেকে টাকা এসেছে। এই নিয়ে তো আমার চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেল, এদিকে সেদিন রাতেই তুমি কিডন্যাপ হলে।

– রুহি চিৎকার করে বললো, তারমানে আপনি কি এখন আমার বাবাকে সন্দেহ করছেন?

– না। তোমার বাবাকে আমি এখন সন্দেহ করছি না।

– তাহলে?

– তুমি যেদিন কিডন্যাপ হয়েছ সেদিন রাতেই আমি তোমার বাবাকে সন্দেহ করেছি।

– চুপ করেন সাজু ভাই।

– উত্তেজিত হচ্ছ কেন? আমি তখনও কিন্তু ওই চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলে সম্পর্কে জানতাম না রুহি। তারপর তোমার বাবার ব্যবহৃত নাম্বার বিদেশ থেকে কে কল করে এবং তার বাড়ি কোন যায়গা সেগুলো খুঁজতে থাকি। তোমাকে যেদিন কিডন্যাপ করা হয়েছে তখন আমি অবাক হলাম কারণ তোমাকে হত্যা করেনি। এরপর আমি তখন তোমার বাবাকে সন্দেহের তালিকায় রেখে এগিয়ে যেতে থাকি। তারপর চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলে সম্পর্কে জানতে পারি, এবং তোমার বাবার কাছে কুড়ি লক্ষ টাকা সেই দিয়েছে। আমি শুধু অপেক্ষা করছিলাম তোমার সন্ধান পাওয়ার, কারণ আমি জানতাম যে তোমাকে হাতে নিতে পারলেই আমি তোমার বাবাকে থামাতে পারবো। আর তখনই জামিল চোরার কাছে তোমার লেখা কাগজটা পেলাম। তোমার বাবা কতটা চালাক মানুষ ছিল যে তিনি তোমার মনে কিন্তু আমার বিরুদ্ধে সন্দেহ তৈরি করেছে। তোমাকে আমি আমার হাতে নিতে পেরেছি এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছি ঠিক তখনই জামিল চোরা সবকিছু পন্ড করে।

– রুহি তার বাবার দিকে তাকিয়ে বললো, বাবা সাজু ভাই এসব কি বলছে? কিন্তু তার বাবা কোন জবাব দিতে পারছে না।

– সাজু ভাই বললো, তোমার সব বান্ধবী খুন হয়ে গেলেও তুমি বেঁচে থাকতে কারণ তোমার বাবার সঙ্গে এভাবেই চুক্তি হয়েছে।

তারপর রুহির বাবার দিকে তাকিয়ে সাজু ভাই বললো ” জসিম উদ্দিন তালুকদার সাহেব, এখন সবকিছু আপনি বলবেন নাকি সৌদি আরব হতে পলাশ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে? তাকে কিন্তু সেখানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং শীঘ্রই তাকে দেশে আনা হবে। ” আপনি সম্পুর্ণ সন্দেহের তালিকায় এসেছেন যখন রুহি তানিয়ার কাছ থেকে পিলিয়েছে। রুহি সেখান থেকে বের হয়ে সকাল বেলা আপনাকেই কল করবে এটা জানা কথা, কারণ রুহির কাছে মোবাইল নেই তবে মা-বাবার নাম্বারই মুখস্থ থাকে। তাই সে আপনার কাছে কল দিয়েছে এবং আপনি তখন পলাশের সঙ্গে সবকিছু বলেছেন। পলাশ তার বন্ধুকে বলে পটুয়াখালী থেকে আমাকে হুমকি দেওয়ায়, আর আপনি এদিকে ভোরবেলা খুন করেন। জেলা প্রশাসক সাহেব যখন বললেন যে রুহি বেরিয়ে গেছে তখনই বুঝতে পারছি। কারণ আপনি ছাড়া অন্য কেউ যদি খুন করতো তাহলে সে কীভাবে জানবে যে রুহি পালিয়েছে। আমি ভেবেছিলাম রুহি সত্যি সত্যি খুনির হাতে গেছে কিন্তু যখন জানলাম আপনার কাছে এসেছে তখন তো সবকিছু নীলাকাশ।

রুহির বাবা অসহায় হয়ে চারিদিকে সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, তার করুন চেহারা দেখে অনেকের মায়া হলো। আর একটু পরেই রুহির বাবা হাউমাউ করে কান্না করতে লাগলো।

– রুহি বললো, বাবা সত্যি সত্যি তুমি আমার সব বান্ধবীদের খুন করেছো?

– বিশ্বাস কর আমি রাজি হতে চাই নাই, আমার বাড়িঘর যদি বিক্রি করতে হতো তবুও আমি কোনদিন ওর প্রস্তাবে রাজি হতাম না। কিন্তু আমি যখন রাজি হচ্ছিলাম না তখন ও বললো ” আপনি কাজটা না করলেও আমি কিন্তু অন্য কাউকে দিয়ে ঠিকই কাজটা করাবো। আর তখন কিন্তু আপনার মেয়ে রুহিও মারা যাবে, তাই আপনি কাজটা করুন এবং মেয়েকে বাঁচান। ” বিশ্বাস কর মা, আমি শুধু তোকে বাঁচানোর জন্য এমন কাজ করেছি।

– উৎসুক জনতা তখন হৈচৈ শুরু করেছে, কি থেকে কি হয়ে গেছে? সাজু ভাই চোখ বন্ধ করে কিছু ভাবছেন, জেলা প্রশাসক সাহেব পুলিশকে চোখের ইশারায় কিছু একটা বললো, সবাই সেটা বুঝতে না পারলেও পুলিশ ঠিকই বুঝতে পেরেছে।

———–
পরবর্তীতে সজীব আর রুহির মধ্যে একটা প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে কিন্তু এই গল্পের মধ্যে সেটা লেখা হলো না। আপনারা চাইলে আবারও কোন মামলার মধ্যে সাজু ভাই ও সজীব রুহির প্রেমের কাহিনী নিয়ে হাজির হবো।

এটা আমার লেখা প্রথম রহস্যময় গল্প, জানিনা ঠিক কতটা সাজাতে পেরেছি। আমি জানি অসংখ্য ভুলে ভর্তি হয়ে গেছে যেগুলো সামনের দিকে শুধরে ফেলতে হবে। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ আপনারা গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভুলগুলো ও ভালো লাগা গুলো উপস্থাপন করবেন। আপনাদের মতামত দিয়ে আমি অনেক কিছু শিখতে চাই, তাই সবাই রিভিউ দিবেন।

যাদের কাছে বিরক্তির কারণ হলাম তারা সবাই নিজগুণে মৃতের ক্ষমা করবেন প্লিজ।

#সমাপ্ত

লেখা:-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here