স্নিগ্ধ_অনুভব #সূচনা_পর্ব #পিচ্চি_লেখিকা

0
1076

“ঠাসস ঠাসসস…বের হ আমার রুম থেকে।তোকে আমার রুমে দেখলে এখন ২ টা দিছি তখন ৪ টা দিবো।”
ইসস এত জোড়ে কেউ মারে নাকি?নিষ্ঠুর লোক একটা..একটু মায়া দয়া কিচ্ছু নেই। বাসর রাতেও বুঝি বরের মাইর খেতে হয় এ কেমন নিয়ম রে বাবা আগে জানলে জিবনেও বিয়ে করতাম না।
” এখনো সঙ সেজে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আরো কয়েকটা থাপ্পড় খাবি তুই?”
এ কেমন বর রে বাবা?এই রুম থেকে বের হলেও এখন এত গুলা কথা শুনতে হবে!কি করি এখন?মিনমিন করে অনুভব ভাইয়ার উদ্দেশ্যে বললাম,,
“এখন এই রুম থেকে বের হলে হাজারটা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে..বাইরে না গেলে হয় না?”
উনি তেড়ে এসে বললেন,,
” যে তোকে প্রশ্ন করবে তার গলা চেপে ধরবি কিন্তু তোর এই রুম থেকে বের হতেই হবে নয়তো আমি তোকে খুন করে ফেলবো।”
এই লোকের যা রাগ তাতে যে সত্যি আমাকে খুন করবে না এর কোনো বিশ্বাস নেই। অগত্যা গুটিগুটি পায়ে বের হতে যাচ্ছিলাম তখনই পেছন থেকে অনুভব ভাইয়ার ডাক,,
“এই দাড়া..তোকে বের করে দিলে তো আম্মু আবার শুরু হয়ে যাবে। এই রুমেই থাক।”
এটুকু বলেই আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বড় বড় পা ফেলে বাইরে চলে গেলো। এ কেমন লোক? সব সময় রাগ যেনো নাকের ডগায় এসে থাকে।

আমি আফিয়া খানম স্নিগ্ধা আর যে এতক্ষণ বের করে দিচ্ছিলো উনি আহান আবরার অনুভব আমার মামুনির ছেলে। খালাতো ভাই সম্পর্কে। তবে আজ আমাদের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সম্পর্কও বদলে গেছে। আমার জন্মের সময়ই আমার মা মারা যায়। যখন ৮ বছর বয়স তখন বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। তখন থেকেই আমি মামুনিদের সাথে থাকি। এই বাড়ির সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে শুধু এই খাড়ুশ অনুভব ভাইয়া আর উনার ছোট কাকি আমাকে সহ্য করতে পারে না। ছোট বেলা থেকেই অনুভব ভাইয়ার সাথে আমার দারুন ভাব ছিল কিন্তু ৫ বছর আগে দেশের বাহিরে যান পড়াশোনার জন্য। ৬ মাস আগে দেশে ফিরেছেন কিন্তু আগের থেকেও বেশি রাগী আর জেদি হয়ে। সব সময় খিটমিট করে। রাগ তো নাকের ডগায় থাকে। উনি একজন ডক্টর হলেও উনার মনে মায়া দয়ার ছিটে ফোটাও আছে কি না আমার সন্দেহ। মামুনি আর বাবাইয়ের কথায় অনুভব ভাইয়া আমাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। তাই তো বিয়ের প্রথম রাতেই টপাটপ থাপ্পড় খেয়ে বসে আছি। উনি আমাকে ২ চোখে সহ্য করতে পারে না আর আমি যতবারই দেখি ক্রাশ নামক বাশ খেয়ে পেট ভড়িয়ে ফেলি পরমুহূর্তেই আবার থাপ্পড় খেতে হয়। এই ৬ মাসেই কত থাপ্পড় খেয়েছি ঠিক নাই। ওত থাপ্পড় গুনতে গেলেই আমার গাল ব্যাথা করবে বাবা। প্রতিদিন আস্তেই মারে আজ এত জোড়ে কেন মারলো কে জানে? ইসস আমার গাল গুলো শেষ একদম।
অনুভব ভাইয়া আসবে কি না জানি না তবে এখন আমার ঘাপটি মেরে শুয়ে পড়াটাই ভালো নয়তো আবারও খেতে হবে টপাটপ। ওরে বাবা আমি নাই। ঘাপটি মেরে শুয়ে পড়লাম। কখন ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নাই।

___________________🍁

সূর্যের আলো মুখে পড়তেই চোখ মুখ কুচকে ফেললাম। আজকাল এই সূর্য মামা বড্ড জালায়। ঘুমোতেই দেয় না। অনিচ্ছা শর্তেও আড়মোড়া কাটিয়ে উঠলাম। ওয়াশরুমের জন্য পা বাড়াতেই দেখলাম সোফায় অনুভব ভাইয়া বিড়ালের বাচ্চার মতো জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে। এখন উনাকে দেখলে কেউ বলবে না যে উনি কেমন। একদম বাচ্চাদের মতো করে শুয়ে আছে। এক ফালি চুল কপালের উপর সুন্দুর করে পড়ে রয়েছে। চাপ দাড়ি গুলো মুখে ঠেসে রয়েছে আর ঠোটের নিচের তিল টা আয় হায় আমি শেষ। উনার এই ঘুমন্ত চেহারা দেখে নিজেকে না দমিয়ে উনার কাছে গিয়ে বসলাম। বিড়বিড় করে বলে উঠলাম,,

“এই ঘুমন্ত অনুভবের মতোই যদি এতটাই মায়াময় হতো এই অনুভবটা। যদি এই স্নিগ্ধার অনুভব হতো ইসস কতই না ভালো হতো। এই না না আমি এসব ভাবছি জানলে আমার কপালে আরো থাপ্পড় আছে।”
কি মনে করে উনার দিকে ঝুকে কপালের কাছে ওষ্ঠ নিতেই উনি চোখ মেলে তাকালেন আমার তো জান যায় যায় অবস্থা। কোনো রকম উনার থেকে ২ মিটার সরে দাঁড়ালাম।
” কি করছিলি তুই?”
“আব ইয়ে মানে..”
” কি ইয়ে মানে করছিস? কি করছিলি আমার এখানে?(ধমক দিয়ে)”
এবার কি করি? কেন আসতে গেছিলি স্নিগ্ধু তুই?নে এবার বাশ খা থুক্কু থাপ্পড় খা।
“এই🤬কথা বল নয়তো তোকে এখন..”
“আম..আমি তো আপনাকে ডাকতে এসেছিলাম। আপনি ত তো কেমন বি বিড়ালের বা বাচ্চার মতো জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে ছিলেন।”
“এই তুই কি বললি?আমি বিড়ালের বাচ্চার মতো জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে ছিলাম!”
হায় হায় এক ঝামেলা এড়াতে গিয়ে আরেক ঝামেলায় পড়লাম ভাগ স্নিগ্ধু ভাগ।
কোনো কথা না বলেই এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। ভয়ে জানের পানি সব শুকিয়ে গেছিলো আল্লাহ বাচায়ছে। ফ্রেশ হয়ে নিলাম তাড়াতাড়ি..তারপর চুপি চুপি বাইরে এসে দেখি অনুভব ভাইয়া রুমে নাই। এই সুযোগে এক দৌড়ে লিভিং রুমে চলে আসলাম। মামুনি,বাবাই,তিশা আপু,কাকা,কাকি,তুবা,তুষার ভাইয়া সবাই আছে লিভিং রুমে। আমাকে দেখে মামুনি কিছু বলতে যাবে তখনই কাকি বলে উঠলো….
“জমিদারের মেয়ের তবে ঘুম ভাঙলো! আমি তো ভেবেছিলাম ১২ টার আগে তোর ঘুমই ভাঙবে না।”
মামুনি কাকিকে ধমক দিয়ে বললো,,
” চুপ কর ছোট। সব সময় ওকে ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলবি না। ও এখন এই বাড়ির বউ। স্নিগ্ধু এদিকে আয় তো।”
“না আম্মু এখন আমি স্নিগ্ধুকে তোমার কাছে যেতে দিচ্ছি না,,আমরা এখন আড্ডা দেবো।” (তিশা)
“তিশু ছাড় ওকে। আগে ব্রেকফাস্ট করুক তার পর যা ইচ্ছা করিস।” (মামুনি)
“কি রে স্নিগ্ধু তোর ক্ষুদা লাগছে?” (তিশা)
“আরে না। আমার ক্ষুদা লাগে নাই চলো ছাদে যায়। ওহ মামুনি পরে খেয়ে নিবো।”
“তোর পেট নাকি অন্য কিছু? ক্ষুদা লাগে না কেন তোর?”
মনে মনে বললাম,,
“তোমার ছেলে সকাল সকাল যে ধমক দিছে পেট তো ফুল হয়ে গেছে গো মামুনি।
ইয়ে আসলে মামুনি পরে খাবো এখন যায়।”

এটুকু বলেই তিশা আপু আমি তুবা আর তুষার ভাইয়া ছাদের দিকে যেতে লাগলাম তখনই কেউ বলে উঠলো,,
“ব্রেকফাস্ট করে যার যেখানে যায়তে ইচ্ছা হয় যাক। এখন চুপচাপ যেন ডাইনিং এ বসা হয়।”

#স্নিগ্ধ_অনুভব
#সূচনা_পর্ব
#পিচ্চি_লেখিকা

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন❤ উৎসাহ পেলে পরের পর্ব দেবো নয়তো আর লিখবো না😊কপি গল্প বলার আগে প্রুফ দিবেন প্লিজ😊)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here