স্বপ্নের প্রেয়সী ? Part -1,02

0
3000

?স্বপ্নের প্রেয়সী?
Part -1,02
কলমে ~ ফাতেমা তুজ
01

ফারহান ভাই আমার ইংরেজি শিক্ষক। তাকে ভাই বলে সম্মোধন করার ক্ষমতা আমি হারিয়েছি তাই স্যার বলে ডাকতে হয়। এক অজানায় লুকিয়ে রাখা সব অনুভূতি আমায় পাগল করে দেয়। ওনার সকল বাড়াবাড়ি আমি সায় দেই নিজের অজানায়। অথচ প্রকৃতপক্ষে এটা কে অন্যায় বলে। তবু ও এ মন জানে প্রেমে সাতখুন মাফ!

ভালোবাসা এক নীল আকাশের হঠাৎ আক্রমণকারী ঝড়ের মতো।কখন কি করে হয়ে যায় তা বলা দায়।

ইংরেজি স্যারের থাপ্পড় খেয়ে হঠাৎ ঘুম টা ভেঙে গেল ।
এখনো আমার দম নিতে কষ্ট হচ্ছে। আশে পাশে চোখ বুলিয়ে দেখলাম এটা তো আমার রুম!তার মানে এতো ক্ষন স্বপ্ন দেখছিলাম! যাক বাবা বাঁচা গেল।

নিজেকে হালকা করে ঘড়ির দিকে তাকালাম ওমা রাত 2’38 বাজে। হায় রে এখনো আমার ইংলিশ পড়া কমপ্লিট হয়নি।
কি ভাবছেন আজ আমার ইংরেজি পরীক্ষা। মোটে ও না। তবে রোজ আমাকে অগ্নি পরীক্ষা ঠিক ই দিতে হয়।আর এই বিষয় টি পরীক্ষা নিতে আসবেন আমার প্রান প্রিয় জঘন্য তম টিচার ফারহান স্যার ।
নাম টা যত টা না সুন্দর তার থেকে হাজার গুন জঘন্য ওনি। তিন মাস ধরে ওনি আমাকে ইংরেজি পড়ান ।

ইংরেজি
এই একটা বিষয় আমার মাথায় হাতুড়ি পিটিয়ে ও কেউ ঢুকাতে পারে নি ।

ইংরেজি তে আমি বড্ড কাঁচা। গত আট মাসে 4 টি টিচার বদলিয়েছি।আমি বদলাই নি আমাকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর বড় একটি কারন আমার নাননা ছা ছোটা ছা পেয়ারা ছা ঘুম ।

ইংরেজি বিষয় মানেই ঘুম।
স্যাররা যখন ইংরেজি বিষয়ে লেকচার দেন ঠিক তার পাঁচ মিনিটের মাথায় আমাকে ঘুমাতে দেখা যায়।
আর তাঁর জন্য ই আমাকে কোচিং থেকে আট মাসে চার বার বের করে দিয়েছে।

আমি এইবার দশম শ্রেণীতে পড়ি। আমি মোটে ও পড়াশুনাতে খারাপ নই শুধু ইংরেজি ছাড়া।
আর ছয় মাস পর এসএসসি পরীক্ষা।
আব্বু আম্মু চিন্তাতে মনে হয় শুকিয়ে যাচ্ছেন।
আর ঠিক তখনই আগমন ঘটে গন্য মান্য জঘন্য তম ফারহান স্যারের।
ওনি ই সেই টিচার যে আমাকে তিন মাস অব্দি পড়াতে পেরেছেন ।

ওনি এইবার ইংরেজি তে অনার্স পড়ছেন তৃতীয় বর্ষ।

আমার আব্বুর বন্ধুর ছেলে ওনি।
বিশ্বাস করেন এমন কোনো দিন নেই এই হনুমান ফারহান স্যার কে গালি না দিয়েছি। তিন মাসে আমার জীবন অতিষ্ঠ করে দিয়েছে।

যাক বাবা নাম টাই তো বলা হলো না আমি ফারাবি।
আম্মু আব্বুর একমাত্র সুযোগ্য কন্যা।

পড়তে পড়তে সকাল 6 টা বেজে গেছে। এতো পড়া আমার জীবনে আমি পড়ি নি। এই বেটা বজ্জাত টার জন্য পড়তে হচ্ছে। ঘুমিয়ে ও শান্তি নেই।
স্বপ্নে ও অত্যাচার! ধুর আর ভালো লাগে না।
ঘুমে আমার যায় যায় অবস্থা যেই না চোখ টা বুজেছি আমার আম্মি জানের ডাক।
‘ফারাবি এই ফারাবি কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না নাকি। ফারহান এসেছে।যা তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে আয়।’

মাথাটা রাগে ফেটে যাচ্ছে ।
যেই না ভাবলাম দু চারটে কথা শুনাবো ওমনি আমার প্রিয় জঘন্য তম টিচার রুমে এসে হাজির।
– কিরে কথা কানে যাচ্ছে না নাকি। কাকি যে কতোক্ষন ধরে ডাকছে।

ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে আমার। একটা শুকনো ঢোক গিলে বললাম ‘জীইইই স্যার আসছি।’

– আই ডোন্ট লাইক টাইম ওয়েস্ট। জাস্ট ফাইভ মিনিট আমি তোকে নীচে দেখতে চাই।

বলে গট গট করে রুম থেকে চলে গেলেন। মনে হচ্ছে এই বেটার মাথাটা ফাটিয়ে দেই। বেটা বজ্জাত হনুমান জঘন্য তম আবর্জনা।

পরক্ষণেই চুপ হয়ে গেলাম।
আমার ঘাড়ে দুইটি মাথা নেই যে ওই বেটা বজ্জাতের সাথে চোখ রাঙাবো। আর কি ফ্রেস হতে চলে গেলাম।

চলবে
ফাতেমা তুজ

? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 2
_________________

ফ্রেস হয়ে এসে ফারহান স্যার এর সামনে গিয়ে দাড়িয়ে আছি।
বসবো নাকি তাই নিয়ে কনফিউশন এ পরলাম। কারন পান থেকে চুল খসলেই আমাকে শাস্তি দিবেন। গভীর চিন্তা মগ্ন আমি।

এমন সময় ফারহান স্যারের ধমকে চমকে গেলাম।

– তোকে কি এখানে সঙ সেজে দাড়িয়ে থাকতে বলেছি।
শুধু শুধু টাইম ওয়েস্ট করার ধান্দা।

হাতে একটা ইয়া লম্বা প্রশ্ন ধরিয়ে দিয়ে বলল ‘ফাস্ট এই গুলো সলভ করে দে।একটা যদি ভুল হয় তো দশ বার কান ধরে উঠ বস করবি।’

স্যারের হাত থেকে প্রশ্ন নিয়ে আমি হা হয়ে আছি ।

রাগি ফেস নিয়ে স্যার বললেন ।
– কি হয়েছে কি?

আমি একটা শুকনো ঢোক গিলে বললাম ‘ না স্যার কিছু না।’

– ওকে গুড। ফাস্ট লিখে দে।

একটা কেবলা হাসি দিয়ে বললাম
– জি স্যার।
বলেই লিখা শুরু করলাম।

______________

30 মিনিট পর

সব কমপ্লিট।
একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম।
আর নিজেই নিজেরে বলা শুরু করলাম।বাহ ফারাবি বাহ সব শেষ। এই বার দেখি বেটা বজ্জাত হনুমান তুই আমাকে কি করে বকা দিস।

মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
কিন্তু কতক্ষণ থাকবে জানি না।

– স্যার হয়ে গেছে।

– ওকে দে।

স্যার খাতা দেখছেন আর আমার হার্ট কাপছে।
দুজনের মধ্যে নীরবতা বিরাজ করছে।

বেশ কিছু ক্ষন পর। ফারহান স্যার বললেন ‘ হুম ভালো হয়েছে।’

এইবার জেনো আমার দেহে প্রান আসল। স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম।

কিন্তু হঠাৎ ই মনে পড়ল আমার ইংলিশ গাইডে
নিশির প্রেম পএ!
উফফফ এই আরাফ ভাইয়ের জন্য আজ আমি শেষ।

_________

নিশি আমার বান্ধবী। বলতে গেলে বেস্ট ফেন্ড ই বটে।
আরাফ ভাই আমাদের দুই ব্যাচ সিনিয়র। নিশি আর আরাফ ভাইয়ের দুই বছরের প্রেম। মাসে দশ বার হয় ব্রেক আপ!
তিন দিন আগে বেশ ঝগড়া হয়েছে আরাফ ভাইয়ের এক্স কে নিয়ে।
নিশি তো সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।ব্লক লিস্ট এ রেখে দিয়েছে দুই দিন ধরে।
যদি ও এমন বহু বার হয়।
আর তাই আরাফ ভাই কোনো উপায় না পেয়ে আমি স্কুল থেকে ফেরার সময় চিঠি আর দুই টা ড্রাক চকলেট হাতে দিয়ে বলেছে নিশি কে দিতে।
সেই চকলেট ব্যাগে রেখে চিঠি টি রেখেছিলাম ইংলিশ গাইডের ভেতরে।
আর কালকের পড়ার চাপে চিঠি টা বের করার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। যার ফল স্বরূপ ফারহান স্যারের হাতে।
নিশির বাচ্চা তরে তো আমি কাঁচা চিবিয়ে খাব।
যদি তরে একটা ও চকলেট দেই তার পর বলিস।
উফফফফ আমি তো শেষ।

________________

স্যার পেজ উল্টো করেই পেয়ে গেল নিশি কুত্তির চিঠি ।

আমার তো মনে হচ্ছে আমি শেষ। আম্মু গো তোমার মেয়ে আর বাঁচবে না গো।
আমার বাচ্চা গুলো অনাথ হয়ে যাবে গো।
আমার জামাই টার কপাল ই খারাপ ও তো বিধবা হয়ে যাবে ।
এই কথা ভাবা মাএই বেকুব বনে গেলাম।
পুরুষ মানুষ বিধবা হয় নাকি?
ধুর যাক গে সে হবে হয় তো। কিন্তু আমার মৃত্যু নিশ্চিত।

_________________

স্যার চিঠি টা পড়ছে আর তার মুখে রাগ স্পষ্ট ফুটে উঠছে। রাগ যেন বেরেই চলছে আমি তো এবার শেষ।

_________________

চোখ মুখ খিচে দাড়িয়ে আছি । কখন যে আমার উপর দিয়ে সাইক্লোন , টর্নেডো , ফনি যাবে তার অপেক্ষায় ।

স্যার আমাকে ডকলেন

– ফারাবি।

আমি তো এবার শেষ।ভয়ে আমি কেঁদেই দিলাম ।

পরক্ষণেই আবার ফারহান স্যার ডাক দিলেন ।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে আমার সামনে আশা শুরু করলেন। আর আমি তো আল্লাহ্ কে ডাকছি আল্লাহ্ এবারের মতো এই হনুমানের থেকে আমায় বাঁচিয়ে দাও।

বি: দ্র: ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

ফাতেমা তুজ
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here