Dangerous Husband,পর্বঃ_১

0
5949

Dangerous Husband,পর্বঃ_১
লেখনীতেঃ_নুসরাত_জাহান

সুনসান রাস্তা দিয়ে মাতাল অবস্থায় গান গাইতে গাইতে হাঁটছে আবির। চোখে শুধু ধোঁয়াশা দেখছে। আজ তার নেশাটা বেশি হয়ে গেছে। নেশা প্রতিদিনই করে তবে আজ মনের ভেতরে খুশির কমতি ছিল না বলেই কয়েক প্যাগ বেশি গিলেছে।

সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে উঠছে। দরজার সামনে গিয়ে কলিংবেল না চেপে টোকা দিতেই খোলা চুলে টপস আর জিন্স পড়া সুন্দরী মেয়ে সামনে এসে দাঁড়াল। আজ সে এই মেয়েটির সাথে রাত কাটাবে। আগে থেকেই টাকা দেওয়া ছিল আবিরের। মেয়েটিকে কোন সময় না দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল আবির চৌধুরী। মেয়েটিকে ফ্লোরে শুইয়ে দিয়ে গায়ে থাকা কাপড় খুলতে লাগল। মেয়েটি আবিরকে কিছু বলতে নিলে আবির মেয়েটির ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চেপে ধরে হুঁশশ আজ কোন কথা নয়। তোর টাকা তুই পেয়ে গেছিস না তাইলে এত কথা বলতে চাচ্ছিস কেন? আজ তুই আমার। আমি রাতে তোর সাথে যা ইচ্ছে তাই করব কিন্তু তুই কোন বাঁধা দিতে পারবি না৷ সময় না দিয়ে আবির মেয়েটিকে চেপে ধরে পুরুষত্ব মেটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মেয়েটি নিরবে শুধু চোখের জল ফেলছে। কেনো জানি লাগছে এই কাজ করতে। নিজের বিবেক যেনো হাতছানি দিয়ে বলছে তুই পতিতা। এটাই তোর একমাত্র কাজ।

হয়তোবা মেয়েটি এমন জঘন্য কাজে নিজে ইচ্ছা করে আসেনি। হয়তোবা বাধ্য হয়ে বিপদে পড়ে এই কাজে জড়িয়ে পড়েছে।

কয়েক ধাপে মেয়েটির উপরে আবির শারিরীকভাবে নির্যাতন করে। টাকার কারণে মেয়েটি শুধুমাত্র সহ্য করেছে। আবির যখন ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়ে তখন মেয়েটি বিছানার এক কোণে ফ্লোরের উপরে পা ভাঁজ করে মাথা লুকিয়ে কাঁদতে থাকে৷

ইনি আবির চৌধুরী, বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান৷ বাবা মাকে বিন্দুমাত্র সম্মান করে না সে। টাকাকে সে হাতের ময়লা মনে করে। ইচ্ছে মত নেশা আর মেয়েদের উপরে টাকা খরচ করে৷ পড়াশুনা মাঝ পথে ছেড়ে দিয়েছ৷ তবে সবকিছু জন্য ওর বাবা মা দায়ী। ছোটবেলা থেকে বাবা তার বিজনেস নিয়ে পড়ে থাকত, আর মা সারাদিন পার্টি আর বন্ধু বান্ধব নিয়ে ব্যস্ত থাকত৷ ছেলেকে সময় দেওয়ার মত তাদের দুজনের কারই সময় ছিল না। আবিরের কাছে ছিল টাকা। তাই টাকাকে আপন করে বড় হয়ে উঠেছে৷ এলাকার ছেলেদের নিয়ে পড়ে থাকতে থাকতে প্রথমে সিগারেট পরে নেশা তারপর শরীরের চাহিদা মিটাতে গিয়ে নারী৷
একরাত নারীরের না পেলে পাগল হয়ে যায়৷ কি করবে কোন দিক থাকে না৷

সকাল ৯ টা বাজে,

সূর্য্যের আলো পর্দা ভেদ করে আবিরের চোখে এসে পড়তেই আবিরের ঘুম ভেঙে গেল। মেজাজ গরম করে চোখ খুলল। ভিজা চুলে রাতের সেই মেয়েটি চায়ের ট্রে হাতে রুমে আসল।

– গুড মর্নিং আবির চৌধুরী।

মেয়েটির দিকে ভ্র-কুচকে তাকায় আবির৷ অনেকক্ষণ চোখ কাপল একত্রে করে কি যেনো ভাবল। হয়তো রাতের ঘটে যাওয়া কথাটা মনে করার চেষ্টা করছে।

আবিরের নিরবতা দেখে মেয়েটি আবার জিজ্ঞেস করল, কি হল এভাবে চুপসে গেলেন যে? রাতে তো পুরোই হট ছিলেন। বাহব্বা গায়ে কি শক্তি আমার তো কাঁদা কাঁদা অবস্থা বানিয়ে ছেড়েছেন। আর সকাল হতেই সমস্ত শক্তি গায়েব হয়ে গেল।

আবির কোন উত্তর দিচ্ছে না। বিছানা দিয়ে নেমে ফ্লোরে পড়ে থাকা শার্ট আর প্যান্ট পরে লুঙ্গি চেইঞ্জ করল। নিজের হাত দিয়ে মাথার চুলগুলো ঠিক করল।

– আচ্ছা আপনি কেমন লোক বলুন তো? আমি এতকিছু জিজ্ঞেস করছি কোন উত্তর দিচ্ছেন না। আবার রেডি হয়েছেন চলে যাবেন। বাহ্ এই না হল পুরুষ মানুষ। রাতে ভোগ করা শেষ তো এখন তড়িঘড়ি শুরু চলে যাওয়ার জন্য। একটা কথা বলুন তো আবার কবে আসবেন?
– যখন প্রয়োজন হবে।
– কবে প্রয়োজন হবে?
– জানি না।
– আমার তো প্রয়োজন!
– কি?
– টাকা।
– আরও টাকা লাগবে।
– হ্যাঁ।

আবির মাথা ঝাঁকিয়ে পকেট থেকে মানি ব্যাগটা বের করে মেয়েটির হাতে এক হাজার টাকার কয়েকটা নোট দিয়ে বলল, এগুলো রেখে দাও। আমার সাথে এখন ক্যাশ টাকা নেই। কত টাকা আছে জানি না। তুমি গুণে দেখো।

– স্যরি স্যার। আমি এগুলো রাখতে পারব না। কাজের বিনিময়ে টাকা নেই কিন্তু বিনা কাজে টাকা নেই না। আপনি কাল রাতে আমার সাথে শুয়েছেন তাই টাকা এডভান্স নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন তো আপনি….
– ব্যাস, কি বলতে চাচ্ছো? ভাব দেখাও তাই না! বেশ্যার আবার ভাব! তোদের তো কাজই হল কাস্টমারদের খুশি করে টাকা ইনকাম করা তাইলে এখন ভাব দেখাও কেন?

আবিরের কথায় মেয়েটির চোখ দিয়ে টপটপ করে দুগাল বেয়ে পানি পড়ছে। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে কথাটা হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলল,
– ঠিকি বলেছেন স্যার৷ বেশ্যারা যদি বেশ্যামি না করে তাইলে আপনাদের মত বড়লোকেরা কিভাবে শরীরের চাহিদা কমাত। আপনার টাকা আছে তাই আমাদের পিছনে টাকা উড়ান আর আমার টাকা নেই তাই আপনাদের কাছে শরীর বিলাই। দু’শ্রেনিরই কিন্তু সমান অপরাধ৷ আপনার টাকা আছে তাই শরীরের কোন প্রমাণ নেই যে আপনি শরীরের জ্বালা মিটিয়েছেন মাত্র। আর আমাদের শরীরে ও সীল লাগানো তাই বিয়ে করতে গেলেও প্রমাণ হয়ে যাবে আমি বিয়ের আগে….

বাকী কথাটা বলার মাঝে কথাটা থামিয়ে শার্টের হাতা কাঁচাতে কাঁচাতে চলে যেতে নিলে মেয়েটি আবার ডাক দিল।

– কিছু বলবে?
– নামটা তো জিজ্ঞেস করলেন না?
– প্রয়োজন মনে করি না।
– আমার নাম আদিবা।
– বাহ্ ভালোই তো নাম রেখেছেন আপনার বাবা মা।
– জি। পুরো নাম আতিয়া আদিবা। তবে নামটার কোন মূল্য নেই আমার কাছে।
– আর কিছু বলার আছে। আমি বের হব কাজ আছে।
– আবার কবে আসবেন?
– জানি না। আসতেও পারি নাও আসতে পারি।
– ভালো হয়ে যাবেন?
– নাহ্। এই পথে একবার কেউ আসলে সেখান থেকে বের হতে পারে না। আমিও পারব না। তবে তোমার এখানে না আসলেও অন্য কোনখানে যাব।
– সত্যি!
– হুম।

আবির চোখে সানগ্লাস পরে হাতে মোবাইলটা নিয়ে বেরিয়ে গেছে। আদিবা অবাক দৃষ্টিতে আবিরের যাওয়ার পথের দিকে চেয়ে রইল।

আবির রাস্তায় গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে চুলগুলো টানল। রাতের কথাটা মনে করে অনেকটা ভালো লাগা কাজ করছে। ভীষণ খুশি হয়েছে হৃদয় ওর জন্য পার্মানেন্ট একটা মেয়ে রেখেছে। মেয়েটি দেখতে নাকি অসম্ভব সুন্দরী। তবে আদিবাও দেখতে কম সুন্দরী নয়। দেখলে বুকের ভিতরটা ছন্দছাড়া নদীর মত উথাল-পাতাল ঢেউ উঠে যায়। মাথায় রক্ত টগবগ করে ফুটে উঠে। তবে আদিবাকে দেখে তো নরমাল ফ্যামিলির মেয়ে বলে মনে হয় না। ব্যাপারটা খটকা লাগছে। ধ্যাত আমিও না কি যে চিন্তা নিয়ে পরে আছি। কোথায় আদিবা আর কোথায় আমি। আমার কাজ শেষ আর আদিবারও পাওনা এডভান্স দেওয়া।

পকেটে হাত দিয়ে গাড়ির চাবি খুঁজছে। কিন্তু পকেট পুরো ফাঁকা। চাবি না পেয়ে আরও হতাশ হয়ে যায়। অনেকটা চিন্তায় পড়ে যায়। গাড়িটা যদি বেকায়দায় রেখে থাকে তাইলে এতক্ষণে পুরো বাড়িতে হৈচৈ পড়ে যাবে৷ আর আরমান চৌধুরী ভীষণ রেগেমেগে আমাকে তলাশ করবে।
কি যে করি? গাড়িটা যে কোথায় রেখেছি মনে করতে পারছি না৷

হঠাৎ হাতে থাকা ফোনটা ভাইব্রেট হতে লাগল।
ফোনটা হাতে নিয়ে সোজা করে স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটদুটো একের উপরে এক চেপে ধরে ভ্রু – কাপল একসাথে এনে বলল, যা বলেছি তাই হয়েছে। সব জায়গায় উনার হস্তক্ষেপ আর ভালো লাগে না। ইচ্ছা করে গলাটা চেপে মেরে ফেলি। যদি জেল ফাঁস না থাকত তাইলে আরমান সাহেব আপনি আর আবিরের হাত থেকে বাঁচতে পারতে না। এতদিনে সব হাড্ডি মাটিতে মিলে যেত এক শ্বাসে কথাগুলো শেষ করল।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here