Destiny_of_Love PART_07 | Kache ashar golpo

0
3456

Destiny_of_Love
PART_07
#Nishat_Tasnim_Nishi
_____________________________

ওর কথা শুনে আমার মুখ টা হা হয়ে গেলো। কী বলে? আমার আড়াইশো টাকার প্লাজু দেখে ওর দিদুনের পেটিকোট মনে হলো?

রেগে মেগে ফোন টা নিয়ে ইন্টারনেটে প্লাজু সার্চ দিয়ে ওর হাতে ধরিয়ে দিলাম। কয়েক সেকেন্ড পর ও ইয়া বড় হা করে বললো,–‘এমনও পোশাক হয়?’

থুঁতনি ধরে মুখ টা মিলিয়ে দিয়ে বললাম,–‘হু,হয়।’

–‘হলে হবে। যাই হোক,তুমি এসব একদম পরবে না। ছিঃ লাগে কেমন?’

–‘আপনি বললেই হবে?’

–‘না হলেও হতে হবে। এই যে আমি যেগুলা নিয়ে এসেছি এগুলা পড়বা। এই ব্লাক টা আজকে পরবা।’

–‘কেনো কেনো?এটা কেনো?’

–‘সব কি এখনই জানতে হবে?’

আমি হু বলতেই এক ধমক দিয়ে চলে গেলো। আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আজব পাবলিক! কথায় কথায় ধমক দেয় কেনো?এখানে ধমক দেওয়ার কি ছিলো?

১৩.
জয়েন্ট ফ্যামিলির একটা ঐতিহাসিক বিষয় হলো একসাথে খাওয়া।গ্রামবাংলায় এর প্রভাব বেশি দেখা যায়।আমার ফ্যামিলিতেও এই রীতি রয়েছে।পুরো পরিবারের সাথে আমিও বসে আছি। আম্মু আর চাচীরা টেবিলের পাশে দাড়িয়ে আছেন,উনারা সবাইকে খাবার সার্ফ করছেন। সেঝো চাচী চাচ্চুর প্লেটে মাছ দিচ্ছিলেন তখন চাচ্চু বলে উঠেন,–‘এই বড় পিস টা শ্রুতিকে দাও। ওর জন্যই তো তাজা মাছ আনলাম।’

–‘না, না। চাচ্চু লাগবে না।আমার খাওয়া প্রায় শেষ।’

চাচ্চু তবুও জোর করে আমাকে দিলেন।

–‘তা,তুমি কী করো বাবা?’

মেঝো চাচ্চু আবরারকে উদ্দেশ্য করে বললেন।আমি কাঁচুমাচু করে ওর দিকে তাকালাম।ও এখন কী বলবে? ও আমতা আমতা করে বললো,

–‘জ্বি,আমাকে বলছেন?’
–‘হুম,তোমাকেই।কী যেনো নাম বলেছিলে?’
–‘আবরার।আশিক আবরার!’
–‘হ্যা,আবরার। তা কী করো তুমি?
–‘কিছু করার জন্যই তো এসেছিলাম।’
–‘মানে?’
–‘আসলে, আমি কাজের জন্যই শহরে গিয়েছিলাম।বাবা-মা আর বোন নিয়েই আমাদের সংসার।বাবা ই আমাদের সংসার চালায়।অভাবের সংসার তো,কোনোরকম দিনে এনে দিনে খাই। কিন্তুু ইদানীং আব্বু অসুস্থ হওয়ায় আমি কাজের খোঁজে বের হয়েছি।১০/১২ হাজার টাকার কোনো কাজ জোগাড় করতে পারলেই হতো ! না হলে আমার পরিবার অনাহারে মরে যাবে।
এটুকু বলে আবরার চোখ মুছার ভান করলো,আশ্চর্য বিষয় ওর চোখে তখন পানিও চলে এসেছে। ওর চোখের পানি দেখে পুরো পরিবার খাবার রেখে ইমোশনাল হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। গ্রামের মানুষ এমনিতেই সহজ-সরল হয়ে থাকে। তাদের বোকা বানানো অনেক সহজ! অল্পতেই ইমোশনাল হয়ে যায়। আমার পরিবারও তেমন হয়ে গেলো ইমোশনাল। শুধু মাত্র আমি বিষ্ময় নিয়ে ড্যাবড্যাব করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমি যত দূর জানি ওর বাবার অনেক টাকাপয়সা।আমাদের ভার্সিটির কমিটি উনি,কয়েক শ স্টুডেন্টকে ফিনানশিয়াল হেল্প উনি করেছেন। বি এম ডাব্লিউ কারে আবরার ভার্সিটি তে আসে। একদিন যে শার্ট পরে ভার্সিটিতে আসে দ্বিতীয় বার আর ওই শার্ট পরে না।ওহ,আবার বড় বড় শপিং মলেও ওদের শেয়ার রয়েছে।এটা জেনেছিলাম একদিন বড় শপিং মলে শপিং এ যাওয়ার পর ওরা আমার থেকে টাকা নেয় নি।ভি আই পি ট্রিট করেছে আমাদের। এটুকুই জানি আমি আর আমার জানার বাহিরে তো ওদের আরো অর্থ-প্রাচুর্য রয়েছে।
এদিকে আমার ইমোশনাল ফ্যামিলি অলরেডি ইমোশনাল হয়ে গিয়েছে।ওরা না পারতে নিজেদের সব দিয়ে দিচ্ছে। বাবার তো গলায় খাবার আটকে গিয়েছে।
ছলছল নয়নে বাবা বললেন,–‘আজ থেকে ও আমাদের সাথেই থাকবে।’
এদিকে বাকি সবাই ও তাল মিলাতে লাগলো। অবশেষে দিদুন চুপ বলতেই সবাই থেমে গেলো।দিদুন নিজেই বললো যে–‘আচ্ছা,এখানেই থাকবে।’
দিদুনের কথা শুনে আমি চোখ বের করে উনার দিকে তাকালাম। দিদুন বাঁকা হাসলো, এরপর বললো,’ও যদি আমাদের গরুর গোয়াল,পুকুর,ধান ক্ষেত দেখা শুনা করে তাহলেই এখানে থাকতে পারবে।হ্যা তাকে এজন্য দুবেলা ভাত আর মাস শেষে দশ হাজার টাকা দেওয়া হবে।’
দিদুনের কথায় সবার হুশ উড়ে গেলো।শুধুমাত্র আমি স্বাভাবিক হলাম,কারন দিদুনকে খুব ভালো করেই চিনি,উনি যে এমন কিছু করবেন সেটা ভালো করেই জানতাম। আর আবরার যে দাদুর দেওয়া কাজ করতে পারবে না সেটাও জানি। আরে কীভাবে পারবে?দোতলার নরম তুলার বিছানা ছাড়া যার ঘুম হয় না, দিনের দশটায় যার সকাল হয়,প্রতিদিন নতুন ব্র্যান্ডের জামা ছাড়া যে অন্য জামা পরতে পারে না,হিটারের পানি ছাড়া যে গোসল করতে পারে না, নতুন নতুন পারফিউম এর ঘ্রাণ ছাড়া যে থাকতে পারে না, সে কীভাবে রাতদিন গরুর গোবরের গন্ধ আর পুকুরের পানিতে গোসল করবে? আমি শিউর ও এখনই চোরের মত না বলে চলে যাবে।

এদিকে আমাকে অবাক করে দিয়ে ইতোমধ্যে আবরার বুক ফুলিয়ে বলে দিয়েছে সে পারবে।
দিদুন খেতে খেতে বললো,–‘দেখা যাক। আগে তো দেখি কতটুকু পারো?মুয়াজ্জিনের দৌড় মসজিদ পর্যন্তই।’

১৪.
শীতের দুপুর, কিছুক্ষণ আগেই কুয়াশা ভেদ করে সূর্য কিরণ এসে পড়েছে মাটিতে। পথঘাটে মানুষের চলাচল ও দেখা দিয়েছে। পুকুরের দক্ষিণ পাড়েই রাস্তা। সেই রাস্তায় সুন্দরী রমণীর দেখা পেলো আবরার। তাদের দেখে শিষ বাজিয়ে গান গেয়ে উঠলো,

এক সুন্দরী মাইয়া আমার মন নিলো কাড়িয়া।
পারো যদি তোমরা তারে দেও গো আনিয়া।
না পাইলে তার দেখা যাবো রে মরিয়,,,

—‘হ্যা,তারপর?’

পুরো গান শেষ হওয়ার আগেই পাশ থেকে শ্রুতি দাত চেঁপে কথাটা বলে উঠেলো। আবরারকে খুঁজতেই বের হয়েছে সে,দুপুরের খাওয়ার পর তার দেখা পায় নি।

আচমকা শ্রুতিকে দেখে আবরার কন্ঠস্বর বন্ধ হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি সোজা হয়ে কপাল থেকে গামছা টা খুলে ফেললো,ভদ্র ছেলেদের মতো প্যান্ট টা নামিয়ে ফেললো। আমতা আমতা করে বললো,–‘ইয়ে মানে,,’

–‘হ্যা,মানে।তারপর?’

আবরার চোরের মতো মাথা টা নামিয়ে ফেলে, পাশ থেকেই তার ছোট চাচ্চু বয়সে আবরারের থেকে আট-নয় বছর বেশি হবে সে বলে উঠলো,–‘ কীরে শ্রুতি,তুই এখানে?’

–‘হ্যা,না আসলে তোমাদের এসব আর দেখতাম কীভাবে? দিদুনকে খবর টা দিতে হবে,যে উনার ছোট ছেলে রাস্তায় দাড়িয়ে মেয়েদের সাথে ফস্টিনষ্টি করে।’

–‘জ্বি আসতেছি।কে মনে হয় আমাকে ডাকতেছি,দাড়া আসতেছি।’
বলেই ছোট চাচ্চু বাড়ীর দিকে ঝড়ের গতিতে চলে গেলো। আর আবরার এদিক-ওদিক চোরের মতন তাকাচ্ছে।

–‘ইয়ে,শ্রুতি,,’

–‘ইয়ে,টিয়ে শুনতে চাই না। দিদুনকে কী বলেছো?হ্যা কেনো বলেছেন?নিরা ফুফি কী জানে?’

–‘ হ্যা,জানে।’

–‘মানে কী জানে?’

–‘আম্মু জানে যে,,,,

.

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here